
অনুপ সেনগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
কবিতাগুচ্ছ
বিন্দু
একটি বিন্দু চাইত
জগতের সব রেখা
সরল অথবা বক্র
তাকে ছুঁয়ে দিক
একদিন বিন্দু
নিজের একাকিত্বের সাদা পাতায়
শূন্য লিখে তা-প্রত্যয় দিল
চকিতে ফুটে বেরোয়
তুলতুলে শূন্যতা
আর বেরিয়েই খেয়ে নিল বিন্দুকে
এমনকি বিন্দুর
রেখা-সমেত ইচ্ছেকেও
হাড়ের মতো চিবিয়ে খায়
মিশ্রণ
মেঘের মধ্যে চাঁদ যখন সাঁতার কাটে
চাঁদের মধ্যে তখন সাঁতার কাটে একদল হাঁস
ক্রমশ মরচে পড়ে লৌহ বাতাসে
আমাকে পোড়াতে চায়
কোনও নদীর শিখা
আর ভাঙা অক্ষরের চোখ থেকে
গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা নীরবতা
হাঁটতে-হাঁটতে সব পথই হয়ে যায় অন্য পথ
হয়তো আমার সাত রঙের অনস্তিত্ব মিশিয়ে
এবার কেউ অস্তিত্বশীল হবে
খুন
না-কিছুকে খুন করে
কেউ সবকিছু পেয়েছে
না-কে খুন করে
পেয়েছে সব হ্যাঁ
তাই নিজের মধ্যে
বহু শাখায় বয়ে যায়
আর তার একাকিত্বের অনেক টুকরো
এখন একে-অন্যকে সঙ্গ দিচ্ছে
দু-চারটে টুকরো অবশ্য
একা-একাই থাকে
দিনলিপি
সুরের নিজস্ব চোখ থেকে
অশ্রুঢেউ আছড়ে পড়ছে
আজ সারাদিন এভাবেই
বিটোফেনায়িত হয়ে আছি
তলানি
আমি থিতিয়ে
কিছু পরিমাণ তুমি
তলানি হয়ে জমে
প্রতিটি কবিতার তলানি
যেমন অলিখন
কবিতার মতোই আমার
অর্থহীন হওয়ার ঝুঁকি
কবিতার মতোই আমার
অর্থময় হওয়ার ঝুঁকি
এমনকি একইসঙ্গে অর্থহীন ও অর্থময়
হওয়ার ঝুঁকি
তলানিই আমাদের রক্ষা করে
বিপর্যয়
যখন জগৎ অতীত থেকে ভবিষ্যতে সরাসরি লাফ দেয় তখন আমার বর্তমান – অতীত না ভবিষ্যতে বুঝতে পারি না আর
জেগে উঠে চিঠির মতো সকাল খুলে দেখি তার সব অক্ষরই ঝাপসা – হয়তো এবার মহাজাগতিক চশমা দরকার
কিন্তু কান পাতলেই বুঝি নৈঃশব্দ্য নিজের কথা বলছে আর সব কোলাহল চুপ করে তার কথা শুনছে
আশ্রয়
কাউকে, কিছুকে
ছেড়ে যেতে পারি না
শুধু তার অনুপস্থিতির ভিতর
আশ্রয় নিতে পারি
তুমি শব্দটিও নিজস্ব নৈঃশব্দ্যে
আমাকে স্পর্শ করে তুমিহীন হয়
তোমার একাকিত্ব এখন
আমার একাকিত্বেরই বিস্তৃতি