
মেরি অলিভারের কবিতা ভাষান্তরঃ মোহনা মজুমদার
মেরি জেন অলিভার (সেপ্টেম্বর ১০, ১৯৩৫ - জানুয়ারী ১৭, ২০১৯) একজন আমেরিকান কবি ছিলেন যিনি জাতীয় গ্রন্থ পুরস্কার এবং পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন । তার লেখা মূলত প্রাকৃতিক জগতের সাথে গভীর সংযোগের প্রতিফলন ঘটায় এবং সেই সাথে একটি বিশ্বাস রচনা করে যে কবিতা 'আলংকারিক হতে হবে না।' অলিভার তার লেখায় সরল ভাষা এবং সুগম চিত্র নির্মাণের জন্য পরিচিত ছিলেন।অলিভারের প্রথম কবিতার সংকলন, 'No Voyage, and Other Poems' (Hughton Mifflin Company), ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল । অলিভারের অন্যান্য সম্মানের মধ্যে একটি আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স অ্যাওয়ার্ড, একটি ল্যান্নান সাহিত্য পুরস্কার, আমেরিকার পোয়েট্রি সোসাইটি অফ আমেরিকার শেলি মেমোরিয়াল প্রাইজ এবং অ্যালিস ফে ডি কাস্টাগনোলা অ্যাওয়ার্ড এবং গুগেনহেইম ফাউন্ডেশন এবং ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর আর্টসের ফেলোশিপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকৃতির সাথে তার স্থায়ী যোগাযোগের জন্য, অলিভারকে প্রায়শই ওয়াল্ট হুইটম্যান এবং রবার্ট ফ্রস্টের সাথে তুলনা করা হয়। "মেরি অলিভার ছিলেন প্রাকৃতিক জগতের অপ্রতিরোধ্য পথপ্রদর্শক," ম্যাক্সিন কুমিন লিখেছেন উইমেনস রিভিউ অফ বুকস-এ । ২০১২ সালে, অলিভারের ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে ।১৭ জানুয়ারী, ২০১৯ সালে ৮৩ বছর বয়সে লিম্ফোমায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
একটি সাক্ষাৎ
সে অন্ধকার জলাভূমিতে পা দেয়
যেখানে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয় ।
গোপন পিচ্ছিল বস্তুটি
আগাছায় পরিণত হয় ।
সে তার লম্বা ঘাড় হেলিয়ে দেয় এবং জিভ দেয়
ক্লান্তিকর নিঃশ্বাসের ভেতর
এবং কিছুক্ষণ পরে এটি উঠে যায় এবং একটি অবয়বে পরিণত হয় যার চেহারা তার মতো কিন্তু আকৃতিতে ছোটো ।
তাই এখন তারা সংখ্যায় দুজন এবং তারা একসাথে হাঁটে যেন গাছটির তলায় দাঁড়ানো একটা স্বপ্ন
জুন মাসের গোড়ার দিকে, পুরু ক্ষেতের চারিধার গোলাপি ও হলুদ ফুলে ভরে থাকে
আমি তাদের সাক্ষাৎ করি
একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকি
সে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর রমনী
তার সন্তান ফুলের মাঝে লাফিয়ে ওঠে,
আকাশের নীল আমার উপর এসে পড়ে
রেশমের মতো, ফুল জ্বলে, এবং আমি আমার
সারা জীবন ধরে বারবার জীবনটাকে শুরু করতে ও উপভোগ করতে চাই
এক্কেবারে বন্যভাবে ।
শেষ রাতে বৃষ্টি আমাকে বলেছিল
শেষ রাতে
বৃষ্টি
আমাকে বলেছিল
ধীরে ধীরে , বলো,
কিরকম আনন্দ
আসতে চলেছে
প্রাণবন্ত মেঘ থেকে
আবার সুখী হতে
পতিত হবে নতুনপথে
এই পৃথিবীতে !
এটা নেমে যাওয়ার
সাথে সাথে এটাই বলেছিল,
লোহার গন্ধ, এবং সমুদ্রের স্বপ্নের মতো
অদৃশ্য হয়ে গেল
নীচের শাখা এবং ঘাসে
তারপর শেষ হয়ে গেল।
আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলো
আমি একটি গাছের তলায়
দাঁড়িয়ে ছিলাম।
গাছটা ছিল সুখী পাতাদের
সমন্বয়ে গঠিত একটি গাছ
এবং আমি নিজেও ছিলাম,
এবং তখন আকাশে তারা ছিল
ওই মুহূর্তে তারা নিজেরাও ছিল
যে মুহূর্তে আমার ডান হাত
আমার বাম হাত ধরে রেখেছিল
যে হাত ওই গাছটাকে ধরে রেখেছিল
যেটা আবার ওই তারা এবং নরম বৃষ্টি
দিয়ে ভর্তি ছিল
শুধু কল্পনা করো ! কল্পনা !
এই দীর্ঘ এবং বিস্ময়কর যাত্রা
এখনও আমাদের হতে হবে ।
শীতল কবিতা
ঠাণ্ডা এখন।
প্রান্তের কাছাকাছি। প্রায় অসহ্য হয়ে উঠছে ।
সাদা ভালুকের উত্তরদিক থেকে মেঘেরা জড়ো হচ্ছে এবং ঘন হচ্ছে
এই বৃক্ষ বিভাজিত সকাল
আমি তার চওড়া পথের স্বপ্ন দেখি ,জীবন রক্ষাকারী পোশাক ।
আমি গ্রীষ্মের কথা ভাবি সঙ্গে তার উজ্জ্বল ফল,
ফুলেদের ফল হয়ে ওঠা , পাতা , একগুচ্ছ শস্য ।
হতে পারে সময়টাই আসলে ঠাণ্ডা
আমরা পরিমাপ করি সেই ভালবাসা, যেটা সবসময় ছিল, গোপনে
আমাদের নিজের দেহাবশেষের জন্য, কঠিন ছুরি-ধারী ভালবাসা
সব কিছুর ঊর্ধ্বে হয়তো , আমার ভেতরের উষ্ণ স্রোতের জন্য
এর অর্থ হল নীল হাঙর সিলের দিকে গড়াগড়ি খেলে যেমন সুন্দর লাগে , তেমন ।
বরফের ঋতুতে
অসম্ভব ঠাণ্ডার মধ্যে
আমরা নিজেদের বাঁচিয়ে হিংস্র হয়ে উঠি , কিন্তু সৎ থাকি
আমরা যদি পারি, একের পর এক প্রয়োজনীয় মৃতদেহ তুলে নিতে, অনেকগুলো ভগ্ন লাল ফুলও তুলে নিতে পারবো ।
পতনের গান
আরও একটি বছর চলে গেল, সব জায়গায় রেখে গেল সমৃদ্ধ মশলাদার অবশিষ্টাংশ : দ্রাক্ষালতা, পাতা
অভুক্ত ফলগুলি ছায়ার মধ্যে স্যাঁতসেঁতেভাবে ভেঙ্গে পড়ে, অবিচ্ছিন্নভাবে ফিরে এসে
গ্রীষ্মের এই নির্দিষ্ট দ্বীপটি থেকে , এই এখন, যে এখন কোথাও নেই
পায়ের তলায় ছাড়া, সেই কালো ভূগর্ভস্থ দুর্গে ঢালাই করা চলছে
অবলোকনযোগ্য রহস্যের – শিকড় এবং সিল করা বীজ এবং জলের বিচরণ। এইটুকুই
আমি চেষ্টা করি মনে রাখতে যখন সময়ের পরিমাপ
যন্ত্রণাদায়কভাবে চাপ দেয় , যখন বসন্ত নিমেষের মধ্যে প্রচণ্ড বিস্তৃত হয় ,
যেভাবে আমরা রেখে দিতে চাই – যেভাবে সমস্তকিছু বেঁচে থাকে , পরিবর্তন ঘটে
এক উজ্জ্বল দৃষ্টি থেকে অন্য দৃষ্টিতে, চিরতরে
এই ক্ষণস্থায়ী চারণভূমিতে ।