পৃথা চট্টোপাধ্যায়
নীলমণিলতা
১
পাহাড়,বন,বৃষ্টি, মন মিশে থাকে বুকের পাঁজরে। মানুষ এগিয়ে যায় একা বৃক্ষহীন লালের ভিতরে, বৃত্তের গনগনে আঁচে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কতবার কাউকে ডাকতে চায়, একটুও আওয়াজ বের হয় না। শুধু স্বপ্নের মত কিছু শব্দ এসে কীভাবে মিশে যায় কবিতায়, নীলমণিলতায়
২
তারপর একদিন নদীও পাল্টে ফেলে গতিপথ। জলের আঘাত সয়ে সয়ে ক্ষয়ে যায় পাথরের নুড়ি। গভীর ঝড়ের সাথে ভেঙে পড়ে ডালপালা। তার সাথে পারবে না কেউ। নীলমণিলতা নাছোর ভাবে আঁকড়ে থাকে বোবা গাছ । দেওয়ালের কোল ঘেঁষে চুপচাপ পড়ে থাকে জলঢোঁড়া। শুধু শ্যাওলার মখমলে শামুকের বুক টেনে হাঁটা, রেখে যায় আঁঠাপথ
৩
মুখ তোলে শিকারের খোঁজে। শুঁয়োপোকা গিজগিজে সেঁটে থাকে সজনে গাছের ছালে। চায়ের দোকানে শুয়ে পথের কুকুর, নাক টেনে গন্ধ শুঁকে নেয়। রোজকার এক ছবি। তারপর একদিন থেমে গেলে বৈশাখী ঝড় , জ্যৈষ্ঠের ক্ষত নিয়ে পড়ে থাকে এমন শহর
৪
বকুল গাছের থেকে টুপটাপ ঝরে যায় ফুল। গিরগিটি মিশে থাকে ডালের সবুজে, মাঝে মাঝে খদ্দের চা হাতে দেশের খবর নিচু স্বরে বলে। সেই লিকলিকে ছেলে একা বসে মুখ থেকে লালা ঝরে, কেউ তাকে ডাকে না তো ঘরে। আদৌ কি মা আছে তার? চারপাশে অগোছালো জীবন সংসার। বেলা বাড়ে। বাজারের দর ওঠে-নামে। মেছো বউ বুকের আঁচল খুলে ঘষে নেয় পিঠ নিরালা গলির কাছে। ঢেকে ফেলি চোখ তবু স্কুল পড়ুয়ার মত ডালিমের মোহ টেনে নেয়
৫
তাকে ছুঁলে উড়ে যায় হলুদ রঙের প্রজাপতি । সায়রের জলে ফোটে শালুকের ফুল। স্তনবৃন্তে অস্ফুট ভ্রমর গুঞ্জন। এইসব কথার কপাট খুলে যায় অযুত বসন্তে। ফেলে আসা দুপুরের ক্লাস রুম, লুম্বিনী বন, কোলে উড়ে এসে পড়েছিল শরবিদ্ধ হাঁস, উদগ্রীব ঠোঁটে ছিল কথা। মনে নেই বনের আড়ালে সেই কবে ফুটেছিল নীলমণিলতা
৬
সেখানে ঘাসের বনে ছুটে যায় চিত্রিত হরিণ। দূর থেকে দেখা যায় ডালপালা শিং। নিরীহ মুখের ভাষা চোখ দুটি কোন শিল্পী যেন এঁকে দিল । এই সব মায়াময় ছবি একা দেখি। কোথাও হয়না যাওয়া এ শহর ছেড়ে। রোজকার উর্ধশ্বাসে মরিয়া জীবন। তবে কি একাই থেকে যাবো ? গ্রিল জুড়ে শোভা পাবে
নীলমনিলতা
৭
চড়াই উৎরাই ভেঙে কেমন এগিয়ে যায় তরুণ গৈরিক। ঐ রং আজীবন আমিও চেয়েছি। পাহাড়ের ফাটলে ফাটলে শিরা উপশিরা বেয়ে শীত রক্ত চলাচল…আরো কত ভয়ানক কীট বৃশ্চিকের দংশন
গর্ভগৃহে ভয়ঙ্কর জ্বালা । এ সময় পুড়ে যায় যজ্ঞহীন নিরর্থক । নিটফল তাহলে কি শূন্য হবে ফের ? শূন্যতায় মিশে যাবে শামুকের চলা? পূর্ণ এসে ভরে দিক মানুষের জীবন খামার। সজীবতা শুষে নিয়ে বড় হোক নীলনণিলতা
৮
কারো কারো স্বপ্ন আসে, ঘুম আসে। চারিদিকে দাবদাহ জীবনের যন্ত্রণার মুখ। কী করে ঘুমোতে পারি দেশে-ঘরে এমন অসুখ ! ট্রেন থেকে দলে দলে মেয়ে-পুরুষেরা নামে। ঠিকে ঝি, শ্রমিক মজুর… কাজ আছে, কাজ নেই অনিশ্চিত বর্তমান ঘেরা। ভালোবাসা কথা দেয়, কাছে আসে, সরে যায়। আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। খিদে তৃষ্ণা গিলে নেয় গর্ভবতী গাভীটির হাঁ… খর রৌদ্রে কাক ডাকে কা-কা-কা..
.
লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক