তন্ময় ভট্টাচার্যের কবিতা
সংশোধনবাদ
(১)
হে দিন, করুণ দিন, তোমার পতাকা যারে দাও
বহন করার শক্তি তারা যদি এখনও না পায়
খিদের প্রকৃত অর্থ তাহলে তো ইঁদুরখাঁচায়
প্রবল চেষ্টা করে, ক্রমশ ঝিমিয়ে, থেমে যাওয়া
হে দিন, তারার দিন, তোমাদের উন্নাসিক ছায়া
মহাজাগতিক কোনো ক্ষমায় সংশোধিত হলে
আবার তিলক কাটত, সুর উঠত ব্যথার শ্রীখোলে –
দিবারাত্র নামগান, আচণ্ডালব্রাহ্মণের হরি
হে দিন, হাতুড়িচিহ্ন, দু-বাহু ঊর্ধ্বে মেলে দিয়ে
কাস্তের পাশেই, এসো, বিপ্লবের দারুমূর্তি গড়ি
(২)
যে-কোনো দুঃখের পাশে যে তুমি দেওয়াল এঁকে ফ্যালো
ডানা মেলছে পাখি আর মুছে যাচ্ছে শ্রমের ফারাক
তবু বন্ধ সূতাকল, দ্বিধাগ্রস্ত রেশমের ঝাঁক
শহীদবেদির গায়ে লিখে রাখল নিজেদের নাম
স্থানীয় সংবাদ আমি এসবই গুছিয়ে পাঠালাম
কারো জানলা হাহাকার, কারো পর্দা মায়ের দু’চোখ
ওদের ক্রোধের ভাষা তোমার শ্লোগানে লেখা হোক
নিজেকে দায়িত্ব নিয়ে দায়ী করো, বিস্মৃতিকাতর
প্রতিশ্রুতি ভাসে ফের, চুনে অন্ধ কোয়ার্টার-দেওয়াল
কুসুমরঙের সূর্য, উঠি-উঠি, ভোটের বছর
(৩)
অথচ এখনও কিন্তু নাম শুনলে হৃদয়ে দহন
পাঁজর-ফোঁপানো বৃদ্ধ চেয়ে দ্যাখে জ্ঞাতির সোহাগ
জীবন গিয়াছে চলে তবু স্বপ্ন পুষেছে যে দাগ
মসৃণ হতেও পারে, পারে না কি, স্বদেশ আমার
কূট প্রশ্ন বুকে নিয়ে পাঁচটি দশক পারাপার
চেয়ারম্যানের ভাষ্য মনে পড়ে, নলের ভিতর
ক্ষমতা, ঘুমিয়ে আছ? জাগাতে পারলে আমি ওর
নিশ্চিত পতনটিকে মহাকর্ষে মিলিয়ে দিতাম
চারুসূর্য নিভে যায়, গ্রামে-গ্রামে শহুরে হ্যাজাক
ভূমের অরণ্যে তবু উঁকি দিচ্ছে মানুষের ঘাম
(৪)
ওসব পলাশচিন্তা ধিকিধিক পাহাড়ে কোথায়
ছাইভস্মে ঢাকে ফুল, দাঁত চাপে বৃক্ষের কপাল
তোমার বসন্তদূত তখনও চমৎকারী লাল
শুধুই বক্তব্য জমে মর্মরিত লেনিনের পা-য়
অনিষ্ট হওয়ার মুখে কারা হে নতুনতর গান
সুরের কাঠামো বেয়ে পাড়ি দিচ্ছ অযুত-নিযুত
বিস্ময়চিহ্নের দেশে কমা হও, সাবলীল খুঁত
প্রতিটি বাক্যের গায়ে আশাতীত চরিতাবিধান
তবে কি প্রস্তুত ক্ষেত্র? যজ্ঞাগারে প্রবেশিলা, বীর?
তোমাকে ইজারা দিচ্ছি কোপনস্বভাবী পৃথিবীর
যাকে বলে poetic force তা প্রবলভাবে এইসব কবিতার মধ্যে আছে।
তন্ময়ের কবিতা গুলো পড়লাম ।মনে হলো পলিটিক্যাল ফোর্সের বিবৃত বারান্দায় মন্ত্রমুগ্ধ রাখবে অনেকক্ষণ ।দারুণ ভাবে জীবন্ত ।