
অমৃতা ভট্টাচার্য-র কবিতা
রঙ ও শিকড়নামা
১
(আমি কৃষ্ণ)
কে ডেকেছো? শুনিনি। সে কণ্ঠরেণু ভুলের উন্মেষ
বাতাসেরা বন্ধ থাক! এত তেজ! এত ওড়াওড়ি
শব্দটুকু বলা নেই, মহাকাব্য খিদেয় অধীর
গল্প জানে বরফেরা সরে, লাশ এখনও সজীব —
বাধা দিয়ে রাখবে না, বাহুবন্ধে জোর নেই কোনও
কী পবিত্র সে সকাল! সূর্য ওঠে, দিক ভুল নেই
কী উদার প্রেম ওই, ভালো নেই? অন্য কথা বলি? —
আমি তো আছিই শেষে, ননীচোরা। ডাকনামে চেনো?
সর্ব অঙ্গ দিয়ে শুনি, ভবিষ্যত শিকড় কাহিনী
সে গাছ বলেছে, শীত, পর্ণমোচী এই দেয়ানেয়া
একমুঠো রঙ দিলে ফিরে দেখা খাঁচার তাড়না
শরীরের চেয়ে বড় — আহত এ দেবতার বেশ!
মুঠোয় যেটুকু ধরে, বাতাসের পূর্বসুরী আলো
এ মাসে বসন্ত আসে, এই রঙে দেবজন্ম শেষ!
২
(আমি রাই)
সরিয়ে রঙ একটু দূরে কৃষ্ণমণি ছাদে
শুরুর ঘড়ি বাঁশির হাতে, সূর্য সে তো একা!
ফুরোলে রাত আহ্নিক আর শব্দ যেন ধোঁয়া
ভেসেই এলো শরীরমুখী, মেঘলা ভ্রম হয়!
ঘুমের মাঝে পশুর মায়া, পূজোর নানা রীত
যেমন নদী মায়ের মতো খাবার মুখে তুলে
হাঁটুর নীচে কাঁদছে বাড়ি, কী অপরাধ বলো?
ওপাশ ফিরে ছায়ার মুখে রঙের ঘরবাড়ি
কৃষ্ণ শোনো, তোমার আগে অবতারের দল
কুটির দ্বারে জলের খোঁজে যাওয়া-আসাও কত!
কখনো আমি ফেরাইনি তো! রঙের ছলে তবু
রাধার মুখে আদল বসে শত গোপিনী এলো! —
খেলেছি ঢের! পোড়ার শেষে পেয়েছি নাম ‘রাই’!
রঙের দোল ভোলায় না আর, শিকড় খোঁজে যাই!
৩
(আমি ব্রজগোপী)
এইমাত্র শুরু হলো
অন্ধকার কিউবের মধ্যে ঢুকে গেলো অশ্রাব্য শিকড়
কালো নরম হতে হতে
মাছের হাঁ খাবি খেতে খেতে
ঘরের শব্দ গিলে খেলো বৃন্দা আ আ আ —
অন্ধকারের মজা আছে
সিন্দুকের মতো খুলে আসে অপাপবিদ্ধ তারা
জমাট মানচিত্র হয়ে
শরীরে লাফিয়ে পড়ে পাখির দল
এ গাছ পর্বত — সারি সারি মাথা নুয়ে যায়
জটিল শিকড় ফাঁকে পাথর গলে ফল্গু নাম ওর!
ডেকে দ্যাখো, সাড়া পাও কিনা!
আমাকে যেতে হবে
রক্তের ধারা ছেড়ে যায় পাঁচিলমুখো শ্বাস
এক হাজার মুখ তার — পিচকারী, সূর্য ফুটে যায়!
যেতে হবে। এ বসন্তে রঙ ছেড়ে যাই —
একমুঠো হাড়ের কাছে
ইতিহাস ফিরবো বলে
রক্তের ধারা ছেড়ে যাই, আমি ব্রজগোপী!