ক্রোড়পত্র: নিশীথ ভড়.
: নিশীথ ভড়ের কবিতা: জল নেই
সেলিম মণ্ডল

জল নেই

জল নেই, জলের চাহিদা নেই কোনো

জল না পেলেও দিন কেটে যাবে, এরকমভাবে

এর আগে ভাবিনি কখনো

এই জলহীন দেশ আমার স্বপ্নের পাশে শুয়ে

আমার স্বপ্নেরও কোনো জলের পিপাসা নেই আর।

সুখে আছি, সকলেই সুখে

জল নেই, জলের চাহিদা নেই কোনো

জলের ধর্ম গড়িয়ে যাওয়া। আবার জলের অপর নাম জীবন। কবি কোন জীবনের কথা বলেছেন— যে জীবনের কাছে আর কোনো প্রত্যাশা নেই? সারাজীবন আমরা দূরতম কোনো আলোকবিন্দুর সন্ধানে হেঁটে বেড়াই। হাঁটতে হাঁটতে কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তখন আর পথ দূরত্বের জন্য না, পথের জন্য দূরত্ব ঘনিষ্ঠ হয়।

সত্তর দশকের এই কবি জীবনপথে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন একটু প্রশান্তি। সে কবিতা হোক, বন্ধুবান্ধব বা সংসার। কিন্তু তিনি যে প্রশান্তি চেয়েছিলেন সেই প্রশান্তি পাননি। পুড়িয়েছিলেন নিজের অসম্পূর্ণ দুটি উপন্যাস, আটটি ছোটোগল্প এবং দুশো সত্তরের বেশি কবিতার পাণ্ডুলিপি। যৌনপল্লীর পরিমণ্ডপে বাস করেছেন। স্বচক্ষে দেখা এক নির্যাতিত, বর্ণাঢ্য জীবনের নির্যাস তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে নানাভাবে। জলহীন জলের চাহিদা কথা উচ্চারণ করার মতো স্পর্ধা বোধহয় এই কবিকে মানায়। স্বপ্নের মধ্যে দুলে ওঠা ঘণ্টা বাজিয়ে নিজেই চেয়েছেন ছুটি। কবির এই আর্তি কীসের? কাঠফাটা চেষ্টা নিয়ে যে জীবনের কাছে তিনি নিজের শাশ্বত পরাগটুকু রেখেছেন, তাঁর পিপাসের কাছে নুড়ি-পাথর বা একটা কলসি অলীক ছাড়া কিছুই না।

‘জল নেই’ এই কবিতাটি পড়তে পড়তে আমার মধ্যে বারবার অভিঘাত ঘটেছে। আমি শুনতে পেয়েছি সেই শব্দ যা আমার মধ্যে সারাক্ষণ বেজে উঠেছে। জলের শব্দ কী যে মারাত্মক হতে পারে তা শুধু অনুভব করা যায়। আমরা জলে ডুবতে পারি। জলে ভেসে যেতে পারি। তবে জলের শব্দেও হতে পারি চুরমার। আমাদের এই চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়া শরীর কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য আমরা ছাড়া কেউ নেই। সেই গভীর আর্তিই যেন কবিতার অন্তরে বেজে উঠেছে। কবিতা সম্পর্কিত বিনয় মজুমদারের একটি কথা মনে পড়ে যায়— “কবিতা হচ্ছে চিরস্মরণীয় বাক্য সমষ্টি যা হুবহু মুখস্থ করা যায়”। কবি নিশীথ ভড়ের এই কবিতাটিও যেন সেইরূপ। মনের ভিতর কোথাও যেন গেঁথে যায়। আলাদা করে আর মুখস্থ করতে হয় না।

পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায়, তরলের আভ্যন্তরীণ ঘর্ষণের ফলে প্রবাহে বাধা দেওয়ার প্রবণতা সান্দ্রতা বলে। জীবন=জল=তরল… আমাদের জীবনের নানা স্তরে যে অভ্যন্তরীন সংঘাত তাই কি তবে সান্দ্রতা? জীবন প্রবাহে আমরা কোন জলের সন্ধানে জলহীন একটা কুয়োর ভিতর প্রবেশ করতে গিয়ে ভুলে যাচ্ছি— পানাহীন জলে আমরা আসলেই এক একাকী রাজহাঁস। যার পালকে লেগে থাকা জলটুকুও অহংকার। কবির মতো বলতে পারি না— “এই জলহীন দেশ আমার স্বপ্নের পাশে শুয়ে/ আমার স্বপ্নেরও কোনো জলের পিপাসা নেই আর।”?

যা সহজ তা বেশি সুন্দর। আর তার অভিঘাত যদি বেগ প্রবণ হয়, তার হৃদয়গাহ্যতা বেশি বেশি দ্যুতিময়। কবি নিশীথ ভড়ের কবিতা যেন তাই। পাঠে বা পুনঃপাঠে এই দ্যুতি এতটাই ছড়িয়ে পড়ে আমাদের কেটে রাখা কুয়োর ভিতর জল সন্ধান করতে ভুলে গিয়ে কুয়ো ডিঙিয়ে চলে যায় আরেক দেশে। যেখানে সকালের নরম কুয়াশায় নতুন নতুন জল প্রাণশক্তি পেয়ে জলের চাহিদা পূরণ করে…

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (2)
  • comment-avatar
    শীর্ষা 4 years

    বেশ ভালো লেগেছে লেখাটা

  • comment-avatar
    Swapan Nath 2 years

    কী শোনালে সেলিম? ঋব্ধ হলাম।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes