পাঁচটি কবিতা
:: শঙ্খশুভ্র পাত্র
শিশু
শিং আছে, পা-ও আছে ৷ এ-কেমন বৃক্ষ তুমি প্রিয় ?
মধ্যে শত ! অতশত কে আর ভাবছে আঁক কষে !
চিরন্তন শিশু হয়ে আছ তুমি আপনারই দোষে ৷
বৃহৎ ছাতার মতো প্রশান্তির ছায়া মেলে দিও —
সমস্ত দুঃখীর দিকে ৷ সুখী কারা ? ধনে-জনে-মানে ?
তা আমি বুঝি না বলে মফস্ সলে পড়ে থাকি একা—
আষাঢ়স্য শস্য প্রিয় ৷ একটি সাক্ষাৎকার জানে :
বরষাপীড়িত ফুল, রামধনু, রঙের ভিতরে ওই কেকা
শব্দপথে অবিরল — আনুকূল্য প্রবাদপ্রতিম ৷
কী খুশি, মুহূর্তে দীপ — তারা-তারা সকল প্রণয়
গভীর নিশীথে স্থির — বাক্যহারা, তাৎপর্যময় ৷
ভোর হলে দেখি তারা — একে-একে বিনীত এতিম ৷
শিংশপা, শূন্যজ্ঞান — বনের থেকেও আরও কিছু…
মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে যেন এক চিরন্তন শিশু ৷
চারটি লাইন
চারটি লাইন মাত্র ৷ আপাত থমকে আছে খিদা ৷
আষাঢ়ে প্রণীত চারা বড় হয়ে ছায়া দেবে, আশা
হৃদয়ে জাগে তো ৷তবু, কোথায়, কী যেন এক দ্বিধা —
মেঘে-মেঘে ছেয়ে আছে ৷ নির্বাচনে নান্দনিক ভাষা
মনোমত হয় নাই — অথবা সে-করুণ রঙিন
সমর্পণে স্থিতপ্রজ্ঞ ৷ তাই এত বিলম্বিত লয় ৷
দর্প নয়, দাবি নয় — প্রার্থনার মতো একদিন
আশ্চর্য কবিতারঙে ভরে যাবে নিভৃত হৃদয় ৷
চারটি লাইন শুধু ৷ পেরিয়ে গেলেই ধু ধু মাঠ…
তারপর ? ভালোবাসা— তোমার বাড়ানো দু’টি হাত ৷
চতুর্থ পঙ্ ক্তি
চতুর্থ পঙ্ ক্তি ৷ বড় অসহায় ৷ প্রতীক্ষাকাতর…
সপ্তাহান্ত — সে-অধিক শ্রম বটে — ভ্রমণপিপাসা
আমাকে রেখেছ দ্বারে, না-আমি শ্রমণ, অভিজাত
দুঃখিত টেবিলে রাখি প্রাণের অধিক ভালোবাসা ৷
আমার শায়িত নিদ্রা দায়ী নয়— যে-তুমি দাওয়ায়
চরণ রেখেছ আর রণতূর্যে উন্মাদিনী হাসি:
হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলে ইহজন্ম ৷ প্রণয় ছায়ায়
ধূলব্যলুন্ঠিত হলে কোন্ সুরে বাজে আর বাঁশি ৷
চতুর্থ পঙ্ ক্তি ৷ বড় মায়াময় — দুঃখী, ভেজা-ভেজা;
বেপথু শপথ : পথ অফুরান, দিকচিহ্নহীন…
উৎসবকালীন মেঘে রেখে যায় অন্তহীন রেজা,
ব্যথাহত মনটিকে বলি — এই যথার্থ শাহীন ৷
স্তবকে অবাক চিত্র : অনমিত্র কেহ নহে আজ
প্রতীক্ষাকাতর মেঘে কে-বা দ্যাখে আবেগের সাজ !
ধু ধু
দোয়াতে যত না কালি তার থেকে ততোধিক দোয়া
তোমাকে চেয়েছি বলে—আড়ালে হল না হাত ছোঁয়া ৷
হাত মানে রাতপাখি — চাঁদজাগা তার দুই চোখে
আমার কাতর ছায়া জাগে নাকি অভাবিত শ্লোকে !
তা আমি বুঝিনি বলে বিরচিত হল কত দোঁহা,
দোয়াতে যত না কালি, তার থেকে ততোধিক তোয়া
খেলায় তোমাকে ডেকে— লেখায় হারতে জানে শুধু
দোয়াতে যত না কালি, ভালোবাসা ততোধিক ধু ধু…
পাকশালা
সমস্তই মিলে যায় ৷ অস্তরাগ, বহুবর্ণচ্ছটা…
বিষণ্ন গোধূলি, শূন্য ৷ পাখিদের ঘরে-ফেরা ছায়া
অক্লান্ত বিনুনি ৷ সন্ধে ৷ অতর্কিত অথবা হঠাৎ
কাকে নেবে ? বেনেবউ ৷ নিভন্ত-উনুনে বড় মায়া ৷
কোমল হাতের স্পর্শ ৷ ব্যঞ্জনাদি — রিনঠিন সুর
গ্রাম্য নাকি আধুনিকা ৷ ঘ্রাণে কি বুঝিবে মরমিয়া !
প্রাণে ডাকে পাকশালা — ও আমার ক্ষুধার্ত দুপুর,
গোপনে গোপনে আমি ঘনীভূত সন্ধে আলি মিয়া ৷
শুয়ে কাঁদে খুকি ‘ঞ’ — তা আমি বুঝিতে পারি বটে ৷
একমাত্রা অন্নাভাবে — তুমি ধন্য, ধনধান্য সুধা…
এমত রচনা লিখে আলুথালু বেশে বালুতটে—
সমুদ্রের কাছে যেন বোমভোলা — কত না উদার !
সমস্তই মিলে যায় — শুধু নীলে মেলে না আকাশ
তারও আছে শারদীয়, শাদামেঘ, আন্দোলিত কাশ…