গোমুখ হয়ে কালিন্দী খাল পেরিয়ে বদ্রীনাথ – ফিরে দেখা
অরুণ ভট্টাচার্য
পর্ব-দুই
ভণিতা
গোমুখকে গঙ্গা বা ভাগিরথী নদীর উৎস বলা হয়। তা যে কোন হিমবাহের স্নাউট-ই কোন-না-কোন জলধারার প্রকাশ্য উৎস।আসলে একটি নদী তার একার সামর্থে এগিয়ে চলে না। তার সাপোর্ট স্টাফ অনেক – কোনটি উপনদী, আবার কোনটি শাখানদী। তাদের বাহিত জলে পুষ্ট হয়ে নদ বা নদী বেগবান বা বেগবতী হয়। দুটি নদী মিশলে কোন নদীর নাম হারিয়ে যাবে বা রয়ে যাবে? সাধারণ নিয়ম হল, দুটি নদীর মধ্যে যার বাহিত জলধারা বেশি, তার নামই টিঁকে থাকবে। যেমন, আগেকার ইলাহাবাদ বা এলাহাবাদ ও এখনকার প্রয়াগরাজে গঙ্গার সঙ্গে যমুনা মিশেছে, যমুনার জল সেখানকার গঙ্গার বাহিত জলের তুলনায় কম, তাই যমুনা ঐ প্রয়াগেই তার পরিচয় হারায়।
আবার, দুটি নদীর মিলনের পর এক নতুন নামকরণও হয়। যেমন, দেবপ্রয়াগে ভাগিরথী নদীর সঙ্গে অলকানন্দা নদীর মিলে গিয়ে গঙ্গা নদীর সৃষ্টি হল। আগেকার থিয়োরি মানলে দেবপ্রয়াগে এসে ভাগিরথী নদী শেয হবার কথা, গঙ্গার বদলে অলকানন্দা হওয়া উচিত ছিল, কারণ অলকানন্দার বাহিত জল অনেক বেশি। কিন্তু তা হয়নি। তাই রাসকিন্ড বন্ড (Ruskin Bond) তাঁর Ganga Descends (1989)-এ লিখছেন, “The Alkananda is the Ganga, but thee Bhagirathi is Gangaji.” ঠিক তেমনি, গঙ্গোত্রীর আগে ভৈরবঘাটি নামে খুব ছোট জনপদ আসে। হরশিল থেকে লঙ্কা হয়ে ভৈরবঘাটি আসার আগে এক জায়গায় দুই নদীর সঙ্গম আসে, সেখানে নেলাঙ থেকে আসা নদীতে (জাড গঙ্গা) যত জল আছে, তার অর্ধেকও গঙ্গোত্রী থেকে আসা নদীতে (ভাগিরথী) নেই। রাহুল সাংকৃত্যায়ণ তাঁর মেরি জীবন যাত্রা (তৃতীয় খন্ড) এ লিখছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দশকে গোর্খা সৈনিকদের পক্ষে নেলাঙ-এর দিকে যাওয়া সহজ ছিল না, তাই যে প্রবাহটি রাস্তায় পড়েছে তাকেই “মা গঙ্গা” নামে প্রতিষ্ঠা করেছে।
উল্লেখ্য, রাসকিন বন্ডের উপরিলিখিত প্রবন্ধে লিখছেন, “…… on the right bank of river is the Gangotri temple. It is a small neat building without too much ornamentation, built by Amar Singh Thapa, a Nepali general, early in the nineteenth century. It was renovated by the Maharaja of Jaipur in the 1920s. The rock on which it stands is called Bhagirath Shila and is said to be the place where Prince Bhagirath did penance in order that Ganga be brought down from her abode of eternal snow.”
প্রাসঙ্গিক যে অলকানন্দা নদীর সঙ্গে সব উপনদীর মিলন বা সঙ্গমস্থল কে প্রয়াগ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যেমন কর্ণপ্রয়াগ, বিষ্ণুপ্রয়াগ ইত্যাদি, শুধু চামোলি শহরের পাঁচ কিমি দূরে বিরহী ও অলকানন্দা নদীর মিলনস্থল নামহীন। অথচ, দেবপ্রয়াগ থেকে গোমুখ এই 96 কিমি নদীপথে অনেক উপনদীর ভাগিরথীতে এসে মিশেছে, তাদের কোনটিরই শিরোপা প্রয়াগ দিয়ে নেই। বোঝা যায়, কেদার-বদরী তীর্থযাত্রা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে, গঙ্গোত্রীর দিকে যাতায়াত উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে শুরু। জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশক থেকে। ব্রিটিশ আমল থেকে। আর দুই নদীর সঙ্গমগুলির নামকরণ তো মানুষেরই করা। গঙ্গোত্রীর দিকে পথের দুর্গমতা কমে ব্রিটিশ আমলে। নামকণের ইতিহাস লেখা হয়েছে অনেক আগে।
ভালো লাগছে এই গদ্যটা। আগের পর্বটিও পড়লাম।