অভিষেক ভট্টাচার্য-র ছোটগল্প ‘পায়রা’

অভিষেক ভট্টাচার্য-র ছোটগল্প ‘পায়রা’

(১)
একাকী সড়কে ছুটছে স্কুটার।
কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। মিহি কাদার ছিটে উড়ছে পিছনের চাকায়। কোনওদিনই এসব লক্ষ্য করার কেউ থাকে না। তাই আমরা ছাড়া এসব কেউ দেখতেও পাচ্ছে না। স্কুটারটা দৌড়ে পালাচ্ছে, আজকের দিনটার থেকে আরও দূরে দূরে দূরে চলে যেতে চাইছে। অ্যাক্সিলারেটার আরও জোরে মুচড়ে দেওয়া হচ্ছে। কাপড় নিঙড়োনোর মতো। স্পিড বাড়ছে। বেড়েই চলেছে। সুপারম্যানের গতিতে আমরা ওর পিছু নেব, আসুন। মাথার ওপর উড়তে থাকি আমরা। তবে সাবধানে। ভুললে চলবে না, আমাদের কিন্তু আজকের দিনটাকে নিয়ে কোনও ভয় নেই। কিন্তু ফলো করতে করতে বেখেয়াল হলেই সর্বনাশ। আমাদের আজটাকে টেনে নিয়ে ও এই নিস্তব্ধ শহরের চৌহদ্দি পেরিয়ে যাবে। তখন আমাদের কিছুই করার থাকবে না।

এই অলৌকিক চেজ দৃশ্য যখন চলছে, তখন অরূপের মা ঠায় বসে রয়েছেন বারান্দায়। অরূপের জন্য খাবার ঢাকা টেবিলে। লোডশেডিং হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। সামনের অন্ধকার বাড়িগুলো থেকে গুঞ্জনের মতো শব্দ ভেসে আসছে। তবে সেই জট ছাড়িয়ে শব্দগুলোকে আলাদা করা যাচ্ছে না। সমস্ত পাখা, টিভি হট করে বন্ধ হয়ে গেলে এমন হয়। একটা মোবাইলের রিং শোনা গেল। অরূপের মা এই সুরটা চেনেন না। কেউ একজন বলল, নারে, এখানেও নেই। আবার এই স্পষ্ট তিনটে শব্দ টুপ করে মৌমাছির বোঁবোঁ শব্দের মতো সর্বজনীন গুঞ্জনে ডুবে গেল। ঢিকিঢিকিঢিকিঢিকি শব্দ তুলে চলে গেল একটা বাইক। হেডলাইটের আলোটা মোড় ঘুরতেই দপ করে নিভে গেল। ঢিকিঢিকিঢিকিঢিকিঢিকি শব্দ দূরতর হতে হতে মিলিয়ে যায়। অরূপের মা ঘড়ি দেখতে পারছেন না। শুধু ঘড়ি দেখার জন্য মোমবাতি জ্বালতে তাঁর ইচ্ছে করছে না। ক্লান্ত লাগছে। অরূপের ডাল, সয়াবিন, ওমলেট আর ভাত ঢাকা আছে। মা চেয়ে রয়েছেন রাস্তার দিকে। আর খাবার টেবিলের ওপর থেকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন শুভ্রকান্তি মিত্র। তাঁর স্বামী। শুভ্রকান্তিবাবুর গলার এভারগ্রিন প্লাস্টিকের মালাটা অল্প অল্প দুলছে। আসলে প্রাণপণে শুভ্রকান্তিবাবু বলার চেষ্টা করছেন যে অরূপের আজকের দিনটা অন্য পাঁচটা দিনের মতো নয়। অরূপ এখন প্রাণপণে আজকের দিনটা থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তাঁর শব্দ অরূপের মায়ের কাছে পৌঁছচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের নিঃস্তব্ধতা সেগুলোকে মাছরাঙার মতো ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে। মৃত ডিম, মৃত শস্যরা ছাড়া কেউ মৃত অরূপের বাবার এই চেষ্টাটা দেখতে পাচ্ছে না। ড্রয়ারে অরূপের লেখা অসমাপ্ত উপন্যাসের খাতাটাও বুঝতে পারছে গোটা বিষয়টা। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। আমরা জানি, যে সুযোগ পেলে ওই খাতা থেকে শব্দরা লোডশেডিংয়ের সুযোগ নিয়ে অন্ধকারের উড়তে শুরু করত। বারান্দা থেকে অরূপের মা ওদের গন্ধ পেতেন, এবং বুঝতে পারতেন কেন অরূপের দেরি হচ্ছে। কিন্তু এসব কিছুই হতে পারে না, আমরাও জানি।

(২)
লেখাটা অরূপ লিখতে শুরু করেছিল নেহাতই খিল্লি হিসেবে। কী যে লিখছে, নিজেও জানে না। ওর হঠাতই ক্যাওড়ামি করতে ইচ্ছে হয়েছিল বলে হিজিবিজি লিখতে শুরু করেছে। অরূপের বাবা ইন্দ্রজাল কমিক্স কিনতেন। দশ-বারোটা করে কমিক্স একসঙ্গে বাঁধিয়ে রাখতেন। অরূপ সেসব পড়ত। বেতালের গার্লফ্রেন্ড ডায়নাকে দেখে ওর প্রথম যৌন অনুভূতি হয়। বিকিনি পরা ডায়না আর নার্দা তার প্রথম যৌনমূর্তি। আর সেই সঙ্গে অরূপ কার্টুন দেখতো তেড়ে। টিভির সুপারম্যান, ব্যাটম্যান, জাস্টিস লিগ দেখতে দারুন লাগতো তার। লাগতো বলা ভুল, এখনও লাগে। সেই যে ব্যাটম্যানের সবসময় সিরিয়াস মুখ। উঁচু ছাদের পাঁচিলে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটম্যানের শিল্যুট কিশোর অরূপকে কনফিডেন্স জোগাতো। স্কুল-কলেজ ছাড়িয়ে দামড়া অরূপের মধ্যেও কোথাও থেকে গেছে সেইসব ছবি, অস্পষ্ট হয়ে, বদলে বদলে গিয়ে। ডিজাইন করা কাঁচের এপার থেকে যেমন দেখতে লাগে বৃষ্টির ফোঁটা। অপমানিত, ইন্টারভিউতে ব্যর্থ, পরীক্ষায় ব্যর্থ, প্রপোজ করে খিস্তি খাওয়া অরূপের মধ্যে হঠাৎ করে ঝলকে ওঠে বিদ্যুৎ। আধ সেকেন্ডের জন্য দেখা যায়, ছাদের কার্নিশে ব্যাটম্যানের শিল্যুট। কেপটা হাওয়ায় উড়ছে।

ছোট পায়োনিয়ার খাতার উনত্রিশ পাতা লেখা হয়েছে মাত্র। এরপর অরূপ বুঝে উঠতে পারেনি, যে কী করবে। সে যদি আগে জানতো, যে আজকের দিনটা থেকে পালাবার চেষ্টা করতে হবে, তাহলে সে নিয়েই হয়তো হিজিবিজি কিছু লেখার চেষ্টা করত। কিন্তু সে লিখতে গিয়েছিল একটা সুপারহিরো উপন্যাস। একটা লোক একটা অদ্ভূত চিরুণী খুঁজে পায়। তা দিয়ে চুল আঁচড়ালেই সে ভিতু মধ্যবিত্ত থেকে চওড়া ছাতির সুপারহিরো হয়ে যায়। তারপর একের পর এক খারাপ ঘটনা সে ঘটার আগেই আটকাতে থাকে। অরূপ এখানে কোনও এলিয়েন অ্যাটাক বা সুপার ভিলেনের গল্প রাখতে চায়নি। বরং আনন্দবাজার থেকে সে কেস জোগাড় করে তার সুপারহিরোকে দিতো। কোথাও উবেরে তুলে ধর্ষণের ঘটনা, কোথাও গরুর নামে মানুষ খুন, কোথাও পার্টিতে-পার্টিতে লাঠালাঠি — অরূপের মধ্যবিত্ত সুপারহিরো উনত্রিশ পাতার মধ্যে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটার আগেই আটকে দিয়েছে। অরূপ বিষয়টাকে প্রধানমন্ত্রী লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু আজও সময় হয়ে ওঠেনি। অরূপের সুপারহিরো এক্সএল সাইজের শার্ট পরে। অরূপের সুপারহিরো সাদা সুতোর বিড়িও খায়। অরূপের সুপারহিরোর অফিসে এই ক’দিন আগে ছাঁটাইও হয়ে গেছে।
কিন্তু অরূপের এই উদ্ভট উপন্যাস-ভেঞ্চারেই কি আমরা আটকে থাকবো, নাকি বোঝার চেষ্টা করব, যে কেন অরূপ আজকের দিনটা থেকে পালাতে চাইছে? মনে মনে ওই ব্যাটম্যানপনাটুকু বাদ দিলে অরূপ তো মধ্যবিত্ত কেঁচো ছাড়া কিছু নয়! আর কে-ই বা না মরে আজকের দিনটা থেকে পালাতে পেরেছে? তাহলে অরূপ নামক পাঁঠাটার এই প্রবৃত্তি হলো কেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় লুপে ওই ছবিটাই চলতে থাকুক: মাঝরাত, পথ, স্কুটার, চাকা, ধূলো, হেলমেট, চোখ…উদভ্রান্ত চোখ।

(২)
পাখি আর পোকা। অরূপের ভালো-খারাপের খণ্ডচিত্রগুলোতে তারা ঘুরে ফিরে আসে। ব্রা-প্যান্টির বিজ্ঞাপনের মেয়ে, গোলপার্কের দোকানে জল ছেটানো গোলাপ ফুলের তোড়া, পকেটে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া দশটাকার নোট – এসব ছোট-বড় সুখের দৃশ্যকল্পের সঙ্গে পাখিরা জুড়ে থাকে। মন ভাল থাকলেই কোনও না কোনও পাখি দেখতে পায় অরূপ। আবার যন্ত্রণা আর অপমান ঘিরে থাকে বহুপদী পোকাদের চলাফেরা। পোকাদের নিয়ে অরূপের আতঙ্কটা ঠিক ওইখানে। দুটোর বেশি পা-ওয়ালা প্রাণী দেখলেই প্রতিটা রোম শিরশির করে ওঠে তার। স্বাভাবিক বলেই তাদের মনে হয় না। সাই-ফাই সিনেমার মানুষখেকো এলিয়েনদের ছবি ভেসে ওঠে। অরূপ চিংড়ি মাছ খেতে পারে না।

বরং গুগল ইমেজে উড়ন্ত পাখিদের ছবি দেখা অরূপের নেশা। পাখিদের তার বরাবরই অপার্থিব মনে হয়। সতর্ক দৃষ্টি, পলকে আকাশ চিরে অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা….যেন অতিপ্রাকৃতিক। নিজের সুপারহিরোকে পাখির ডানা দেওয়ার কথাও ভেবেছিল, কিন্তু উনত্রিশ পাতার মধ্যে তা হয়ে ওঠেনি। অবশ্য পরের পাতাগুলোতে হবে কিনা, সেটা দেখার জন্য এই গল্প বসে থাকবে না। কিন্তু হঠাৎ সে মাঝরাত্তিরে স্কুটার হাঁকিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটেই বা চলবে কেন? কদ্দুরই বা যাবে? আমরা জানি না, কারণ অরূপ এদিনই সকালে তিনশো টাকার তেল ভরিয়েছে। মানিব্যাগে টাকা নেই, এমনও নয়। এই মুহূর্তটা আসলে ভয়ঙ্কর অসহায়। দিনের সতর্ক পাখিরা আসলে কত ভঙ্গুর, সেটা রাত্রির থেকে ভাল আর কে জানে।

সেদিন অফিসে অরূপদের পেপ টক দিয়েছিল মিলন ভদ্র, তার সিনিয়ার। বলেছিল, সার্ভিস আর প্রোডাক্ট নিয়ে একই সময়ে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারাই প্রোগ্রেস। পারফরম্যান্স, ইন্সেন্টিভ, মাইনে…অহো বৃদ্ধি, বৃদ্ধি, বৃদ্ধি। অরূপ সেদিনও মনে মনে খিস্তি করেছিল মিলনকে, যেমন প্রতিদিন করে। তার বারবার মনে হয়, একদল মানুষ যদি কোনওদিন দুনিয়াটাকে ভিনগ্রহীদের কাছে বেচে দিতে চায়, তাহলে তাদের মিলন ভদ্রকে দলে নেওয়া উচিত। বেচার ব্যাপারে এত উৎসাহ খুব একটা দেখা যায় না। সে যাই হোক, এই ছোট্ট কাহিনিতে মিলন ভদ্রের বিরাট রোল আছে ভাবলে ভুল হবে। অরূপের অপমানের রিজার্ভারে সে একটা পাইপ মাত্র, অন্য অনেক পাইপের মতো। আসলে ওই দিন অরূপের মনের ভেতরের জগতটা পুরো বদলে যায়। তাতে মিলনেরও হাত ছিল কি না, সেই নিয়ে তর্ক থাকতেই পারে। কারণ ভয়াবহ ঘটনাটার আগে সে অরূপকে পারফরম্যান্স নিয়ে অপমান করেছিল। সেলস অ্যান্ড সার্ভিস ছেড়ে টিউশনি করার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি মিলন দৃঢ় বিশ্বাসে এও বলেছিল, যে অরূপের মতো ডি-ফোকাসড, গুড ফর নাথিং লোকের কাছে কেউ ছেলেমেয়েকে পড়তেও পাঠাবে না।
কিন্তু এই অপমানটাও কি নতুন কিছু অরূপের কাছে? না তো! তবে? আসলে প্রিয় পাখিরাই সেদিন সন্ধেবেলা সবকিছু গোলমাল করে দিয়েছিল। কোথাও কোনও পাল্লা ফাঁক হয়ে ঢুকতে শুরু করেছিল নীলচে-কালো অন্ধকার।

(৩)
মাসের শেষদিক হয়ে আসায় সেদিন সাত-পাঁচ ভেবে অরূপ সিগারেটের বদলে এক প্যাকেট সাদা সুতোর বিড়ি কেনে। অফিসে প্রতিদিনই বেরোতে রাত হয়ে যায়। পর পর দুটো বিড়ি খেয়ে অফিসে ঢুকতে গিয়েই অরূপ একটা ছোট্ট জটলা দেখতে পেল। এর-ওর কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে দেখতেই মনটা ভরে গেল তার। দেওয়ালের কোনে ডাস্টবিনটার পাশে একটা পায়রার বাচ্চা। সবে উড়তে শিখেছে হয়তো। কেমন যেন রুগ্ন, অসহায় লাগল অরূপের। ঠোঁটজোড়াও যেন ঠিক সোজা নয়। ডাস্টবিনের কোনে গুটিসুটি মেরে চার-পাঁচটা লোকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কোনও শব্দ নেই, নড়াচড়া নেই। কেউ একজন প্লাস্টিকের একটা বাটিতে জল এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পাখিটা ছোঁয়নি। ও কোথা থেকে এল? কেউই সঠিক বলতে পারে না। হাউসকিপিংয়ের শিবব্রত অনেক ভেবেচিন্তে জানায়, কয়েকটা বাড়ি পরেই পুরসভার বোর্ড টাঙানো একটা পুরনো ঝুরঝুরে বাড়ির কার্নিশে সে কয়েকটা পায়রা বসে থাকতে দেখেছে। আশেপাশে যখন পায়রার সম্ভাব্য বাসার কোনও জায়গা নেই, তাহলে সেটাই বাচ্চাটার আস্তানা হতে পারে। আর এই সময়েই উনত্রিশ পাতার অসমাপ্ত লেখার বাঙালি সুপারহিরো অরূপের মধ্যে ভর করল। তক্ষুণি সে সিদ্ধান্ত নিল যে ভাঙা বাড়িটার পায়রার ডেরায় সে বাচ্চাটাকে রেখে আসবে। রাতেই।
সিদ্ধান্তটা নিতেই অরূপের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা বিদ্যুৎ খেলে যায়। গভীর, আত্মবিশ্বাসী শ্বাস নেয় সে। পায়রার বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ভেসে ওঠে, যেটাকে আমরা অভয়মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। এখন রাত সোয়া নটায় একটা পরিত্যক্ত ঝুরঝুরে বাড়ির মধ্যে ঢোকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, কিন্তু অতিনায়করা আর কবে সেসব নিয়ে ভেবেছে! মিলন ভদ্রের করা সেদিনের অপমানটাও অনেকটা ঝাপসা হয়ে আসে।
আলতো ডান হাতে পায়রার বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে গর্বিত পায়ে বেরিয়ে আসে অরূপ। বাঁ হাতটা রাখে ডান হাতের নিচে। বাচ্চাটা নড়াচড়া করে না। যেন অরূপের মতো পরিত্রাতার হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে সে নিশ্চিন্ত। ফুটপাথটার এই দিকটায় ল্যাম্পপোস্ট কাজ করছে না। অন্যফুটের দোকানের আলোয় ধীর পায়ে এগিয়ে চলে সে। বাচ্চাটা যেন ভয় না পায়। কিছুটা আসার পরই প্রথম অনুভূতিটা হয় অরূপের। বাঁ-হাতের কব্জির কাছে কিছু একটা এসে বসেছে। হাত ঝেড়ে ফের এগিয়ে চলে সে। কিন্তু একটু যেতেই অনুভূতিটা ফিরে আসে, এবার দুটো হাতেই। কিছু যেন দু-হাতেই সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কব্জি থেকে অনুভূতিটা ক্রমশ ওপরের দিকে উঠছে। দ্রুত একটা বারান্দা থেকে চুঁইয়ে পড়া আলোয় হাত মেলে ধরে অরূপ। তারপরই শরীরটা হিম হয়ে যায়।
পায়রার বাচ্চাটার রুগ্ন পালকের ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসছে রক্তচোষা পোকার দল। একটা-দুটো নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে। পাখির শরীর বেয়ে তারা উঠে পড়ছে অরূপের দুহাতে। কিলবিল করে হাত বেয়ে উঠে আসছে কনুই বেয়ে। আতঙ্ক আর অস্বস্তির শিরশিরানি ছড়িয়ে পড়ছে অরূপের গোটা গায়ে। আর মৃতপ্রায় আলোয় পায়রার বাচ্চাটা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রয়েছে অরূপের মুখের দিকে।
একটা আতঙ্কের চিৎকারের সঙ্গে হাত ঝাড়া দেয় অরূপ। ফুটপাথে ছিটকে পড়ে বাচ্চাটা। ছটফট করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গেই যেন অন্ধকার ফুঁড়ে উঠে আসে দুটো কুকুর। পায়রার বাচ্চাটাকে কামড়ে ধরে ছুটতে শুরু করে একটা। আরেকটা তাকে তাড়া করে যায়।
আতঙ্ক কাটিয়ে অরূপ দৌড়ে যায় চায়ের দোকানটার দিকে। প্লাস্টিকের জগটা টেনে নিয়ে একবার এহাতে, একবার ওহাতে জল ঢালতে থাকে। চেনা দোকানদার একবার বলার চেষ্টা করে, ‘ও দাদা, খাবার জল তো….’। অরূপ কিছু শুনতে পায় না। জগ রেখেই রাস্তা পেরিয়ে দোকানে যায়…এক বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনে। দুহাতে প্রাণপণে মাখতে থাকে। কিছুতেই ওই শিরশিরানি, অজস্র পোকার পায়ের চাপ হাত থেকে যাচ্ছে না। অফিসে ফিরে এসে টয়লেটে ঢোকে অরূপ। কনুই পর্যন্ত সাবান জল লাগিয়ে ঘষতে থাকে। শিবব্রত এসে জানতে চায়, ‘দাদা পারলেন?’ অরূপ জবাব দেয় না। আতঙ্ক আর হেরে যাওয়ার অনুভূতি এক হয়ে বমির মতো উঠে আসে। সেই বমির মধ্যেও যেন কিলবিলে রক্তচোষা পোকার ঝাঁক দেখতে পায় অরূপ। ভিজে হাতেই বেরিয়ে আসে সে। হেলমেট গলিয়ে স্কুটারে স্টার্ট দেয়।

(৪)
স্কুটারের স্পিডোমিটারের দিকে দেখছে না অরূপ। কব্জির মোচড় যে প্রায়ই বিপজ্জনক সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে তার খেয়াল নেই। তার চোখের সামনে পায়রার বাচ্চার বিস্ফারিত চোখের মণি ঠিকরে বেরিয়ে আসছে কুকুরের দাঁতের চাপে। বহুতলের আলসেতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটম্যানের শিরদাঁড়া বেঁকে যাচ্ছে ক্রমশ। ব্যাটম্যান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। যে কোনও মুহূর্তে টাল সামলাতে না পেরে আছড়ে পড়বে নিচের ফুটপাতে। থেঁতলে যাবে। আর মণিহীন চোখের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে পোকা….শুধু পোকার ঝাঁক। আজকের দিনটা থেকে পালাতে চেয়ে প্রাণপণে অ্যাক্সিলারেটর মোচড়াতে থাকে অরূপ। হাতে লেখা উনত্রিশটা পাতা রাতের হাওয়ায় এদিক-ওদিক উড়তে থাকে।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes