দীপ শেখর চক্রবর্তীর কবিতা
বিচ্ছেদ, একটা জানলা
১
সমস্ত না পাওয়ার মাঝে তুমি তার কথা শোনো
বলেছিল সে,পার হয়ে যাবে সমস্ত অপমান,অভিমান,বেদনা অবশেষে ভালোবাসা
শুধু সৌন্দর্য রয়ে যাবে
যে দুজন সূর্যের আলো নিভিয়ে এসে বসেছিল অন্ধকারে
তাদের ছায়াকে বিশ্বাস করে যেমন একটি পাতা
গাছ থেকে লাফিয়ে পড়লো অনন্তে
ছায়া বড় হচ্ছে,ধীরে ধীরে
অথচ কোনকিছুই সম্পূর্ণ নয়,ভাবতে ভয় লাগে তোমার
সৌন্দর্য রয়ে যায় অথচ কি কঠিন তার কাছেও ফিরে যাওয়া
একটা বাঁকও ভুল হয়ে যায় না
বিদ্যুৎ চমকে ওঠে,দেখা যায় রাশি রাশি ফেলে আসা মুখ
জানি তোমরা প্রস্তুত হচ্ছ এবারে শব্দের জন্য,কানে হাত চেপে
এই অবসরে পাতাটির গায়ে বিকেলের রোদ নিঃশব্দে লিখে রাখে এ সামান্য জিজ্ঞাসা
সৌন্দর্য থেকে যায়
অথচ গভীর ঝড়ের রাতে জেগে উঠে যদি না পাও একটি ধরার মতো উষ্ণ হাত
এ অভাব তুমি কীভাবে মেটাবে?
২
ঝড়বৃষ্টি এলে দাঁড়াই একটা ছাদের নীচে
তারপর আবার চলা
এখনও বৃষ্টি থামেনি বলে তুমি হাত টেনে ধরো,এগোতে চাওনা
এভাবে ছাদের নীচে রয়ে গেলে কত কত তুমি
আর বাইরে বেরিয়েই দু’ফোঁটা জল আমার মাথার ওপর পড়লো
এতটুকু জলেই মাঝে মাঝে এক জন্মের মতো স্নান হয়ে যায়
হাওয়া শুকনো কাপড় হাতে মুছিয়ে দেয় তোমার সমস্ত শরীর
ঝড়বৃষ্টি এলেই মনে মনে টের পাই
কাউকে কখনওই পুরোটা দেওয়া হয়ে ওঠেনা
শুধু ছাদের নীচে দাঁড়িয়ে আরও কিছুক্ষণ হাত বাড়িয়ে দেখা বৃষ্টি ধরে আসছে আরও
এদিকে
আমাদের ভিজে থাকা হাত আরও আরও বেশি পিছল হয়ে গেছে।
৩
ভালোবাসা ছুঁতে এলে এখনও গা শিরশির করে ওঠে তোমার
অথচ নিজেকে নির্বাসিত করেছো তুমি
লেখার দুটি হাত দিয়ে নিংড়ে মেলে এসেছো নিজের বুক রোদে,উঠোনে
তবু ছেড়ে আসা কঠিন,রক্তের দু ফোঁটায় ঠিক মাটি ভিজে থাকে
খালি ভিক্ষাপাত্রের ওপরে এক ফোঁটা বৃষ্টির জল যতটা পূর্ণতা ততটাই একটা না বলা থেকে যায়
তার বুকের গন্ধ এসে একে একে বন্ধ করে দিয়েছে সমস্ত জানলা
তবুও তোমার নির্বাসন জানে ছেড়ে যাওয়া কঠিন
অথচ কেমন অনায়াসে তুমি পেরেছিলে সমস্ত ছেড়ে যেতে
অন্ধকারে শুধু তার ফিরে যাওয়া মুখটুকু মনে আসে
আর বুকের গভীরে শীতল জেগে থাকে এই বোধ
কখনও পেছন ফেরোনি তুমি ,হাওয়ার মতন
তার শরীরের ভেতরে ডাল দোলে,পাতা নড়ে অথচ তোমার চোখ
সমস্ত বিস্ময় পার করে গেছে।
৪
গাছের পাতা খসার ওই নৈঃশব্দ্যটাই সবথেকে নিষ্ঠুর
তারপর সমস্ত দিন শুধু শুকনো পাতা কোথায় যে চলে যায় বাতাসের সাথে
কেউ দুঃখ পায়না
বাতাসকে তুমি কোন অভিযোগ করতে পারবে না এই বিষয়ে
বরং পাখিদের সতর্ক করো
তাদের বাসার দিকে ধীর পায়ে উঠে গেলো একটা বেড়াল
রোদে তার কোন ছায়াই পড়লো না।
একটা মাঠের সামনে অহেতুক কিছুক্ষণ দাঁড়ানো এই কি কম?
ওই তো কেবল জানে সকলে হাত থেকে ফেলে দিয়েছিল আমাকে
আমি নিজেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে এনেছিলাম
মাঠের সামনে কিছুক্ষণ অহেতুক দাঁড়ানো মানে
একটা ক্লান্ত দুপুর তোমার বুকের নীচে শুয়ে থাকা
আর জানলা দিয়ে একটা বোবা গাছ উঁকি দিয়ে দেখে
লজ্জায় চোখ বুজলো
বসন্তের হাওয়া,রোদ এখন চুপি চুপি জানতে চাইবে তার কাছে
কী দেখলে কী দেখলে বলো?
যাদের বলার ভাষা নেই তাদের কয়েকটা পাতা বাতাসে দোলার আগে
ঠিক খসে পড়ে
ধীরে ধীরে তাদের ছায়া বড় হচ্ছে,বড় হচ্ছে,আরও আরও শান্ত হয়ে উঠছে আমার মন
একটি পিঁপড়ের ডুবন্ত জীবনে সে পাতা এবার নৌকোর ভূমিকা নেবে।
বিচ্ছেদ একটা জানলা খুলে দিয়েছে
এবার আমরা অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকবো জানলা থেকে,পাশাপাশি বসে