রুটি, শিল্পশুদ্ধি ও একটি কবিতাপাঠের সমস্যা <br /> রণজিৎ অধিকারী

রুটি, শিল্পশুদ্ধি ও একটি কবিতাপাঠের সমস্যা
রণজিৎ অধিকারী

কবিতাকে চূড়ান্ত শিল্প হিসেবে ধরে নিলেও কি একটা কোনো কৌণিক প্রশ্ন উঠতে পারেনা? নাৎসি যুদ্ধের বর্বর বিভীষিকা যে কবি চোখের সামনে দেখেছেন---সেইসব বিধ্বস্ত, মুমূর্ষু, ছিন্নভিন্ন বেদনাযন্ত্রণা কি তাঁদের কবিতায় কোনো ছাপ ফেলবেনা? আমাদের দেশের চল্লিশের দশকের দেশভাগ, দাঙ্গা পেরিয়ে পেরিয়ে পঞ্চাশের খাদ্যসংকট, খাদ্য-আন্দোলন যাঁদের চোখের সামনে ঘটেছে তাঁরাও কি শিল্পের উৎকর্ষের বাসনায় চারপাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবেন? থাকা যে সাহিত্যিকের পক্ষে কত কঠিন তা টের পেয়েছেন জীবনানন্দও---দাঙ্গার বীভৎসতা তাঁকেও যেন জোর করে লিখিয়ে নিয়েছিল "১৯৪৬-৪৭"-এর মতো কবিতা। সে-কবিতা কি কম শিল্প হয়ে উঠেছিল? কিংবা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐ কালপর্বে লেখা "আজ কাল পরশুর গল্প"---তাও কি শিল্পোত্তীর্ণ হয়েও সামাজিক দায় পালন করেনি? সামাজিক দায় ও শিল্প-চৈতন্য এ-দুয়ের মোকাবিলা স্পষ্ট নাহলে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আপাত সহজ, কখনো-বা স্লোগানধর্মী কবিতার পাঠবিচার হবে কীভাবে? লেখক অরুণ সেন তাঁর 'কবিতার দায় কবিতার মুক্তি' গ্রন্থে লিখছেন---"কিন্তু সমাজের পরিবর্তন আজ এত দ্রুত ও জটিল হয়ে চলেছে যে তাঁর স্বাতন্ত্র‍্যবোধের অভিমানে আর সেই অভিজ্ঞতায় পৌঁছনো যায়না। শিল্প দাবি করে শিল্পীর আরো বেশি মগ্নতা ও অংশগ্রহণ। শিল্পীর দায়বোধ আসে সেখান থেকেই।" 'অংশগ্রহণ' শব্দটি এখানে বেশ গুরুত্ববহ। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো কবি কিছু অভ্যাসের বশে দরিদ্র, সব হারানো-ফুরানো মানুষের কথা কবিতায় তুলে আনেন না ; তাঁরা অনেক কাছ থেকে ঘনিষ্ঠভাবে আঁধারের মানুষগুলোকে দেখেছেন। এমন নয় যে অন্যমনস্ক একটা দাগ রেখে যাওয়ার তাগিদে একটা ভিখিরির, ফুটপাতবাসীর কথা বলা!

এই তো ক’দিন আগেই একটি আলোচনা সভায় “কবির সামাজিক দায়বদ্ধতা” বিষয়ে বলতে গিয়ে এইসময়ের একজন প্রতিষ্ঠিত কবি বেশ জোরের সঙ্গেই বললেন যে, কবির কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই। এই কথাটিকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি তাঁর মতের পক্ষে যা যা বললেন—তাকে সহজে অস্বীকার করাও যায়না। আর তর্কটা কেবল আজকের নয়ও; বহুদিনের। বুদ্ধদেব বসু, অরুণকুমার সরকারের মতো কবিরা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ কবিতা বলে নিশ্চয় কিছু মানতেন না, তাঁদের ঝোঁক ছিল শুদ্ধ শিল্পের দিকে। জীবনানন্দও কি মানতেন?
‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন—জীবন সমাজ ও জাতির সমস্যা সম্বন্ধে উৎকৃষ্ট আলো পেতে গান্ধি, রাধাকৃষ্ণন, নেহরুর কাছে যাওয়া উচিত, কবিতার কাছে নয়।
কিন্তু বিষয়টি কি এতটাই সহজে মিটে যাওয়ার! কবিতাকে চূড়ান্ত শিল্প হিসেবে ধরে নিলেও কি একটা কোনো কৌণিক প্রশ্ন উঠতে পারেনা? নাৎসি যুদ্ধের বর্বর বিভীষিকা যে কবি চোখের সামনে দেখেছেন—সেইসব বিধ্বস্ত, মুমূর্ষু, ছিন্নভিন্ন বেদনাযন্ত্রণা কি তাঁদের কবিতায় কোনো ছাপ ফেলবেনা? আমাদের দেশের চল্লিশের দশকের দেশভাগ, দাঙ্গা পেরিয়ে পেরিয়ে পঞ্চাশের খাদ্যসংকট, খাদ্য-আন্দোলন যাঁদের চোখের সামনে ঘটেছে তাঁরাও কি শিল্পের উৎকর্ষের বাসনায় চারপাশ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবেন? থাকা যে সাহিত্যিকের পক্ষে কত কঠিন তা টের পেয়েছেন জীবনানন্দও—দাঙ্গার বীভৎসতা তাঁকেও যেন জোর করে লিখিয়ে নিয়েছিল “১৯৪৬-৪৭”-এর মতো কবিতা। সে-কবিতা কি কম শিল্প হয়ে উঠেছিল? কিংবা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐ কালপর্বে লেখা “আজ কাল পরশুর গল্প”—তাও কি শিল্পোত্তীর্ণ হয়েও সামাজিক দায় পালন করেনি?
সামাজিক দায় ও শিল্প-চৈতন্য এ-দুয়ের মোকাবিলা স্পষ্ট নাহলে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আপাত সহজ, কখনো-বা স্লোগানধর্মী কবিতার পাঠবিচার হবে কীভাবে? লেখক অরুণ সেন তাঁর ‘কবিতার দায় কবিতার মুক্তি’ গ্রন্থে লিখছেন—“কিন্তু সমাজের পরিবর্তন আজ এত দ্রুত ও জটিল হয়ে চলেছে যে তাঁর স্বাতন্ত্র‍্যবোধের অভিমানে আর সেই অভিজ্ঞতায় পৌঁছনো যায়না। শিল্প দাবি করে শিল্পীর আরো বেশি মগ্নতা ও অংশগ্রহণ। শিল্পীর দায়বোধ আসে সেখান থেকেই।”
‘অংশগ্রহণ’ শব্দটি এখানে বেশ গুরুত্ববহ। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো কবি কিছু অভ্যাসের বশে দরিদ্র, সব হারানো-ফুরানো মানুষের কথা কবিতায় তুলে আনেন না ; তাঁরা অনেক কাছ থেকে ঘনিষ্ঠভাবে আঁধারের মানুষগুলোকে দেখেছেন। এমন নয় যে অন্যমনস্ক একটা দাগ রেখে যাওয়ার তাগিদে একটা ভিখিরির, ফুটপাতবাসীর কথা বলা!
তার চেয়ে অনেকবেশি দায়িত্ব নিয়ে যেন অনেকটা তাঁদেরই কণ্ঠে কবিতায় বলে ওঠা—জঠরের বহ্নি নেভানোর জন্য রুটি দাও, রুটি দাও।
এখন কথা হল এই পোড়া রুটি চাওয়া মানুষগুলির কথা কে বলবে? হঠাৎ করুণা জাগা অভিজাতজীবনে অভ্যস্ত কোনো শিল্পনিপুণ কবি বলতেই পারেন এবং তাঁর সেই বিচ্ছিন্ন দরদি কবিতাটি শিল্পোত্তীর্ণও হতে পারে কিন্তু সমগ্র কবিজীবন জুড়ে প্রিয়ার কথা বলে যাওয়া, প্রিয়ার সুন্দর রূপের মহিমা কীর্তন করে যাওয়া কবিত্ব যখন রুটির কথা বলবে—তখন তা কৃত্রিম হতে বাধ্য।
এক্ষেত্রে রাজনৈতিক অভিজ্ঞান ও স্বদেশচেতনাও একটা প্রাসঙ্গিক ব্যাপার হয়ে ওঠে। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো কবিরা তখন যে-রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তা তাঁদেরকে সমাজের নিচুতলাকে বুঝতে অনেকখানি সাহায্য করেছিল। কারা সর্বহারা, কারা দিনের শেষে একটুকরো বাসি রুটি চাইতে পারে—এ সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা না থাকলে ‘রুটি দাও’-র মতো কবিতা লেখা যায়না।
ভাবুন “হোক পোড়া বাসি ভেজাল মেশানো রুটি/ তবু তো জঠরে বহ্নি নেবানো খাঁটি” এই পঙক্তিটির কথা। ভেজাল শব্দটি যেন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর দুর্নীতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় আর আমাদের গালে সজোরে থাপ্পড় কষায়। ঠিকই যে এই কবিতা রচনার সমকালে হাজারো উত্তীর্ণ কাব্যশিল্প রচিত হয়েছে কিন্তু সেইসব কবিতায় চারপাশের নিরন্ন মানুষের, উদ্বাস্তু মানুষের জীবনযন্ত্রণা যে অস্বীকৃত হল—এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে আমাদের।
এখানে নীতি ও ন্যায্যতার প্রশ্নও ওঠে। নিশ্চেষ্ট একটা সমাজ নীতিপঙ্গুত্বের কারণে একটা প্রজন্মকে ক্ষুধায় পীড়িত করে তুলছে অথচ এ-বিষয়ে যথেষ্ট ভাববার সুযোগ ছিল।
তখন বিশুদ্ধ শিল্পচর্চা কোন সূক্ষ্ম বিলাসিতার দিকে সৌন্দর্য উপভোগের দিকে নিয়ে যাবে আমাদের!…… “এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয় যে, সরকার বা সমাজ বাস্তব অবস্থার যথেষ্ট পর্যালোচনা না করেই নিয়তিবাদের শিকার হয়ে পড়েছে, সেই নিয়তিবাদকে বাস্তববাদ এবং কাণ্ডজ্ঞানের মুখোশ পরিয়ে আত্মতৃপ্ত থেকেছে এবং তার ফলে হাজার হাজার, বস্তুত লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। “[‘নীতি ও ন্যায্যতা’, অমর্ত্য সেন]
এরই সঙ্গে আছে খাদ্য আন্দোলনের ওপর নেমে আসা শাসকগোষ্ঠীর দমন পীড়ন। এই জায়গায় এসে আমাদের মানে সচেতন পাঠকের একটু থমকে দাঁড়াতে হয়। অস্বীকার করব এই লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্ষুধাতুর আর্তি, হাজার হাজার মৃত্যু? যাঁরা শহরের আপাত নিরাপদ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছিলেন সেদিন আর বিশুদ্ধ শিল্পচর্চায় মগ্ন ছিলেন তাঁদের সঙ্গে আর যাঁরা এই বিচ্ছিন্ন শিকড়হীন, সামান্য রুটির জন্য লড়াই করা লোকগুলোকে দেখছেন কাছ থেকে—এই দুই শ্রেণির শিল্পীমনের মধ্যে স্পষ্ট একটা বিভাজনই কি হয়ে গেল না?
এইসব সময়ে সবচেয়ে দায় বহন করতে পারে যে শিল্পমাধ্যম তাহল নাটক আর তারপরেই কবিতা। নিচ থেকে ওপর দিকে তাকানো বা নিচ থেকে নিচের দিকেই তাকানোর সার্থক ভঙ্গিমা হয়তো আজও অনাবিষ্কৃত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। তবু যা পেয়েছি কম নয়। গত শতকের চল্লিশের পর থেকেই তো সুভাষ, বীরেন্দ্র বা সিদ্ধেশ্বর সেনদের আমরা পেলাম। ফলে আমাদের নিয়তিবাদী চোখে ও মনে হয়তো কিছু নতুন ও তরল শোনালো এই স্বর:—
“সমরখন্দ বা বোখারা তুচ্ছ কথা
হেসে দিতে পারি স্বদেশেরও স্বাধীনতা। ”
স্বাধীনতা, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন—কারা যোগ দিয়েছিল তাতে! সমাজের কত শতাংশ মানুষ যারা আমৃত্যু দুটো ভাতের কথাই ভেবে গেল, ফ্যান চেয়ে বেড়াল দোরে দোরে—যারা সমাজের হাতে মার খেল, প্রকৃতিও মারল যাদের—তারা স্বাধীনতা চেয়েছিল? যাদের পরনে সামান্য ন্যাকড়াটুকু ছিলনা, বাইরের লোক এলে পুকুরের জলে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকল, কখনো বা মাদুর কলাপাতা জড়িয়ে রাখল শরীরে সেইসব প্রায় নগ্ন নিঃস্বরা ঠিক কী স্বাধীনতা চেয়েছিল? কিংবা স্বাধীনতা পাবার পরও তাদের কাছে কতটুকু তা পৌঁছেছিল?
দিনের শেষে ক্ষুধাতুর পশুসমান সেই মানুষগুলো যদি রুটির বদলে সেদিন স্বদেশের স্বাধীনতাকেও বিসর্জন দিয়ে দিতে চায়—তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের কাছে তখন রুটি দাও, রুটি দাও-ই মন্ত্র হয়ে যায়।এই মন্ত্রের গুণ বুঝতে হলে আরামপ্রদ যাপন থেকে নেমে আসতেই হবে পাঠককে। একই বোধের বিন্দুতে দাঁড়িয়ে দুইধরনের কবিতাপাঠ চলেনা। রবীন্দ্রনাথ আর ব্রেখ্ট এক নিঃশ্বাসে পড়া যায়না ; বুদ্ধদেব বসু আর বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও বিচারের মাপকাঠি তাই ভিন্ন।
একটি কবিতা পড়বার সময় পাঠকের শ্রেণিনির্ণয়ও তাই জরুরি হয়ে ওঠে। হতেই পারে উদ্বাস্তু ছিন্নমূল মানুষও ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র কাছে পৌঁছতে পারেনি।আলোচনায় উঠে আসতে পারে ছিন্নমূল মানুষও যতক্ষণ না শিল্পবোধে জারিত হচ্ছে ততক্ষণ তার কাছে ‘রুটি দাও’-র মতো সহজবোধ্য কবিতাও আয়ত্তাধীন নয়। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষাকে যদি তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় কোনোভাবে তবে তার আঁচ তারা পেতেই পারে। তখন কিন্তু মজুর, শ্রমিক যারা বঞ্চনার শিকার, ক্ষুধার জ্বালা যারা টের পায় দিনরাত্রি তাদের কাছে এইসব কবিতা ভিন্নমাত্রা পাবে।
মানিক ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে দেখিয়েছিলেন এই দুটো খেতে চাওয়া মানুষগুলোর বুকে কোনো নালিশ নেই। তারা সব মেনে নিয়েছে, কোথা থেকে কী হল তারা তা জানতেও চায়না। ভাবুন—ঐ মানুষগুলোর কাছে কবিতাকে যদি লড়াইয়ের অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরা যেত তাহলে “ঝোড়ো সাগরের ঝুঁটি ধরে” নাড়া দেওয়া অসম্ভব ছিল না। তখন রুটির বিনিময়ে প্রিয়ার চোখের মণি দিয়ে দেওয়ার চিত্রকল্পও অত কর্কশ শোনাত না। আসলে স্বাধীনতার গ্লানিতে যাদের জীবন আচ্ছন্ন, তাদের কাছে পরাধীনতার গ্লানির কী তাৎপর্য! এটা কবি বীরেন্দ্র নিশ্চিতভাবে বুঝেছিলেন। তিনি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে উপলব্ধি করেছিলেন—তবুও গান আছে। সে গান পৃথিবীর কালো সাদা হলুদ মানুষের গান; সেই গানের মধ্যে তাদের স্বপ্নও চোখের মণির মতো গাঁথা আছে। চারিদিকের নরকের মধ্যে দাঁড়িয়েও মানুষ তাই স্বপ্ন দেখে। যদি অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো ভাত দু’টুকরো পোড়া রুটিও তাদের জুটিয়ে দেওয়া যায় তাহলেই কিন্তু স্বপ্নেরা একে একে ভিড় করবে। রুটির মন্ত্র থেকে গান উঠে আসবে ঐ পোড় খাওয়া পোড়া শুকনো বুকগুলিতেও।
প্রাবন্ধিক সৌরীন ভট্টাচার্য বেশ একটু বড়ো পরিসরেই সামাজিক দূরত্বের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। কিন্তু তাকে আমরা যদি কাব্যবিচারের এলাকায় নিয়ে আসি খুব ভুল করব কি? চলন, বলন, পোশাক-আশাক, ভাষা ব্যবহার, রুচি-ঝোঁক ইত্যাদি থেকে যে দূরত্ব তৈরি হয়—সেই দূরত্ব শিল্পবোধকেও তো নিয়ন্ত্রণ করে। ধরুন রুটির জন্য কাতর যে মানুষটি সে কখনো ঘটনাচক্রে কবিতার কাছে চলেও আসে যদি কিংবা পড়তে জানে এমন এক মজুর যদি শিল্পের কাছে এসে পড়তে চায়—তখনো কি সেও বিশুদ্ধ শিল্পের দিকেই ঝুঁকে পড়বে?
আবার উল্টোটাই যদি ভাবি—অভিজাত অগ্রসর উচ্চশিক্ষিত রুচিসম্পন্ন কবি শিল্পীরা কেনইবা নান্দনিকতার চূড়ান্ত রূপকে ভাঙতে চাইবেন ‘বৃত্তের বহিঃস্থ যারা’ তাদের কথা ভেবে! আবেগে, অনুভবে, প্রত্যাশায় এতটাই বাইরে যে, সেই মানুষগুলোকে ব্রাত্য বলে দেগে দেওয়াই যায়। আশ্চর্য মিল এখানেই যে, কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও নিজেকে একজন ‘ব্রাত্য কবি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও তিনি—“কবি, কবিতা, কবিতার পাঠক”-কে একসূত্রে বাঁধার যে ক্ষীণ স্বপ্ন দেখেছিলেন তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এখানে অর্থনৈতিক সামাজিক দূরত্বের প্রসঙ্গই এসে পড়ে। হ্যাঁ, একটি কবিতাপাঠের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা জেগে ওঠে।
আলোচিত কবিতা :

হোক পোড়া বাসি ভেজাল মেশানো রুটি
তবু তো জঠরে বহ্নি নেবানো খাঁটি
এ এক মন্ত্র! রুটি দাও, রুটি দাও,
বদলে বন্ধু যা ইচ্ছে নিয়ে যাও:
সমরখন্দ বা বোখারা তুচ্ছ কথা
হেসে দিতে পারি স্বদেশেরও স্বাধীনতা।
শুধু দুইবেলা দু’টুকরো পোড়া রুটি
পাই যদি তবে সূর্যেরও আগে উঠি,
ঝোড়ো সাগরের ঝুঁটি ধরে দিই নাড়া
উপড়িয়ে আনি কারাকোরামের চূড়া :
হৃদয় বিষাদ চেতনা তুচ্ছ গণি
রুটি পেলে দিই প্রিয়ার চোখের মণি।
[রুটি দাও, “উলুখড়ের কবিতা]

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    Ishita Bhaduri 4 years

    খুব ভালো লেখা

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    Checking your browser before accessing...