
দুটি কবিতা
:: সৌমাভ
মুখ
শরৎবাবু, মনে আছে আমার মুখ? অমল, সুচরিতা, লাবণ্য… মনে পড়ে আমায় ? পাহাড়, মনে পড়ে আমার ধারালো মুখ? জলপ্রপাত, মনে পড়ে সেই উচ্ছল মুখ? হে সমুদ্র, মনে আছে রোদপড়া সে-চিবুক? জমা জল, মনে পড়ে মুখের নরম ছায়া? কাবেরী পিসি, মনে পড়ে জানালার ওপারে লুকানো ভীরু মুখ? কলকাতা ‘ক’, স্থানীয় সংবাদ, মনে পড়ে? খড়গপুর লোকাল, রূপনারায়ণ নদ, মনে পড়ে জানলার ধারে বসা সেই কিশোরের মুখ?
খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছাই মেলার মাঠে, মেলা ভেঙেছে অনেক আগে, দোকান গোছাচ্ছে নিঃসন্তান দোকানি, বস্তার ভিতরে ঢুকিয়ে রাখছে আমার মুখ, কেউ তাকে কেনেনি!
ঈশ্বর
বিড়ালের ডাকনাম ঈশ্বর আর ঈশ্বর আমাদের পাড়াতেই থাকে। যেতে আসতে তাকে দেখি ইস্কুলবাড়ি অথবা শীতলা মন্দিরের চাতালে। খুব পরিপাটি করে চোখে চোখ মেলাই। বিকালে টালি থেকে খসে পড়ে মাটিতে যেন কোন ভুল হয়নি কোথাও। কালো ঘন জলে ভুস করে ভেসে ওঠা মায়াবী মাছের চোখের মত অন্ধকারে তার মনি জ্বলে। পুঁইমাচার নীচে সে শুয়ে থাকে, লেবুবাগানে জোনাকীদের সাকার্স দেখে, সাদা লোম ফুলিয়ে ঘুরতে থাকে ঠাকুরমার পায়ে পায়ে। মাঝে মাঝে পুকুরের ওপর জারুল ফুলের নিঃশব্দ ঢলে পড়া দেখতে দেখতে ঈশ্বর ঘুমিয়ে যায় আকাশের দিকে পা তুলে। তার মুখ উঠানের শান্ত তুলসী পাতার মতো, বোজা-চোখ মাঝরাতের মিহিন বৃষ্টির মতো অভিসন্ধিময়, চিবুক যেন শ্মশানের পাশে শাশ্বত প্রশ্নাতীত পুকুর, প্রচন্ড ডাকাডাকিতেও সে চোখ খোলে না যতক্ষন না কেউ এসে দেবীপক্ষে তার চোখ ফুটিয়ে দেয়।