আচার্য শঙ্করের সারদাভুজঙ্গ-প্রয়াতাষ্টক-স্তোত্র ও তাঁর অনুসৃজনপ্রয়াস
শুভম চক্রবর্তী

১
সুবক্ষোজকুম্ভাং সুধাপূর্ণকুম্ভাং
প্রসাদাবলম্বাং প্রপুণ্যাবলম্বাম্।
সদাস্যেন্দুবিম্বাং সদানোষ্ঠবিম্বাং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
হাতে যাঁর সুধাভরা সুন্দর কলসি
উঁচু উঁচু রমণীয় স্তনদ্বয় যাঁর
পরম-পুণ্যের ফল যাঁর মুখশশী
দেখামাত্র লাভ হয়, সেই জনিতার
বরদানকালে যাঁর মধু-ঠোঁট-দুটি
যেন পাকা বিম্বফল দেখে ভরে মন
জননী, জগৎ-মাতা সেই সারদার
নিরন্তর ভজনায় কাটুক জীবন
২
কটাক্ষে দয়ার্দ্রাং করে জ্ঞানমুদ্রাং,
কলাভির্বিনিদ্রাং কলাপৈঃ সুভদ্রাম্।
পুরস্ত্রীং বিনিদ্রাং পুরস্তুঙ্গভদ্রাং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
কটাক্ষে কৃপার দৃষ্টি, জ্ঞানমুদ্রা হাতে
চৌষট্টি কলায় রত যিনি সারাক্ষণ
পবিত্র-সোনায়-সাজা তাঁরই সাক্ষাতে
বয়ে চলে তুঙ্গভদ্রা হয়ে একমন
আলস্যবিমুখ সেই দেবী সারদার
জগৎজননী-রূপ করছি ভজন
৩
ললামাঙ্ক-ফালাং লসদ্-গান-লোলাং,
স্বভক্তৈকপালাং যশঃশ্রীকপোলাম্।
করে ত্বক্ষমালাং কনৎ প্রত্নলীলাং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
কস্তুরি-তিলকে আঁকা সুন্দর কপাল
উৎকৃষ্ট সংগীত যাঁকে করে আকর্ষণ
শরণাগতের কাছে যিনি চিরকাল
রক্ষাকর্ত্রী-রূপ ধরে করেন ভ্রমণ
গণ্ডদেশ যেন তাঁর যশশ্রীরঙিন
হাতেতে বর্ণেরমালা, লীলাসমুজ্জ্বল
সেই দেবী সারদার সমূহ প্রাচীন
জননী, জগৎমাতা ভজনা সম্বল
৪
সুসীমন্তবেণীং দৃশা নির্জ্জিতৈণীং,
রণৎকীরবাণীং নমদ্-বজ্রপাণিম্।
সুধামন্থরাস্যাং মুদা চিন্ত্যবেণীং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
যাঁর সিঁথি রমণীয়, বিনুনি সুন্দর
নয়ন-শোভায় হয় হরিণীর হার
শুক ও অন্যান্য পাখি বলে নিরন্তর
অপ্রাকৃত মনোহর লীলাখেলা তাঁর
দেবেন্দ্র বজ্রের ভার মাটিতে আনত
প্রণাম করেন যাঁকে, সেই জনিতার
বদন অমৃত ভরা, ধরে তাঁর ব্রত
বেণীধ্যান করে ভক্ত সে-সারদামা-র
৫
সুশান্তাং সুদেহাং দৃগন্তে কচান্তাং,
লসৎসল্লতাঙ্গীমনন্তামচিন্ত্যাম্।
স্মরৎ-তাপসৈঃ সঙ্গপূর্ব্বস্থিতান্তাং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
স্বভাবে সুশান্ত যিনি, সুন্দর শরীর
অপাঙ্গ চুলের প্রান্ত ছুঁয়ে শোভা পায়
কেশরাশি যাঁর পুণ্য সেই সুন্দরীর
সত্যের স্বরূপ নেয় যাঁর মহিমায়
লতার মতন তন্বী দেহখানি তাঁর
অনন্ত অচিন্ত্যনীয়া স্বরূপভূতার
স্বরূপ ভাবনা করে যত মুনিগণ
ভাবনা-অতীত-ভেবে মনে লাগে ঘোর
আমার জননী সেই জগৎমাতার
নিরন্তর ভজনায় কাটুক প্রহর
৬
কুরঙ্গে তুরঙ্গে মৃগেন্দ্রে খগেন্দ্রে,
মরালে মদেভে মহোক্ষেহধিরূঢ়াম্।
মহত্যাং নবম্যাং সদাসামরূপাং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
বায়ু-রূপ-ধরে যাঁর মৃগে আরোহন
সূর্য-রূপে যাঁর হাতে অশ্বের লাগাম
দুর্গা-রূপে সিংহপৃষ্ঠে যাঁর আগমন
বিষ্ণু হয়ে তিনি নেন গরুড়ে বিশ্রাম
ব্রহ্মা-রূপ ধরে যিনি হংসবাহন
উন্মত্ত হাতির পিঠে ইন্দ্র-রূপ মেনে
মহাদেব-রূপে মহাবৃষে আরোহন
অথচ অরূপা নিত্যা নবমীর দিনে
আমার জননী যিনি জগতমাতৃকা
সারদা ভজনা হোক কপালের-রেখা
৭
জ্বলৎকান্তিভঙ্গিং জগন্মোহনাঙ্গীং,
ভজে মানসাম্ভোজসুভ্রান্তভৃঙ্গীম্।
নিজস্তোত্রসঙ্গীতনৃত্যপ্রভাঙ্গীং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
যাঁর লাবণ্যের ঢেউ অনন্য উজ্জ্বল
দেহের অপূর্ব রূপে মায়াকে মায়ার
বশবর্তী করে তোলে, সে-জন নির্মল
হৃদয়কমলে থাকা ভ্রমরীর সার
নাচ-গান-স্তোত্র যাঁর প্রকাশমাধ্যম
জগৎজননী তাঁরই ভজনা উত্তম
৮
ভবাম্ভোজনেত্রাজসংপূজ্যমানাং,
লসন্মন্দহাসপ্রভাবক্ত্রচিহ্নাম্।
চলচ্চঞ্চলাচারুতাটঙ্ককর্ণাং,
ভজে শারদান্বামজস্রং মদম্বাম্।।
——————————————–
যাঁর অর্চনায় মগ্ন হরি আর হর
এমনকি সৃষ্টিকর্তা সাক্ষাৎ ঈশ্বর
বদনে হাসির ছটা মৃদুমন্দ টোল
কানেতে ভূষণ তাঁর বিদ্যুৎ-কল্লোল
আমার জননী যিনি জগতেরও মাতা
তাঁকেই ভজনা করি যিনি হন ত্রাতা
চিত্র– নন্দলাল বসু ও কালীঘাট পেন্টিং