শিবালোক দাস-এর কবিতাগুচ্ছ
ঈর্ষা
ভগবান আমার পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন।
চোখের মধ্যে তখন আফটারশক…
মাঝে কোনো দেওয়াল নেই।
এখন এই দাম্ভিক মাথায় আসে না কোনো কবিতা,
হঠাৎ ধাঁধার মধ্যে মুখ রেখে রঙ শুষে নিতে
নিতে আমি ওগরাই আগুন মেশানো থুতু,
ভগবান তখনও আমার পদশব্দ গোনেন।
হেড টু হেড কলিশন, আঘাতহীন,
আমাদের মধ্যে কোনো ঈর্ষা নেই।
চোখে ওম ! কানে ওম ! ওম শান্তি !
ব্রহ্মমুহূর্তে আমার শরীর জেগে ওঠে মৃতাবস্থা থেকে।
শর
আমি আমার ঘরের চারিদিকে
কোনো রেখাপাত করিনি।
বরং দুদণ্ড বসার আগেই যখন
হাত মুচড়ে ওঠে, তখন আমার
দৃষ্টি ঢেকে দেয় কয়েকটি শর।
তাই বলে কি মৃদু ঝংকারে আমি
গান গাইতে পারব না কোনোদিন ?
কেবল হাড়ে হাড়ে, মজ্জায় মজ্জায়
শত কাকের পালক, চুঁয়ে পড়ে না
রক্ত, এ আমার অনতিদূরে দাঁড়িয়ে
থাকা আরেকটি রেখাপাত, যার মধ্যে
পড়ে রয়েছে পোড়া দু মাত্রার কম্পন।
রেখা
রেখা যখন টেনেছ,
তখন আর পায়ে করে
টেনে আনতে বোলো না
শেষ যোগচিহ্ন, তারা অভুক্ত।
কখনো কখনো বিমূর্ত জন্ম
রাস্তায় ছড়িয়ে রাখে রক্ত মাংস,
কার পাপোশে কার লোমশ পা,
বা বুকের মধ্যে কোনো গোপনে সোয়েটার
যেন খুব চায় হাড়ে ভোঁতা হয়ে যাক
চকচক করে ওঠা দংশন।
জলের মধ্যে অন্ধকার হয়ে যাওয়া
গ্রাফাইট খুঁজতে গিয়ে অনেক অনেক
দূর গড়িয়ে গেলে দ্বিতীয়বার ভাবি না।
বরং আঁচড়ে আমার চোখ খুলে যায়
ফাঁদে, আঙুলে রাখি বহু রূপ।
বলো, রেখা মুছে আবার ছড়াবে না তো ধুলো ?
পরাঙ্মুখ
অঙ্গরাগ ছড়িয়ে দিতেই ভেসে ওঠে কাচ,
স্রোতের উপর উঠে দাঁড়াই, নিমজ্জিত হাত,
নম্র কোনো ছাপ নেই, প্রাচীন অভিসম্পাত,
দোর আমার চেপে ধরে কোন নরপিশাচ ?
পরাঙ্মুখ পাঁজরে আমার চোখ গলে যায়,
দশ নখে ছিঁড়ে ফেলি আহুতি নিত্যদিনের,
আকাশে মুখ রাখি, ঠোঁট বোজা স্তন্যঋণের,
বুকে আমার দিগন্তভার। সে চলে যায়।
কত সহজ, কত কঠিন, স্রোতস্বিনী ভেদ।
আঙুল সরিয়ে নিতেই বালিতে নাভিপদ্ম রাখো।
দ্বিধাবোধ নেই পুড়ে যেতে, ছড়ানো আস্তরণে।
চিহ্নহীন তুমি আজও শুষে নিচ্ছ স্বেদ।
যেখানে এখনও পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন স্বর রাখো,
ম্লান হয়ে যেতে নেই সজ্জিত সহমরণে।
রোশনাই
পাথরে আঁচড় মারলে স্তন্যপানের
ঋণ খুঁজে পাবে না আমার।
গলি পেরোলে দুপায়ে ঘষটে যায় দশ দিক,
কত সহজ তুষারপাতের বদলে আমরা চূড়ার
উপর পেতে রাখি পেতে রাখি মাদুর।
আঃ আঙুল ছুঁয়ে দিও না রোশনাইয়ে।
চুম্বনে ছাই হবার আগে দাঁড়াও, মুঠোর
পরে ওড়াও ফুঁ দিয়ে, অগ্নিশিখার দেহে।
উত্তর নেই। দাও তোমার সজ্জিত সম্বোধনে
কিছু গ্রাস, আমি ঘরের ভেতর বিস্মরণ
ভুলিয়ে দিই আমার চোখে।
রোশনাই, তোমার ভেতর প্রণাম রেখো আমার।
অরন্ধন
যুদ্ধবিরতির পর মস্তিষ্কের ধার অনেকটা
কমে গেলে দশমিক ম্লান হয়ে যায়।
ছড়িয়ে থাকা আলো, উড়ে যাওয়া মাছি,
জড়িয়েছ কোনোদিন স্বপ্নেও ?
এক একদিন ভাবতাম, যে খসড়া গতকাল
উধাও হয়ে গেল, তাতে কি লুকিয়েছিল
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বিস্ফোরণ ?
বৃষ্টি নামার পর অনেকক্ষণ আজ হাঁড়ি
চাপেনি। কে জানে গর্তে কোনো ছাই পড়ে
আছে কিনা ! তা হোক, অমসৃণ বালি কিছু
কথা রাখে, হাতে যে পরিমাণ জল ওঠে
তাতে ধরে রাখার দরকার পড়ে শেষ দৃষ্টি।
পঞ্চভূতে বিলীন হলে সেটা না হয় লবণে
পুড়িয়ে দিও ! মরীচিকার কাছে ভ্রুপল্লব
তখনও চুপ থাকবে অদৃশ্য চিহ্নের মতো।