পেরুর স্বাধীনতার দ্বিশতবর্ষপূর্তিতে পেরুর ছ’জন বিশিষ্ট কবির কবিতা
মূল স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ ও ভূমিকা- জয়া চৌধুরী
১৮০৮ সালে স্পেনে নেপোলিয়ন অযাচিত ভাবে নিজের প্রতিনিধি বসালে স্পেন- ফরাসী যুদ্ধ বাঁধে। তখন সেন্ট্রাল আমেরিকান দেশগুলির ক্রেওল রা স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ক্রেওল হল সেই জাতির মানুষ যারা ইউরোপীয় মানুষ যাদের জন্ম ও জীবন লাতিন আমেরিকার দেশে কেটেছে। অন্যান্য দেশে বিদ্রোহ ছড়ালেও পেরুতে স্পেনের বহু অভিজাত শ্রেণীর মানুষ রয়ে গিয়েছিল, সেনাবাহিনীর অনেক অংশ রাজধানী লিমা শহরে রয়ে গিয়েছিল বলে তারা বিদ্রোহে অংশ নেয় নি। তাদের একজন হলেন আর্জেন্টিনার বংশোদ্ভূত জেনারেল খোসে দে সান মারতিন। তিনি বিচ্ছিন্ন ভাবে আপার পেরুর অংশে আর্জেন্টিনার দখল সিদ্ধ করতে চাইছিলেন। তিনি চাইছিলেন আর্জেন্টিনা থেকে স্পেনের দখল সরাতে। সে কারণে পাশের দেশ চিলেকে বেস করে পেরুতে আক্রমণ শানাতে চাইছিলেন। ১৮১৮ সালে চিলে স্বাধীন ঘোষণা হলে জেনারেল সান মারতিন পেরুতে প্রবেশ করে সে দেশ স্বাধীন ঘোষণা করেন। তারিখ ছিল ১৮২১ সালে ২৮ শে জুলাই। কিন্তু পেরুতে তখনও অবস্থিত স্প্যানিশ সেনাদের পরাজিত করতে পারছিলেন না। তখন দক্ষিণ আমেরিকার নেতা সিমোন বলিভারের কাছে সাহায্য চান। বলিভার সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। সান মারতিন তখন নেতৃত্ব থেকে সরে যান। সিমোন বলিভার নেতৃত্ব নেন এবং জুনেনের যুদ্ধে ৬ ই আগস্ট এবং আয়াকুচোর যুদ্ধ ৯ই ডিসেম্বর –র পরে দেশকে স্পেনের থেকে সম্পূর্ণ কবলমুক্ত ঘোষণা করেন। সেই হিসাবে ২০২১ সাল পেরুর স্বাধীনতার দ্বিশতবর্ষপূর্তি। সেই পবিত্র ঘটনাটিকে সম্মান জানানোর জন্য এই সময়ের পেরুর ৬ জন বিশিষ্ট কবির কবিতা প্রকাশ করা হল।
Viento de masacre গণহত্যার ঝড়/ Omar Aramayo (Perú) ওমর আরামায়ো (পেরু)/ Traduccion de castellano al bengali – Jaya Choudhury মূল স্প্যানিশ থেকে সরাসরি বাংলায় তর্জমা জয়া চৌধুরী
আমার ঈশ্বর যিনি এত মানুষ হত্যা করেছেন
যারা বেঁচে ছিল
মৃত্যু এক নদীর মত যা স্তব্ধ হয় না
আমার অশান্ত নদী
যার ভেতর আমার এতটুকুও থাকে না
কাঠের নদী হল তার ছায়া
ক্রুশ ও ফুল আঁকা পতাকার এক নদী
ভয়ের নীরব ঢাল জমাট বাধা নিস্তব্ধতার নদী
বৃদ্ধেরা শিশুর মত কাঁদে
যেমন পুরুষেরা তেমন নারীরাও
বিরাট ক্ষতের মত নারীরা
বাক্সের ঢাকনার নিচে যেখানে কেউ চেনে না কোনটা কে
সেখানে অন্ধকার নক্ষত্রদের চকিত আক্রমণে
কেউ একজন চিৎকার করে ওঠে
তার মুখ আর তার নাম স্কন্ধ কাটা স্বপ্ন ও শব্দের
পচা কাঠ দিয়ে তৈরী
তার হাতদুটিতে পৃথিবীর মত এক বিশাল সূর্যমুখী ফুল ঘুরে চলেছে
সে কেবল জানে তাদের একজন মারা গিয়েছিল গলার কাছে
এক চিৎকার নিয়ে
একটি কালো পাথর কন্ঠে এক শর নিয়ে
শব এগোয়
শব হল সূর্যমুখী
শব হল এই আমরা সবাই
যারা নদীর ওই পার থেকে চেয়ে থাকি
এবং এখন আর কাঁদবার জন্য আমাদের হাত নেই চোখও নয়
নিজেদের দিকে তাকানোর মত চোখ
সে কেবল দুর্গন্ধ পুঁতে রাখে গভীরে
মানুষের পূতিগন্ধ
এবং ভয় ছাড়া কিছুই অতিক্রম করে না
এবং যে পথে হেঁটে যাবে হত্যাকারীরা
যারা হত্যা করেছে খেয়ালই করে নি গলগন্ড
তাদের তালিকায় ইতিমধ্যেই তারা রয়েছে
পরজীবী ঠাসা শিশুদের পেট ফুলে ওঠে
গত পূর্ণিমায়
বেদীর নিচে থাকা তাদের একজন ছিল আকাঙ্ক্ষিতা প্রেয়সী
একসাথে দশটি জীবন কাটানোর পর তারা দুজন গিয়েছিল বিয়ে করতে
তাদেরই একজন দেখেছিল সমুদ্র ও আশা করেছিল
ফিরে গিয়ে আবার দেখবে
বাড়িগুলি দরজা দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে বুকে
জানলারা আটকানো হয়ে গিয়েছে
এক হিংস্র জমাট বেঁধে যাবার পর আগুনের গোলাপেরা
শুকিয়ে গিয়েছে
আর একবার যখন তারা খুলে যাবে তাদের চোখ ফুলে থাকবে
কোন খারাপ রাতের পর যেভাবে হয়ে থাকে
এবং পুরো একটি বছর যেন এক মন্দ রাতের মত
যে মন্দ বহু বছর ধরে বপন করা হয়ে থাকে
মাটির মত্ত মিনারেরা হারিয়ে ফেলে তাদের স্থিতি বোধ
ছাদেরা পাগলের মত কনুই দিয়ে করে গুঁতোগুঁতি
বাতাস নগ্ন করে দেয় ঘন্টাধ্বনি
পৃথিবীই হল জননী একমাত্র মা
কেউ যেন চেঁচিয়ে বলল একথা
হয়ত তাকেও মেরে ফেলবে ওরা
সে লুকিয়ে পড়ে একটি পাথরের আড়ালে
পাথর লুকিয়ে পড়ে মানুষের আড়ালে
ধৈর্যশীল পৃথিবী আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে
আমাদের জীবন পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকা নদী যেন
ধরিত্রী খুলে দেন তাঁর উদার বিছানা
এবং তারপর এতখানি বিস্মরণের পরে কেউ কখনও কিছু বলবে না
কিচ্ছু না জীবন তাদের ফিরিয়ে দেবে না কিচ্ছুটি বদলাবে না এতখানি যন্ত্রণা
এবং সেইসব শূন্য দৃষ্টি কখনও কোনকিছুর সাথে
ফিরবে না পূর্ণ হতে
এতখানি প্রতীক্ষা যখন পাথরে পরিণত করে
অপেক্ষারাও তখন হত্যা করে ফেলে
এটি একটি দেশ যেখানে অপেক্ষার নাম পাথর
মানুষ তা জানে এবং জানে প্রতিটি মুহূর্তে
এবং তা ভুলে যেতে চায়
মৃত্যু হল স্বাধীনতার নামে এক মন্দ নারী
সবার উপর কেউ যখন উৎসব থেকে চলে যেতে চেয়ে
কাপড় বদলে ফেলে
এবং মৃত্যু তার পিছুপিছু আসে
এবং বৃত্ত নাচতে চায় নূতন করে
Agua de las montes পাহাড়ী জল
পাহাড়ী জল স্ফটিক স্বচ্ছ
কর্মক্লান্ত ফোঁটায় ফোঁটায়
উঁচু মেঘের অন্ত্রে
এবং পাহাড়ের বোঁটায়
থাকা জল যা তুমি খুঁজেছ
তোমার নিজের মধ্যে
কষ্ট দেয় নিচে
প্রতিটি পাতার অন্ত্র এবং মুখের ভেতর
মুখ গহ্বরদের ভিড়ের সুতোয়
সুতোদের ভিড়ের সুতোয়
ত্বক নাভি তারাদের গিঁট
পাহাড়ী জল স্ফটিক স্বচ্ছ
যা তুমি খোঁজ নিজের ভেতরে
এবং আমার চাপ জর্জরিত জীবন
দৌড়ে যায়
তোমার আদি সত্তার সারাংশের ভেতর
তোমাকে দ্রবীভূত করে দিতে
মুখের
তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে
অন্ত্রে
বীজের ভেতরে যে তোমার জন্য অপেক্ষা করে।
PATRIA ULTRAJADA ক্ষুব্ধ জন্মভূমি / SIXTO SARMIENTO CHIPANA সিক্সতো সার্মিয়েন্তো চিপানা/ Traduccion de castellano al bengali – Jaya Choudhury মূল স্প্যানিশ থেকে সরাসরি বাংলায় তর্জমা জয়া চৌধুরী
যখন অপরাধ বেড়ে যায় কেউ তা দেখতে চায় না
বের্টোল্ট ব্রেখট
আমি সেই অনেকের স্তূপের মত হতে চাই না যারা হাততালি দেয়
যারা মুখের ভেতর মলত্যাগ করে
এবং বলে দেশের জন্য ভালবেসে তা করেছে
দেশ, ভালবাসার স্বদেশ
তোমাকে ওরা দুঃখের চাদরে মুড়ে দিচ্ছে
গোবরে মাখিয়ে দিচ্ছে তোমাকে
চাই না আমার পতাকা নর্দমা ঘষামাজা করে
এবং আগামীকাল ওরা তোমায় জ্বালিয়ে দেয়
কুৎসিত হাসির পেছনে তোমাকে আড়াল করতে থাকে
দেশ, ভালবাসার স্বদেশ
যে কটা চোখ বাকি আছে তারা তোমার থেকে নিংড়ানো জারি রাখে
তোমার হৃদয়ের প্রতি ওরা রেগে গেছে করেছে নিষ্কাশন
কী হয়েছে আমাদের
আমাদের সবাইকে ভালবাসে ওরা অগোছালো আমাদের ভালবাসে ওরা ধর্ষক
ওরা চায় আমাদের হাত তালি দিয়ে উঠুক ওদের কুকীর্তি দেখে
কী হয়েছে আমাদের
রক্তপাত হতে থাকলে তোমাকে ছেড়ে যাব না আমরা
নৈর্ব্যক্তিকতা ফেলে দেব ছুঁড়ে
এসো তোমাকে রক্ষা করি!
MI CIUDAD VUELVE A SER আমার শহর ফের একবার
আমরা দূরের শহরগুলোয় থাকি এবং কখনও সখনও অচেনা মানুষের সাথে কথা বলি এমন বিষয় নিয়ে যেগুলো আমার নিজের কাছেও অচেনা’
অ্যাডাম জাগাজেউস্কি
আমার শহর এখনও ভাবে সে সকালে বাস করছে
আমার শহর প্রতিরোধ করে এবং গোপনে হাঁটে
তার আশাহীন পথ দিয়ে
আমার শহর টিয়ার গ্যাসের
ছায়া হতে হতে ক্লান্ত
আমার শহর বিগত দগ্ধ কবিতার থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে ফিসফিস করে।
আমার শহরে, আবাস তৈরী হয়েছে ঘুমনোর জন্য,
যদিও আমি ঘুমোতে চাই না
যদিও শেষ পর্যন্ত এবং দিনের শুরুতেও দিগন্তে ঐক্যবদ্ধ হবার
এ কোন বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়
ছাইয়েরা ঘুরে ঘুরে আগুন হতে থাকে,
মধ্য দুপুর তপ্ত হতে থাকে
আমার শহরে, যদিও ধোঁয়া তাড়াতে তাড়াতে
ওরা রয়ে গেছে খুশি।
আমার আর্ত শহরের বাঁধানো হৃদয় এখনও ধকধক করে
তার অনুপস্থিত রঙেরা চোখে জল ফেলে
তার হিংস্র জানলাগুলি দিয়ে
যাই হোক বেহায়া নক্ষত্রের একটি আলো পৌঁছে যায় দেখতে
এবং তার অপেক্ষার শ্বাস তাকে গর্ভবতী করে তোলে
তার ঘন্টাধ্বনির প্রতিধ্বনিতে
আমার শহর জানে রক্ত দিয়েই সে জয় আনতে পারবে
এমন মানুষকে চেনে যার মুখ মানুষের মত
যে ভেঙে ফেলে হতাশার বীজ
চেনে এমন মানুষ যে স্বপ্ন দেখে তার হাত আছে
অধরা সকালগুলোকে চায় মুঠোয় ধরতে
আমার শহর দিয়ে একটি কন্ঠের পাতন হয় যা ভেঙে ফেলে
খারাপ ভাবে গড়ে তোলা ধ্বংসস্তূপ
আমার শহর ফের উত্তেজিত হবে
জানে জীবন জানে আমাদের নতুন ভোর
আমার শহরে এখন জীবন্ত রাস্তায়
দুঃস্বপ্ন আটকে দেবার
এবং বিদেশী হয়ে থাকা মানুষদের ফেলে যাবার সময়
এখন আমাদের শহরে বেঁচে থাকার সময়
এখন স্বপ্ন কেটে দেবার সময়
RAPADORA, SUMA KULLAKITA যে নারী চুল কেটেছিল, প্রিয় বোন / GLORIA MENDOZA BORDA / মূল স্প্যানিশ থেকে সরাসরি বাংলা তর্জমা জয়া চৌধুরী
বাঁকানো হাতের মুঠো তুলে ধরি আকাশে
নরকের ঈগলের কর্কশ নখেরা
বৃষ্টি যাকে নীরব করে দিয়েছে যা সমুদ্রে ঘনিয়ে আনে কালো মেঘ
খুঁজি নিকারাগুয়ার ক্রান্তীয় বৃক্ষের জঙ্গল
খুঁজি ক্ষৌরকারিনী খুঁজি সেই কবি নারীকে
জনতার মাঝে প্রাচুর্যময় গ্রীষ্মে
বাতাস বয়ে যায় শনশন খুলে যায় পথ
আমার সবুজ ব্যাগটা নিয়ে যাই / খুঁজি নায়িকাকে
মৃতেরা চিৎকার করে সংস্কৃতি বিস্তারের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করা কবির ভয়
আমার খুঁটিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে ক্ষৌরকারিনীর চুল
উপহার দিতে ইচ্ছে করে আয়াকুচো নগরের
কাঁচিদের নর্তন। ইচ্ছে করে নাচি নিকারাগুয়ায়
কবি নারী যে পালটে হয়েছে ক্ষৌরকারিনী / তরুণ যোদ্ধাদের দোরা মারিয়ার
সে বান্ধবী / কাসা কুয়ার্তেল ব্যারাকের নারী জেনারেল
নিকারাগুয়ার সোমোসার বাহিনীর অনুকরণে
নিজেদের বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে তাদের রক্ষা করা উচিৎ বিদ্রোহীদের
জয়/ দোরা মারিয়া/ কম্যান্ডের একমাত্র নারী
Suma taikitamunasnawa /munasnawa libre*
ওর্তেগা
করেছিল বিশ্বাসঘাতকতা
জঙ্গল পুড়িয়ে দেয়া বাধা দিতে চায় নি, কবি।
সমুদ্রের সে ঢেউ দিয়ে জঙ্গলে
এখনও যখন বৃষ্টি পড়ে চলেছে চাইছি চুল ছেঁটে নিতে এবং লড়াইয়ের কারণের সাথে সহমত হতে।
*তোমাকে ভালবাসি বোন/ তোমাকে ভালবাসি স্বাধীনতা [ আইমারা ভাষায় এটির অর্থ]
# কবিতাটি কবির প্রিয় বন্ধু নিকারাগুয়ার বিখ্যাত কবি ও সান্দিনিস্তা বিপ্লবী ডেইজি সামোরাকে উৎসর্গ করে লেখা। তিনি নিকারাগুয়ার স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। গেরিলা হওয়ার সুবাদে নিজের বাড়িতে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়ে তাদের চুল ছেঁটে দিতেন যাতে তারা ছদ্মবেশে শাসকের রক্ষীবাহিনীর মধ্যে ঢুকে বিপ্লবের কাজ করতে পারে। নিজের বাড়িটিকে ব্যারাক করে তুলেছিলেন। কম্যান্ডান্ট ডাক্তার এবং ঐতিহাসিক ডোরা মারিয়া তখন সে বাড়িতে থাকাকালীন তৎকালীন বিপ্লবী জেনারেল ওর্তেগার বিশ্বাসঘাতকতা করে শাসকের হাতে ধরিয়ে দেন। ওর্তেগা পরবর্তী কালে নিকারাগুয়ার স্বৈরশাসক রাষ্ট্রপতি হন। সামোরা তখন নির্বাসনে চলে যান। সম্প্রতি ফিরে এসেছেন স্বদেশে।
Entre la multitud ভিড়ের মাঝখানে
ওকে দেখেছি
কাছে
ওই ওখানে
উনিশ বছুরে niña chay
“বন্য ঘাস”
আশির দশকের শুরুতে
বন্দিনী, বিদ্রোহিনী
ছড়িয়ে গিয়েছে ধ্বংসাত্মক ভাবে
আদালতে ওকে নিয়েছে ওরা
ধবধবে ফুল যেন ফ্যাকাশে
নির্দেশনামার সবচেয়ে বিরোধী
বিস্মৃত কবি নারী, নিজেদের
নৃশংস স্মৃতি ওরা ভুলে গিয়েছিল
আবেগপ্রবণ বালিকা
প্রতীক তুল্য নেত্রী
দাঙ্গার পরে
ওকে মেরেছিল
বিধ্বংসী পুলিশ বাহিনী
অবরুদ্ধ নগরী
সব ধরনের ক্ষমতার
সব রঙের উর্দি চারদিকে
ভারী ভারী বুট
জট পাকানো শব্দেরা
ভয়/ স্কুলের জুজু যত
আমরা যতসব হাঁ করে গেলা পাবলিকের দল
সংস্কৃতি বিস্তারের বিরোধিতা করার সময়কাল
কবরের দিনকাল
এক একলা রঙ একটাই প্রার্থনা গীতি
লাল দন্ড হাতে সকলে
ধ্বংসের বিরোধীরাও সামিল
বলত-
“আমার কষ্টে তুমি মলম হয়ে উঠো”
জেলকুঠুরির
আয়নায় মুখ দেখার পথ খোঁজে
তোমার সমাধির উপরে ওরা উড়ে যাবে
রাতের কাকের মত, রুথ
মৃতদের শহর বজ্রনির্ঘোষে বলবে-
এডিথ এডিথ এডিথ উপস্থিত!
কত ধরনের কবর
কানায় কানায় পূর্ণ চত্ত্বর
বহুবার শক্তিশালী পাথরেরও
বছর গড়িয়ে গেলে ওকে তারা ভুলে গিয়েছিল
তরুণী যোদ্ধা
তোমাকে ফেলে গিয়েছিল ওরা হয়ে উঠেছিল warmicita
বহু বছর পরে
বদলে গিয়েছিল ঝলসানো দেশে
তোমায় দেখেছি চিনামাটির পটে
পড়েছি কবিতা তোমার
আমিই সে যে তোমায় দেখেছিল
ভীড়ের মাঝখান থেকে
ওরা তোমাকে ফেলে গিয়েছিল, চলে গিয়েছিল
পড়েছিল স্রেফ তার চিনামাটির পট ও তার সঙ্গীত।
# কেচুয়া ভাষায়
niña chay – বালিকা
warmicita – অর্থ রমণী
কবিতাটি বিপ্লবী এডিথ লাগোসকে উৎসর্গ করে লেখা। এডিথ লাগোস ছিলেন পেরুর গেরিলা যোদ্ধা। তিনি পেরুর মাওবাদী বামপন্থী দল Sendero luminoso –র সদস্য ছিলেন। মাত্র উনিশ বছর বয়সে সরকারের বিরুদ্ধে এক আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। শোনা যায় অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় ত্রিশ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি আলান গারসিয়া-র শাসনকালে (১৯৮৫-৯০) কম্যান্ড্যান্ট রোদরিগো ফ্রাঙ্কো এডিথের মৃত্যুর পরেও তার জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে কবরটিকে গুড়িয়ে দিয়েছিল ।
Señales ইশারাগুলো/ Harold Alva হ্যারল্ড আলভা
সুন্দরকে আমি ধ্বংস করে ফেলতে পারতাম
একটা পাখির প্রতিচ্ছবি নিয়ে
ফের সংস্থাপন করতাম
বৃশ্চিকের লেজ
যে মন্দ কথা বলে তার বাঁকানো দুই ঠোঁট
এটা না করতে কোন কিছুই আমাকে বারণ করে না,
গোলকধাঁধায় ভরা শহর,
সরলতার বন্য সুগন্ধ,
এক হত্যার নিষ্ঠুরতা।
আমি তোমায় আমার রীতিতে আঁকতে পারি,
তোমার পায়ের দুটো চোখ যা হাতদুটোকে ইশারা করছে
ঘাটের ক্ষতেরা,
সীসার সরীসৃপ,
গাছেদের আঙুল যত,
কিংবা একটা স্বপ্নের লোভ
যে তোমার ইশারাগুলোকে কবর দিয়ে দেয়।
POEMA PARA VENCER EL 14 DE FEBRERO ১৪ই ফেব্রুরারিকে পরাজিত করতে গিয়ে
এই লোকটা আজ দ্বিগুণ হয়ে গেছে
আয়নার ওর ছায়া পড়েছে,
এটা তুমি; তুমিই এটা করেছ।
তির্যক চোখে তাকিয়ে রয়েছে এই লোকটা
নানারকম স্বরে,
কাকের হৃদয় তোমার জন্য
ভেঙে ফেলেছে
এই লোকটার মুখের হাসি মিলিয়ে গেছে
শরীরে জন্তুর চামড়া আর জিভে অন্য যুগের ভাষা
তুমি যখন ঘুমোবে তখন ও তোমায় দেখে
এবং তোমার চুপ থাকার কারণ ওকেই জিজ্ঞেস কোরো
হয়ত যদি এই পার্টিটাই এই পৃথিবী হত
যার ওপর তারারা ঘনিয়ে আনে অন্ধকার
কিংবা এই দরজা যে কখনও ক্লান্ত হত না
তাকে পাগলামি করতে অনুমতি দেয়া হলে সে তো
এ কবিতার অসময়ের ব্যক্তিগতকরণ
এই তৌল যন্ত্রের সময়ে এই লোকটা
যে এখন ট্রাউজার্স পরে আছে
এবং অস্বাভাবিক রোগীর মত সেরে উঠে
বিছানা থেকেই সূর্যকে স্বাগত জানায়,
তোমাকে লেখে,
সেরে ওঠে তোমার কারণে,
তোমার হাড়গোড়ের জন্য।
এই বইয়ের লোকটা,
এই মারাত্মক লোকটা,
ও তোমার;
এখানে ওর হৃদয় রয়েছে,
ওর বুকের পাঁজর,
খাড়া গিরিচুড়ার দিকে চেয়ে ওর মুখের ভেংচি।
cUaRtO piso চতুর্থ তল/ Liliana Miranda লিলিয়ানা মিরান্দা
চতুর্থ তলে
মোটা দানার চিনি ছড়ানো পাউরুটিতে লেপা
ওর মাংস থেকে
জ্যান্ত মাংসের গন্ধ বেরোচ্ছিল
কান্না ও খিদের সামনে
একের চারভাগ রুটি
সামলে রাখতে রাখতে
দায়িত্বজ্ঞানহীন
বিশৃঙ্খলায়
মোমবাতিদের চোখের জল আলাদা করতে করতে
কালো দেবদূতেরাও
গন্ধ পেতেন চতুর্থ তল থেকে
এবং নাকী নাকী সুরে
মায়েদের বাবাদের প্রতি
কষ্ট পাওয়া অংশীদারদের মত
চতুর্থ তল থেকে ভদ্রসভ্য পেশাদের
গন্ধ বের হত
চকোলেট কেকেরা
হাসি সামলে রাখতে রাখতে
লুকোয় আলোর টেবিলে
স্বপ্নে খোলা ক্ষতের উপর
হাত দোলাতে দোলাতে
চতুর্থ তল থেকে কীসের গন্ধ পাওয়া যায়
গজ ও অস্ত্রোপচার
ঝোড়ো বয়ঃসন্ধির উথালপাথাল
শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে পিছনে
ডানা মেলা ক্যালেন্ডার পাখিরা
মঙ্গলবার সকাল সকাল চতুর্থ তল
আলোকোজ্জ্বল শৈশবের গন্ধ পায়
বালিকার দিকে চেয়ে মসৃণ ভঙ্গী করে
প্রজাপতি পাখা ঝাপটায়
টিলায়
প্রাণবন্ত দক্ষতায়
কুড়ি একুশ এমনকী
বাইশের তরুণকেও
একটি বিছানায় থেকে যাবার মত সাহসী
চতুর্থ তলে
আয়না দিক বদল করে
জয় করে
সুতোর নক্ষত্রপুঞ্জ
Epitafio এপিটাফ
একটা মাংসল ফলের তালা খুলে ফেলি আমি
এবং নিজেকে পরিচ্ছন্ন দেখি
বাগানে মাটি থেকে
উপড়ে ফেলি চারা এবং আমাকে সাজিয়ে তোলে
গুবরে পোকাদের লোম
প্রাতরাশে ডিমভাজা খাই
খোলাগুলো মাটি উর্বর করে
আমি ভালবেসেছিলাম
লড়েছিলাম গমকলের চাকার
বিরুদ্ধে
আমার এপিটাফ একথা বলে।
MEMORIA HEDIONDA পূতিগন্ধময় স্মৃতি/ YOSHIRO CHÁVEZ VILLEGAS ইয়োশিরো চাভেস ভিইয়েগাস
সকাল ছটায় এক সভাঘর থেকে
আরেক সভাঘরে ঘুরেছি
বেঁচে থাকতে না চেয়ে কেউ
জীবন থেকে যেভাবে ফেরে
দুপুরে ওর কোমর থাকে
লিকলিকে সরু
কিন্তু রুটির অভাব কে বোধ করে
সেক্ষেত্রে সে যার অভাব বোধ করে
তা হল স্মৃতি
এখন যে কেউ তাকে মনে করে না।
বনেদী বড়লোকের প্রাসাদ এটা
যেখানে থেকেছে তারা
বহু প্রাচীন
যে যন্ত্রণায় ভুগেছে তারা ততখানি
পুরনো।
সম্ভব হলে
ক্ষরণ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকবে
সেপিয়া রঙের ছবিগুলি ভেঙে দেবে হয়ত
ওরা একসাথে কষ্ট পেয়েছিল বালিশের তলায়
ওখানেই সংরক্ষণ করেছিল।
ভাল হত যদি আগে থেকেই
ছিদ্র দেখে ছুঁড়ে দিত
সবকটা জ্বলন্ত অঙ্গার
এবং দুর্গন্ধ যা ওকে জ্বালিয়েছিল।
যখন সবকিছু চলে যায়
কলঘরের পূতিগন্ধময় নর্দমা বেয়ে
তখন স্মৃতির কোন ওষুধ থাকে না।
El Hombre পুরুষ
হাঁটে
হাত দিয়ে
গিলে ফেলে
শরীর
শরীর
হাত দিয়ে
হাত দিয়ে
এবং শরীর দিয়ে
শরীর দিয়ে
এবং হাত দিয়ে
পিষে যায়
পোকামাকড়
ছালের ওপর
বুজকুড়ি কেটে ফোটে
মাথা হেলাবার
ভঙ্গী করে
তাকিয়ে দেখতে থাকে।
Omar Aramayo ওমর আরামায়োঃ
কবি সাংবাদিক প্রাবন্ধিক সুরকার প্রকাশক ওমর আরামাইয়ো ১৯৪৭ সালে পেরুর পুনো রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। সুররিয়ালিস্ট এই কবি রিকারদো গোঞ্জালেসদের মত পেরুর ষাটের দশকের বিশিষ্ট কবিদের অন্যতম একটি নাম এবং এখনও তিনি সৃষ্টিশীল। গ্রাম ও শহরকে জুড়ে তার সঙ্গে পরাবাস্তব মিশিয়ে পরীক্ষামূলক ও বৈচিত্র্য পূর্ণ কবিতা তার কলমে বারবার দেখা গেছে। বহু চলচ্চিত্রে সুর দিয়েছেন। তার মধ্যে সেরো আলেগ্রিয়ার কাহিনী থেকে নির্মিত চলচ্চিত্রও রয়েছে। অসংখ্য কীর্তির অধিকারী এই লেখকের বিখ্যাত উপন্যাস LOS TÚPAC AMARU 1572-1827 পেরুর আদিম জনজাতির ইতিহাস বিধৃত।
SIXTO SARMIENTO CHIPANA সিক্সতো সার্মিয়েন্তো চিয়াপানাঃ
কবি, প্রাবন্ধিক, কলামনিস্ট সিক্সতো সারমিয়েন্তো চিয়াপানা পেরুর সমসময়ের এক উল্লেখযোগ্য কবি। তিনি স্প্যানিশ ভাষায় লিখলেও বিশেষ আগ্রহ তাঁর ইন্ডিয়ান জনজাতির কেচুয়া ভাষা নিয়ে। সাহিত্যে বারবার এ ভাষার ব্যবহার করেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের অধ্যাপক। জার্মানি, ইউ এস এ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চিলে প্রভৃতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাঁর বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন, পড়িয়েছেন। উল্লেখযোগ্য কাজ “El desaparecido” (1986), “Cantos delSilencio” (2016), “Lágrimas sin sombras” (2016), “Sindulia elVerbo” (2017), “En Voz Alta” (2019) y “Diario de un indigente” (2020) ইত্যাদি গ্রন্থ।
Gloria Mendoza Borda গ্লোরিয়া মেন্দোসা বোর্দাঃ
কবি, প্রাবন্ধিক গ্লোরিয়া মেন্দোসা বোর্দা ১৯৪৮ সালে পেরুর পুনো রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৭। পেরুর বিখ্যাত বামপন্থী নেতার পুত্রী গ্লোরিয়া পেরুর কবিতা আন্দোলনের প্রথম সারির আন্দোলন “কার্লোস ওকেয়ান্দো দে আমাত” গ্রুপের সদস্য। তিনি শিক্ষাবিদ ও কবি জগতের একটি বিশিষ্ট নাম। ইংরিজি, আফ্রিকান, গ্রীক, জার্মান, ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত তাঁর কবিতা। ২০১৭ সালে পেরুভিয়ান স্টেট মিনিস্ট্রি অফ কালচার সোলার সালভাদোর তাঁকে পেরুর সংস্কৃতি প্রসারের জন্য মেরিট গোল্ড ও ডিপ্লোমা প্রদান করেন। সে দেশ ও অন্যান্য লাতিন দেশ থেকে বেশ কটি পুরষ্কারে ভূষিত। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ Wilayar (1971) “Los grillos tomaron un cimbre (1972), “Lugares que tus ojos ignoran (1985). “El legendario lobo (1997). “Dulce naranja dulce Lima (2001) ইত্যাদি।
Harold Alva হ্যারল্ড আলভাঃ
লেখক সম্পাদক রাজনীতি বিশ্লেষক হ্যারল্ড আলভা ১৯৭৮ সালে পেরুর পিউরা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এতাবৎ বহু বই প্রকাশিত। বেশ কটি আন্তর্জাতিক সাহিত্য পাঠ উৎসব আয়োজনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কীর্তি Firmamento (1996) Morada y Sombras (1998) Antes de abandonar la sangre (1999) Canaveral: Libro de Tierra (2001) । সদ্য প্রকাশিত নতুন সঙ্কলন গ্রন্থ La primera linea poesia iberoamericana (2021)।
Liliana Miranda লিলিয়ানা মিরান্দাঃ
অ্যাথলিট, কবি, ফটোগ্রাফার লিলিয়ানা মিরান্দার জন্ম পেরুর লিমা শহরে ১৯৫৫ সালে। মূলত ভ্রমণ রকাহিনী ও কবিতা লেখেন তিনি। পেরুর বিখ্যাত নারীবাদী লোলা ফ্লোরেসের নেতৃত্বে “মনোলোগো ফেমেনিনো” নামে যে আন্দোলন হয়েছে তিনি তার একজন গুরুত্বপূর্ণ মুখ। স্প্রিন্ট ও হাইজাম্প বিভাগে ৭৫ টি পদক পেয়েছেন অ্যাথলিট কেরিয়ারে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ Aligerando mi paso (2005) আমার চলার পথ দীর্ঘ করি এবং Piel de Setiembre (2012) সেপ্টেম্বরের ত্বক।
YOSHIRO CHÁVEZ VILLEGAS ইয়োশিরো চাভেস ভিইয়েগাসঃ
কবি ঔপন্যাসিক গল্পকার এবং গীতিকার ইয়োশিরো চাভেস ভিইয়েগাস-এর জন্ম পেরুর কুজকো প্রদেশের লা কনভেন্সিওন শহরে। প্রথম লেখা অপেরা El amor es un abismo que viene hacia nosotros, বা ভালবাসা হল এক নরক যা আমাদের দিকে ধেয়ে আসে। পেরুর বিশিষ্ট প্রকাশনী সুমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত তার গল্পগ্রন্থ Sin amor no se vive, con amor se muere প্রেমহীন কেউ বাঁচে না, প্রেমে মানুষ মারা যায়, উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ Ceremonia de la cicuta হেমলকের উৎসব।