সরোজ দরবারের গল্প
মৃতের পিছনে ঘুরছে অনিমেষ
মৃতের পিছু পিছু ছুটে চলেছে অনিমেষ। মৃতেরা কোথায় যায়! কেউ ঠিক জানে না। শ্মশানে কিংবা কোনও একটা গোরস্থানে। তবে তার আগে মৃতেরা শহর ঘোরে। আর সেই সময় তার পিছু পিছু ঘোরে জীবিতরা। যেমন এখন ঘুরছে অনিমেষ।
মৃত যে ঘুরছে মৃত তা জানে না। জীবিতরা তা খেয়াল করে একটানা হয়ে চলা অস্বস্তিকর যান্ত্রিক একটা শব্দে। শব্দটা সচকিত করছে আশপাশকে। সকলে চমকে তাকাচ্ছে। তার পর মৃতের উদ্দেশে প্রণাম করছে। অনিমেষ খেয়াল করে দেখেছে, জীবিতের থেকেও মানুষ মৃতকে প্রণাম করে বেশি। মৃত যে অজানায় চলেছে, সেই জগতের প্রতি একটা ভয়মিশ্রিত সম্ভ্রম থাকে জীবিতের। তাই বুঝি এত প্রণাম পায় মৃত। এমনটা কোথাও পড়েছিল, তবে ঠিক কোথায় তা আর মনে করতে পারে না অনিমেষ। তার অবশ্য বরাবর মনে হয়, জীবৎকালেই কাউকে সম্মান জানানোটা জরুরি। এই একটা জিনিসের জন্য মানুষ আজন্ম কাঙাল। টাকা-পয়সা, নাম-ধাম, ভালোবাসা– সবাইকে টেক্কা দেওয়ার মতোই বটে বস্তুটি। সম্মান! মানুষ সম্মান চায়। তার পাশের মানুষের থেকে। পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, ঊর্ধ্বতন, নিম্নতন সকলের কাছে এই একটা জিনিসই তার কাঙ্ক্ষিত। পায় না বলেই তার যত অশান্তি। তখন ক্ষমতা কবজা করে সে সম্মান আদায়ের চেষ্টা করে। ক্ষমতার লোভে রাজনীতিতে নামে। যত রাজনীতিতে জড়ায়, রাজনীতি তত তার সম্মানহরণ করে। ক্রমশ উলঙ্গ হয়ে যেতে যেতে মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে। সে তখন অন্যের সম্মান নিয়ে টানাটানি করে। এই সম্মান টানাটানির খেলাটা আবার পাঁচজন লোকে ভিড় করে দেখতে ভারি ভালবাসে। অনেকটা সার্কাসের মতো।
একজন উলঙ্গ নির্বিকার মানুষকে প্রায়ই দেখত অনিমেষ। সে এই খেলায় ওস্তাদ। লোকটার ধোপদুরস্ত পোশাক। গা থেকে ভুরভুর করে গন্ধ বেরোয়। দামি সেন্ট। লোকটা চোস্ত কথা বলে। দেখতে প্রায় ভদ্রলোকের মতোই। অথচ এমন উলঙ্গ মানুষ চট করে দেখা যায় না। কেননা লোকটা তার সম্মান বাঁধা রেখে এক কালে দশ তলা বাড়ি হাঁকিয়েছিল। তিনটে গাড়ি, লোকলস্কর, পাইক-পেয়াদা। কী ছিল না! লোকটা ভেবেছিল, জীবনটা একটা তুড়ির মতো। কাটিয়ে দিতে জানলেই কেটে যায়। তবে কিনা অতি বড় তুড়িবাজের হাতও এক-এক সময় ফসকে যায়। তুড়ি আর তখন বাজে না। লোকটারও তা-ই হল। সকলের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, লোকটার নিজস্ব সম্মান বলে আর কিছু নেই। এমন একটা লোককে পাঁচজনের মধ্যে কি রাখা যায়! তা নিয়ে আইন-আদালত বসল। তারপর সাব্যস্ত হল, লোকটা কিছুদিন জেলে যাক। কেননা সম্মান বাঁধা দেওয়া তো কোনও কাজের কথা নয়। এই রকম সাজা দেখে আর পাঁচজন লোক হাড়ে হাড়ে বুঝবে যে সম্মান কেমন কিমতি চিজ্!
শাস্তি পেয়েই বরং লোকটা খানিকটা সম্মান ফিরে পেল। যখন তার ঘানি টানার মেয়াদ ফুরিয়ে এল, লোকটা বলল, আমি আমার সম্মান খুইয়েছিলাম, সেই জন্য অনুতপ্ত। পাবলিক বলল, আহা রে! লোকটা বলল, আমি আমার সম্মান ফিরে পেতে চাই। পাবলিক বলল, বাহা রে! তবে মানুষ তাকে সমাজ থেকে একেবারে সরিয়ে রাখতে পারল না। লোকটা গা ঠেলাঠেলি করে আবার মানুষের মধ্যে ভিড়ে গেল। মানুষও তেমন গা করল না।
এদিকে লোকটা তো মহা ধড়িবাজ। অতএব সে আবার তার সম্মান বাঁধা দিল, আর দিল তো দিল সেই পুরনো মহাজনের কাছেই। মহাজন তাকে একটা সম্মানজনক জুতো উপহার দেয়, যাতে কিছু লোক অন্তত তাকে খাতির করে। লোকটা দিব্যি পাবলিকের থেকে এক ধাপ উপরে উঠে মান্যিগণ্যি হয়ে উঠল। পাবলিক তাকে খানিক সমীহই করে চলে। হাজার হলেও পায়ে মহাজনের দেওয়া জুতো। আর কে না জানে মহাজনের বিরাট ক্ষমতা!
এই সুযোগে লোকটা সবার সম্মান নিয়ে টানাটানি করে। সেইটেই নাকি তার কাজ। মহাজনের নির্দেশ। লোকটা ভেবেছিল, পাবলিক কি এত সহজে তার খেলা দেখবে? তবে কী আশ্চর্য! দেখা গেল ধড়িবাজের খেলা দেখতে কিছু লোকে প্রথম দিন থেকেই জুটে গেল। তারা হাততালি দেয় সোল্লাসে। লোকটা পরদিন দ্বিগুণ উৎসাহে অন্যের সম্মানহানি করে। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেয় না যে, তার নিজেরই কোনও সম্মান এখন আর নেই। বস্তুত সে এক উলঙ্গ মানুষ। খুব কাছ থেকে এই মানুষটিকে দেখত অনিমেষ। মাঝেমধ্যে লোকটা নাকি একা ঘরে ভিতর বসে খুব কাঁদত। কেমন সে কান্না, কেউ অবশ্য জানে না। কানাঘুষো শোনা গেছে মাত্র। ঘর থেকে বেরিয়ে আবার সে শুরু করত তার সম্মানহানির খেল। লোকে মজা দেখত। মজা দেখতে দেখতে, তাদের মনেই থাকত না যে, নিজেদের সম্মানও তারা মাটিতে মেশাচ্ছে। ন্যূনতম সম্মান থাকলে কি প্রতিদিন কেউ চেয়ে চেয়ে দেখে অন্যের বস্ত্রহরণ!
অনিমেষ জানে, এই লোকটি এবং তার খেল দেখা প্রতিটি লোক মৃত্যুর পর পাবলিকের প্রণাম পাবে। মানুষ জেনে বা না-জেনেই মৃতের প্রতি খানিক সহৃদয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এই মুহূর্তে মৃতের অনুগমন আর এক দণ্ড সহ্য হল না অনিমেষের। সে নেমে পড়তে চায় তার ভাড়া-করা গাড়ি থেকে। গাড়ির ঠান্ডাটা যেন মর্গের মতো লাগে। সে যেন সেখান থেকে বেরিয়ে বাঁচতে চায় এরকম গলায় বলে, এই থামো থামো। আমি মড়ার পিছু পিছু ঘুরব না।
চালক বোধহয় সবটা ভালোমতো শুনতে পান না। বলেন, সে কি ডেস্টিনেশন তো অন্য দেখাচ্ছে, এখানেই নেমে যাবেন? অনিমেষ প্রশ্ন করে, আমার ডেস্টিনেশন অন্য কেউ জানে নাকি! – বলে দরজা খুলে নেমে এসে ফুটপাথে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দম নেয় প্রাণ ভরে।
মৃত এবং জীবিতের শহর ততক্ষণে তাকে ফেলে রেখেই যেন অনেকটা এগিয়ে গেছে। তাতে সামান্য স্বস্তি পায় অনিমেষ।
২।
অস্বস্তিটা ইদানীং বেড়েই চলেছে অনিমেষের। কিছুতেই যেন রেহাই নেই। মৃতেরা সর্বক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে। অনিমেষ পালাতে চায়। খানিকক্ষণ পালাতে পারেও বটে। তার পর হঠাৎ খেয়াল পড়লে দেখে, যে, কোনও একজন মৃত তার পাশটিতে বসে আছে। সে আঁতকে ওঠে।
এই চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই বয়সে তার জীবনে মৃতের সংখ্যা বেশি নয়। বন্ধু-বান্ধবরা সকলেই বহাল তবিয়তে জীবিত। আত্মীয়-পরিজনরাও। যাঁরা চলে গিয়েছেন, তাঁদের যাওয়ারই কথা। গোড়ার দিকে কিছুদিন তাঁদের জন্য মনকেমন করে। তার পর কালের নিয়মে ভুলে যায়। উত্তরসূরির স্মৃতিতে মানুষের আয়ু আর কতটুকুই বা! তবু এই বেঁচে থাকা নিয়ে কী লাঠালাঠি কাণ্ডই না করে মানুষ!
– এত সংখ্যক মৃত আসছে কোথা থেকে হে!
– মৃতদের কস্মিনকালে জণগণনা হয়েছিল নাকি!
– মানে বলতে চাইছ এত মৃত আগেও ছিল?
– হতে পারে, হয়তো তারা আগে এমন করে আসত না।
– এখন আসে কেন?
– জীবন ধুঁকছে। মনে হয় তারা না এসে পারে না।
এই প্রশ্নোত্তরে আসলে দ্বিতীয় কেউ থাকে না। অনিমেষ নিজেই নিজের সঙ্গে একহাত খেলে নেয়। আঁশ ছাড়িয়ে দেখে নিতে চায় কেন সে সর্বক্ষণ মৃতের পিছু-পিছু ঘুরছে, অথবা, মৃত তার সঙ্গ ছাড়ছে না। এবং শেষমেশ সে বুঝতে পারে তার আশাপাশ থেকে বেঁচে-থাকা ক্রমশ অপসৃত হয়েছে। কেন যে এমনটা হয়েছে কূলকিনারা করে উঠতে পারে না। এমনটা কি আদৌ হওয়ার কথা ছিল!
সেই লোকটার কথা আবার মনে পড়ে অনিমেষের। উলঙ্গ সেই লোকটা যে অন্যের সম্মানহানি করতে ভালোবাসত। একদিন তাকে কেউ জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি যে এই জঘন্য খেলা খেলছ, তোমার তো নরকেও জায়গা হবে না। লোকটা নাকি ভারি আশ্চর্য হয়ে বলেছিল, সে কি আমি এখন নরকে নেই বুঝি! প্রশ্নকর্তা তখন নিজেই যারপরনাই হকচকিয়ে গিয়ে বলেছিল, তাহলে স্বর্গ কোনটা? ধড়িবাজ লোকটা নিষ্পাপ হাসি হেসে বলেছিল, যতদিন আমাকে তোমরা মনে রাখবে, সেই মেয়াদটুকুই আমার নিজস্ব স্বর্গ।
প্রশ্নকর্তা এর পর আর কোনও প্রশ্ন করার সাহস পাননি। কেননা, নরক-ভাবনা তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। লোকটা যা বলছে, তা-ই যদি সত্যি হয়, তাহলে স্বয়ং প্রশ্নকর্তার এবং বাকি সকলের এই নরকদর্শন হচ্ছে কেন? অধর্মের সঙ্গে তাহলে সকলেই জড়িত। ন্যায়-নীতির তোয়াক্কা তাহলে কেউই করেনি! সেইসব উপেক্ষাই নরক হয়ে ফিরে এসেছে। প্রশ্ন করো, প্রশ্ন করো, প্রশ্ন করো… প্রশ্নকর্তা নিজেই নিজেকে উপদেশ দিতে থাকে। বলে, খুঁজে বের করো, কোথায় অধর্ম? অন্যে অধর্ম করছে কি-না তাই নিয়ে তো মস্ত বটগাছ খাড়া করে দেওয়া যায়, তবে নিজের বেলা! সেখানে অন্তত একখানা চারা গাছ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে তো! যদি তা না হয়, তবে অধর্মের পুঁজি কেবলই বাড়বে, আর নরকদর্শন শুধু নরকই দর্শন করতে হবে।
লোকটা ঠিকই বলেছিল, এ আসলে নরক-ই। কিন্তু কেউ বলছে না যে, এ নরকে রবে কে! একবার ঠিক হয়েছিল, কপট ধড়িবাজ আত্মপ্রচারকামী লোকটা যখন অন্যের কাছা নিয়ে টানাটানি করবে, তখন তা লাইভ দেখানো হবে। তথ্য বলছে, রীতিমতো নামী বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, অন্যের কাছা খোলা হাঁ করে দেখেছে প্রায় সব মানুষ। যে দেখেনি, সে আসলে তখন কাছা খুলছিল। এখানে খেলুড়ে শব্দটা মোটেও কাছা-খোলা নয়। তা হল অন্য। অর্থাৎ অন্যের কাছা খুললে, অন্য গোষ্ঠীর মহিলাদের শাড়ি খুললে, অন্য সম্প্রদায়ের ঘরে মাংস থাকার অভিযোগে মিটিয়ে মারলে, অন্য দলের লোককে পুড়িয়ে মাড়লে, অন্যের পিছনে বোমা ফাটালে, অন্যের ঘরে আগুন দিলে, অন্যের ভিটেমাটি চাঁটি হলে, অন্যের ছেলে ডেঙ্গি কিংবা র্যাগিং-এ মরলে, অন্যে কপর্দকশূন্য হয়ে গেলে– বাকি অন্যেরা তা গোগ্রাসে গেলে। কয়েকটা জলসত্র খোলা আছে, যারা দিনভর মানুষকে জানাতে থাকে, শোনো, এই এক্ষুনি অন্যের উপর এই অত্যাচার করা হয়ে গেল, শুনলে তো? মানুষ, ধোপধুরস্ত মানুষ, সেন্ট-মাখা মানুষ, দামি গ্যাজেটস হাতে নিয়ে ঘোরা আধুনিক মানুষ, গাড়িতে-মেট্রোয় যেতে যেতে সেই অত্যাচারের কাহিনি শোনে। বাচ্চারা গল্প শোনার শেষে যেমন করে বলে, তেমন করেই তারা বলতে থাকে, তার পর? আরও চাই, এমন গল্প আরই চাই, মোর মোর…। সঙ্গে সঙ্গে কয়েক লক্ষ ভিডিয়ো অন্যের হেনস্তার গল্প নিয়ে তাদের সামনে হাজির হয়। তাতে কারোরই কোনও হেলদোল হয় না। কেননা সবটাই তো হচ্ছে অন্যের সঙ্গে। আস্ত একটা নরকে যেন সকলেই চিৎকার করছে, কিন্তু কেউ কারও আর্তনাদে কান দিচ্ছে না।
নরকদর্শন, ধড়িবাজ লোকটা বলেছিল বটে। নরক ছাড়া এ আর কী! সেই কথা মনে পড়তেই অনিমেষ আন্দাজ করতে পারে, লোকটা তো তার মানে রক্তবীজ কিংবা ডাঃ হাজরা হয়ে গিয়েছে। অসংখ্য, অগণন। প্রত্যেকের আত্মার ভিতরেই লোকটা যেন সেঁধিয়ে বসে আছে। একজনকে নাহয় গালাগাল করা যায়, বাকিদের? কে আর হৃদয় খুঁড়ে নিজেকে খিস্তি করতে ভালোবাসে!
অতএব, এই মুহূর্তে আসল ধড়িবাজটা যে কে, তাকে যেন আর ঠিক চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
৩)
মৃতের সঙ্গে এই সহবাস ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠছে। এর থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজে বের করতেই হবে। তবে আজকাল কোনও রাস্তাই আর মনে থাকতে চায় না অনিমেষের।
এককালে পথঘাট সব মনে থাকত। চলা-ফেরা সহজ ছিল। একটা স্থির গন্তব্যও ছিল। কোন পথ ধরে যে সেখানে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে কোনও দ্বিধা ছিল না। অটুট বিশ্বাসে হাঁটতে শুরু করে দিত অনিমেষ। ইদানীং কী যে হয়েছে, রাস্তা আর চেনাই যায় না। গন্তব্যের কথাও মনে থাকে না। গাড়িতে উঠলে গাড়িই পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে। দোকানে গেলে দোকানই জিনিস কিনিয়ে দেয়। কোনও সিদ্ধান্তই আজকাল আর সেভাবে নিতে হয় না। সব নেওয়াই থাকে। বাকিটা কাঠপুতুলের গল্প। অনিমেষ ক্লান্ত। সেও তো বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে জীবনে। তার সমর্থন, বিশ্বাস। তার বোধ-বিচার-বিবেচনা। তার নির্বাচন। আজ আর সে সব কোনও কিছুকেই খুঁজে পায় না। মনে হয়, যা ছিল সব মরে গেছে। ভুল কিছু হয়েছিল নিশ্চই। অনিমেষ দেখেও দেখেনি। উপেক্ষা করেছিল। উপেক্ষার ভুল পাথর হয়ে অনিমেষের সব কিছুকেই মেরে ফেলেছে।
– তাহলে মৃতদের কি এখন চেনা যাচ্ছে?
– বিলকুল যাচ্ছে।
– তাদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে?
– যাচ্ছে।
– মনে হচ্ছে কি যে সেই মৃতদের থেকে পালাই?
– খুব মনে হচ্ছে।
– এই কি তবে নরক নয়?
– এখন তাই-ই মনে হচ্ছে।
– এ নরক কার তৈরি?
– যে দর্শন করছে তার-ই।
– তাহলে শান্তি কীসে?
– কারও দোষ দেখো না, দোষ দেখবে নিজের।
– আত্মদর্শন।
– যদি তা নরক হয় তবে, নরকদর্শন।
– কিন্তু কথাটা যেন শোনা শোনা লাগছে!
– কখনও মন থেকে মেনেছ?
– মনে তো হয় না।
– যদি বলি কথাখানা মা সারদার?
– আবার ধর্ম! তায় ‘মা’!
– সমস্যা কী তাতে?
– লাইনটা পুরুষতান্ত্রিক, হিঁদুয়ানির দিকে চলে যাচ্ছে না?
– তারও আগে রাজনৈতিক মনে হচ্ছে না কি?
– রাজনৈতিক! কোন পার্টির লাইন?
– পার্টি থাকতেই হবে?
– না থাকলে চলবে কেন!
– পার্টি?
– পার্টি।
যথারীতি, এবারের প্রশ্নোত্তরেও অনিমেষ ছাড়া দ্বিতীয় কেউ ছিল না। এই মোকাবিলা করতে করতে সে ক্রমশ জেনে যাবে, স্বর্গের মতো নরকদর্শনও দারুণ ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক। তবে তা জানতে একটু সময় লাগবে, এই যা!