
অমৃতা ভট্টাচার্য-র কবিতা
চিন্ময়ী
খড়ের কাঠামো ভুল; ধোঁয়ার ডানায় অবিকল
চওড়া সিঁথির মুখে সাঁকোর সন্ধেরা ঝিলমিল
আঁকিবুকি উঠে এলে, সিঁড়ির ওপরে চিলেকোঠা
দরজা তো খোলাই থাকে, ডাকনাম গামছার পাশে —
শুকোয় রোদের গান, বৃষ্টিও সাক্ষীর খোঁজে ঘোরে
অপার চারণভূমি — ভূমির ওপারে হিমস্রোতে
ভেসে গেল ওই চোখ, অভয়া ঠোঁটের সাতফের
ওই যায় দশ হাত, ডোবে উরু, নাভিপদ্ম ডোবে …
এমন গভীর মায়া; মাটির কি খোঁজ পাওয়া যায়?
তবুও মাটিকে ভুলে কতবার সে-রূপ চিন্ময়ী!
তৃতীয় চক্ষুর আলো একাকার করে সৃষ্টি-লয়
ততবার ভুলে যাই, মৃত্তিকার মাতৃমুখ চিনি
যতই চেতনা বলি, এ মাটিই আদি পরিচয়।।
আহা! অপূর্ব! শিরোনাম ও কবি – এই দুইয়ে মিলে যে প্রত্যাশার গোলক তৈরী হয়, তা যেন ছাড়িয়ে যেতে চায় চেনা ফ্রেম, ছক থেকে বের হয়ে আসে নিছক বেঁচে থাকা ঘিরে ঘনিয়ে ওঠা কুহক…আসলে যা কল্পবৈরাগ্যের স্থিতি হয়ে ওঠে।
“এমন গভীর মায়া; মাটির কি খোঁজ পাওয়া যায়?”… এরপরই আসছে -” মৃত্তিকার মাতৃমুখ চিনি” – এই দ্বন্দ্বের উত্তরণই তো কবিতায় শরীরী হয়ে উঠেছে এবং এই হয়ে ওঠাই দৃপ্ত বার্তায় সোচ্চার হয়ে ওঠে -“যতই চেতনা বলি, এ মাটিই আদি পরিচয়।” প্লেটো তাঁর কল্পরাজ্য থেকে কবিকে বাদ রেখেছিলেন। আজ এতদূর এসে যখন মহামতির এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমাদের বিস্ময় জাগে, ততক্ষণে মুঠোয় ভরে উঠেছে অপাপবিদ্ধ পংক্তিরা, আমাদের বিস্ময়াহত বোধ শুশ্রূষা পাচ্ছে চৈতন্যের রাঙিয়ে ওঠা আলোয়। আমাদের কবিতা-দিগন্তে যাপিত দিন রাত বিমূর্ত হয়ে উঠছে…