ঋজুরেখ চক্রবর্তী
নির্জনের রক্তমাংস
যেসব রাতে ঘুম আসতে চায় না কিছুতেই─রাত হয়তো গভীর হয়েছে যথেষ্ট, শরীর হয়তো ভেঙে পড়তে চাইছে ক্লান্তিতে, পিঠ আর কোমর চাইছে বিছানার আনুভূমিক নরম আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দুইই, আর তা পেয়েছেও, অথচ বোজা চোখের তরল অন্ধকারে মূর্ত ও বিমূর্তর মধ্যবর্তী সবটুকু বায়বীয় বাস্তবতা তার সমূহ তাৎক্ষণিকতা আর চিরন্তনতা সমেত তখনও সেই একই অমেয় জঙ্গমতায় অনন্ত মায়াবিভ্রম নিয়ে উথালপাথাল, তুমি বুঝে উঠতে পারছ না এর শেষ কোথায়─শরীর আপাতদৃষ্টিতে শান্ত আর ভেতরে চলতে থাকা তুমুল অস্থিরতার সেসব রাতে তুমি টের পাও সামান্য নৈশ নিদ্রার জন্য অনায়াসে তুমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করতে পার কখনও কখনও, সামান্য নৈশ নিদ্রার জন্য যেকোনও দীনাতিদীন সেমিকোলনের ভঙ্গিতে উবু হয়ে হাঁটু মুড়ে কিয়ৎক্ষণ তুমি বসে থাকতে পার এসি ইন্ডিকেটরের জ্বলন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে, সামান্য নৈশ নিদ্রার জন্য তুমি এমনকি সাময়িকভাবে ভুলে থাকতে চাইতে পার এনভেলপের মতো সাদা সেই মেয়েটির মুখ যে কিনা ছেড়ে চলে যাওয়া প্রেমিকটিকে ভুলে থাকতে চেয়ে তার ডায়েরির পাতায় করে দেওয়া তোমার অটোগ্রাফের দিকে তাকিয়ে মাঝেমধ্যেই বিনিদ্র রজনী যাপন করে বলে তুমি জেনেছ।
যেসব রাতে ঘুম আসতে চায় না কিছুতেই, সেসব রাতে তুমি, বাস্তবিক, তোমার নিজেরও অজান্তে পূর্ণদৈর্ঘ্যের একটি মানুষ হয়ে ওঠ যার আসলে কোনও কাহিনিচিত্র নেই, নিজস্ব এক কাহিনি আছে মাত্র, আর আছে সত্য ও শাশ্বত একটি চিত্র যা কোনও নির্মিত ভাবমূর্তির স্রেফ তোয়াক্কা করে না। আক্ষেপ এটুকুই যে তুমি কোনওদিন আর তাকে পূর্ণ প্রাণে গ্রহণ করতে পারবে না।