
প্রত্যূষা সরকারের কবিতা
ক ||
সংখ্যাতত্ত্ব ও কালপুরুষ
১|
আশ্চর্য অন্ধকার!
নিরুদ্দেশ বৃষ্টির লোভ…
কোনও রকম ফরেন্সিক টেস্ট ছাড়াই
রক্তের মেধা সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য তৈরি।
যে কোনও সম্ভাবনার মধ্যেই
আত্মতৃপ্তির বীজ লুকিয়ে থাকে
স্থিতাবস্থায় যৌনতার বিকেন্দ্রীকরণ
২|
বিষন্নতার মধ্যে থাকে সংক্রমণের গন্ধ
অভ্যাসের মধ্যে বিষন্নতার
বিকলাঙ্গ ইচ্ছের মধ্যেও প্রেম থাকে
অভ্যাসের মধ্যে বিশুদ্ধ প্রজেক্ট
এর বেশি আমার জানা নেই।
চোখের নিচে বিলীন স্বপ্নমুখ…
৩|
ইলিউশন একটা নিখাদ জ্বর
সম্পর্ক প্রাতঃভ্রমণ সেরে এলে
শুভেচ্ছারা দুঃখতিথি নির্মাণ করে
বালিশের নিচে হিমায়িত হরোস্কোপ…
ডেস্টিনেশন জানার আগেই একটা অহংকারী জবা ফুল
আলোর কাছে এসে নাম বদলে নিলো
আশ্চর্য হিবিসকাস!
আশ্চর্য ছায়াযুদ্ধ সংকেত!
খ||
আজকাল সহবত শিখছি
১|
এ’ সব কিছুর পর মোমদানি শূন্য, নেমপ্লেটে নিখুঁত অন্ধকার। আমি ছেড়ে আসা থেকে ফেলে আসায় বিশ্বাস করি বেশি। কপাল চিরে চরৈবেতি ঘুম।
ইদানিং ট্রফিকে অদৃশ্যদের ভিড়। ইদানিং ভাতের থালায় পুরস্কারের গন্ধ। ডাকনাম শুনতে শুনতে কয়েকটা বিরতি নেবো ভাবি। সময় সময়ের বুলি আওড়ায়, ব্যর্থতা জীবনের… ক্লাব ফেরৎ মাইকটা দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা মেরে সংস্কৃতির ধোঁয়া ওড়ায়। আঃ! এই তো, জিনে কা মাজা যার আলটিমেট ডেস্টিনেশন গাঁদা ফুলে পরিপাটি খাট। আর ডেসটিনি? সেখানে বাল্মীকির প্রফেসি সাপলুডো খেলে!
আমরা চমৎকারের ওপর দাঁড়িয়ে। এখানে কমিক-রিলিফ চন্দ্রবিন্দু থেকে চাঁদ কেড়ে আনে। বোকারা তপস্যা করে, বিপরীতে শিকারি হায়না… সমস্তটা চেটেপুটে গেলার ধান্দা শুধু।
মোমবাতি নিচে নেমে আসছে, গলতে গলতে একদম তলানিতে
এরপর একটা প্রচণ্ড ভাতঘুম। তারপর শিল্পীও মানুষ হয়ে উঠবে।
২|.
খুব কাছাকাছি থাকলে যন্ত্রণা ভাঙে। উবু হয়ে বসে শূন্যতা। আমরা ছাড়া ছাড়া মেঘের মতো ভেসে বেড়াই… বাইরে থেকে সম্পূর্ণ জোটবদ্ধ।
সমুদ্র কিলবিল করে ওঠে। বাসা ফেরৎ মুগ্ধতা ট্রামলাইন চিরে বিপ্লব নিয়ে আসে। এক হাতে পতাকা, আর এক হাতে স্বাধীনতার দাবি।
আমরা ভালোবাসবো ভেবেও মেঘ হয়ে যাই… ভেতরে দূরত্ব গভীরতা বিছিয়ে নেয় বেশ।
৩|
সোজাসাপ্টা অনুভবে তোমার জন্য দায় থাকে না। হঠাৎ হঠাৎ নিজের সঙ্গে আড়ি, আবার ভাবও করে নেওয়া যায়। সম্পর্ক হোক বা না হোক, ভালোবাসা বড় বাধ্য, বড্ড অভিমানী, গোছানোর আগেই ওলটপালট হয়ে যায়।
এভাবেই জীবন খুঁজতে গিয়ে মনে পড়েছে অনেক কিছু… মনে হয়েছে অল্প। জন্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি অনিয়ন্ত্রিত, স্বপ্নের মতো রমরমা, পরিসরে আরও অনেকটা বড়। ভাবার সময় পেয়েছি একটুখানি।
নিজেকে মানুষ হিসেবে উদযাপন করতে গিয়ে প্রেমিক বলে উদযাপন করা হয়নি আর… আসলে, সময় ঘড়ির জন্য আটকায় না, ব্যাটারির দাম বেড়ে যায়।
৪|
একটা বিস্ফোরণ… বিপদসীমা থেকে আর একটু ওপরে। বিপদ তো আর বলে কয়ে আসে না! তুমি একে নক্সা বলে ধরেছিলে। সমস্তটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাগালে ছিলো দু চারটে মাছের কাঁটা, বাসি ভাত। তুমি ছাড়া এঁটোরাও বারান্দা চেনে না। আমি ফেলে আসি, পাঁচটা কাক আর দুটো বেড়াল… ভরসা আছে, ভরসা করা ভালো!
এদিকে, হস্তরেখা বলছে, আগামীকাল কেতুর দিন, নির্বাচিত দোষ আমার। ভাগ্য থেকে স্বাধীনতা ছেঁটে ফেলার পর পুরুষকে বাঘ আর মেয়েমানুষকে বাঘের মাসি হয়ে যেতে হয়। আমি তার দেখি, এখানেও কাঁটা আছে, জবরদস্ত বর্ডার। সূক্ষ্মতা বুঝলে নো ম্যানস্ ল্যান্ডে চড়ুইভাতি হবে, সাপিলা ডান্স হবে, চুপিচুপি নেশা হবে… আগুন নিভিয়ে নারী হবো আবার। বিপদ বাড়বে। ধূলিসাৎ বলিরেখা! মুচড়ে ফেলবো ‘না’ নামের শব্দ। অভিনয় শেষে অভিধান শব্দশূন্য। ভোর হতে না হতে বিদ্যুৎ চারপাশ…
তোমাকে তো ধন্যবাদ দিইনি কখনও, অজস্র অজুহাত লুকিয়েছো পকেটে। এখনও বুকের গন্ধটা স্পষ্ট। একটা বিষাক্ত ঘোর, অবিকল আয়নার মতো। এখানে আমিই পুরুষ। লিঙ্গের কাছে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার পুরুষ কোনওদিন পায়নি…
গ||
আদিম জানলা ও সমুদ্র পার্বণ
১|
যে সূর্যদয়টা পিছিয়ে গেছে অব্যবহৃত সৈকতে
মাটি পেরিয়ে বালি ছুঁতে হয় অধরা পূর্ণিমায়।
ইচ্ছেবৃত্ত তলিয়ে যায়
ঢুকে পড়ে মৃত জলজ খোলস…
এরপর হাতসাফাইয়ের পালা
ব্যারোমিটারে আবরণহীন অধ্যায়
ম্যাপ-বইতে শ্রাবণ লেগে গেলে
দূরত্বও শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে।
২
হাওয়া বদলের বাইরে একটা ব্র্যান্ডেড পরিকাঠামো থাকে। ফিতে কাটা ফ্যাসফ্যাসে শৈশব পিছিয়ে যায় ছিটকে পড়া সূর্যের খোঁজে। রংমশালে ম্যাচিওর ধ্রুবতারা… ‘মানুষ সমুদ্র, সমুদ্র মানুষ’! বোল্ডারে আটকে কালসিটে মধ্যবয়স। চাপ দেওয়া মাত্র চকচকে নালিশঘর…
না-এর দরজায় শাঁখ বাজে। স্বপ্নেরা বেমালুম নিজেদের সহজ করে নেয়।
পঞ্জিকায় আঙুল রাখলে ঢেউও বর্ণবিদ্বেষী, ঢেউও নিঃস্ব বালিয়াড়ি…
৩|
এরকম নাছোড় চুমুর পর বিছানা চিনতে নেই
শব্দেরা বালিশ গুছিয়ে রাখে
ভেতরে তীব্র ছটফট
আকাশ থেকে আংশিক আগুন কেড়ে আনি
এখনও পর্যন্ত যতগুলো অধ্যায় পড়লাম
পুরুষ সেখানে কেড়ে নিতে জেনেছে শুধু
ছুটির ঘন্টায় ফোঁটা ফোঁটা নুন-আদর
মিশে আছে… লেগে আছে গত রাতের এঁটো বাসনে
আমরা চারিদিক শূন্য করেছি
শূন্যের মধ্যে নামতা পড়েছে বিপ্লব
অতএব বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না
গর্জনশীল চল্লিশায় আত্মবিশ্বাস নামে
একজন মহাপুরুষ বাস করেন
প্রত্যুষার কবিতা দুচোখে ভোর এনে দিল । খুব সুন্দর ।