কাশ্মীরি কবি আরনিমাল-এর কবিতা <br /> অনুবাদ ও ভূমিকা – সায়ন রায়

কাশ্মীরি কবি আরনিমাল-এর কবিতা
অনুবাদ ও ভূমিকা – সায়ন রায়

উত্তর কাশ্মীরের পালহালান নামক এক গ্রামে এক পণ্ডিত পরিবারে আরনিমাল জন্মগ্রহণ করেন ১৭৩৭ সালে।সেইসময় কাশ্মীরে চলছে আফগান শাসন।খুব অল্প বয়সে তার বিয়ে হয় রায়নাওয়ারির ভবানী দাস কচরুর সাথে।যিনি ফারসি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন।এবং কাশ্মীরের তৎকালীন আফগান গভর্নর জুম্মা খানের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন।পরবর্তী কালে তিনি সরকারি দায়িত্ব নিয়ে কাবুল যান এবং কাবুল রাজসভার সভাসদ হন।সেখানেই তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে থাকেন।আরনিমালের বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি।অল্পদিনের মধ্যেই তিনি স্বামী দ্বারা পরিত্যক্ত হন।এবং পিতৃগৃহে তার ঠাঁই হয়। উপেক্ষা,অবহেলা,বিদ্রূপের মধ্যে তার বাকি জীবন পিতৃগৃহেই কাটে।প্রকৃতির মধ্যেই তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন তার প্রাণের আরাম।তার পূর্বসূরি হাব্বা খাতুনের মতই তিনি সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সব গীতিকবিতা।যা এক বিরহকাতর নারীর হাহাকার।পুথিগত শিক্ষাহীন এক গ্রাম্য নারীর সূক্ষ্ম অনুভূতি,ব্যথা,বেদনা প্রাকৃতিক অনুষঙ্গে তার কবিতায় এমন তীব্র রূপ পেয়েছে যে কাশ্মীরি ভাষায় রচিত তার কবিতা/গান আজও সমান জনপ্রিয়। সেই সময়কার পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় স্বামীপরিত্যক্তা নারীর যেখানে নিয়তিই ছিল চিলেকোঠার নিভৃত যাপন,সেখানে তার কবিতা/গানই হয়ে উঠেছিল এই ব্যবস্থার প্রতি এক প্রতিবাদী স্বর।আশ্চর্য হতে হয় এই ভেবে,তার স্বামী ফারসি ভাষায় সুপণ্ডিত হলেও এবং 'বেহের-ই তাভিল' নামে ফারসি ভাষায় রচিত একটি পুস্তকের রচয়িতা হিসেবে তাকে স্বীকার করা হলেও, কাশ্মীরের মানুষ আজও তাকে আরনিমালের স্বামী এবং একজন নেগেটিভ চরিত্র হিসেবেই মনে রেখেছে।কবিতা রচনায় জ্ঞান/দর্শন নাকি আবেগের তীব্রতা,অনুভূতির সততা,বোধের গভীরতা—কোনটি বেশি জরুরি এই নিয়ে যখন আজও তর্ক চলে তখন আরনিমালের কবিতা আমাদের পথ দেখায়।

কামনা পানপাত্রগুলি ভরিয়ে তোলে মদিরায়’

১.
আমার চোখের মণি আমি রাখবো তোমার পদতলে
এসো আমার প্রিয়তম, ছেলেবেলার বন্ধু

তুমি পাখির মত উড়ে গেছ নদীর তীরে, জলার ধারে
দুভাগে ভাগ হয়েছে আমার হৃদয়—
যে ডাক আমি শুনেছিলাম ছিলই না যে তোমার
এসো আমার প্রিয়তম, ছেলেবেলার বন্ধু।

নদীর ধার সেজেছে মালায় হলুদ ফুলে
জানি,আজই তুমি রাখবে তোমার প্রতিশ্রুতি
যদি আসো,পাতবো মাথা তোমার পদতলে
এসো আমার প্রিয়তম, ছেলেবেলার বন্ধু।

২.
ফুলের মালা গেঁথে তুলি তারই জন্য
জুঁইফুলের মাঝে স্ফূর্তি পেতে পারে না সে কি আমার জন্য?
কামনা পানপাত্রগুলি ভরিয়ে তোলে মদিরায়
তার আছে এক নিভৃত স্থান আমার হৃদয় আঙিনায়
তার মুখেরই আবছা আভাস আমায় দেবে একজীবন
জুঁইফুলের মাঝে স্ফূর্তি পেতে পারে না সে কি আমার জন্য?
৩.
আমার বাগান তোমার পায়ের ধুলোর প্রতীক্ষায়
তোমার পা–দুখানি আমার মাথায় রাখো প্রিয়তম
তোমার পায়ের ছাপকে আমার মাথার মুকুট হতে দাও
কামনার ব্যাকুলতায় আমি ছিঁড়েছি আমার আব্রু

তুমি কি কখনো ফিরবে না আর আমার কাছে?
একদা আমি ছিলাম যে এক জুঁইয়ের মালা
শুকিয়ে এখন হয়েছি শুধুই ঘাসের পাতা
তোমার পায়ের ছাপকে আমার মাথার মুকুট হতে দাও।
৪.
ব্যথায় গুঞ্জরণ,কোরো না আমার চরকাখানি
তোমার যন্ত্রণাকে দেব উপশম সুগন্ধে ভরা তেল দিয়ে
হাইয়াসিন্থ,কর্দম থেকে তুলে ধরো তোমার শির
নার্সিসাস অপেক্ষারত তার উপচে ওঠা পাত্র নিয়ে
জুঁইফুলের এক ঝোপ আমি,কখনোই আর ফুটবো না
ব্যথায় গুঞ্জরণ,কোরো না আমার চরকাখানি
তোমার যন্ত্রণাকে দেব উপশম সুগন্ধে ভরা তেল দিয়ে।

হাইয়াসিন্থ—ঘন্টাকৃতি বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুল

৫.
আমার পোশাক ভিজেছে চোখের জলে,হে উন্মাদ
আমি অপেক্ষারত,প্রেমকাতর,যখন ঘষটে ঘষটে কেটে যায় দিন
এসেছিলাম সুসজ্জিত,সালংকারা তোমার জন্য
সে কোন পাগলামো তুমি দৌড়ে গেলে দূরে?
প্রত্যাখ্যাত,অবহেলিত,বিদ্রুপবাণে বিদ্ধ
আমি অপেক্ষারত,প্রেমকাতর,যখন ঘষটে ঘষটে কেটে যায় দিন।
৬.
বলো বন্ধু, কাকে ভরসা করা যায়?
আমার চেয়ে বড় বোকা কেউ আছে?
যখন ঘুমিয়ে ছিলাম সে আমার কোমর খামচে ধরে
বাহুবন্ধনী কেটে গেঁথে যায় মাংসে
সোনাগুলি সে ছিঁড়ে তুলে নেয়
জহরৎগুলি খুলে নেয় সে শরীর হতে
বলো বন্ধু,ভরসা করা যায় কাকে?
আমার চেয়ে বড় বোকা কেউ আছে?
৭.
তার বর্শা দিয়ে সে আমায় গেঁথে ফেলে
আমার গলার মালা ছিঁড়ে যায়,বুকের জামা ফুটিফাটা
প্রিয়তমর মাথার একটি চুলও
ফুঁড়ে দিতে পারে আমার হৃদয়
আমার গলার মুক্তোগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইতস্তত
ছিঁড়েছিল সে-ই আমার গলার থেকে
তবু,আমি তাকে আমার খুব কাছে পেতে পারতাম।
৮.
হতাশের একফালি আশা
দেখাও আলো অন্ধকারের মাঝে
সে গিয়েছে চলে লাশা
অপেক্ষারত,হৃদয়ের এক টুকরো আশা
যেখানেই পারো তুমি বন্ধুত্বের বীজ বুনে তোলো
আমাদের শত্রুরাও থাকুক নিরাপদে।
৯.
পদ্মিনীর মতই সুন্দর ছিলাম আমি,কিন্তু আসেনি সে
আমার চোখের জলের ধারা শুকিয়ে তো যাইনি
অবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রবাহিত,দুঃখের প্লাবন
একটা জ্বলন্ত মশালের ছ্যাকা দেওয়া হয়েছে আমায়
আমার পা ভেসে যায় চোখের জলে,কিন্তু আসেনি সে।
১০.
চন্দন দিয়ে প্রসাধন আমি সারছিলাম,বন্ধু
যখন আমার প্রেমিক নিভৃতে হারিয়ে গেল
ভেবেছিলাম অপেক্ষা করবো আমার প্রভুর জন্য
চন্দন আর ফুল দিয়ে সাজাব তার মাথা
যাতে আমার হৃদয়ে আবার আসে বসন্ত
কিন্তু আমার প্রেমিক নিভৃতে হারিয়ে গেল।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    শুভাশিস মণ্ডল 4 years

    ভালো লাগল সায়ন।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    404 Not Found

    Not Found

    The requested URL was not found on this server.


    Apache/2.4.41 (Ubuntu) Server at hacklink.site Port 80