অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br />চুয়াল্লিশতম পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
চুয়াল্লিশতম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

৪৪

রুবি কানেক্টরের খুব কাছে হোটেলটা। শহরের প্রথম পাঁচটা হোটেলের গ্ল্যামারে হয়তো আসবে না, কিন্তু যেসব সেলিব্রিটি বাইরে থেকে এসে খুব চুপচাপ, পাপারাৎজির চোখের আড়ালে কোন ব্যক্তিগত কাজ সেরে বাড়ি ফিরে যেতে চান, ধীরে ধীরে তাঁদের খুব পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে বিনায়ক টাওয়ার। বাইরে থেকে দেখতে খুব সাধারণ, কিন্তু ভেতরে কোন আধুনিক স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব নেই, এদের সিকিওরিটি ডিপার্টমেন্ট অত্যন্ত মজবুত, চাইলে এরা ব্যক্তিগত বাউন্সার তো দিয়েই থাকেন, এবং শহরে থাকাকালীন গেস্টের সবরকম নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন এঁরা। মীরা কাপুর এখানেই উঠেছেন।আর এখানেই আসতে বলেছেন ভবানীকে।ভবানী এখানে আসবেন কিনা নিজেরই সন্দেহ ছিল। কিন্তু তার পর তাঁর আবার বাস্তব বুদ্ধি জেগে ওঠে, এত বড় একজন সেলিব্রিটি শুধু তাঁকে কনসাল্ট করবে বলে বোম্বে থেকে এখানে ছুটে এসেছে, এরপরেও যদি তিনি এখানে না আসেন, তবে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি যে ভবানী শাস্ত্রী, তা তো দেখাতে হবে মীরা কাপুরকে। তিনি তাই বলেছেন, প্রথম সিটিংটা তাঁর মন্দিরেই হতে হবে, মায়ের সামনে এবং নিজের আসনে না হলে কিছুতেই তাঁর গণনার শুরুটা হতে পারবে না, সব ভুল হয়ে যাবে। আর সেটা যদি কোন বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে হয়, তবে তো কথাই নেই। সেইসব হিসেব করে মীরা ভবানীর কাছে এসেছেন এক শনিবার গভীর রাতে, সেদিন আবার কৌশিকী অমাবস্যা।মন্দিরে বিশেষ পুজো, কত কে যাতায়াত করছে, কেউ লক্ষ্য করল না কালো কাচ ঢাকা গাড়িতে কে এল ওড়নায় মুখ ঢেকে। আর ভবানীর কাছে অনেক রইস ঘরের মহিলারা এমন গভীর রাতে এসেই থাকেন, প্রতিটি ক্লায়েন্টের গোপনীয়তা রক্ষা করাই তাঁর পেশার ইউ এস পি। এই কারণেই এত নামডাক তাঁর।
মীরাকে একেবারে ভেতরের ঘরে এনে বসাল গগন। এই ঘরটা বিশেষ অতিথিদের জন্যে রাখা। গগন বুঝতে পেরেছে আজ মোটা দাঁও মারবেন ভাবনী। সে আকর্ণ হেসে বলল ‘ঠান্ডা আনি ম্যাডাম?’
মীরা এখন ওড়না জড়িয়ে আছেন, উনি ঘাড় নেড়ে না বললেন। ভবানী ইশারায় চলে যেতে বললেন গগনকে। বোঝাই যাচ্ছে গগনের সামনে মীরা সহজ হবে না।
গগন চলে যেতে মীরা ওড়না সরালেন, চশমাও। তাঁর দিকে তাকিয়ে কি একটু হতাশ হলেন ভবানী? এই কি তাঁর যৌবনের হিল্লোল তোলা নারী? হাসলেও সেই কিংবদন্তী টোল কই? ঠোটের সেই মুচড়ে ওঠা কিশোরী ভঙ্গি? চুলটা তো কালার করতেই পারতেন, করেন নি। চকচকে রূপলি চুলটা কেন যেন তাঁর পরচুলা মনে হল। আরও তাঁর মনে হল, ইচ্ছে করেই বার্ধক্যের ভেক ধরে আছেন মীরা। তাঁর সাদা চুলের তলায় লুকিয়ে আছে এক কামনা বাসনাময় উদগ্র নারী। কেমন অস্বস্তি হল তাঁর। যা অনেককাল হয় না নারী দেখে।
তিনি বললেন ‘অনেকদিন পর কলকাতায় এলেন, তাই না?’
‘তা এলাম। আচ্ছা একটু কফি পাওয়া যাবে?’
‘নিশ্চয় নিশ্চয়’
বললেন বটে, কিন্তু সেটা যে গগনকে হেঁকে বললে হবে না, তা জানেন। এই মন্দিরে ওসব পাট নেই। আর কাছে দোকান পাট নেই, যে গিয়ে আনবে। ঠিক তখন তাঁর মনে পড়ল দেশপ্রিয়ের মোড়ে মনার্ক গেস্ট হাউসের কথা। তার মালিক ওঁর বিশেষ ভক্ত, ওকে বললে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তিনি চট কর ফোনে ধরলেন সুব্রত হাজরাকে।
‘সুব্রত, শাস্ত্রীজী বলছি, এখুনি এক ফ্লাস্ক কফি পাঠাও এখানে’
এর বেশি বলার দরকার হল না। মিনিট পনেরোর মধ্যেই সুন্দর ফ্লাস্ক ভর্তি কফি আর দামী কফিমাগ চলে আসে।
মীরা নিজেই ঢেলে নেন কফি, তাঁকেও এগিয়ে দিয়ে বলেন ‘খান’। সেটা বলার সময় তাঁর চোখে এক অদ্ভুত মাদকতাময় হাসি ফুটে ওঠে, যা দেখে মনে হয় কিছুই হারায় নি। কিছুই হারায় না।
কফিতে প্রথম চুমুক দিয়ে মীরার মুখে সন্তোষ ফুটে ওঠে। তিনি বলেন ‘বাহ’
ভবানী যদিও এত রাতে কফি খান না সচরাচর, কিন্তু আজ দিব্যি লাগে খেতে। তাঁর মনে হয় এই প্রথম তিনি কোন নারীর মুখোমুখি বসে কফি খাচ্ছেন, এই প্রথম তাঁর মনে হয় ঘরটা বড় অগোছালো হয়ে আছে, তাঁর পোশাকটাও…
তিনি গলা ঝেড়ে বলেন ‘ছেলের জন্মের ক্ষণ তারিখ এনেছেন? ওইটুকুই আমার দরকার’
কফি খাওয়া শেষ করে ধীরেসুস্থে কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বার করে তাঁর হাতে দেন মীরা। কাগজের ওপরে বাংলায় লেখা বিশাল কাপুর। সেই কাগজটা হাতে নিয়ে কী ভাল যে লাগল তাঁর। শব্দকে ব্রহ্ম বলা হয়, কিন্তু তাঁর মনে হল বর্ণমালা হচ্ছে ঈশ্বর। নাহলে বাংলায় লেখা এই দুটি শব্দ দেখে তার এত আনন্দ হবে কেন?
তিনি বলেন ‘আপনি এখনো বাংলা লিখতে বলতে ভুলে যাননি দেখে ভালো লাগল’
‘ভুলতে চাইলেও দুটো জিনিস ভোলা যায় না জানেন তো। তা হচ্ছে মাতৃভাষা আর প্রথম প্রেম।আর আমি তো ভুলতেই চাইনি। তাহলে কীভাবে ভুলব? হয়তো অভ্যেস নেই, টানা লিখতে পড়তে অসুবিধে হয়। তাছাড়া বাংলা ভাষার মাহোল কোথায় পাই আর? কিন্তু আমি নিয়ম করে রোজ গীতাঞ্জলি আর কথামৃত পড়ি। গীতাঞ্জলিটা বিজনদার দেওয়া, আর কথামৃত দিয়েছিল মা। হয়তো প্রচণ্ড হেক্টিক গেছে সারাদিন, শরীর ভেঙে আসছে, তবু এক লাইন অন্তত পড়ি। কী জানেন তো, যাকে ভালবাসেন, যাকে ধরে রাখতে চান, তার জন্য কষ্ট করতে হয় খুব। সম্পর্ক তো গাছ থেকে পড়া ফুলের মতো, আপনি যদি তুলে নিতে পারলেন তো পেলেন, নইলে সে তো হাওয়ায়, নদীর জলে ভেসে চলে যাবে, তখন হাজার হাহুতাশ করেও ফিরবে না’
ভবানী বললেন ‘আমি একটু আউটলাইনটা করে নিই আপনার ছেলের জন্ম পত্রের, আপনি আরাম করে বসুন, পা তুলে বসতে পারেন’
মীরাকে দেখে মনে হল ছেলের কুষ্ঠী করাবার ব্যাপারে কোন আগ্রহই নেই। তাঁকে আজ কথায় পেয়েছে। এত কথা যে জমে ছিল ভেতরে তা কি তিনি নিজেই জানতেন?
‘বিজনদাকে ধরে রাখার, মনে রাখার কোন চেষ্টাই আমি করিনি বলতে চান তো? করেছিলাম। বম্বের চান্স পাওয়ার খবরটা ফোন করে বলতে চেয়েছিলাম, বিজন দা ছিল না, সুন্দরবনে শুট করতে গেছিল, তখন লাইটম্যানকে বলে গেছিলাম। কিন্তু বিজনদাই আর যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেনি। এটা বলতে পারেন প্রথম প্রথম আমি খুব কেঁদেছি বিজনদার জন্যে, শুধু যে ওর বিচ্ছেদের জন্য এ কান্না তা কিন্তু নয়, আমি কাঁদতাম অপরাধবোধেও। বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করে আমি যেন বঙ্গসংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাসঘাত করেছি’
ভবানী লক্ষ্য করলেন বাঙ্গালিদের মতো বিশ্বাসঘাতকতা বললেন না মীরা, তিনি বললেন বিশ্বাসঘাত। মীরা এত কথা যদিও উত্তর পাবার আশায় বলছেন না, তবুও কিছু একটা না বলা অভদ্রতা হবে ভাবলেন ভবানী।তিনি বললেন ‘এই কথাগুলো যারা বলে, তারা হয় বোকা, নয় সবার্থপর। বাংলা যদি পেটের ভাতের যোগান না দিতে পারে, তবে লোকে তো বাইরে যাবেই। এর মধ্যে বিশ্বাস ঘাতকতার কি আছে?’
‘কিন্তু কিন্তু বিজনদা ভাবতেন সেরকম। ওঁদের ভাবনার ঘরানাটাই ওরকম ছিল। কূপমণ্ডূকতাটাকে ওঁরা গ্লোরিফাই করে গেছেন সারা জীবন।কিন্তু তার পরেও একটা কথা আছে। আমি যে সময় গেছি সেসময় আমি কলকাতার সবচেয়ে সট আফটার হিরোইন, কাজ করে কুলোতে পারছি না।কিন্তু যখন অত বড় ব্যানার থেকে অফার এল, আমি লোভ সামলাতে পারলাম না, তবে বিজনদা যেমন ভেবেছিলেন, যে আমি টাকা বা গ্ল্যামারের জন্যে গেছি, তা কিন্তু নয়। একটা সর্বভারতীয় পরিচিতি কে না চায় বলুন, এখানে যতই ভালো কাজ করি না কেন, দিনের শেষে আমি একজন রিজিওনাল ছবির নায়িকা। কেই বা চিনবে? এই আপনি, বম্বে তে বসলে কোথায় চলে যেতে পারতেন! যদি একবার ফিল্ম স্টারদের কাছের লোক হিসেবে রটে যেত, তবে কলকাতার এই ছোট্ট ঘুপচি ঘরে না বসে আপনি জুহুতে আলিশান বাংলতে থাকতেন, দুবাইতে আপনার ফ্ল্যাট থাকত শাস্ত্রীজি’
ভবানী কাগজে ভাগ্যের ঘর কাটতে কাটতে বললেন ‘এই যে ঘরগুলো দেখছেন ম্যাডাম, এখানেই কে কী করবে সব ঠিক হয়ে আছে আগে থেকে, আপনি ইচ্ছে করলেও অন্য কিছু হতে পারবেন না। আপনার বোম্বাই যাওয়া কপালে ছিল, আপনি গিয়েছেন।আমার ছিল না, আমি যাইনি। আর আমি তো যেতেও চাইনি। প্রথম থেকেই আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম আমি কী চাই। বড় অচেনা শহরে ছোট কাজ করার চেয়ে ছোট চেনা শহরে বড় কাজ করা ভালো’
মীরা কৌতূহলী চোখে তাকালেন ভবানীর দিকে। কী বলছে কী এই লোকটা। ছোট শহরে বড় কাজ! এই জ্যোতিষ চর্চা তো ওর প্রফেশন। এর মধ্যে বড় কাজের কী আছে?
ভবানী মীরার দিকে পূর্ণ চোখে তাকান। চুলগুলো দেখে কেমন রিপেলিং লাগলেও এখনো এই নারীর চোখের দিকে তাকালে কথা হারিয়ে যায়। তিনি ধীরে ধীরে বলেন ‘খুব আজব এই রাজ্য। এখানে কে রাজা হবে, কে ঘুঁটে কুড়বে, কে টিকিট পাবে, কে খাজা কবিতা লিখে পুরস্কার পাবে, কে লেকচারার হবে, কে সারাজীবন ইন্টারভিউ দিয়ে যাবে, কে খুন হবে, কে খুন করবে- সব ঠিক হয় এখানে। লোকে আর কিছুকে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করে তার হাতের এই লাইনগুলোকে, এই পাথরগুলোকে, আর এই বিশ্বাস আপনাকে প্রচুর ক্ষমতা দ্যায়, তখন আপনি হয়ে ওঠেন সব কিছুর নিয়ামক। সব সব কিছু’

মীরা যেন খুব ধীরে ধীরে ভবানীর কথারই পুনরাবৃত্তি করছিলেন
‘এ মুম্বাই এক অজীব সা শহর। এখানে সারা দেশ থেকে সেলুলয়েডের মায়া নিশির ডাকের মতো টেনে নিয়ে আসে ছেলেমেয়েগুলোকে। তাদের তারা তারা চোখে লেগে থাকে স্বপ্ন। জলের পাইপে থাকে, চাউলে থাকে, দুনিয়ার সবচে যে বড় বস্তি থারাভি, তার ঘর, নরক ওর থেকে ভালো, সেখানে পড়ে থাকে দাঁতে দাঁত চেপে। সেই সময় সমাজের বেঁধে দেওয়া পাপ পুণ্যের ভালো মন্দের সীমা রেখা মুছে যায়, হয়তো একটা ঘর একটা ছেলে মেয়ে ভাগাভাগি করে থাকল, তারা কি সময় পেলে হরিনাম করবে ভাবেন? কাছে আসবে না?’
ভবানী নির্নিমেষ চোখে চেয়ে থাকেন মীরার দিকে। কেন যে কঠিন চরিত্র হলেই ডাইরেক্টররা এঁর কথা ভাবতেন তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। কে বলে দেহপট সনে নট সকলই হারায়?
এঁর শরীরে যৌবনের রাজ্যপাট নেই আর, কিন্তু কথা যখন বলছেন মুখের প্রতিটি রেখা, চোখের পাতা, ভ্রূ পল্লব, ঠোঁটের মোচড়- সব কথা বলে উঠছে। এত জীবন্ত প্রতিটি অভিব্যক্তি যে চোখ ফেরানো যায় না। মীরা বলেই চলছিলেন ‘কত কত প্রতিভা নিয়ে সবাই আসে, কিন্তু কজন টিকে থাকে শেষ পর্যন্ত? ড্রাগ নারী অস্ত্র স্মাগলিং মাফিয়ায় থিকথিক করছে শহরটা। সাদা আর কালোয় কোন তফাত নেই, একটু এদিকওদিক পা ফেললেই টেনে নিয়ে যাবে উদ্ধারহীন অন্ধকার জগতে, শরীর স্বপ্ন ছিবড়ে করে দেবে, একদিন রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে কীড়ে মকিড়ের মতো, আর এর মধ্যে দু চারজন টিকে থাকবে, সেই যে পড়েছিলাম না সারভাইভাল অব ফিটেস্ট, যোগ্যতমের উদবর্তন, যোগ্যতমটা কে? যার বুকে আগুন আছে, যে এই ফাঁদগুলো এড়িয়ে যেতে পারবে, যে নিজের টার্মস গুলো বিকিয়ে দেবে না’
মীরা কি নিজের স্বামীর কথা বলছেন? পঞ্জাবের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অফিল্মি পরিবার থেকে উঠে আসা হিতেশ কাপুর, সবাই জানে তাঁকে কত স্ট্রাগল করতে হয়েছে, জলের পাইপে থাকতেন, ডিরেক্টর প্রডিউসারদের দরজায় দরজায় ঘুরতেন, কত দিন গেছে রাস্তার কলের জল খেয়েই দিন গেছে। সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে, অনেক অনেক কষ্টে একটা ব্রেক। তারপর আর পেছনে ফেরেননি, যারা পাত্তা দেয়নি তারাই পায়ে পথে ঘুরেছে। স্বপ্নের মতো যেন।একজনের কথাই বলছেন? নাকি অনেকের কথা? যেমন গঙ্গায় মিশে যায় অনেক শাখা নদী, তেমনি অনেকের কথা বলছেন মীরা?
‘এই যে এত হাজার হাজার জনের মধ্যে একজন দুজন ওপরে উঠতে পারল, এসব কে ঠিক করে বলতে পারেন? শুধুই নিজের জোরে ওপরে ওঠে মানুষ? শুধুই যোগ্যতা? নাকি একটা ডিভাইন ডিজাইন আছে, যা আমরা জানি না, সব ঠিক করা আছে আগে থেকে, মানুষ শুধু যন্ত্রের মতো, পুতুলের মতো নেচে যাচ্ছে? কিন্তু তাই যদি হবে, তবে ঠিকুজিতে লেখা ৭২ বছর আয়ু, সে ৫২ বছরে চলে যায় কী করে বলতে পারেন?’
ভবানী ঠিক বুঝতে পারলেন না ঠিক কার কথা বলছেন মীরা, কেউ কি আছে আরও গোপন?
তিনি পেশাদার ভঙ্গিতে বললেন ‘ এইটা আমাকে একটা দিন সময় দিতে হবে ম্যাডাম, আপনাকে আর আসতে হবে না, আমি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসব’

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes