সুবর্ণকান্তি উত্থাসনীর দীর্ঘ কবিতা

সুবর্ণকান্তি উত্থাসনীর দীর্ঘ কবিতা

প্রব্রজ্যা বিষয়ক সূত্রসমূহ

(১)

ম্লান জ্যোৎস্নার ঘ্রাণে কার পাড়া হুলুস্থূল হয়েছে মধ্যরাতে। জোর
করে ঘুম ভাঙানোর অপচেষ্টায় নিহিত নয় অন্তর্বর্তী স্থূল
চেতনায় অনুরণনে জেগে ওঠামাত্র। ঘেয়ো জলে একটি কুকুর
শীতল থাবায় তার জোনাকির সাথে খেলা করেছিল শিকারের
ছলে। কোমলতা প্রসঙ্গে মানুষের দীর্ঘকালীন অসুখে ভোগার
অভিজ্ঞতা ক্রমশই শুশ্রূষায় ব্যাকুল করেছে। তাই মৃত্যুভয়ে
আরোগ্যের লোভ দূরে নিরুত্তরে ব্যাধির যাবতীয় সম্ভবনার
দুশ্চিন্তা বাছুরের মতো টাল খেতে খেতে টেনে নিয়ে চলেছে তাকে
হাইডোজ ওষুধ সেবনে। এভাবে আমরা মাথার কাছে রৈবতক ও
পায়ের কাছে চন্দ্রভাগা নদীকে ঘুমের ভিতর প্রশ্রয় দিয়েছি।
আর অঙ্গন্যাস চালনার সীমাবদ্ধতাকে যুক্তি গড়ে প্রাসঙ্গিক
করার কৌশল আয়ত্তে এনেছি। আমাদের ঘুম পাতলা হতে হতে
নেমে এলো শসাক্ষেতে। প্রগাঢ় ওজন বিকেন্দ্রীভুত করে জালের
ওপর দিয়ে হেঁটে এসে হাত গলিয়ে মাচা থেকে যখন শসা
ডাকাতি করে ঊর্দ্ধলেজে ছুট দিল হনুমানটি তখনও সমবেত
পাড়া শোরগোল করেছে। এই দুই অপসৃত শব্দপ্রাবল্যের যোগে
তুমি ঝুলিয়েছ মড়কের পর্দা। মিলনের শ্বাসরোধী সন্দেহে ওড়ে
রাজনিশানের ঝুঁটি। উপর্যুপরি নদীভাঙনের ধ্বস্ত বাস্তুভিটা।
পরস্পরকে বাঁধ দিয়ে রাখি। ক্রুর আনাগোনা করে শরীরে বটিকা।
যেন তোমার গর্ভে উপদ্রুত শূলপিণ্ড পুঁতে দিয়ে পালিয়ে এসেছি
তাড়া করে ফিরছে প্রতিটি সড়কে প্ররোচিত বন্ধ্যাত্বের হ্যাজ।

তারপর শূল থেকে জন্ম হল উলু খাগড়ার। এযাবৎ হনুমানটি
অদূরে দাঁড়িয়ে সুতীক্ষ্ণ নজরে রেখেছিল ভিড়ের মাঝেও কেন
প্রত্যেকে একা। কেন এলইডির নিতম্বে জমে বিষাদের ছায়া। কোন
নৈঃশব্দ্যে যুবক ভাঙা দালানেতে লেপে যায় মাটি হঠকারিতায়।
আবেগের অপচয়ে। দৈন্যতা যতখানি নিষ্ঠুর করে তুলতে পারে
তারওচেয়ে নিষ্ঠুর কি ছেত্তার কোপ। এই পর্যবেক্ষণ থেকে জন্ম
নেয় অস্ত্র। ক্রমশ ধারালো হয় প্রয়োগের নিজস্ব তৃষ্ণায়। গতি
আসে বিস্তারে যাকে সাবলীল ভেবে নিলো মানুষেরা। তারপর থেকে
আমরা দুজনে মিলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে মধুচক্রে এনেছি বৈধতা।
লোনাধরা মন্দিরের দেওয়াল থেকে পোড়োমাংস তুলে ফেলে সেজেছে
কর্পোরেট পোশাকে। রক্ত বিষয়ক অনাস্থা দাখিল করে উপড়েছি
হাঁড়িকাঠ। নিরামিষে সুস্থতা প্রচার করে গোপনে এনেছি ত্বরা
উপনিবেশ বিস্তারে। ছুঁড়ে ফেলতে পেরেছি মাদুলী কিংবা তাবিজের
মতো বিশ্বাসের চিহ্নগুলি l তোমাদের মনন এখন ভক্তিহীন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত গবেষণাপত্রগুলিকে সযত্নে লুকিয়ে
ফেলতে পেরেছি বিগত শতাব্দীর হকার ইউনিয়নের গলিত
খুলিতে। পাড়ার বিক্ষিপ্ত তোলপাড় সামলাতে অল্পদরে পুষেছি সেনা।
শীতল ঈষৎ হাওয়া চৈত্রের। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণের মন্ত্রে আমরা
কালবৈশাখী নয় এনেছি অকাল বৃষ্টি নিম্নচাপের। অথচ দেখো
এতটুকু বুনতে পেরেছি এতকাল নারীর দাসত্বের দুর্বিষহ
রোমখাঁড়া হিক্কার কাহিনীসমূহ। তোমরা জানলে অন্ধ বিরোধিতা ছাড়া
বিনাশ নাই পুংনিগ্রহের। তাই অবশেষ নগ্নতা আছড়ালো পথে।
সংসার উপড়িয়ে জানলে পুরাণে একেই রিপুহীন হওয়া বলেছে।

ইদানীং আয়নার সামনে দাঁড়ালে বিপরীত অবয়বটির অস্পর্শী
মাথায় টের পাই গজিয়ে উঠছে প্রত্নতাড়িত মুকুট। প্রিয় অনুগত
জনগণ তোমরা মুকুটকে উষ্ণীষ বলে ডাকো। মুকুটকে উষ্ণীষ ডেকে
মহিমান্বিত করো তার উদারতা। ধৈর্য্য। প্রত্যয়। ঈশ্বরীর দেহ
ছেড়ে আঁধারের সঙ্গমতৃষ্ণা রানী করে তোলে বুঝি তোমাকেও ঢের।
আমাদের যুগল নগ্নতা মুদ্রায় স্থাপিত হলে নিকট দেওয়ালে
জেগে ওঠে পিশাচিনী দেহ। এই ছায়া খুঁজেছ তুমি অতল জলে
ঢেউকে ডিনারে বেড়ে পুরুষদ্রোহিতা। ক্রীড়ামগ্ন কুকুরের শিকারে
ছলনা। আমাদের দ্ব্যর্থ মুখ মাস্কে আবিল। রোদচশমার দাহ্যতায়
ঝলসানো নারীমাংসের স্বাদ গলে গলে পড়ে জিভে সমানুপাতিকে
পুরুষ রমণী নির্বিশেষে যুগলের লোভে। এই শেষ সাদৃশ্য যা
প্রকাশ্যে এড়িয়ে রমণী বৈড়ালব্রতের অপলাপ প্রজ্জ্বলিত করে।
এই পথে বাজে জাহাজের সতর্ক সাইরেন। এই পথে এনেছি
ডিজিট্যাল ঔপনিবেশিকতা। তোমরা তার সংস্রবে উন্মাদ হয়েছ।
দীর্ঘকালীন ওষুধ সেবনে বিস্মৃতির দুরারোগ্য ব্যাধি জরায়ু
বৃক্কে স্তনের বোঁটায় জমে জমে হয়েছে খয়রেটে। তোমরা ভীত হও
কি হনুমানের লোমের আধিক্য ও নৃতাত্ত্বিক গড়নের ভিন্নতায়
দৃশ্যত বহিরাগত ভেবে। বাছলে আমাদের। যেন কসায়ের চালে
এসে বসেছে মোরগ। জিওল গিলেছে জঠরে বঁড়শিতে গাঁথা টোপ।
আমরা দুজনে এই সাম্রাজ্যের রাজা। স্বদেশীয় শ্যামলা গড়ন দেখে
তোমরা আপন ভাবলে। টেরও পেলেনা হনুমানটির ক্রুরতা বিনিময়।
আমি তোমাদের চাহিদাকে কৃত্রিম করে বাড়তি অর্থের বিনিময়ে
বিক্রি করেছি বহিরাগতের বিলাসী পণ্য। তোমরা কিনলে তদুপরি
অভ্যাসে। আমরা শিখিয়েছি ময়নার গোলামি। মাতৃভাষা ভুলে গেলেই
একাত্ম। দালানকোঠা থেকে খসে খসে পড়া উইখাওয়া বাঁশগুলি জড়ো
করে আঁটোসাঁটো বেঁধে ম্লান জ্যোৎস্নার স্রোতে নৌকাবিহারের উল্লাশ।
একে স্বাধীনতা ভেবে অবাধ বিচরণে তোমরা গদগদ হয়েছ।
ভাবলে সাম্য। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আধুনিক সমতার ভাষ্য তৈরি
হোক পুঁজিপতিদের বশীভূত অ্যাপসের মুক্ত হাওয়ায়। ক্রীড়াঙ্গনে।
প্রোপাগান্ডা ছড়াতে বেছে নিয়েছি পদ্য। যেহেতু সুরের মর্ম চৈতী
পাখির থেকে অনুধ্যান করেছি আমরা। যেহেতু কৃত্রিম একাত্মতা
যে পতনবিলাসী বহু নদীভাঙনে হৃৎপিণ্ডের কম্পণে চিনিয়েছে
আমাদের চৈত্রের অবাঞ্ছিত পলাশ। আমাদের রাক্ষুসে ক্ষুধার
নিবৃত্তি করতে করতে এই পোড়ো বঙ্গদেশের ভাঁড়ার শূন্য হয়েছে।
এখন হাসপাতালে ড্রেনের কালো জল ও বাতিল ভ্রূণের ডাস্টবিনে
ঝলমল করছে পাণ্ডুলিপি। শেষ হলেই আমি আমার বীভৎস ক্ষুধা
গর্ভে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো। তুমি কল্যাণী এইএমসের বেডে আধশোয়া
থেকে দেখবে আমাদের শেখানো বুলির নিঃস্বতাকে দ্বিখণ্ডিত করে
হত্যার নেশায় বঙ্গদেশের পাড়ায় পাড়ায় হুলস্থূল পড়েছে।

(২)

বিগত তিনদিনব্যাপী আমি টের পাচ্ছি শরীরের ভিতরে
আমার ভয়ঙ্কর মারণ রোগ জন্ম নিয়েছে। একযুগ
অতীতের ক্ষুধা দাপাদাপি করে চলেছে দুরুহ। যেন
মূর্তিমান ঘটৎকচ। আমার পেট চতুর্দশতম দিনে
কুরুক্ষেত্রের মধ্যরাত। অথচ মদ ছাড়া বিন্দুমাত্র
সংস্থান নাই ঘরে। খিদে পেলে গোগ্রাসে খাই। পয়মন্ত
বাগবাজারের ঘাটে সন্ধ্যারতির ঘন্টা বেজে উঠলে ফের
মুখহাত ধুয়ে আঁধারে বেরিয়ে পড়ি ভাটিখানার দিকে।
আমার স্নানের বালতি পড়ে থাকে কলে। ত্বকে উপচে ওঠে
ফাগের খোশপাঁচড়ার ছোপ। ডিহাইড্রেশানের দুর্বলতা।
বিগত তিনদিন মদ খাওয়ার পরেই আমি টের পাচ্ছি
ময়লা আবিল শুকনো রোমকূপগুলো জেগে উঠছে
হঠাৎ। যেন শীর্ণ খরস্রোতে উঁচিয়ে আছে পাথরের
চাঁই। যৌনকাতরতা আদপে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তান।
একে তৃষ্ণা ভেবে এতদিন আড়াল রেখেছিল জগৎ।
নেশা গভীর হলেই আমার চোখের সামনে পরিস্ফুট
হয় ফেসবুকের জটিল অ্যালগোরিদম। যেভাবে নিপুণ
শিল্পী আঙুল চালায় তানপুরার ছড়ে আমি খুঁজে ফিরি
অভেদ্য শিকার। সাজেশানে অল্পবয়সের মেয়েদের।
সৌন্দর্যের পরতে পরতে প্রত্নতাত্ত্বিকের চোখ। আমি
আশ্রয় চাইলে ভ্রূক্ষেপ না করেই পাশ কাটিয়ে চলে
যায় ওরা দূরগামী খামারে। ওদের ছায়া দীর্ঘ হতে
হতে আমার ক্লান্ত চোখের তারায় চিতা প্রসব করে।

বাতাস যতটা নির্লজ্জ নিঃসঙ্গতা তারচেয়েও নির্লজ্জ
হতে পারে। মদের ঘোর আমাকে দুঃসাহসী করে তুললে
নেমে আসি ম্লান জ্যোৎস্নার ছায়াখেলা মেঠো খামারে। দেখি
রমণীর মুখের ভাঁজ যত অস্পষ্ট ততো উত্তেজনা
বাড়ে। কৃষিসভ্যতাব্যাপী সুতন্বী শ্যামাঙ্গীনির নগ্ন পা
ছড়িয়ে রয়েছে পোশাকের উষ্ণতার নিচে। পৃথিবীর
উপেক্ষা আমাকে ঘোড়াজন্ম দিল। খাঁড়া হয়ে ওঠা শিশ্ন
সবুজ ঘাসে লীন হয়ে আছে। তোমাদের মায়া উদ্রেক
হলে আমায় অবলা ভেবে পিঠে মাথায় গলকম্বলে
হাত বুলিয়ে দিচ্ছ না কেন। আমার বন্যতাকে প্রশ্রয়
ভাবো তোমরা। ভাবো চিরহরিৎ শৃঙ্গার। আমার দেহাস্থি
ঘাস। তোমরা শিখেছিলে ধূসর ঈষৎ বীজগুলি কুড়িয়ে
মদ তৈরীর প্রণালী। সেই মদ আমি বয়ে নিয়ে দেহে
সভ্যতা পেরিয়ে এসেছি। এখানে শুধুই ইঁট। বালির
গুঁড়ো। চিপসের এবড়োখেবড়ো সড়ক পায়ে বিঁধে
রক্তাক্ত করে। রক্ত মেখে রজঃস্বলা রমণীরা উলঙ্গ
নেমে আসে এলইডি আলোয়। মাথার ঊর্দ্ধে উঁচু মিনার।
নারীমাংসের ঘ্রাণ উৎসারিত হলে আমার ক্ষয়
তোলপাড় করে ওঠে। হত্যার জেদ নয়। উন্মাদনা নয়
ওই পাইনাভ ঊরু আর আপেলাভ স্তনে ডাকাতের
হিংস্রতা জেগে ওঠে ঢের। যোনিগর্ভে বীর্য ফেলার মধ্যে
যে মাতৃত্বদানের অহংকার ক্রিয়া করে। অথচ আমি
শৃঙ্গারকে সঙ্গীত বলে ডাকি। শৃঙ্গারকে সঙ্গীত ডেকে তার
সুরের মূর্ছনায় তলিয়ে যাই অতল মদে। আমার
ক্ষুধা মেটেনা। সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। গড়াই আমিও ঢের।
মদের গভীরে মদবেশ্যারা আমার দুর্বল শরীরটিকে
টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলছে ক্লীবের মতো। তাদের হরিণীর
মতো টানা টানা চোখের কাজলে করুণার ঘন মেঘ
ঢেকে আছে। মুখের ওপরে এসে পড়া দুর্বিনীত চুলে
নিষ্ঠুর অভিসার। মদের তলদেশে সুরম্য প্রাসাদে
বন্দী করে রেখেছে আমাকে। তারাখচিত কুঠরীতে। ফলে
সাজানো ডিনার টেবিল। চারিদিকে সঙ্গীতের মায়াবী
সুর ভেসে আসছে কানে। ঝাড়বাতি থেকে শুশ্রূষা খসে খসে
পড়ে সেরে উঠছে আমার পায়ের ক্ষত। আমি টের পাচ্ছি
আমার পায়ে জেগে উঠছে ঘোড়াজন্মের ক্ষুর। ঊষরতা
সরিয়ে নীরবে টেনে নিয়ে চলেছে অবক্ষয়ের আগে।
প্রাসঙ্গিকতারও আগে আমার আদিগন্ত ক্ষুধার লঘু
বীজাণুহীন উৎস্যের খোঁজে মনোলোভা শৃঙ্গারের দিকে।
গঙ্গারিডাইর পথে একটিও বেশ্যাপল্লী চোখে পড়েনি।

(৩)

গোধূলির টুকরোগুলি তোমার চোখের সাময়িক আয়নায় ছড়িয়ে
রেখেছে কেউ। নদীর বাঁধানো পাড় ঘেঁষে উড়ে যাওয়া কোঁচ বকেরা
যেমন সমবেত ডুবে যায় চরের ওপারে ক্রমশ দৃশ্য থেকে
দৃশ্য ড্রপ খেতে খেতে গড়িয়ে পড়ে লোকাতীতে। অনুমতি এভাবে
আসেনা। বড়ো দীর্ঘ কালক্ষয়ের শেষে ভেসেলের মতো ধীর ত্রস্তপায়ে
হেঁটে আসে ততক্ষণে একটি মস্ত দ্বীপ লোনামুক্ত হয়ে চাষবাসের
উপযুক্ত হয়। অথচ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত বাঁধভাঙা বন্যার ক্রুর
হাহাকারে। রটনার রাধাজন্মে ভারী হয় ফিসফিসানি যুগল মূর্তির।
আগামীর সংসার নির্মাণে বাধা ও সুরাহাগুলি বাতাসে বেড়ায়
ভেসে। যুগপৎ ঘটে চলে জৈবরাসায়নিক ক্রিয়া। যেমন
একটি ডিম আলতো টিপ দিলেই চুরমার হয়ে যায় আস্ত দালানকোঠা।
দৃশ্যের লোভে ড্যাবড্যাব করে অভুক্ত শিশুর মতো চেয়ে চেয়ে দেখে
দেহাতি পৌঢ়ারা। তাকানো অভদ্রতা জেনেও ম্যাক্সি পরিহিতা পড়শি
বৌদির ভাঁজে ভাঁজে যেন বিহ্বল চেয়ে আছে পুরুষ ও কিশোর। নোনা
পাড় ফুঁড়ে শিং উঁচিয়ে সুন্দরীকে ঘিরে ধরে শ্বাসমূলগুলি। ওপারে
নগরতলির অস্পষ্টতা থেকে ধোঁয়ামগ্ন সন্ধ্যা নেমে এলে শেষমেষ
ঝাউবনের অভিসার ভেঙে কয়েকটি ছায়ামূর্তি উপদ্রুত পায়ে
এগিয়ে আসে। চুলে ছাপরির ছাঁট। শরীরে সস্তা টিশার্ট। চোখ থেকে
ঝরে ঝরে পড়ে লালসার স্বেদ। খরচাপানির খোঁজে ভেজা জড়ানো
নিরুত্তাপে হাত পাতে হুমকির স্বর। অথচ দেখো ডানা গজানোর
কালে সদ্য গোঁফ ও দাঁড়ির রেখা ফুটে ওঠা যুবকের শূন্য পকেট
আর যুবতীর উপচে ওঠা ভরাট মেদ তাতে সায় দিতে পারেনা।
এবং লোক জানাজানির ভয় দীঘল হয়ে ফুটে ওঠে রোমকূপে।
তারা জানে দুজনেই শাঁখের করাত তাই অপচয় না করেই
অনাস্থা প্রস্তাবে আসে জটিল সঙ্গমের রায়। সহন ও বমনের
মাঝে গা ঘিনঘিনে বাধ্যবাধকতা খেলা করে। চামড়ার ওপরে চামড়া
ঢেউয়ের মতো দুলতে দুলতে শুষে নেয় জন্মের স্নান। প্রতি উত্তোলনে
তলের সঙ্গে যে অংশে ফাঁক থাকে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় জেনেছিলাম
আমরা সেখানে দেবতা এসে বসে পদ্মাসনে। তাড়া করে ফেরে তাকে
প্রতিটি সঙ্গমের শেষে সতীচ্ছদ জুড়ে যাওয়ার অমোঘ আশীর্বাদ।
তাই কি অনুচ্চার পথে ছড়িয়েছে শিমূলের খেদ। একই পুতুলে
খেলে বহুবার রক্তমাখা দাঁত নিয়ে পৈশাচিক হাসে আর মজে
বিশুদ্ধ জলকেলিতে। আমের মুকুলের ঘ্রাণ ছাপিয়ে যাচ্ছে ছেঁড়া
স্কার্টের গলন। অবশ্য তখনও ভাটার বিপরীতে জল এসেছে
উঠে। নিরুপায় ভেসে গেছে ঘাস। লিঙ্গ নেতিয়ে গেলে তৃপ্ত দেবতা
ও পুরুষ ফিরে আসে আপন গুহায়। কেশর দিয়ে বাঁধা দোতারা
গোঙানির সুরে ওঠে বেজে। স্রোতের কাহিনীই তো ভালোবাসে সবাই।

এই বেদনার রঙে তোমার নাকের পাটা ফুলে হয়নি কি রক্তিম।
এখানে পথে ঘেয়ো কুকুরের আকাল অথচ ক্ষুধামান্দ্য পেরিয়ে
আসে খাদ্যের অনুমতি। গভীর অসুখে ভুগে পচতে যেটুকু লাগে।
তারও আগে বন্ধ্যামাঠে আসে ওই কুকুরেরা। দলবদ্ধ হতে হতে
ঝাঁপিয়ে পড়ে দলছুট ছাগলের ঘাড়ে। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে
লুটিয়ে পড়ে তার নশ্বর জিহ্বা। বোঝো অনুমতি ঝিনুকের খোল।
প্রভাব দৃশ্যত অন্তরীণ শাঁস। এই শেষ অভিমান যা দুরন্ত
স্বেচ্ছাচারের দিকে বয়ে নিয়ে চলে দ্রুত। এই যে সারাদিন ধরে
আমার হয়ে আছো গহীন দাঁড়ি আর গোঁফ কামালে সযত্নে। তপ্ত
রোদ এসে শুয়েছে তোমার ম্লান ডানায়। ডানা থেকে ধূসর ফেনা
কুড়িয়ে তোমার শরীরের কুরুঙ্গে রেখেছি তুলে। পরজন্মে যদি
আমাদের পরিচয় হয় তোমার শরীরে লীন চিহ্নগুলি ঢের
অবিকল শুশ্রূষা হয়ে পোড়াবে আমাকেই শুধু। এটুকুই শান্তি
তোমার অবসাদগ্রস্ত স্বামীর কবিত্বের ওপর যতখানি আস্থা।
অগ্রজ তিনি। কিছু শ্রদ্ধা রয়েছে কিছু স্রোত তার প্রতি। এই আঁচ
তুমি পেলেনা কখনও। কাদাখোঁচা পাখিটির মতো একবুক পিপাসা
নিয়ে ছুটে এলে দৃশ্যাতীতে অথচ এতদিন তোমার গন্ধ নিয়ে
লিখে গেছি অজস্র গ্রহাণুর ব্যর্থ কবিতা। উনি নিয়েছেন ঘ্রাণ।
আচমনের নিদারুণ আক্ষেপে বুঝেছি গন্ধ ও ঘ্রাণ কখনোই এক
নয় দুনিয়ায়। ঘ্রাণের মধ্যে যে প্রশ্রয় সুপ্ত থাকে গন্ধে মেলেনা।
আজ কি মিলেছে। কবিতার স্বয়ংক্রিয়তা কি ধরা দিয়েছে নীরবে।

সাবেক এই নগরীর তীরে বসে তুমি ঈশারা দিচ্ছ ঘনিষ্ঠ হতে।
তোমার ঠোঁটের তিল ছুঁয়ে দেখছি কীভাবে শূককীট সূর্যাস্ত ডিঙায়

(৪)

কাল সারারাত আলো জ্বলেছে একাকী। অন্ধকার বলতে শুধু আমি।
অঢেল ক্লিষ্ট চামচিকা দুই ভ্রুপল্লবের মাঝে কিলবিল করেছে।
সেই শুদ্ধতার স্পর্শে পরিত্রাণ পেলে আমার মলিন বস্ত্রখণ্ড
মাটিজন্ম পেয়ে যাবে নিশ্চিত। এইসব উদাত্ত চামচিকার ঠোঁটে
লেগে ছিল আমাদের প্রথম মিলনের রক্ত। জীর্ণ ডানায় লেগে
তোমার গতজন্মের বাড়িটির ভূতগ্রস্ততা। বেপথে হেঁটে যাওয়া
বারবার। কঠোর বিধান পেয়ে এই পোড়া বঙ্গদেশে জন্ম পেলাম।
আদেশ পাইনি তাই প্রব্রজ্যা থেমে গেছে। নামঞ্জুর ক্ষুৎকাতরতা।
ফলত বকের অনুধ্যানে আনুমানিক দুহাজার পাঁচশো বাহান্ন
বছর ধরে আমি সস্নেহে লুকিয়ে ফেলতে পেরেছি জরা বিষয়ক
যাবতীয় ভেষজ ওষুধ। এখন ঔপনিবেশিক চিকিৎসাধীন।
ঝাঁ চকচকে শৈত্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত কেবিন। গ্রানাইট মার্বেলের
ফ্লোর। ট্রান্সফারেন্ট কাচের দেওয়ালে প্রতিবিম্বে চামচিকার বিশ্রাম।
যাকে অনুচ্চারে প্রাকৃতিক ভ্রম হয় ঢের। ভ্রম হয় শাপগ্রস্ত।

অর্ধজন্ম বাঙ্গালা মদে খেয়েছে। বাকিজন্ম বিড়ির উন্মাদ টান।
ক্যাথিড্রাল আর ফিনাইলের কটূ গন্ধ সয়ে নিয়েছি আপাতত।
চামড়া শুকিয়ে খসে খসে পড়ছে উদ্ধত আঁশ। একা একা স্খলনের
প্রগল্ভ সুখ ভেঙে দিয়ে ছলনায় ডাক্তার জানিয়ে গেছেন কেমো
আর নিতে পারবে না শরীর। প্রদাহ বিষয়ক কোনো স্থির সিদ্ধান্তে
আসার আগেই জ্ঞান হারাচ্ছি। সারা শরীর পটলাইকার পিনকন
বিল্ডিংয়ের মতো ছোপছোপে। অস্পষ্ট চোখে ঘোর লেগে আছে। কানে
ভেসেআসছে আমরির সুন্দরী সেবিকাদের বকবক। কাশির দমক আমি
অবিরাম অগ্রাহ্য করছি। আমার রক্তবিন্দু শ্লেষ্মা থেকে ভিন্ন করে
তোমরা ভরে দাও সেলাইনে। এত যন্ত্রণা মাগো সইতে পারিনা যে।
একে তোমরা বুদ্ধের মহানির্বাণের সাথে তুলনা করো আজ। এসো।
বুকে মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দাও। গতজন্মে আমি ভিক্ষুক
ছিলাম। জন্মক্ষত চিনতে না পেরে এজন্মে আইটির মজুর। তোমরা
শরীরকে শ্রমণ বলে ডাকো। শরীরকে শ্রমণ বলো মুগ্ধকর স্পর্শে।

আমাদের গতিতে এই অধঃপতনের ধারা কারা এনেছে বয়ে।
যা কিছু মূর্ত নয় এতদিন আঁকড়ে ধরে রতিসংসার গড়ে ভাবা
পুরুষের সংস্থিতির কাল বড়ো দীর্ঘতর নয়। ভিক্ষু অশোকের
চীদাকাশে আমি ধূসর মেঘের নিচে রক্তের স্রোত খুঁজে পাইনি
বলে প্রতি জন্মান্তরে আমার অকাল প্রয়াণ থেকে আয়ু কুড়িয়ে
কুড়িয়ে মালা গেঁথে একটিই মূর্তি গড়তে চেয়েছি জলপিপির অক্ষরে।
যেহেতু পাখি এবং অক্ষর যুগপৎ ঐশী। যেহেতু কণিষ্কের
অবধারিত পরিণতি আমি জন্মাবধি জেনে ফেলেছি। আর জেনেছি
অমরত্বের পথ বীজাণুময়। লিখতে লিখতে বহুদিন ভাত রাঁধতে
গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছি হাত। ফোস্কা অক্ষর হয়ে উঠেছে। নুন দিতে
গিয়ে আবিষ্কার করেছিলাম কেন সুজাতার পায়েস নুনবিহীন।
হে প্রণম্য পাঠক তোমাদের থেকে আজ নিজেকে আড়াল রাখার
আর কোনো বাহুল্য নেই। আমাকে প্রতিজন্মে অপঠিত কল্পনা
তোমরা জিজীবিষায় পেয়েছ। এখন অবক্ষয় ললাটে এঁকে নাও।

আমার হৃদয়ে সমারূঢ় বাদামক্ষেত থেকে হয়তো এইবার সরে
যাবে ছায়া। আমি এগরায় ফিরে যেতে চাই শেষবার। কৈশোরের আড্ডা
দেওয়ার শ্মশানে। তোরা কিছু কাঠের জোগাড় করে রাখ। বন্ধুদের
কাঁধে চড়ে আরো কিছু ঋণ ফেলে যেতে চাই জগতে। যেদিন
আমার ভাঙা দালানকোঠা নিজস্ব সততার অহংকার ছুঁড়ে ফেলে
মাটিজন্ম পাবে সেইদিন এর পরিশোধ। যে নারীর জন্য আমি
কিছু রেখে যেতে পারিনি কাল সারারাত স্বপ্নে অনুরোধ করেছি
যেন একটু মাটি নিয়ে যায় অন্তত। আমার সবটুকু ভয় জড়ত্বে।
চামচিকার বিশ্রামের ভিতরেই আমার মৃত্যু পরবর্তী বয়ান
প্রস্তুত হবে। এই আত্মগ্লানি মাথানত আমি কীভাবে মেনে নেব।
ভাই অয়ন। শাশ্বত তোমরা আমার বিরোধী স্বার্থটুকু কিছুক্ষণ
আরেকটু জাগিয়ে রেখো বাংলা আকাদেমির গাঢ় সবুজাভ প্রাঙ্গণে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
410 Gone

410 Gone


openresty