অরুণ সেন – একটি চর্চাচিত্র
:: সৌম্য দাশগুপ্ত
‘শিল্পীর দায় ষাঁড়ের দুটো শিং-কে একসঙ্গে ধরে তাকে বাগে আনা’ –
অরুণ সেন – একটি চর্চাচিত্র
“কী কবিতা আর কী কবিতা নয়
এটা বলতে বলতে
ওরা আমাকে মাঠের শেষ কিনারে নিয়ে এল
যেখান থেকে দুটো ঘোড়া
দুই দিগন্তের দিকে রুখে যায় উদ্দাম ব্যথাময়
সেই ছুটে যাওয়ার ছন্দও, ওরা বলল, কবিতা নয়!”
– শঙ্খ ঘোষ
১।
বিশুদ্ধ একাডেমিক, তার্কিক, কবিতাশ্রয়ী ও বাংলাদেশের সাহিত্যের গবেষক, অধ্যাপক, প্রবন্ধকার, পত্রিকাকর্মী, এবং দারুণ আড্ডাপ্রিয় অরুণ সেনের কর্মজীবনকে যদি দু-ভাগে ভাগ করি, তাহলে তার প্রথম ভাগকে বলব বিষ্ণু দে-পর্ব, আর দ্বিতীয় পর্বকে বলব বাংলাদেশ-পর্ব। কিন্তু এই দুই পর্বের মাঝামাঝি একটি অসামান্য বই তিনি উপহার দিয়েছেন, যার নাম ‘কবিতার দায়, কবিতার মুক্তি’। বিষ্ণু দে সম্পর্কে তাঁর সাতটি বই – সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে পত্রবিনিময় নিয়ে ‘এই মৈত্রী এই মনান্তর’ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ‘বিষ্ণু দে-র নন্দনবিশ্ব’ অব্দি একটি আজীবন চর্চা তাঁর, আর সেই ভরকেন্দ্র পরবর্তীকালে (আটের দশক থেকে) অনেকটাই সরে গেছে বাংলাদেশের সাহিত্যের দিকে। জয়পুরিয়া কলেজের অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করে গেছেন, লেখালেখি করে গেছেন।
অরুণ সেনের কবিতাসমালোচনার যুগপরিসর গত শতকের তিরিশের দশক থেকে মোটামুটি সত্তরের শুরু অবধি। এই চল্লিশ বছরে বাংলা কবিতার মোড় বহুবার বহুভাবে ঘুরেছে, বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত আগের থেকে শুরু করে স্বাধীনতা, দেশভাগ, মন্বন্তর, দাঙ্গা, রাজনৈতিক চিন্তা ও আন্দোলন, এ-ধরণের নানা ঘটনার অভিঘাত আমাদের জীবনে নানা ছাপ ফেলে গিয়েছে। ফলে, কবি ও কবিতা, এবং তার পাঠক – সবকিছুর মধ্যেই নানা পরিবর্তন এসেছে। সেইসব যুগচাহিদার কারণে আমাদের মানস, রুচি, আদর্শ, শিল্পবোধ এবং কাব্যবোধ নিয়ে উঠেছে নানা তর্ক। অরুণ সেন সেইসব তর্কের মধ্যে প্রধান তর্কটি নিয়ে এক দীর্ঘ পরিক্রমা করেছেন নানা সময়ে লেখা এইসব প্রবন্ধগুলিতে। মুখবন্ধে লিখছেন – ‘… কবির কাজ তো শুধু গলা মেলানো নয়, শুনতে না-পাওয়া স্বরকে কানের গোচরে নিয়ে আসা’।
কী সেই শুনতে না-পাওয়া স্বর? সে কি কবিমানসের গূঢ় অন্তর্যাত্রার নিহিত পাতালছায়া, না কি সামাজিক ও রাজনৈতিক যাপনের যে দৈনন্দিন, তার স্পষ্ট বা আবছায়া প্রতিচ্ছবি? না কি এই দুইয়ের এক সমন্বয়? এই বিচারের খোঁজ সামান্য নয়, আর তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য অরুণ সেনের গবেষণা আমাদের কবিতাচর্চার লক্ষ্য ও উপলক্ষ্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। রাজনৈতিক অবস্থানের পরিমাপে সাহিত্যের যে-ধারণা আমাদের এই দীর্ঘ সময়ের চর্চায় বিধৃত আছে, তার মান্যতা রেখে এক দিক, আর রাজনীতিকে পরিহার করে ব্যক্তিগত বিশুদ্ধতার অন্বেষণ চালিয়ে যাওয়া – এ আরেক দিক, তর্ক কি তাহলে কেবল এই দুই চরম মেরুর? প্রশ্ন করা সহজ, কিন্তু উত্তর তত সোজা নয়, অরুণ সেনের আলোচনায় সেই সত্যটাই শেষ পর্যন্ত উঠে আসে। বিষ্ণু দে এই দুই মেরুকে মনে করতেন ষাঁড়ের দুটো শিং, যা কবিকে দু-দিকে ক্রমাগত টানতে থাকে, আর, ‘শিল্পীর দায় ষাঁড়ের দুটো শিং-কে একসঙ্গে ধরে তাকে বাগে আনা’।
কবিতাচর্চার ভুবনে, সে কবিই হন আর পাঠকই হন, আমাদের এই ভাবনার শরিক কখনো না কখনো হতেই হয়েছে।
২।
কবিতার কী দায়, আর কোথায় তার মুক্তি, এই প্রশ্নের আতসকাচের সন্ধানে তাঁর যাত্রা শুরু একেবারে গোড়ার দিক থেকে।তাঁর সারাজীবনের কাজ দেখতে দেখতে মনে পড়ে দেবদাস আচার্যর লাইন – ‘…এই তো সামান্য গল্প,/ এই গল্পই আমাকে সারা জীবন বলে যেতে হবে।’ ‘এই মৈত্রী এই মনান্তর’ বইয়ের মুখবন্ধে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আর বিষ্ণু দে-র আদানপ্রদান ও সম্পর্ক নিয়ে লিখছেন অরুণ সেন, “…দুই কবি যদি হন আধুনিক বাংলা কবিতার দুই শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি, তবে তাঁদের বন্ধুত্বের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত ঐ যুগের কবিতার ইতিহাসও। ফলে এই ইতিহাস হয়ে দাঁড়ায় কবিতা বিষয়ে নানা প্রস্তাব, নানা তর্কবিতর্ক, নানা সমস্যার বিবরণ। সম্পর্কটা মৈত্রীর যেমন, তেমনি মতান্তর বা হয়তো কিছুটা মনান্তরেরও। দুই স্বতন্ত্র নন্দন্দৃষ্টির সাক্ষাৎকার – তাদের যাত্রাবিন্দুর ঐক্য ও পরিণামী বিচ্ছেদ।” যে-তর্কের কথা আগে বললাম, তারই যেন ব্যক্তিরূপায়ণ মনে হয় এই লাইন, যেন সুধীন্দ্রনাথ ধরে আছেন একটি শিং, আর বিষ্ণু দে আরেকটি।“এলিঅট পাঠের নন্দিত উত্তেজনা থেকে সামাজিক সম্বন্ধোত্তর সাহিত্যিক সৌহার্দ্য।” রবীন্দ্রনাথের পর নতুন এক নন্দন তৈরি করার প্রয়োজনে এঁদের দুজনেরই এলিঅটকে দরকার পড়েছিল, যেন নতুন কোন ভাষা ও কবিতাবিশ্বকে খুঁজে বের করার তাগিদে। এই সম্পর্কের নিরিখে অরুণ সেন কাব্যজিজ্ঞাসার মূল চত্বরে ঢুকে পড়েন, যেখানে কবিতার কাজ কী, সেই নিয়ে এই দুই আত্মীয় অসমবয়সী দুই কবির নিরন্তর তর্ক ও আলোচনা চলতে থাকে বছরের পর বছর।
অরুণ সেনের কবিতাদর্শনের যাত্রা ও পরিণতি ধরতে গেলে তাই আমাদের এই বিষ্ণু-সুধীন্দ্র বাহাসের থেকে শুরু করা। কবিতা পড়তে গেলে, আস্বাদন করতে গেলে, বা সাহস করে লিখতে গেলেও এই দ্বন্দ্বমূলক ভাববাদের সঙ্গে আমাদের সামিল হতে হবে। কোথায় দুই কবি আলাদা হয়ে যান, বোঝাতে বিষ্ণু দে-র ‘তুমি’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে সুধীন্দ্রনাথের অসহিষ্ণুতার উদাহরণ দিয়ে বোঝান অরুণ সেন – “আমার শিক্ষা-দীক্ষার দৈন্য ঘুচলেও, আমি ‘নাম রেখেছি কোমল গান্ধার’-এর প্রত্যেক ‘তুমি’-কে চিনতে পারতুম কিনা সন্দেহ” (লিখেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে-কে, চিঠিতে)। অরুণ বাবু লিখছেন, “এই ‘তুমি’ কি কবির প্রেমিকা, না সহকর্মী, না পাঠকসমাজ, না কি বিপ্লবমুখী জনগণ? হয়তো কোথাও সবার প্রতি ইঙ্গিত, কোথাও-বা একটি ইঙ্গিতের থেকে অনায়াসে চলে যাওয়া যায় অন্যের ইঙ্গিতে। তুমি-র এই রহস্যময় ইঙ্গিতময় ব্যবহার কি না জানা সম্ভব সুধীন্দ্রনাথের? তাঁর কবিতাতেও তো ছিল ‘তুমি’-র বিচিত্র বিন্যাস।” একটা শব্দ ব্যবহারের বিচিত্র অন্বয় থেকে যে মতান্তর শুরু, কাব্যাদর্শের বৈপরীত্যে তা-ই গিয়ে পৌঁছয় মনান্তরে – ‘…সোচ্চার হয়ে ওঠে মতভেদ, এমনকী কখনো-কখনো উগ্রভাবেই রাজনীতি-সমাজনীতি এসে পড়ে।’
কিন্তু কাব্যাদর্শ যতই পৃথক হোক, অরুণবাবু তীব্র কোনও পক্ষপাত দেখান-না, তিনি কবিত্বের প্রসাদে নিষিক্ত দুই কবিরই কাব্যসুষমাকে নন্দিত করেন, আর ঐ চিঠি সম্পাদনার ভূমিকাতেই তাঁর অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেন – কবিতার প্রবেশবিন্দু বা প্রস্থানবিন্দুর মাধ্যমে কবির বোধে রাজনীতি, জীবনবোধ, সমাজ, ব্যক্তি, শিল্পবোধ, সংশয়, নৈরাশ্য, আশার দোলাচল চিহ্নিত করা গেলেও এর কোনোটিই অন্যটির তুলনায় কেবল বিশ্বাসের জায়গা থেকে শ্রেয়তর নয়, কবিতা-কে কবিতা হয়ে উঠতে হবে কেবল নিজের গুণে।
৩।
আজকের বাংলা কবিতার জগতে অতটা টের না পাওয়া গেলেও আগের আমলেও অনেকটা সময় জুড়ে কবি ও কবিতার সামাজিক দায়বদ্ধতা ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে একটা তুলনামূলক শিল্পবোধের বিচার চলত। কবিতাপাঠের প্রথমদিকে আমরা যখন গুরুত্ব দিয়ে কী পড়ব সেটা নির্বাচন করি, তখন আমরা মূলধারার প্রকাশমাধ্যমে যা আমাদের হাতে এসে পড়ে সেই দিয়েই শুরু করি হয়ত। শুরু করার সময় আমাদের সেই ধরনের লেখাই হয়ত টানে বেশি, যা আমাদের (অপরিণত) পাঠাভ্যাসে কিছুটা আয়ত্বসাধ্য। সাতের দশকের শেষ দিকে আমরা যখন পাঠ্যবইয়ের বাইরে কবিতায় চোখ রাখতে শুরু করি, তখন আমাদের হাতে জনপ্রিয় কবিতাই এসে পড়ত বেশি, আর মাঝে মাঝে দুয়েকটা সীরিয়স লিটল ম্যাগাজিন। আস্তে আস্তে আমাদের পড়বার অভ্যেস তৈরি হওয়ার পর আমরা হয়ত শেষ পর্যন্ত দুরূহতার বাধা পেরিয়ে আরো জটিল চিন্তার লেখায় পৌঁছই। কেউ কেউ হয়ত পৌঁছনোর জন্য আলাদা পরিশ্রম বা সময় দিয়ে উঠতে পারেন না। রুচিবোধ তৈরি হওয়ার সঙ্গে আমাদের একটা ব্যাক্তিগত জীবনদর্শনও হয়ত গড়ে উঠতে থাকে। এই জীবনবোধের প্রত্যয় থেকে আমরা বিচার শুরু করি, কী কবিতা, কী কবিতা নয়। ভাবি, কী বলা হচ্ছে এই কবিতায়? এই কবির কি একধরণের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে? না কি ইনি ব্যক্তিগত বাহ্যিক জীবনযাপনের গল্প বলছেন, কাব্যিক ভাষা আয়ত্ব করে? এরও পরে কী থাকে? মানুষের মনের জগতের জটিল আনাগোনা? কিংবা অর্থকে অতিক্রম করে যাওয়া অনধিগম্য আরেক জগৎ, যেখানে বাইরের জীবনের সঙ্গে কোনোরকম সাযুজ্যই থাকে না?
অরুণ সেন মনে করিয়ে দেন, ‘কবিতায় সামাজিক প্রতিফলন এবং কবির সামাজিক দায় – দুটো কিন্তু মোটেই এক জিনিস নয়। সৎ এবং আন্তরিক রচনায় এক অর্থে তো সামাজিক প্রতিফলন ঘটেই। অন্তত কবির নিজের মনের বাস্তবতাটুকু নিশ্চয়ই।’ এখানে একটা ব্যাপার লক্ষ করতে হবে যে তখন রাজনৈতিক বা সামাজিক দায়বদ্ধতা বলতে বামপন্থী আশাবাদ ধরা হত, আর তথাকথিত অ-রাজনৈতিক বিশুদ্ধ কবিতায় ব্যক্তিগত নৈরাশ্যের অন্ধকার – এই সরলীকরণে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অরুণবাবু আমাদের মনে করিয়ে দেন, ‘কাফকা বা এলিঅট, তাঁদের রচনায় যেখানে নৈরাশ্য, তা যে সময়ের অন্ধকারকেই প্রকাশ করে – তাকে তুচ্ছ করা কি যায়? সুধীন্দ্রনাথের নাস্তি কিংবা জীবনানন্দের ক্লান্তি – তা কি সময়ের অভিজ্ঞতার একেবারে বাইরে?” আবার, সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভেবে লেখেন যে কবি, তাঁর কাজ সমাজপরিবর্তন নয়, ‘তাঁর কাজ আরো সূক্ষ্ম, আরো গোপন, আরো অন্তর্চারী…বড় কবি কি একই ধরনের কবিতা লেখেন?… তিনি শুধু তাঁর নিজের সময়েরই কথা বলেন, চিরকালের নয়? বলেন নিশ্চয়ই। কিন্তু তা সমকালেরই প্রাসঙ্গিকতায়, সমকালেরই নন্দনে ও ভাষায়। আর তারই ফলে প্রত্যক্ষের সামাজিক আলোচনা ও চিরকালের স্তব্ধতা এক হয়ে মিলতে পারে’।
এই সন্দর্ভ পেশ করার পর আমাদের নানা দশক পরিক্রমা করে অরুণ সেন দেখান যে জীবনানন্দ সে-অর্থে দায়বদ্ধ কবি না হলেও তাঁর কবিতা সেই দায়েরই প্রশ্নে আরো গভীর ধ্যান ও বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে। বরং বুদ্ধদেব বসু, অরুণকুমার সরকার বা নরেশ গুহ প্রমুখেরা দায়বদ্ধ কবিতার কথা শুনলেই শুদ্ধতার রসভঙ্গ হল মনে করতেন। সেই বিচারে অরুণ সেনের সিদ্ধান্ত যে বিষ্ণু দে সম্ভবত সেই সংখ্যালঘু কবিদের একজন, যিনি শিল্পিত ও দায়বদ্ধ কবিতার গঙ্গাযমুনা মিলন ঘটিয়ে আজীবন লিখে গিয়েছেন। ‘বিষ্ণু দে – স্বভাবে প্রতিবাদে’ বইয়ের ভূমিকায় অরুণ সেন লিখছেন – ‘বিষ্ণু দে প্রায় প্রথম থেকেই ব্যক্তিসর্বস্ব অনুভূতির চর্চা, বা যাকে বলে স্বভাবকবিত্ব, তার উল্টোপথে গেলেন। … কিন্তু তখনই আবার মননের বা রসজ্ঞতার চর্চাও শুরু হয়ে গেছে।’ আরো কারো কারো নাম এসে পরে এই প্রসঙ্গে, উদাহরণের মত – শঙ্খ ঘোষ, আর অমিতাভ গুপ্ত তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আর যাঁদের নাম করেন, তাঁদের কারো কারো কবিতা – দায়বদ্ধতা বা দায়হীনতা নির্বিশেষে – আমাদের কারো কারো হয়ত অত ভালো লাগে না, তবু অরুণ বাবুর এই প্রত্যয় আমাদের একটা অবস্থানকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়।
‘গ্রহণে ও বর্জনে’ প্রবন্ধে অরুণ সেন পৌঁছে আরো বড় একটা পরিসরে নিয়ে যান আমাদের – তিনি বলেন যে ‘কবিতা সেই পাঠকই দাবি করে যে, ব্যক্তিক খন্ডতা ও তুচ্ছতা সত্ত্বেও, সমগ্রতার অনুসন্ধানী…সুতরাং শ্রেষ্ঠ কবিতা তা-ই, যা এই বিরাটকে ধরতে চায় – আমাদের অস্তিত্বের কোনো একটি মাত্র উপাদানকে উন্মোচন করে নয়, কোনো গৌণ খন্ড অভিজ্ঞতাকে প্রদীপ্ত করে তুলে নয় শুধু।’
এসব তর্ক এভাবে আজকাল কেউ করে না। কবিতার দায়বদ্ধতা থাকবে কিনা, থাকলে কার প্রতি সেই দায় – সমাজ, রাজনীতি, মানুষ, এ-নিয়েও প্রশ্ন ওঠে কই। কিন্তু কবিতা পড়ার সময় আর লেখার প্রয়াসে এই পরিমিত রুচিনন্দনবোধ আমাদের কাউকে কাউকে হয়ত একধরনের দেখার ভঙ্গি তৈরি করে দিয়েছিল একসময়, যার আশ্রয়ে আমরা বুঝতে শিখেছিলাম, কবিতা নানারকম হয়, কিন্তু তাকে কবিতা হতে হবে শেষ পর্যন্ত।