পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
ভোর জাগে
১
ভোরের মুখ রাতের পাহারায়
ঘুমিয়ে আছে, এখন ওর গায়ে
পুলকফুল দ্যুলোক হতে ঝরে…
এ হাতে ওকে স্পর্শ করব না
এখন ওকে স্পর্শ করব না
কখনও ওকে স্পর্শ করব না
মাধুরী, মারো সকল শূন্য করে…
২
যে যুদ্ধ জেতে না কেউ সেই যুদ্ধ আমরা জিতে গেছি।
আগুনজ্বালানো রাগে বাঁশি বাজে, রণবাদ্য নয়।
মুখোমুখি প্রতিপক্ষ, হিংসা খুলে, অলজ্জিত চোখে
নিজ নিজ অস্ত্রমুখে ওষ্ঠ রেখে শিখে নিই গহন প্রণয়।
৩
একটি নক্ষত্র আসে। নক্ষত্রের পানে চেয়ে থাকি।
পিছনে যে মহাকাশ ফোটে, তার শত শত আঁখি।
কোন তারা কবে আলো ধরেছিল,
কবে নিভে গেছে কোন তারা,
রূপবান আলোশিশু বোঝে না সে চিরায়ত ধারা,
বোঝে না সে অন্ধকারে দূরত্বের জটিল জ্যামিতি…
আমি একা একটি নক্ষত্রদোষে মরে গিয়ে
আলোভুক হয়ে বেঁচে উঠি।
৪
আঁখি জাগে, ভোর জাগে আর
নাগচাঁপা গাছে জাগে থরে থরে বিরহভৈরবী :
‘কারে চাও? কাহার মিলন?’
পুবাকাশে আলো ভাসে, হিরন্ময় উদ্ভাসিত হন…
৫
এ শরীর বৃষ্টিস্নাত শাখী
এই মন ঘর্ষণে ঘর্ষণে
যতদূর সুগন্ধ ছড়াল
যতখানি ডুবে গেল মনে,
তত রূপে সাজাল চন্দন…
আমি সে চন্দনে ক্ষীণ টিকা,
অলকাতিলক এঁকে রাখি।
বল তারা জন্ম জন্ম কার?
প্রতীক্ষা নিবিড় হয়ে বলে :
হে স্নিগ্ধতা , সজনী আমার…
৬
ধ্বমধ্বম বিজুরিরেহা চিকন গ্রীবায়
দুলিয়ে সে দূরে উড়ে যায়,
গোধুম রঙের ত্বক, কপালে দগদগে লাল টিকা…
সে আমার নর্মসহচরী, মোহমরীচিকা।
৭
শব্দশস্য, দুধের মতো রস…
কে তুমি ত্রাণ, বেদনাপরবশ
অন্ধকার আড়াল করে হাসো?
অন্ধকারে মর্ম চিনি তার :
‘আমি অশোকগুচ্ছ। সন্ত্রাসও।
তুমি তমসাহীনা তামসী, অন্ধকার ! ‘
৮
ফুটে ওঠো রক্তের কুসুম, মহাকাশে…
অসহ্য আনন্দে গলে, ক্লান্তির আড়ালে
স্বেদজলে, হ্যাঁ, তোমার ছায়াটুকু ভাসে…
হে আমার অত্যাগসহন,
ভোর জাগে… জাগে এই অকথিত মন, কুসুমনিহিত
রাঙা রেণু লীলাচ্ছলে ছুঁয়েছে চরণ
যতবার,
হাওয়ায় ওড়ালে রং অনির্দেশ্য আনন্দ আমার !
অসাধারণ কবিতা।
মন দিয়ে পড়লাম। খুব ভাল লাগল। অনেকদিন মনে থাকবে। কবিকে আন্তরিক ধন্যবাদ।