ক্রোড়পত্র: নিশীথ ভড়
নিশীথের কবিতায় অন্ধকারে ফুটে থাকে ফুল :
প্রসূন মজুমদার

শহর ছুটে যাচ্ছে পিছনে।ট্রেন যেন ড্রাগন আর তার পেটের মধ্যে বসে আমিও টলতে টলতে গ্রাম পেরিয়ে জনপদ ছাড়িয়ে বুনো সভ্যতার আদিমে আছড়ে পড়ছি ক্রমাগত। আমার হাতে নিশীথ ভড়ের কবিতা- সংগ্রহ। এই তো একটু আগেই তিনি আমার শরীরে রোঁয়া তুলে দিয়ে বোধের ভিতর ছড়িয়ে দিলেন তীব্র অস্বীকারের সম্মোহন —‘নিজের পায়ের শব্দ শান্ত অস্বীকার’ মনে হচ্ছে এখন।এখন পোশাকি সভ্যতাকে একটু আড়চোখে দেখার সময়। এখন নিশীথ ভড় বলে উঠেছেন ‘ বাসনা মিটল না।’

কবিতাটা সেদিন এতটাই সংক্রমিত করেছিল যে চারপাশের কোট-প্যান্ট পরা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে হেসে উঠতে ইচ্ছে করেছিল আমার। তারপরেই মনে হল সত্যি তো ‘কোথায় জ্বালা জুড়োই আমার ঘরের খুঁদকুড়োই ভরা আরশোলা নাদিতে’ – যার নিজের ঘর বিষাক্ত বর্জ্যে পূর্ণ তার কী সমাজ সাফ করতে যাওয়া মানায়!অথচ আমরা সভ্যতার এই ‘ নিভন্ত নিষিদ্ধ পল্লী’কে সাফাই করার বড়াই করে ক্লান্ত।হ্যাঁ, নিষিদ্ধ পল্লী। এই ‘নিষিদ্ধ’ শব্দটা আমাদের সভ্যতার সূচক।আমরা সমাজ নামের একটা পুরীষপূর্ণ জ্বালার মধ্যে বসে ময়লা সাফ করার গরিমা প্রদর্শন করি আর একটি বিশেষ অঞ্চলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অপর করে দিতে চাই। নিশীথ ভড় সেই অপর জগৎ বা হেটেরোটোপিক দুনিয়াকে আমাদের মতো ঘোলাটে চোখে দেখেননি। সম্ভবত তাঁর পক্ষে সেটা সম্ভবও ছিল না।কারণ তিনি বড়ো হয়েছেন কলকাতার সবচেয়ে বড়ো নিষিদ্ধ পল্লীর ভিতরকার এক বাড়িতে। তাই যে দুনিয়াকে আমরা ঘৃণা কিংবা অনুকম্পার চোখে দেখি লোককথিত সেই ‘ বেশ্যাপাড়া’র হেটেরোটোপিয়া তাঁর কাছে ছিল সহজ, সাবলীল।সেই সাবলীলতায় মুখোশে ঢাকা সভ্যতার অস্বস্তি হতে থাকে। এ হল সেই আমন্ত্রণ যেখানে বন্য আবেগ সভ্যতার পোশাক খুলে ফেলে উন্মাদ হতে ডাকে। তাই একটা বেশ্যার উরু তোলার আহ্বানে আমরা নীতিপুলিশের চাবুক নিজের বুকের ভেতর চালাতে চালাতে যতই আমাদের ভিতরের শিকারী কুকুরটাকে ঘুম পাড়াতে চাই না কেন, শরীরের মন চাবুক মানে না।রোমাঞ্চ জানতে চাইবেই ‘ একটা বেশ্যা উরু তুলল শরীরেও কী রোঁয়া উঠল? ‘

কবি প্রায় নিরুপায়।কবি তাঁর কবিতার নৈতিকতায় দৃঢ়, তাই তিনি সাজানো সমাজের নৈতিকতার কবিতা লিখে সত্যকে খুন করতে পারেন না।তিনি অভিশপ্ত। সমাজের রঙঢঙ তাঁর তুলে ফেলাই কাজ আর রঙঢঙ -এর আড়ালে লুকোনো যৌনতার সহজ হাতছানিই যে সত্য তাকে চোখের ঠুলিটা খুলে দেখিয়ে দেওয়া ছাড়া নিজের কাছে কবির নিস্তার নেই।এই সাজানো সভ্যতার সহজ অভিনয় করে প্রাচুর্য লুন্ঠন না করতে পারার জন্য কবি কিছুটা আক্ষেপে বলে ওঠেন ‘ এমন কেন হল আমার জন্মে কী দোষ ছিল’?সত্যি বলতে কী নিশীথ ভড়ের জন্মের পর থেকে এমন এক হেটেরোটপিক দুনিয়ায় বেড়ে ওঠার ফলে তিনি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উল্টোদিক থেকে সমাজকে দেখতে পান অনায়াসে।তাই তাঁর চোখ আমাদের পোশাক পুড়িয়ে দিয়ে নগ্ন করে দাঁড় করাতে চায় আয়নার সামনে।তিনিই সপাটে বলতে পারেন ‘মন্দ যদি বেশ করেছি, হৃদয়-কপাল ভেঙে দিয়েছি ‘।

কবিকে সত্যের আলোয় পৌঁছানোর জন্যে অনেককিছুই ভাঙতে হয়।সবচেয়ে বেশি যেটা ভাঙতে হয় সেটা হল সমাজের পরিচিত ও আরোপিত কোড আর নির্মিত ভাষার সিগনিফায়ার।তাই কবি কোনোভাবেই সমাজনির্দিষ্ট স্রোতের অনুকূলে ঝাঁকের কই-এর মতো ভাসতে পারেন না, তাঁকে সাঁতরাতে হয় উল্টোস্রোতে। তাঁকে দৃপ্তচিত্তে মন্দ হতে হয়।সেই দীপ্তি যা তেজ হয়ে জ্বলে উঠে বলতে পারে ‘মন্দ যদি বেশ করেছি ‘।এই ভাঙার গান গাইতে গিয়ে কবির পা টলে না। নিশীথ ভড় একজন প্রকৃত কবি তাই তাঁর ‘পা রয়েছে স্থির’।

‘ পা রয়েছে স্থির,কামে পাগলামি গভীর,তবু বাসনা মিটল না।’ — কবিতার এই শেষ পঙক্তি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চিরকালীন এক আকুতির আহ্বানে। এ সেই অনন্তের আকাঙ্ক্ষা যাকে ‘ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলাম আর পেলাম না। ‘ এই পংক্তিতে এসে কবি ‘কামে পাগলামি’র কথা যেই বললেন অমনি কবিতাটা যৌনতার হেটেরোটোপিয়া থেকে চিরন্তন ইউটোপিয়াতে উত্তীর্ণ হল।যৌনতা যদি বাসনার কূপ হয় তবে অনন্ত আকাশ হল কাম। কামনার অন্ত নেই।মানুষ অনন্তকে গিলে খেতে চায় আর সমাজ তাকে নীতির শিকল পরিয়ে সভ্যতার পুঁথি মুখস্থ করতে বাধ্য করে।স্বাভাবিকতা বা নর্ম্যালের র‍্যাশানালিটি শিখিয়ে সমাজ কীভাবে মানুষের ভিতরের বুনো আবেগের সত্যকে ঘুম পাড়ায় সেকথা বিস্তারিত জানিয়েছেন মিশেল ফুকো তাঁর ‘Madness and Civilization ‘ নামের বইটাতে। উন্মাদনাই সৃষ্টিকর্ম করায়।তাই সমাজের শেখানো বুলি কখনওই কবির ভাষ্য হতে পারে না।তাঁর কামনা সত্যকে খুঁজে ফেরে তাই তাঁর কামে গভীর পাগলামি আর তাঁর হৃদয়ে নির্বাপনঅসম্ভব আর্তি।সে আর্তি বাসনা মিটতে দেয় না বরং সভ্যতার নাটকগুলোকে ভেস্তে দিয়ে পোশাক ছিঁড়ে চামড়ার আসল রঙ বার করে দিতে দিতে কবির আখর চিরসত্যের সোনার হরিণের পিছনে অতৃপ্ত বাসনায় ধাওয়া করে।

ধাওয়া করেছেন কবি নিশীথ ভড় অনন্তকে আর যেতে যেতে সমাজের পাঁকে ফুটিয়ে গেছেন মোহন সব ফুল।হে পাঠক, সেই ফুল আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। নিশ্চয়ই একদিন আমারই মতো আপনার মনেও সুগন্ধের রোঁয়া ছড়িয়ে দেবে সেইসব ‘খেলার তুচ্ছে প্রতিমারা’।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS Wordpress (1)

  • comment-avatar
    শীর্ষা 4 years

    চমৎকার লাগল!

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    Checking your browser before accessing...