নুর উন্নাহার-এর কবিতা
অনুবাদে চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
একদম হালআমলের শিল্পী এবং কবি।মেয়েটির জন্ম পাকিস্তানে, করাচীতে। ইউটিউব,ব্লগ,সোশ্যাল মিডিয়াতে অতি অভ্যস্ত। সমালোচকের বক্তব্য,"...নুর বলেছেন তাঁর নামের অর্থ, দিনের আলো।এই নাম,যথার্থ, কারণ তাঁর বইয়ের প্রতিটি লেখায় আছে এক আলোভরা জাদু।যা, আমাদের কাজ করতে, বেঁচে থাকতে, ভালোবাসতে প্রাণ জোগায়..."বইটির নাম ইয়েস্টারডে আই ওয়াজ দ্য মুন। অনুবাদ করলেন চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
১
বাড়ি বানাচ্ছি।
মেঝেতে কাঁচা জীবন লেগে আছে।
দেয়ালে আকাশ দেখার স্বপ্ন গাঁথা আছে।
ক্ষমা বুলোনো ছাতগুলো!
নিজেকে বানাচ্ছি আমি
২
আমার মায়ের নাম
অনুবাদ করলে দাঁড়াবে,
সূর্যমুখী নারী।
মা আমার নাম রেখেছেন,
নুর উন্নাহার।
দিনের আলো।
ইচ্ছে হলে, আলোকিত হই।
চাইলে, আগুন হয়ে উঠি।
সূর্যের দেয়া নাম।
আমি জানি,
আকাশ ও গ্রহণ-লাগা।
জানি,নক্ষত্রদের সঙ্গেই আমাকে
ভেসে বেড়াতে হবে।
৩
গনগনে আঁচ আমার।
না-বলা কথার মধ্যে
অশ্রুত আমাকে ছেড়ে রেখে গেছিল
পূর্বনারীরা।
তাই আমি লিখি,বলি, আলো ঢালি
সেসব কথায়,যা ওরা বলতে পারেনি কোনোদিন
৪
পতন,মহিমাময় হোক।
কাচের বাড়ির মতো ভেঙে পড়ো।
মস্ত জাহাজের মতো ডুবে যাও।
সব মিটে গেলে,
ডুবে যেতে যেতে,
বুজে যেতে যেতে।
আবার ধ্বংসস্তূপে জেগে ওঠো।
৫
কিছু বাড়ি হানাবাড়ি যেন।ভূত না থাকতেও পারে।স্মৃতি পাতা থাকে, দুঃসহ। নামহীন।অবয়বহীন। দরজা জানলা ভেঙে পড়ে।এসব বাড়িতে ঘুরি। বাতিল স্মৃতির জন্য।অসহ বর্তমান আর ভবিষ্যৎ,নীরব দর্শক।এসব জায়গায় মরা স্বপ্ন,ভগ্ন হৃদয় ঘোরাঘুরি করে। নাহলে কি দেখতে পেতাম কখনও, জমকালো ঘর ও দুয়ার,ক্রমে বিষাদে মুড়ে ঘন অন্ধকার-হয়ে-যাওয়া পোড়োবাড়ি এমন!
প্রত্যেকটি কবিতার মধ্যে রয়েছে এক অন্তর্লীন বিষণ্ণতা, যা চমৎকার ধরা পড়েছে প্রাঞ্জল এবং কাব্যিক অনুবাদের ছাকনিতে।
সাবাশ! পাকিস্তানি কবিরা ১৯৮০-র দশক থেকে কবিতাকে এক ধারালো অস্ত্রে পরিণত করে ফেলেছেন। অফজ়াল আহমেদ সৈয়দ তাঁদের মধ্যে অগ্রণী, পরে এসেছেন সয়ীদউদ্দিন, আজ়রা আব্বাস, সরোয়ত হুসেন, তনবীর আন্জুম, জীশান সাহিল প্রমুখ। এই তালিকায় নূর-এর নাম আমার আর একটা ধারণাও জোরালো করল, ‘৮০-র দশক থেকেই পাকিস্তানি কবিতার পীঠস্থান লাহোর থেকে করাচিতে বদলে গিয়েছে। ঠিক বুঝলাম না নূর ইংরেজিতেই মূল লেখা লেখেন না এ বইটি তরজমা। যদি ইংরেজিতে লেখেন আশা করব শীঘ্রই মাতৃভাষায় কাজ শুরু করবেন। খুবই সম্ভাবনাময়।
খুব ভাল কবিতা। অনুবাদ যে ভাল, তা ত বলতেই হবে, কারণ পড়ে যেন অনুবাদকের নিজেরই কবিতা বলে মনে হয়।
ভীষণ ভালো লাগলো … অপূর্ব অনুবাদ