ইতিহাসের সীমা ছাড়িয়ে অতিকথার বিস্তারে মিশে যাওয়ার আখ্যান <br />   রাহুল দাশগুপ্ত

ইতিহাসের সীমা ছাড়িয়ে অতিকথার বিস্তারে মিশে যাওয়ার আখ্যান
রাহুল দাশগুপ্ত

সম্প্রতি সাহিত্য অকাদেমি যুব পুরস্কারে সম্মানিত হল সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ' পুরাণপুরুষ'.... সবমিলিয়ে জটিল এই আখ্যানে ঔপনিবেশিক ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে উত্তর-ঔপনিবেশিকতার সম্ভাবনাগুলিকে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। সমসাময়িক বাংলা উপন্যাসে এই বইটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন, একটি সফল উত্তরাধুনিক উপন্যাস, যা ভবিষ্যতে বাংলা উপন্যাস কোন দিকে যেতে পারে, সে ব্যাপারে কিছু মৌলিক দিশা দেখাতে প্রয়াসী হয়েছে...

বৌদ্ধিক বাংলা উপন্যাসের ধারায় সাম্প্রতিককালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরাণপুরুষ। এই উপন্যাসের কেন্দ্রে আছেন জমিদার রাজারাম দেব। উনিশ শতকের কলকাতায় তিনি একটি চরিত্র। তাঁকে ঐতিহাসিক চরিত্র বলে ভ্রম হতে পারে। কিন্তু ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন পুরাণ-পুরুষ। ইতিহাস থেকে ক্রমেই তিনি সরে যান মিথের পরিসরে। হয়ে ওঠেন মিথের অংশ। রাজারামকে তখন টমাস মানের ডঃ ফাউস্টাসের সঙ্গে তুলনা করতে ইচ্ছা করে। ডঃ ফাউস্টাস ছিলেন ইতিহাসের ঘূর্ণাবর্তের শরিক। ক্রমেই তাঁর সঙ্গে মিথের জগতের একটা যোগসূত্র তৈরি হয়। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ শতকের জার্মান জাতির প্রতীক-পুরুষ। রাজারামও তেমনই হয়ে ওঠেন উনিশ শতকের বাঙালি জাতির প্রতীক-পুরুষ। তাঁকে ঘিরে একটি রূপকের জগৎ তৈরি হতে থাকে। জাদুবাস্তবতার অবাধ প্রয়োগ এই আখ্যানের বৈশিষ্ট্য। ভবিষ্যতের বাংলা উপন্যাস কোন দিকে যাচ্ছে, তার একটি প্রতিনিধিত্বমূলক দৃষ্টান্ত হতে পারে এই বই।
একদম গোড়াতেই আছে নিঃসঙ্গ রাজারামের প্রতীক্ষার বর্ণনা। সংবেদনশীল সেই নিঃসঙ্গতায় রাজারামের ইন্দ্রিয়গুলিই, স্পর্শ, গন্ধ, স্বাদ, ইত্যাদিই তার একমাত্র সঙ্গী। তাঁর বয়স আটচল্লিশ। চাদরে গা ঢেকে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শুয়ে আছেন রাজারাম। এই নগ্নতাকেও প্রতীকী বলেই মনে হয়। রাজারামকে আমরা বারবার নগ্ন অবস্থায় দেখি। রাজারামকে অনাবৃত করে দেখাতে চেয়েছেন লেখক। তাই প্রশ্ন জাগে, রাজারাম আসলে কে? এই উপন্যাসের সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে আছে প্রতীক। ফ্লবেয়রের উপন্যাস আমাদের মনে পড়তে পারে। পিতা দেবরামকে কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত’ পড়তে শুনেছিলেন রাজারাম। শ্রীরামপুর মিশনারি প্রেসের সংস্করণ। খুঁটিনাটি বর্ণনায় এরকমই পুঙ্খানুপুঙ্খ এই আখ্যান। দুটি লাইন কিছুতেই ভুলতে পারেননি রাজারাম, “রাবণের দশমুণ্ড কাটিলেন শরে।/ পুনৰ্ব্বার উঠে মুণ্ড বিধাতার বরে।।’ রাজারামের মনে এই লাইন দুটি যেন এক মায়াজাল তৈরি করে, এক অতিপ্রাকৃতিক চেতনার জন্ম দেয়। স্বপ্নের ভেতর হারিয়ে যেতে চান তিনি আর সেইসব স্বপ্নে বারবার তিনি দেখতে পান, রক্ত। ক্রমে আমরা জানতে পারি, নিজের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে আছেন রাজারাম। কিন্তু তখনও যে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন জীবনের সঙ্গে। তাই কৃষ্ণভাবিনীর বাজুবন্ধের কথা মনে পড়ে যায় তার। মৃত্যু তাঁর কাছে একটা কার্নিভাল হয়ে আসে।
পরের অধ্যায়ে রয়েছে কৃষ্ণভাবিনীর আত্মহত্যার বর্ণনা। কৃষ্ণভাবিনী ছিল তাঁদের আশ্রিতা। তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল ভাই-বোনের। গোটা জমিদার বাড়িতে এই দুই নর-নারী ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাদের মধ্যে ছিল একটা আরোপিত দূরত্ব। এই অধ্যায়ে এসে আমরা বুঝতে পারি, প্রথম অধ্যায়ে রাজারামের যে নিস্ক্রিয়তাকে আমরা প্রত্যক্ষ করি, আসলে তা তাঁর স্বভাবেরই বৈশিষ্ট্য। জীবনে একবারই রাজারামের ভেতর থেকে একজন সামন্ত-প্রভু বেরিয়ে এসেছিল। তাঁর ভেতরের অবদমিত যৌন কামনা সেদিন আত্মপ্রকাশ করে। কৃষ্ণভাবিনীর সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হয় সে। পরিণামে কৃ অভাবিনী গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। গোটা জমিদার বাড়িতে একা এক নারীকে পেয়েও রাজারাম কোনওদিন সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেননি, কখনও সেই নারীর অবদমিত আকাঙ্খাকে চরিতার্থ করতে একবারের বেশি এগিয়ে আসেননি। শুধুমাত্র একবারই তিনি প্রবৃত্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, এমনই ছিল তাঁর নিষ্ক্রিয়তা। কৃষ্ণভাবিনীর কোনও যৌনজীবন ছিল না। অথচ সে সন্তানের মা হতে চলেছিল। রাজারাম কিন্তু এই সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাননি, এমনই তাঁর নিস্ক্রিয়তা! তিনি চেয়েছিলেন, কৃষ্ণভাবিনী গর্ভপাত করাক। মা হতে চেয়েছিলেন। কৃষ্ণভাবিনী। হতে পারবেন না জেনেই তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন।
এরপরই একটি স্বপ্ন দেখেন রাজারাম। তিনি দেখেন, তাঁর বাড়ির নীচে কার্নিভাল হচ্ছে। ঢাকিদের বর্ণনা পড়ে মনে হয় যেন কুরোসাওয়ার উপন্যাসের চরিত্র, মুখোশে ঢাকা। লাল জলের পুকুরে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে ঝাঁপ দেয় কৃষ্ণভাবিনী। রাজারামের অবচেতন, কৃষ্ণভাবিনীকে নিয়ে তাঁর অবরুদ্ধ যৌনতা এভাবেই যেন আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু স্বপ্নের মধ্যেও কৃষ্ণভাবিনীকে বাঁচাতে পারেন না রাজারাম, অসাড়, অবসন্ন হয়ে পড়েন তিনি, এমনই তঁর নিস্ক্রিয়তা! কৃষ্ণভাবিনীর মৃত্যুর পর সেই অভাব মেটাতে একটি বিড়াল পােষেন তিনি। নাম দেন, সীমন্তিনী। নিজের নিঃসঙ্গ জীবনে এই বিড়ালটির সঙ্গেই অবিরাম কথোপকথন চালিয়ে যান তিনি। এই বিড়ালটিও অসম্ভব নিস্ক্রিয়, উদ্যমহীন। এই নিস্ক্রিয়তাই যেন দুজনের মধ্যে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। ক্রমে বিড়ালটি যেন হয়ে ওঠে রাজারামের এক পরিপুরক চরিত্র, তাঁর অলটার-ইগো, আমাদের মনে পড়তে পারে মিখাইল বুলগাকভকে। প্রসঙ্গত, উইলিয়ম ফকনার চৈতন্য-প্রবাহ বোঝাতে টানা হরফের মাঝে মাঝে বাঁকা হরফ ব্যবহার করতেন। এই আখ্যানে ব্যবহার করা হয়েছে অণু হরফ, এবং তাদের ঘনীভূত করা হয়েছে পৃষ্ঠার মাঝখানে।
এরপরই আখ্যানে প্রবেশ স্বয়ং দ্বারকানাথ ঠাকুরের, এবং সেটাও রূপচাঁদ পক্ষীর একটি গানের সূত্র ধরে। রাজারাম দ্বারকানাথকে একটি চিঠি লিখতে চান। দ্বারকানাথের মতোই তিনি এক সফল ব্যবসায়ী হতে চান। তাকে নিরন্তর তাড়িত করে এই প্রেরণা। তিনি অন্য কিছু করতে চান। জীবনের একঘেয়েমি থেকে, সামন্তপ্রভুর চেনা খাঁচা থেকে বেরোতে চান। ভিতু মানুষ হয়ে থাকতে চান না তিনি। সাহসী হতে চান। চিন্তা করতে চান। ভয়ে যে দেশের মানুষ রোজ মরে যায়, নিশ্চিত জীবনের আশায় সামনে পা বাড়াতে দ্বিধাবোধ করে, তাদের একজন হয়ে থাকতে চান না তিনি। দর্শকাসনে থাকতে চান না তিনি, তিনি চান সক্রিয় হতে। তাঁর আক্ষেপ, “আমি সবসময় শুনেই যাই। আমি কিছু বলি না। আমার কথা শােনার জন্য কেউ অপেক্ষায় নেই। একের পর এক চিঠি লিখে যান রাজারাম। কখনও বাংলা, কখনও ইংরাজিতে, যা
স্পষ্ট করে তোলে তাঁর ঔপনিবেশিক চরিত্র। কিন্তু তাঁর সব চিঠিই অসম্পূর্ণ থাকে। কোনও চিঠিই শেষ হয় না। কোনও চিঠিই প্রেরণ করার মতো সক্রিয়তা তিনি শেষপর্যন্ত দেখিয়ে উঠতে পারেন না। চিঠিগুলির মধ্য দিয়ে তিনি নিজেই নিজেকে নিরন্তর বিশ্লেষণ করে চলেন। এগুলি হয়ে ওঠে তাঁর আত্মনিরীক্ষণের সাক্ষী। অসমাপ্ত চিঠি, খসড়া মিলিয়ে রাজারাম মোট বিরানব্বইটি চিঠি লেখে।
দ্বারকানাথের মৃত্যুর পরও একটি চিঠি লেখেন তিনি। এই কাহিনিতে এরকমই নানা মজা ও কৌতুক ছড়িয়ে আছে। এই শেষ চিঠিটি যেন রাজারামের সমস্ত স্বপ্নের এপিটাফ। তাঁর জীবনের একমাত্র স্বপ্নটি বিনষ্ট হয়ে যায়। তবু শােকের বদলে রাজারাম যেন একটি কৌতুকের মুহূর্ত উপহার দেন। তিনি মৃত দ্বারকানাথকেই চিঠি লিখতে বসেন। এই চিঠিতে কোনও আকাঙ্খা নেই, কিন্তু আত্মনিরীক্ষা আছে। বোঝা যায়, কাউকে পাঠানোর জন্য নয়, নিজেকে চেনার জন্যই এইভাবে রাজারাম একটির পর একটি চিঠি লিখে গিয়েছেন। তবু স্বপ্ন দেখা অব্যাহত থাকে। গোটা আখ্যানে রাজারাম স্বপ্নের পর স্বপ্ন দেখে যান। ভয়াবহ, হিংস্র, রক্তাক্ত সব স্বপ্ন। সমকালের নানা ঘটনা ছায়া ফেলে যায় সেইসব স্বপ্নে। স্বপ্নের মধ্য দিয়েই যেন আখ্যানের সঙ্গে সমকালের একটি যোগসূত্র তৈরি করে নিতে চান লেখক। স্বপ্নের মধ্য দিয়েও হয়তো বা রাজারাম চেয়েছেন নতুন কোনও জগৎ, কিন্তু কিছুতেই সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি। স্থবিরতায় আক্রান্ত তার জীবন ও পারিপার্শ্ব। তাঁর মনে হয়, “আমার আশপাশ সকলই আলোকোজ্জ্বল অথচ আমি বসিয়া থাকি আঁধারে প্রতিনিয়ত। এইভাবে বারবার তিনি ফিরে আসেন নিজেরই তৈরি এক আত্মঘাতী, অন্ধকার গুহায়।
এই সময় রাজারাম হাতে পান দুটি রহস্যাবৃত, প্রাচীন, ভেঁড়া অভিধান। জ্ঞান আহরণের নেশায় তাকে পেয়ে বসে। আর তখনই তিনি পেয়ে যান সেই আশ্চর্য শব্দ, কার্নিভাল। এই এতদিনে রাজারাম যেন সেই আত্মঘাতী গুহা থেকে বেরোনোর একটা পথ খুঁজে পান। তাঁর মনে হয়, তার দেখা-শােনা-জানার বাইরেও আস্ত একটি জগৎ আছে। কতটা কাছাকাছি পৌঁছনো যায় সে জগতের? কতটা সেই জগতের ভিতর প্রবেশ করা যায়?’ রাজারাম জানতে পারে, কার্নিভাল শব্দটির অর্থ ‘অমিত উল্লাস। যে মানুষের জীবন স্থির, স্থবির, নিস্ক্রিয়, কার্নিভাল শব্দটি তাঁর জীবনে হয়ে ওঠে এক নির্গমন-চিহ্ন। এরই পাশাপাশি রাজারামের কানে আসতে থাকে সমকালের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাঁওতাল বিদ্রোহ থেকে বিধবা বিবাহ আইন পাশ, মহারাজ নন্দকুমার থেকে মঙ্গল পাণ্ডে। রাজারাম থেকে যায় একই রকম নিস্ক্রিয়। কোনও ব্যাপারেই যেন তার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।
এরপরই সে যেন ঢুকে যায় জাদুবাস্তবতার মধ্যে। তাঁর ঘরে, একাকীত্বের জগতে, অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করে বনবিহারী নামের একটি হাড়গিলে পাখি এবং মেফিস্টো নামের একজন প্রায়-অশরীরী। তারা জানায়, আমরা এসেছি তার কারণ তুমি ডেকেছ বলে। মেফিস্টোর সূত্রে ফাউস্ট মিথের সঙ্গে আর হাড়গিলের সূত্রে দেশীয় মিথের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় রাজারামের। এই দুটি মিথের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে, মৃত্যু ও মৃত্যুবোধ। রাজারামের জীবনে অন্তিম সময় অর্থাৎ মুক্তির মুহূর্ত ঘনিয়ে আসতে থাকে। তার মধ্যে জন্ম নেয় অপেক্ষা। মৃত্যু তাঁর জীবনে আসতে চলেছে অমিত উল্লাসের ছদ্মবেশে, সেই সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি চলতে থাকে রাজারামের। মেফিস্টোর কাছে তিনি জানতে চান, ‘আমি স্বপ্ন দেখি। অদ্ভুত ধরনের স্বপ্ন। কিন্তু একটি মিল আছে। সব স্বপ্নেই বড়ো রক্ত থাকে। এত রক্ত থাকে কেন?’ রাজারাম তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে যান সীমন্তিনীকে। একটি বিড়ালকে, যে তারই মতো নিষ্ক্রিয়। রাজারামের মৃত্যুর পর বিড়ালটিও উধাও হয়ে যায়।
শেষপর্যন্ত রাজারামকে নিতে আসে দুই মৃত্যুর দূত। একজন যাত্রী ও দর্শকের মতোই রাজারাম শেষপর্যন্ত প্রবেশ করেন কার্নিভালের জগতে। সেই অন্তিম যাত্রায়তিনি দেখতে পান রক্ত ও নগ্নতা। নৃত্যরত পুরুষ, শহরের চলমান ছবি, সঙ্গম এবং জান্তব চিৎকার, অনাবৃত কৃষ্ণভাবিনী যে কামনাতাড়িত হয়ে এগিয়ে আসে এবং তারপরই শুরু হয় মহাপ্রলয়ের আতঙ্ক ও ভয়াবহতা। মৃত্যুর আগে রাজারামের সমস্ত অবদমিত ইচ্ছাগুলো যেন বেরিয়ে আসে, উৎসবের আবহে নিজেদের মেলে ধরে এবং সিনেমার মতোই দৃশ্য ও অনুভব তৈরি করতে থাকে। আর তারপরই নেমে আসে অনিবার্য। বিনাশ, কয়েক মুহূর্তের তীব্র আলোড়ন এবং তারপরই ঘনঘোর স্তব্ধতা। রাজারাম হয়ে ওঠেন পুরাণের অংশ, কার্নিভাল তাঁকে বানিয়ে দেয় পুরাণ-পুরুষ, এক অতিবাস্তবতার মধ্য দিয়ে নিস্ক্রমণ ঘটে তার, ইতিহাস থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন এবং প্রবেশ করেন পুরাণের অতিরঞ্জিত জগতে, অতিকথার মায়াবাস্তবতায়।
সবমিলিয়ে এবং এভাবেই রাজারাম হয়ে ওঠেন এক ঔপনিবেশিক ভূখণ্ডের প্রতীক ও প্রতিনিধি। তার নিস্ক্রিয়তা যেন কোনও ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, একটি জনগোষ্ঠীর মনস্তত্বের নৈর্ব্যক্তিক প্রকাশ। তারা সাহস করে কোনও ব্যাপারে এগোতে পারে না। নিশ্চিন্ত জীবনের লোভে সব ব্যাপারেই পিছিয়ে আসে। রাজারাম যৌনতা বা ব্যবসা, জ্ঞান বা সম্পর্ক, কোনও ব্যাপারেই নিজের জড়তাকে অতিক্রম করতে পারেন না। এই ভয়াবহ জড়তা আমাদের রুশ লেখক গনচারভের ‘ওবলামভ’ বা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র উপন্যাস ‘কঁদো নদী কাঁদো’র মহম্মদ মুস্তাফা চরিত্রটিকে মনে করিয়ে দিতে পারে। তাকে আজীবন তাড়িত করে দুটি মূল চালিকাশক্তি, যৌনচেতনা এবং মৃত্যুচেতনা। তাঁর চৈতন্যপ্রবাহের মধ্য দিয়েই কাহিনিটি এগিয়ে যেতে থাকে, কাহিনির ভেতরে কাহিনি তৈরি হয়, সময় কখনও এগিয়ে যায় কখনও পিছিয়ে, ভেঙে দেয়। সরলরৈখিকতাকে, বাস্তবতার দুটি স্তর তৈরি হতে থাকে, ব্যক্তিগত এবং সমসময়ের, আর তাদের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে তৈরি হতে থাকে স্বপ্ন ও অতিকথার নিজস্ব পরিসর। সবমিলিয়ে জটিল এই আখ্যানে ঔপনিবেশিক ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে উত্তর-ঔপনিবেশিকতার সম্ভাবনাগুলিকে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। সমসাময়িক বাংলা উপন্যাসে এই বইটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন, একটি সফল উত্তরাধুনিক উপন্যাস, যা ভবিষ্যতে বাংলা উপন্যাস কোন দিকে যেতে পারে, সে ব্যাপারে কিছু মৌলিক দিশা দেখাতে প্রয়াসী হয়েছে, আখ্যান-ভাবনার ক্ষেত্রে খুলে দিয়েছে কিছু সম্ভাবনাময়বিকল্প..

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (2)
  • comment-avatar
    Debasish Tewari 3 years

    কৃষ্ণভাবিনীর গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা, রাজারামের নিষ্ক্রিয়তা, মৃত দ্বারকানাথকে চিঠি লেখা… কার্নিভাল…সীমন্তিনী…আদ্যান্ত পড়ে যেটুকু বুঝলাম যে উপন্যাসের এতো ভালো বিশ্লেষণ খুব কম পড়েছি।যদিও রাহুলদার লেখার অন্যতম ভক্ত আমি। সায়মের লেখারও ভক্ত, ওঁর প্রবন্ধ দেশ-এ পড়ি।অসাধারণ লাগে। উপন্যাসটা মনে হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের নতুন দিক নির্দেশক, পড়তে হবে।সায়ম অনেকদূর পৌঁছাবে। ওঁর জয়যাত্রা অব্যহত থাকুক। আর রাহুলদার এরকম লেখা, শুধু এরকম নয়, রাহুলদার যে-কোনও লেখা আমাকে পড়িয়ে নেয়।অভিনন্দন রাহুলদাকেও।

  • comment-avatar
    Debasish Tewari 3 years

    কৃষ্ণভাবিনীর গর্ভবতী হওয়ার ঘটনা, রাজারামের নিষ্ক্রিয়তা, মৃত দ্বারকানাথকে চিঠি লেখা… কার্নিভাল…সীমন্তিনী…আদ্যান্ত পড়ে যেটুকু বুঝলাম যে উপন্যাসের এতো ভালো বিশ্লেষণ খুব কম পড়েছি।যদিও রাহুলদার লেখার অন্যতম ভক্ত আমি। সায়মের লেখারও ভক্ত, ওঁর প্রবন্ধ দেশ-এ পড়ি।অসাধারণ লাগে। উপন্যাসটা মনে হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের নতুন দিক নির্দেশক, পড়তে হবে।সায়ম অনেকদূর পৌঁছাবে। ওঁর জয়যাত্রা অব্যহত থাকুক। আর রাহুলদার এরকম লেখা, শুধু এরকম নয়, রাহুলদার যে-কোনও লেখা আমাকে পড়িয়ে নেয়।অভিনন্দন রাহুলদাকেও।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes