
জোসেফ আইজেনহাওয়ার-এর কবিতা
জোসেফ আইজেনহাওয়ার। ১৯৮৭ সালে জন্ম জার্মানির হামবুর্গে। সেখানেই পড়াশুনো। দর্শন নিয়ে পড়াশুনো এবং গবেষণা করতে করতেই এই তরুণ জার্মান কবি লিখে চলেছেন কবিতা। দর্শন নিয়েও চলছে নানা তর্কবিতর্ক। যাকে বলে ডিসকোর্স। অধুনান্তিক ভাবনা এবং দর্শন দ্বারা তিনি প্রভাবিত। তার সঙ্গে তাঁর ভাবনায় যুক্ত হয়েছে এশিয়া মাইনরের দর্শন। ভারতীয় দর্শন এবং সাহিত্য নিয়েও সমান আগ্রহ। এখনো পর্যন্ত কোনও বই প্রকাশিত হয়নি। তিনি কবিতার কোনও নির্দিষ্ট স্ট্রাকচারে বিশ্বাস করেন না। জার্মানির তরুণদের মধ্যে বর্তমানে প্রচলিত কাঠামোবাদের দর্শনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা একধরনের আন্দোলনে যুক্ত তিনি। ইন্সটলেশন আর্ট, ভিশুয়াল পোয়েট্রি ইত্যাদি নিয়েও রয়েছে সুদূর পরিকল্পনা। কবিতাগুলি অনুমতি সাপেক্ষে নেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত ' Neo-Modern Poetry Collection' থেকে, যা প্রকাশিত হয়েছে হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সম্পাদনায় টমাস রিচ। যিনি নিজেও এই সময়ের একজন কবি।
লাল রঙের কবিতা
অসামান্য – এই শব্দটা আমি প্রয়োগ করি না কখনও। তুমি করতে পারো। কারণ অ এই শব্দটিকে নিয়ে আমার
সমস্যা রয়েছে। জলের ভিতরে এখনও কয়েকশো মৃত মুখ কথা বলে। সেই সব কথা রক্তের মধ্যে ঢুকে তোমাকে
পাগল করে দেওয়ার আগেই জল শুকিয়ে যায়। মুখগুলিও শুকিয়ে যায় ক্রমশ। আমিও দানব হয়ে যাচ্ছি এবং
এর পরে দেবতার মতো কেউ এসে আমায় টেনে নিয়ে যাবে। দেবতারা ভিন গ্রহের প্রাণী, বলেছিলেন কেউ কেউ।
আমি বিশ্বাস করি না। তুমি জাল ফেলে রেখেছ বলেই আমি ধরা পড়েছি, কিন্তু ধরা পড়তাম না, যদি আমি
মাছ হয়ে না জন্মাতাম। এর অর্থ খোঁজার চেষ্টা কোর না, যেমন সঙ্গীত তোমার মর্মে প্রবেশ করে, তেমন হাঁটুমুড়ে বোস।
মাথায় বুলেট নিয়ে ইতিহাস লেখার চেষ্টা করতে করতেই ইতিহাস নিজেকে পালটে ফেলে।
আগের কবিতার রং পালটে গেছে
তুমি মানে খুঁজছ এবং আমিও মানে লেখার চেষ্টা করছিলাম তখন। ব্যাপারটার মধ্যে একটা আধুনিক মরুভূমি আছে।
আমাদের কোনও মানে নেই। আমার নেই, তোমার নেই, এই আগের কবিতাটিরও নেই। কিন্তু কবিতাটি পড়েছিলে বলেই
আমি এই কবিতাটি লিখছি, বা কবিতাটি লিখেছিলাম যখন তখন আমিও কবিতাটি পড়েছিলাম। মানে, আমিও ছিলাম
সেই পাঠক, যাকে তুমি ঈর্ষা করো। হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে তুমি বলছ নিশানা অভ্রান্ত রাখতে, কিন্তু আমার সামনে
কোনও নিশানাই নেই। দেখতে পাচ্ছি একটা দিগন্ত। পাখিও উড়ছে না।
২০১১-এর শীতকাল
বরফ পড়ছিল এ কথা সবাই জানে। কিন্তু আসল কথা হল, যে বরফ পড়ছিল, তা একশ বছরের পুরনো। এত বিষাদ না হলে
কোথা থেকে আসে? ইহুদিদের রক্তে ভারী হয়ে আছে আমাদের নদী। তাদের রক্ত এখনও বরফ হয়ে পড়ছে আমাদের উপর।
এটাই ইতিহাস হয়ে যাবে বলে প্রথম কবিতায় লেখার চেষ্টা করেছিলাম। আমরা যখন কবিতা লিখি, তখন স্মৃতি লিখি। যখন কথা বলি,
তখন কোদাল চালাই। আমাদের স্মৃতির ভিতর নাজি বন্দুক থেকে গড়িয়ে পড়ে শীত। তার সামনে রাশিয়ার শীতও কিছু না। অবশ্য কমিউনিস্ট
পার্টি মিটমিট করে আমাদের দিকে চেয়ে থাকে। তাদেরও নিমন্ত্রণ করা উচিত ছিল আমাদের কবরের সেই নাচে। হে পাঠক, তুমি কি এখনও
প্রথম কবিতাটা পড়েছ? কেমন মৃতদেহের গন্ধ আছে কবিতাটিতে, তাই না?
দর্শনের অধ্যাপক এবং বার্লিনের ক্যাফেটারিয়া
তিনি কান্টের কথা ভাবতে ভাবতে কফির অর্ডার দিলেন। দেখলাম, জানলার পর্দাটা একটু দুলে উঠল। দেরিদার কথা মতো একটু দূরত্ব
দরকার ছিল কফি ও কান্টের মধ্যে। সেখানে মাথা তুলে আছেন শোপেনহাওয়ার। জল গরম হলেই শোঁ শোঁ করে আওয়াজ হয় যেখানে,
সেখানে এক তুর্কি এক মহিলা বিষাদের গান শোনায়। দর্শনের অধ্যাপক কিছুতেই বুঝতে পারছেন না কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা
যায়। তাঁর চোখ দিয়ে জল ঝরছে ক্রমশ। আমরা কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ কিছুই ধরা দেয়নি।
রিলকের কবিতা
সে এখন হেমন্ত। খাঁচার ভিতর বাঘের এই চলাফেরা দেখা যায়। এক কবি যেন লিখতে লিখতে অন্ধকার হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে
কোনও কিছুর মধ্যেই কোনও সামঞ্জস্য নেই। গাছের শিকড়ের ভিতর ডুব দিয়ে আছে প্রাচীন পৃথিবী। আমি লিখছি কারণ আমার হাতের
সঙ্গে হার্ট এবং রক্তপ্রবাহের এক নকশা তৈরি হচ্ছে। সেই নকশার ভিতর সুর ক্রমশ পালটে ফেলছে তার গতিপথ। আমার ঈশ্বর নেই, এলিজি নেই
আবিষ্কার নেই। একটা ভাঙা গাড়ির ভিতর সঙ্গম করছে আমার শরীর। আমি, না আমার সঙ্গম, – কে আমি, এ কথা ভাবছি। শীত বেড়ে যাচ্ছে
বার্লিনে। ভিড় বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর। খুন বেড়ে যাচ্ছে ন্যুরেনবার্গে। ভালো ভালো কথা লিখতে গিয়ে লিখছি বিন্দু বিন্দু ও বিন্দু। তুমি এ সব জানতে না।
অনুবাদ- হিন্দোল ভট্টাচার্য