অনিন্দ্য রায়-এর গুচ্ছ কবিতা
সেই তো প্রথম
সেই তো প্রথম হাঁস, নিভৃতে প্রথম-দেখা হাঁসের তলপেট
সরল, সংকোচহীন, কুশলতা ছিল পারিবারিক পুকুরে
পাড়ে, রম্য ঘাসবনে সুযোগ-সন্ধান— দুইই ছিল মাথাহেঁট
সংবেদনে ছুঁই জল, জলেরই ভেতর আস্ত লোভ ফেলি ছুড়ে
তাতে যে উঠেছে ঢেউ, উঠেছে কি? অথবা তা হ্যালুসিনেশন
নিস্তরঙ্গটিকে নাকি আরোগ্যলক্ষণ বলে চালায় হাতুড়ে
আমার কী কাজ তবে! সবেমাত্র ছুরি হাতে নিয়েছি তখন
‘লৌকিকজীবনে ডিম ও তাহার ব্যবহার’ এই পরিচ্ছেদে
আটকা পড়ে গেছি, তাই প্রেরণার থেকে খুলে রেখেছি অ্যাপ্রন
খুললেই নগ্নতা হয়! কন্দর্প শেয়ালটিকে রাখা যায় বেঁধে!
সোনার ডিমের গল্পে আমাদের বিশ্বাস ছিল না কোনওদিন
তবু তাকে চিরে ফেলি, সারা গা সপসপে আদিরাসাত্মক স্বেদে
ভেতরে আলোর পিণ্ড, চমকে বুঝি ইতিমধ্যে সম্পর্ক গাভিন
বনপুখুরিয়ার প্রেমের কবিতা
ভূয়সী বনের ধারে সারল্যের মঠ
যাব ভেবে বের হই, পথমধ্যে শাঁই
আমাকে খবর দিল এসেছে শরৎ
তাহলে বিশ্রাম নেব? বেজির সরাই
দরজা খুলে রাখা আছে ভরা নিশীথেও
ঢুকি যদি বিছানায় সর্প হওয়া চাই
ক্রমশ দংশনগুলি দীর্ঘ, অনির্ণেয়
সুরায় শরীররস মাখামাখি বেশ
আমিষে গড়িয়ে পড়ে ইত্যকার স্নেহ
পোশাক সমস্ত খুলি, খুলি দেহ, ক্লেশ
সে বলে, “কয়েকটা দিন থেকে যাও, সোনা”
থাকব কি! আমার আয়ু ষোলো দিনে শেষ
মানুষ হতাম যদি এভাবে ছাড়ত না
কেবলই সোহাগ করত এনিয়েবেনিয়ে
সঙ্গে শিশিভর্তি দিল পথের প্রার্থনা
দু ঢোঁক খেয়েছি যেই অকস্মাৎ কী এ
সন্ধ্যা নেমে আসে দ্রুত, এক মার্জারিনী
ভাবরি-ঝোপ থেকে বলে, “করবেন কি বিয়ে?”
যদিও প্রশ্নটা পুরো এড়াতে পারিনি
খুঁজি শাঁই, আরও খুঁজি কোথায় আয়ুধ
কোথায় বন্ধক রেখে কার কাছে ঋণী?
আসলে স্থবির প্রাণ, বৃদ্ধি পায় সুদ
পুরোপুরি শোধ করতে চলেছি একাকী
পাঁজরে প্রচণ্ড ফুটছে পারার বুদবুদ
ভুলে গেছি বনপথে চলার চালাকি
কাকে যে জিগ্যেস করব, বোবাকালা গাছও
স্মৃতিহীনতার রোগে ঘুরে মরতে থাকি
তুমি সে বনের ধারে অপেক্ষায় আছ
লোককাহিনিতে তুমি
পড়শীর জানলায় দেখি, মুখোমুখি মাছের মোটিফ
বিছানাতে থইথই করছে জল আর জোলো কেলেঙ্কারি
দৃষ্টিকে ফাৎনায় বেঁধে ছুড়ে দিই আকাঙ্ক্ষার ছিপ
ওঠে না তাহাতে কিছু, হাত ক্রমে হয়ে ওঠে ভারী
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ছিটেফোঁটা আহার জোটেনি
এভাবে দুপুর গেল, বিকেলও চৌপট তাড়াতাড়ি
অবস্থা এরম হলে চ্যাঁচামেচি আপনারা করতেনই
আমি আরও ধৈর্য ধরি, ভাবি, রাত্রে সুযোগ পাবো তো
হয়তো জলস্ফীতি হবে, চাঁদ উঠবে, ভিজে যাবে বেণী
লোককাহিনিতে তুমি আপাত নিশ্চল, অনাহত
কখনও গভীরে যাও, ভেসে ওঠো, খেলাও বাঞ্ছাকে
আমিও জলজ হলে আপদেবিপদে বেশ হত
আজ শুধু জানলা খুলল, পাব হয়তো কখনও দরজাকে
তারপর তোমাকে আর ঢাকতে পারে দেখব কত শাকে
সে, দুধের বাটি
সে, দুধের বাটি, আজ আমাদের বেড়াল বানাল
ভাবছি, শরীরের সর কাছে গিয়ে সরাব ফুঁ দিয়ে
অতঃপর মুখ দেব? নাকি অল্প উথলে ওঠা ভালো!
নিকেটে গিয়েছি যেই হেসে বলল, “শুনুন, মঁসিয়ে
এ সমস্ত চোখাচোখি, হাসি, মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া কি
খেলার চাতুর্য নয়? প্রেম তো আসলে আছে ঘিয়ে”
খাই যদি সইবে? ভাবি, সাহস জমিয়ে হাত রাখি
আঙুল ডোবাই, ক্রমে শুরু করি প্রবল মন্থন
সে একটু চঞ্চল হয়, বলি, “মাফ কোরো, গো, গুস্তাকি”
শ্বাসের ওপরে কিছু লেগে থাকে ব্যথার মতন
ওখানে মাখন তুলি, অন্তরালে জাল দি চুলায়
সে আঁচে সর্বাঙ্গ পুড়ছে, আর্তনাদ দুজনে কমন
এবারে চড়াই, নাড়ি, গায়ে গায়ে লেগে আসে প্রায়
বুঝতে পারি হয়ে এল, তবে দেখা যেতে পারে চেখে
প্রাণপণে সে মুক্তি চাইছে, কত আর ধরে থাকা যায়
বেড়াল-হত্যার লোভে ততক্ষণে জুটেছে অনেকে
ভীষণ ভালো লাগলো প্রতিটি লেখা !
কি বলবো, হিন্দোল দা ও অন্যান্য সাহিত্য সাথী!
আবহমান পড়ি আর মুগ্ধ হই। এমন সব ক্ষীর তুলে আনো যে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। অনিন্দ্য রায় সে রকমই ক্ষীর ।
অনিন্দ্য রায় এর কবিতা পড়লাম । মনে ভরে গেল।কি অনায়াস যাতায়াত !