অনুপ সেনগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
সংসার
আমি এবং আমি
একসঙ্গে হেঁটে যাই
তুমি ছাড়া তোমার
ধুলো-ওড়া পথে
আমার দুজন হয়ে ওঠা
আর
তোমার কেউ না হয়ে ওঠার
দুই ক্ষত
বাসা খোঁজে সংসার পাতার
উড়াল
উড়ে যাওয়ার আগে
একটি পাখি ওড়ার বীজ
ছড়িয়ে দিল নীলিমায়
তারপর অসংখ্য ওড়াকে
একটি ওড়ায় জড়ো করে
মিলিয়ে যায় দিগন্তে
ভয়
একই নদী
আমার ভিতর ও বাইরে বয়ে চলে
এই দুই রূপ কি কখনও মিলিত হবে
মিলন চাইলেই
রূপের নীচে যে থাকে
কেঁপে কেঁপে ওঠে ভয়ে
চাঁদ
প্রতিটি পথের
জনপদের
নিজস্ব চাঁদ আছে
প্রতিটি চাঁদের আবার নিজস্ব ছলাকলা
কিন্তু সব চাঁদ মিলে
একটি চাঁদ হতে চায়
আর সেই একটি চাঁদ
হয়তো চাঁদই হতে চায় না
অনতিক্রম্য
তোমার ও আমার মধ্যে
এক মাইল অপথ:
অনতিক্রম্য
কিন্তু একটি অস্তিত্বহীন আকাশে
একটি অস্তিত্বহীন পাখি
উড়ে বেড়ায় রোজ
নীরবতা
নীরবতা
এই চার অক্ষর
শব্দটির চারটে আঙুল
এরপর অদৃশ্য বুড়ো আঙুলে
নিজেকে মুছে ফেলে
মুখর হয়েছে
ক্ষত
নিজের কিছুটা একাকিত্ব কেটে
তোমাকে দিতে পারি
শুরুতে সব ক্ষতই লুকিয়ে থাকে
সব স্পর্শই একদিন ঝলসে যায়
কোনও মায়ার খোঁজে
কোনও সত্য তবু
বের হয় অভিযানে
দুই অসীম
আমি তোমার থেকে
এত দূরে বা এত কাছে
কিংবা একইসঙ্গে দূরে-কাছে
যে সর্বদা শুধু একজনকে
অন্যরা দেখতে পায়
আমিও তোমাকে
দৃশ্যের বিরুদ্ধে গিয়ে দেখি
কখন যে দু-টুকরো পরিসর
আমরা তৈরি করেছি
যারা মিলেমিশে থাকে
কিন্তু এক অসীমের কেউ
অন্য অসীমে কেউনা হয়ে ওঠে
উত্তাপ
যখন কোনও কবিতা
কবিকে আর সহ্য করতে না পেরে
সব শব্দ ঝরিয়ে দেয়
আর সেই ঝরা-শব্দ
নৈঃশব্দ্যে পুড়তে থাকে
তখন অন্য অনন্ত শুরু হয়
কুয়াশার আঙুল রোদ্দুরের বুক স্পর্শ করে
বিয়োগ
একদা এক আমি ছিল
যে ঘুমের মধ্যে নিজেকে
টেনে নিয়ে যেত সূর্যোদয়ে
অনন্ত থেকে একসঙ্গে দুটো আগামীকাল
ছিঁড়ে আনতে পারত
একটি গানের ঠিক মধ্যিখানে
নিশ্চুপ গোলাপ হয়ে ফুটে উঠত
কোনও এক তুমির প্রতিধ্বনি
জমিয়ে রাখত ড্রয়ারে
কিন্তু ওই তুমির সঙ্গে নিজেকে একদিন
যোগ করতে গিয়ে
বিয়োগ করে ফেলল
তারপর আর তাকে দেখিনি
হয়তো নিজের মধ্যে মাইল মাইল
হেঁটে বেড়ায়
এক রাত্রি থেকে
দিনের গহ্বর টপকাতে
লাফ দেয় আরেক রাত্রিতে
কিংবা অন্য কেউ হয়ে
থাকে আশেপাশে, সিগারেট চায়
খুব সুন্দর লেখাগুলি ❤️