চন্দন ঘোষ- এর কবিতাগুচ্ছ
তঞ্চক
তোমাকে বিশ্বাস করি,
হাতের উপরে রাখি হাত।
এত ভিজে কেন?
ঘামছো কি? তুমি কি উদ্বিগ্ন খুব?
হৃদয় লাফাচ্ছে খুব দ্রুত?
কী লুকোচ্ছো আস্তিনে তোমার?
তোমাকে তো বিশ্বাস করেছি,
জেনেছি বিশ্বাসই ধর্ম।
তবুও গোলাপে কেন কীট?
হাত কাঁপছে?
শ্বাসও খুব দ্রুত!
মনে হয় ধরা পড়ে গেছ।
বিশ্বাসের জোর জেনো খুব,
সামনে দাঁড়ালে
তঞ্চকেরও বুক কেঁপে ওঠে।
একটি নিছক ডাক্তারি কবিতা
চলুন, আজ একটা ডাক্তারি কবিতা পড়ি, যেখানে আপনি জিভ বার করে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমি টর্চ দিয়ে আপনার অনেক দূর দূর অব্দি, প্রায় পাঠানপুর মোড় পর্যন্ত দেখে নিচ্ছি। এই কবিতাটায় কিছু ছুরি-কাঁচি থাক আর কিছু থকথকে জেলির মতো রক্ত, যা দেখে আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনি হিন্দু ছিলেন নাকি মুসলমান। আর ওই যে কাচের ঘরটা দেখছেন, ওখানে একটা ভেন্টিলেটর থাকবে। তাতে চোদ্দ কিসিমের নল লাগানো কেউ একজন। আপনি ঠাহর করতে পারবেন না কে ওখানে শুয়ে। আপনি না ভারতবর্ষ!
চলুন, আজ একটা ডাক্তারি পদ্যই শোনাই যেখানে সাদা সাদা এপ্রনের নীচে ডেটলের ঝাঁজালো কোনও গন্ধ নেই, শুধু তাজা তাজা মানুষের খুশবু ভেসে বেড়াচ্ছে।
একটি চাঁদের রাস্তা
একটি চাঁদের রাস্তা, একটা মাত্র জ্যোৎস্না-ফিটন
সওয়ারী দুজন আর সঙ্গী শুধু ললাট লিখন
দেখা যায় স্তব্ধ গ্রাম ঘুম ঘুম গাত্রবর্ণ নিয়ে
এক মুঠো প্রেম জমে, গলে যায় মুঠো-ফাঁক দিয়ে
তুমি কি দেখেছ বল জোছনা-উড্ডীন সেই রথ
মন যায় আগে আগে পিছনে সে শ্লথ-ক্লান্ত পথ
আকাশে সম্পর্ক খোলে, খসে পড়ে কামনা-হরিণ
আদরের তারা ফোটে, আলো দেয় দেখি নক্ত-দিন
তুমি কি শিখেছ ওই শব্দহীন মৃদু জ্যোৎস্না-ভাষ
সঙ্গী প্রেম, নিশি ডাক আর প্রতিবেশী চান্দ্রমাস।
শান্ত হও,শান্ত হও
উচ্চাকাঙখী কবিদের দেখি
আমার আশঙ্কা হয়,
ঠোঁট থেকে ঝুলে আছে তীব্র সিগারেট
অজস্র লালায় শুধু ভরে যাচ্ছে জিভ
উচ্চাকাঙখী কবিদের দেখি
আমার আতঙ্ক হয়
উন্মাদের মতো এত দৌড়চ্ছে কোথায়
সঙ্গে তো দৌড়োচ্ছে কিছু প্রায়ান্ধ ইঁদুর
হাঁটছে পিচ্ছিল পথে, হড়কে যাচ্ছে পা
চাঁদ ধরে ঝোলায় ভরেছে
কালো সেই চাঁদে দেখি মুঠো মুঠো ছাই
হাতে ছাই, মুখে তার ছাই
কী করে মুছবে মুখ, পকেটে রুমালটুকু নাই
উচ্চাকাঙখী কবিদের দেখি
আমার বাসনা হয়
মাথার তালুতে কেউ ছুঁয়ে দিক ঠাণ্ডা এক হাত
চাঁদ এসে সস্নেহে বলুক
শান্ত হও, শান্ত হও, শান্ত হও তুমি।
হেরো মানুষের বৃত্তান্ত
কোনও কিছুই যখন ঠিকঠাক হচ্ছে না
ঘোড়া লাফিয়ে এসে মন্ত্রীকে গিলে নিচ্ছে
শীতকে নিয়ে ছেলেখেলা করছে নিম্নচাপ
প্রেমিকাও নৌকো ঠেলে দিয়ে বলছে ‘এসো’
তখন আর কী-ই বা করতে পারে একজন কপালপোড়া মানুষ
বোকা মানুষরাই প্যাঁচে পড়ে বেশি
কাদায় রথের চাকা বসে যায় তাদের
রাম বা রাবণ, কেউ একজন মারবেই তাকে
তার অ্যাকিলিস হিল জেনে গেছে সবাই
একটা তিরের অপেক্ষা শুধু
তবু ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো, পথ জুড়ে দাঁড়ানোই ভালো
“কাপুরুষ” উল্কি হাতে নিয়ে মরে যাওয়া সমীচীন নয়।
Bhalo kobitaguli