সরিৎ দত্তর কবিতা
শাহরিক বৃষ্টিবাদল
এক ۔
তারও কী উল্লাস জানো ! যে একা | হেঁটে গেছে, একা , সারাপথ ,
তারপর জেনেছে সে ভুল ۔۔۔
তার এতদিন হেঁটে আসা ভুল ছিল |
এতদিন খুঁজেছে যে পাথরের গান ,তাকে ,
সে ছুঁয়েছিল বহুদিন আগে ۔۔۔
ভ্রমণের ও আগে ۔۔۔
দুই ۔
ভুল শব্দ | ভুল গান | অপরিচিতের মুখ | আলো |
শাহরিক ভুল পথ | ছেঁড়া সরোদের সুর | বেহাগ বাজালো |
নদীটি জ্বরের মতো | ঘনিষ্ঠ উত্তাপ তার | স্রোত |
গল্প বলো | গান | স্নেহ | মায়া আর ঘৃণা ওতপ্রোত |
তিন ۔
সে আছে তাহার মতো । নিজস্ব গভীরে ।
পরিপাটি । সকালের মতো ।
মুগ্ধতা রেখেছি । দুমুহূর্ত দেখে ….
যত্নে সরিয়ে রেখেছে একপাশে ।
সে আমার বিষণ্নতা হয় ।
সে আমার বিষাদনদীটি ।
জেনে … স্মিত হেসে … ডুবে গেছে
নিজস্ব গভীরে । আমাকে মুগ্ধতায় রেখে ।
রবীন্দ্রগানের মতো । তাহাতে দুচোখ রাখি ।
আমিও তো নিজস্ব খননে মিশে যাবো …
বিষাদনগর
এক ۔
রজনীর মধ্যযামে বৃষ্টি নামে | শরীরে পাতাল জাগে | উরুসন্ধিতে মেঘ | সাপ | অরণ্যপ্রদেশে ঝড় |
মেধার ভিতরে বিষ
আহা , প্রিয়তার মতো মুখ ۔۔۔
বয়সী ওষ্ঠ্য কী উন্মুখ !
দেহ জুড়ে বাউলপ্রপাত ۔۔۔۔
দুই ۔
বিষাদের ডাকনাম মনখারাপ নয় | বিষাদ নদীর মতো | বয়ে যায় ۔۔۔ কতদূর , সামান্য কয়েকজনই জানে শুধু |
আর মনখারাপ ,সে আমার ছোটবোন হয় |
বাড়ির পাশের চেনা পুটুসগাছটির মতো ۔۔۔ তার চুলে বৃষ্টি নামলে পাতারা ভিজে যায় |
আমাদের রাত্রির স্টেশনে কখনো গভীর বিষাদ নামে |
দেখে , গ্রামীণ ভিখিরি মেয়েটির মনখারাপ হয়ে যায় ۔۔۔
তিন ۔
আমি তো নিবীর্য গান্ডিবি
শমীবৃক্ষে সমর্পণ করেছি সব অস্ত্র
বৃহন্নলামুখ নিয়ে লুকিয়ে রেখেছি পৌরুষ
অস্ত্রগৌরব দেখাও আমাকে , আচার্য্য !
অনার্য নিতান্ত আমি । কৌলীন্য শিখিনি ।
যেখানে স্নেহের ছায়া … বুকভরে নিই শুধু ।
এই যদি বন্ধুতার বিপ্রতীপ হয় …
ত্যাগ করো … বিবস্ত্র হয়োনা ।
চার ۔
কোনো কোনো সকালে দারুন মৃত্যু পায় | যৌথ আবাসগৃহের দেওয়ালে যে ক্রিপার সংসারমোহন নখ দিয়ে আঁচড়ে দিতে থাকে এযাবৎকালীন যাবতীয় রাগঘেন্নাথুতুভালোবাসা , তারও শরীর জাগে , ভেঙে যায় আজন্মলালিত সব গাণিতিক সূত্র , আর খুব জ্বর এসে যায় …
ভাবি , প্রণামমুদ্রায় রেখে দেব শারীরিক আরতিসমূহ , একদিন কেউ এসে গ্রহণ করবে এই সব ফুলপাতাজল …
আহা , শরীর ভাঙতে থাকে তুমুল অগ্রহণে …
আনখশির মৃত্যুর আগ্রাসন নিয়ে আসে একেকটা সকাল
পাঁচ ۔
সন্ধ্যে নামার আগে যার নাম গোপন রেখেছিলাম , বৃষ্টি নেমে এলে তাকে নিবিড় নামে ডাকি । সে আমায় গান শেখাবে বলে মিঞা কি মল্লারে বাজে । তালুতে বৃষ্টিবিন্দু রাখে । খোলাচুলে মেঘমেঘ গন্ধ ভেসে আসে ।
একদিন বিষাদ নামে ডাকতে চেয়েছিলুম তাকে । একদিন নদী নামে । সে মেঘভাঙা রোদ্দুর হয়ে গিয়েছিলো ।
বাইশ বছর পরে কফি হাউসের দরোজায় বৃষ্টি নামলো । ভিজতে ভিজতে অপেক্ষা আমার পিঠে হাত রাখে । প্রাচীন ইতিহাসের নকশা ভেঙে ভেঙে মহেঞ্জোদাঢ়োর সুবর্ণরমণী আমাতে দৃষ্টি পাতে …
ছয় ۔
এই হাতে বিষাদ মেখেছি
চন্দনগন্ধের বনে
রেখে এসেছি সমস্ত যাপিত শীতকার
গ্রহণ লাগা চাঁদই কেবল জানে বিষাদ কেন গানের জন্ম দেয়
সাত ۔
মগ্নতার প্রান্তে মুখ রাখি। ভাসনপ্রবণ। ছায়া।
জলের গভীরে গান। মায়া।
অশ্বত্থের তরুণী পাতাটি। বাণিজ্য জানেনা। ভেসে যায়। দূরে।
আমিও ভাসিতে চাই। সুরে।
বৃদ্ধতার গল্পেরা জমে। ছুঁয়ে থাকে। ভীড় করে।
তবু তুমি। ভিতরের ঘরে …