মুক্তিকামী সীতা ও ফুট্‌কির দুই গান <br /> গৌতম চৌধুরী

মুক্তিকামী সীতা ও ফুট্‌কির দুই গান
গৌতম চৌধুরী

আলাপ চলিতেছিল গদ্যে-লিখা কবিতার ধরন-ধারণ লইয়া। আলাপ বলিতে পত্রালাপ। দিনটি বং ১৩৩৯ সালের দেওয়ালির দিন। খড়দহে বসিয়া রবীন্দ্রনাথ তাঁহার স্বভাবসুলভ উপমাপল্লবিত কথ্য ঢঙে ধূর্জটিপ্রসাদকে নানা দিক হইতে কবিতায় গদ্য ব্যবহারের সম্ভাবনাগুলি পরতে পরতে খুলিয়া দেখাইতেছেন। কিছুদিন আগেই প্রকাশিত হইয়া গিয়াছে নতুন কবিতাবহি পুনশ্চ। এই প্রসঙ্গে কবির জোশ তাই বেশ জৈব। পুনশ্চ-এর ভূমিকায় তিনি ঘোষণা দিয়াছেন – ‘অসংকুচিত গদ্যরীতিতে কাব্যের অধিকারকে অনেক দূর বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব এই আমার বিশ্বাস’ (২ আশ্বিন ১৩৩৯)। বর্তমান চিঠিটিতেও বেশ প্রত্যয়ের সাথেই গদ্য-কবিতার সেই জোরের জায়গাটি বিশদ করিতে চাহিতেছেন ঠাকুর। তাঁহার বিবেচনায়, কবিতার ভিতরের দাম্পত্য ‘বাক্‌ এবং অবাক্‌-এর একান্ত মিলনে’। মানবীয় দাম্পত্যের মতোই কবিতার দাম্পত্যেও মাঝে মাঝে দুই পক্ষের মিলনে ‘বিরোধ বাধে, … ছন্দও তখন জোড় মেলাতে পারে না।’ সেখানেই শুরু গদ্যকবিতার পরিসর। যেখানে বিনা-গহনার আটপৌরে সাজই প্রতিদিনের চলনে আনিতে পারে এক নয়া নান্দনিকতা। যাহা জীবনের নানান ‘বেসুর’ বা ‘প্রতিবাদ’ বা ‘বিমিশ্রতা’ সবই ধারণ করিতে পারে। নানা যাপনচর্যার এমন বিমিশ্রণের ফলেই ফুটিয়া উঠে তাহার ‘চারিত্রশক্তি’।
গদ্যকবিতার এই ‘চারিত্রশক্তি’র কথা বুঝাইতে গিয়া, চিঠির বয়ানে ঠাকুর এইবার লইয়া আসিলেন মহাকাব্যের অনুষঙ্গ। প্রথমে কর্ণের কথা। কর্ণ-চরিত্রের জোর যুধিষ্ঠির হইতে ঢের বেশি। তবু এমন ‘শিশুমতি’ পাঠক-শ্রোতার সংখ্যাও কম নয়, যাহারা ‘যুধিষ্ঠিরের কাহিনী শুনে অশ্রুবিগলিত হয়’! উদাহরণটি হইতে বেশ বুঝা যায়, নিতান্ত অভ্যস্ত মমত্ববশেই ‘ছন্দওয়ালা’ কবিতার প্রতি বিপুল পাঠকের অনুরাগ সমর্পিত থাকিলেও, সেই মুহূর্তে যেন নিজের সদ্যরচিত গদ্যে-লিখা কবিতাগুলির উপরেই কবির জমপেশ পক্ষপাত।
কিন্তু যুধিষ্ঠিরের নমুনা দিয়াই কবি দাঁড়ি টানেন নাই। ছন্দে-বাঁধা কবিতার মতো ‘রঙ-ফলানো’ রচনার দিকে পাঠকের পক্ষপাতের কথা বলিতে গিয়া অতঃপর তিনি লইয়া আসিয়াছেন এমনকি রামচন্দ্রেরও প্রসঙ্গ। অবশ্য রামের কথা পাড়িবার আগে ঈষৎ ঠাট্টামিশানো একটি বেকবুলিয়ত (disclaimer) জারি করিয়া রাখিয়াছেন তিনি – ‘রামচন্দ্র নামটার উল্লেখ করলুম না, সে কেবল লোকভয়ে।’ তাই বলিয়া যে-কথাগুলি জানান দিবার, তাহা পেশ করিতে ঠাকুর ইতস্তত করেন নাই। রাখঢাক না-করিয়াই বলিয়াছেন যে, তাঁহার ‘দৃঢ়বিশ্বাস’ আদিকবি বাল্মীকি আসলে ‘রামচন্দ্রকে ভূমিকাপত্তনস্বরূপে খাড়া করেছিলেন’। যাহাতে সেই চরিত্রের ‘অসবর্ণতায়’ লক্ষ্মণ বা এমনকি হনুমানের চরিত্র উজ্জ্বল করিয়া ফুটাইয়া তুলা যায়। মন্তব্যটিতে যেহেতু চরিত্র অঙ্কনের প্রসঙ্গ উঠিয়াছে, তাই অসবর্ণ-শব্দটিকে আমরা হিন্দু জাতিপ্রথার প্রেক্ষিতে আমলে না-লইয়া, ছবিতে রঙ ব্যবহারের আবহেই ঠাহর করিব। সাদা কথায়, লক্ষ্মণ বা হনুমানের তুলনায় বিলকুল আলাদা রঙের পোঁচে বাল্মীকি রামের চরিত্রটি আঁকিয়াছিলেন। কিন্তু কেমন সেই ভিন্নতা? ঠাকুরের বিবেচনায়, রামের ‘সেই একঘেয়ে ভূমিকাটা অত্যন্ত বেশি রঙ-ফলানো চওড়া’। কিন্তু সেই অসঙ্গতির ফলেই, ‘লোকে ঐটের (রাম-চরিত্রের) দিকে তাকিয়ে হায়-হায় করে।’ ঠিক যুধিষ্ঠিরকে দেখিয়া যেমন। পরে, বাল্মীকির রামকে বিনির্মাণ করিলেন ভবভূতি। ‘তিনি রামচন্দ্রের চরিত্রকে অশ্রদ্ধেয় করবার জন্যেই কবিজনোচিত কৌশলে উত্তররামচরিত রচনা করেছিলেন। তিনি সীতাকে দাঁড় করিয়েছেন রামভদ্রের প্রতি প্রবল গঞ্জনারূপে’।
এই ‘অশ্রদ্ধেয়’ শব্দটির সামনে পড়িয়া আমাদের ভবভূতির নাটকটি লইয়া বঙ্কিমের আলোচনার কথা মনে আসিতে পারে। বাল্মীকি এবং ভবভূতি দুইজনের রচনা পাশাপাশি ফেলিয়া তিনি সেখানে দেখাইতে চাহিয়াছেন, ‘রামায়ণের রামচন্দ্রের গর্বিত চিত্তভাব। … ভবভূতির রামচন্দ্র অধিকতর কোমলপ্রকৃতি’। ভবভূতির রামের ‘চরিত্রে বীরলক্ষণ কিছুই নাই। গাম্ভীর্য্যের এবং ধৈর্যের বিশেষ অভাব। তাঁহার অধীরতা দেখিয়া কখন কখন কাপুরুষ বলিয়া ঘৃণা হয়।’ সীতার অপবাদের কথা শুনিয়া সেই রাম মূর্ছা যান, কান্নাকাটি করেন, লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দেন! ‘এইরূপ স্থলে রামায়ণের রামচন্দ্র কি করিয়াছেন? কত কাঁদিয়াছেন? কিছুই না। … স্থিরপ্রতিজ্ঞ হইয়া লক্ষণের প্রতি রাজাজ্ঞা প্রচার করিলেন। “তুমি সীতাকে বনে দিয়া আইস” (উত্তরচরিত, বিবিধ প্রবন্ধ, বঙ্কিমচন্দ্র)।’ বাল্মীকির রামের এই যে ‘গর্বিত চিত্তভাব’ বা ‘স্থিরপ্রতিজ্ঞ’ ভাব, একেই হয়তো ঠাকুর বলিয়াছেন ‘অত্যন্ত রঙ-ফলানো চওড়া’। আর ভবভূতির রামের ‘কোমলপ্রকৃতি’ হইল এক ‘কবিজনোচিত কৌশলের’ সৃজন, যাহাতে সেই ‘চরিত্রকে অশ্রদ্ধেয়’ মনে হয়। বাল্মীকি-কালীন আদর্শের নিরিখে রামকে ‘অশ্রদ্ধেয়’ করিয়া আঁকিয়া ভবভূতি সমকালীন (ও উত্তরকালীন) দর্শক/পাঠকের কাছে তাঁহাকে গ্রহণযোগ্য করিয়া তুলিতে চাহিয়াছেন।
‘অশ্রদ্ধেয়’-র মতো ‘রামভদ্রের প্রতি প্রবল গঞ্জনা’-র প্রসঙ্গটিও আমাদের ভাবায়। বাল্মীকি আর ভবভূতির ভিতর এ-বিষয়ে ফারাক কতটুকু? বাল্মীকি-রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে, বেড়াইতে লইয়া যাইবার নাম করিয়া বাল্মীকির আশ্রমের কাছে নামাইয়া দিবার পর লক্ষ্মণের মুখে সীতা জানিতে পারিলেন তাঁহার নির্বাসনের ফরমান। রামের সেই নির্দেশে শুনিয়া সীতার প্রতিক্রিয়া তখন কেমন? দেখিতেছি, লক্ষ্মণ মারফত রামকে সীতা বলিয়া পাঠাইতেছেন – ‘তুমি আমার পরমগতি, তোমার অপবাদ যাতে না হয় তা আমার অবশ্য করণীয়। … আমার শরীর ধ্বংস হলেও দুঃখ নেই, কিন্তু পৌরজনের নিকটে তোমার যে অপবাদ হয়েছে তা যেন দূর হয়’ (সীতা বিসর্জন, উত্তরকাণ্ড, বাল্মীকি রামায়ণ, সারানুবাদ রাজশেখর বসু)। অর্থাৎ নিজের উপর অবিচার লইয়া এই সীতার কোনও রকম ওজর-আপত্তি নাই, রামের সম্মান রক্ষা তাঁহার কাছে ঢের জরুরি!১
উত্তররামচরিত-এও সীতার মুখে রামের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও নালিশ নাই। এই নাটকের ৩য় অঙ্কে, শম্বুক-বধ করিয়া অযোধ্যা ফিরিবার পথে রামচন্দ্র গোদাবরী তীরে পৌঁছাইয়াছেন। সেই খবর পাইয়া ভাগীরথী সীতাকে আগাম কিছু না-জানাইয়া, তাঁহার চেহারা অদৃশ্য করিয়া দিয়া, সেই অকুস্থলে হাজির করিয়াছেন। পঞ্চবটীতে বনবাস-কালের পুরানো স্মৃতি জাগিয়া উঠায় সীতার বিরহে কাতর রামের আবেগায়িত সম্ভাষণ শুনিয়া সেই অদৃশ্য-সীতা বলিতেছেন – ‘আর্য্যপুত্র! আমার প্রতি আপনার পূর্ব্বের আচরণ স্মরণ করিয়া আজিকার এই স্নেহ সম্ভাষণ কেমন অনুপযুক্ত মনে হইতেছে’। ‘অস্পষ্ট গদ্‌গদ স্বরে’ উচ্চারিত এই উক্তির ঠিক পরেই অবশ্য জাগে তাঁহার আত্মসংশয় – ‘… আমার কি তাঁহার প্রতি বিমুখ হওয়া উচিত?’ খানিক বাদে আবার বলেন –‘বিনা দোষে নির্ব্বাসিত হইয়াও, আজ আর্য্যপুত্রের মুখে প্রগাঢ় প্রণয়ের এই সকল প্রাণস্পর্শী কথা শুনিয়া আমার জন্ম সার্থক মনে হইতেছে।’ (উত্তররামচরিত, অনু. বিমলা দাসগুপ্তা) এইসব উক্তিতে ‘বিনা দোষে নির্ব্বাসিত’ হইবার জন্য কিছু অনুযোগ থাকিলেও, তাহাদের ঠিক গঞ্জনা বলা যায় না। প্রসঙ্গত, গঞ্জনা শব্দের অর্থ তিরস্কার বিদ্রূপ বা লৌকিক বাংলায় খোঁটা দেওয়া।২
উত্তররামচরিত নাটকের অভিমুখ আসলে রাম-চরিত্রের বিনির্মাণ, সীতার নয়। রাম চরিত্রটিকে ‘কবিজনোচিত কৌশলে’ বদলাইয়া যেভাবে ভবভূতি দর্শক/পাঠকের অনুকম্পা আদায় করিতে চাহিয়াছেন, তাহার জন্য সীতাকে কোনও ফরিয়াদির ভূমিকা লইতে হয় নাই। নাটক জুড়িয়া তাঁহার শোকদগ্ধ অস্তিত্বই হইয়া উঠিয়াছে ‘রামভদ্রের প্রতি প্রবল গঞ্জনা’-র প্রতিমা। আর রামও যেন সেই তিরস্কার আমলে লইয়া, রামায়ণের গর্বিত বা স্থিরপ্রতিজ্ঞ ভাবের বর্ম ছাড়িয়া ধারণ করিয়াছেন অনুতাপে জর্জর এক নয়া ভাবমূর্তি। এই রূপান্তরিত রামের উক্তি প্রায়ই এত আর্দ্র যে বঙ্কিম ঠাট্টা করিয়া বলিয়াছেন – ‘ইহা আর্য্যবীর্য্যপ্রতিম মহারাজ রামচন্দ্রের মুখ হইতে নির্গত না হইয়া, আধুনিক কোন বাঙ্গালি বাবুর মুখ হইতে নির্গত হইলে উপযুক্ত হইত’(উত্তরচরিত, বিবিধ প্রবন্ধ, বঙ্কিমচন্দ্র)।

কিন্তু আমাদের কথা তো হইতেছিল রবীন্দ্রনাথের চিঠি লইয়া। আর তিনি সেখানে বলিতেছিলেন গদ্যে-লিখা কবিতার শক্তিমত্তা লইয়া। কথায় কথায় তাঁহার কলমে আসিয়া পড়িল রাম-সীতা-বাল্মীকি-ভবভূতি-র প্রসঙ্গ। ঠাকুর একটু জিভ কাটিলেন। বলিলেন – ‘ওই দেখো, কী কথা বলতে কী কথা এসে পড়ল’। তাহার পর আবার শুরু করিলেন গদ্যকবিতার কথা। চিঠি চলিতে লাগিল। পরিচয় পত্রিকার বৈশাখ ১৩৪০ সালে প্রকাশিত সেই চিঠি, পরে, সাহিত্যের স্বরূপ (বৈশাখ ১৩৫০) গ্রন্থে কাব্যে গদ্যরীতি নামে সংকলিত হয়।
প্রিয় পাঠিকা প্রিয় পাঠক, এইখানে আমরাও একটু জিভ কাটিয়া গদ্যকবিতার আলাপ হইতে চলিয়া যাইব অন্য এক দৃশ্যে। যেখানে, ধারাবাহিক আত্মাবমাননার প্রতিক্রিয়ায় এক নারী অবিচলিত দৃঢ়তার সঙ্গে দাম্পত্যের চৌহদ্দি হইতে নিজেকে প্রত্যাহার করিয়া লইতেছেন। সেই নারী আর কেহ নন, স্বয়ং সীতা। তবে বাল্মিকী বা ভবভূতি নয়, সেই মুহূর্তটির তালাশে আমাদের খানিক ঢুকিয়া পড়িতে হইবে রবীন্দ্রনাথেরই এক আখ্যানের অলিন্দে। যেখানে, মানবিক সম্পর্কের ছন্দ জোড় মিলাইতে পারে নাই বলিয়া ‘বাক্‌ এবং অবাক্‌-এর একান্ত মিলন’ ঘটে নাই। আবার কোনও ‘অসংকুচিত গদ্যরীতি’র এন্তেজাম করিয়া সেই সম্পর্কের ভিতর কোনও নতুন কবিতার পরিসরও তৈয়ার হয় নাই।

২.
উনিশ বছর বয়সী এক সদ্যতরুণী, কুমুদিনী, হালফিল বিচারে যাহাকে কিশোরীই বলা যায়, বকলমে বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার। এমন ঘটনা তো শত শত দাম্পত্যের বহু-আচরিত অথচ চাপা-পড়িয়া যাওয়া হররোজের কড়চা মাত্র। অথচ, স্বপ্নভ্রষ্ট এক তরুণীর বেদনা ও অপমান-পীড়িত বয়ানে সেই মলিন ইতিবৃত্তই রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ উপন্যাসে ব্যক্তিপ্রত্যয়ের একটি আখ্যান হইয়া উঠিল। এ-উপন্যাসের কাঠামোগত দুর্বলতা ফাঁস করিয়া ছকনবিশি পেশ করা কঠিন কিছু নয়। ইহাকে একটি অসম্পূর্ণ রচনাও বলা যায়। তবু মানিতেই হয়, কুমুদিনীর চরিত্রের স্নিগ্ধ দৃঢ়তা, ১৯২৯ সালে প্রকাশিত কোনও বাংলা উপন্যাসে অভাবনীয়। বিবাহসূত্র-বাহিত পুং-আগ্রাসনের মুখে নারীর প্রতিক্রিয়ার এই ভাষ্য আমাদের ভাষায় আর কই –

১. ঠাকুর নারীবলি চান বলেই শিকার ভুলিয়ে এনেছেন নাকি; যে শরীরটার মধ্যে মন নেই সেই মাংসপিণ্ডকে করবেন তাঁর নৈবেদ্য? আজ কিছুতে ভক্তি জাগল না। … তোমার ভক্তকে নিজে না গ্রহণ করে তাকে বিক্রি করে দিলে কোন্‌ দাসীর হাটে — যে-হাটে মাছমাংসের দরে মেয়ে বিক্রি হয়, যেখানে নির্মাল্য নেবার জন্যে কেউ শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজার অপেক্ষা করে না, ছাগলকে দিয়ে ফুলের বন মুড়িয়ে খাইয়ে দেয়। (পরিচ্ছেদ ৩৮, যোগাযোগ )
২. একটা কালো কঠোর ক্ষুধিত জরা বাহির থেকে কুমুকে গ্রাস করছে রাহুর মতো। … সম্পূর্ণ আত্মনিবেদন একটা ফলের মতো, আলোহাওয়ায় মুক্তির মধ্যে সে পাকে, কাঁচা ফলকে জাঁতায় পিষলেই তো পাকে না। সময় পেল না বলেই আজ ওদের সম্বন্ধ কুমুকে এমন করে মারছে, এত অপমান করছে। (পরিচ্ছেদ ৩৮, যোগাযোগ)

স্বামী মধুসূদনের কাছে এই ‘শ্রদ্ধাহীন আত্মসমর্পণের গ্লানি’র ভিতর দিয়া দাম্পত্যের সামান্য কয়েকটি দিনেই কুমু টের পাইয়াছে, দুইটি মানুষের ভিতরের ফারাকটি আসলে যোজনব্যাপী সংস্কৃতির। দাদা বিপ্রদাসের কাছে যে-সুকুমারবৃত্তির পরিচর্যা সে পাইয়াছে, তাহার সহিত মধুসূদনের কিছুই মিলে না। এ এক অসেতুসাধ্য দূরত্ব! অন্যদিকে, রুচি প্রবণতা ও হৃদয়বৃত্তি, সবদিক দিয়াই মধুসূদনের পুরা উলটা মেরুতে বিপ্রদাসের অবস্থান। বিপ্রদাসই কুমুর ভাবতরণীর সারেঙ। এহেন বিবেচনায় ভাইবোনের ন্যূনতম সংযোগ মধুসূদন বরদাস্ত করে না। অন্যদিকে কুমুকে মানসিকভাবে কব্জা না-করিতে পারার নিষ্ফলতা ক্রমেই তাহাকে হয়রানও করিয়া তুলে। একদিন বিষ্ফোরণ ঘটে। কুমুকে সে অনির্দিষ্টকালের জন্য দাদার কাছেই চলিয়া যাইতে বলে। দম-আটকানো পরিবেশ হইতে নিস্তার পাইবার জন্য ব্যাকুল কুমু যেন এমন একটি সুযোগের এন্তেজারেই ছিল। প্রায় স্বেচ্ছায় সে স্বামীর ঘর ছাড়িয়া চলিয়া আসে দাদার কাছে। কোনও দিন আর সেখানে ফিরিবে না, এমনই এক কঠিন সিদ্ধান্তে পৌঁছাইয়া যায় ক্রমে। অবশ্য ইতোমধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হইয়া পড়ার লক্ষণ জাহির হওয়ায়, উপন্যাসের শেষে স্বামীর ঘরেই ফিরিতে হয় তাহাকে। কিন্তু, যাইবার আগে দাদাকে সে বলে, সন্তানকে বড় করিয়া স্বামীর হাতে তুলিয়া দিয়া, আবার সে দাদার কাছেই ফিরিয়া আসিবে। কোনও মূল্যেই সে তাহার গভীর আত্মপরিচয়টি খোয়াইতে পারিবে না – ‘মিথ্যে হয়ে মিথ্যের মধ্যে থাকতে পারব না। আমি ওদের বড়োবউ, তার কি কোনো মানে আছে যদি আমি কুমু না হই?’ (পরিচ্ছেদ ৫৭, যোগাযোগ)

কুমুর কুমু হইয়া বাঁচিতে চাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা কি সেকালীন ভদ্রলোক (বস্তুত বর্ণহিন্দু) বাঙালি সমাজ প্রাঞ্জল মনে মঞ্জুর করিয়াছিল? উপন্যাস প্রকাশের সাত বছর পরে নাট্যাচার্য শিশিরকুমার রবীন্দ্রনাথকে যোগাযোগ-এর নাট্যরূপ দিবার অনুরোধ করেন। অবশ্য তাঁহার আবদার ছিল, নাটকের শেষে কুমুদিনী যেন উপন্যাসের মতো বিদ্রোহী মেজাজে না-থাকিয়া ‘চিরকেলে সতী’র মতো আচরণ করে। শুনিয়া, ঠাকুর বলিলেন, ‘তুমি আমার কুমুকে হিঁদুটি করতে চাও? ওর সমস্ত বিশ্বাসকে ধূলিসাৎ করে জীবনের নাড়ীতে এসেছে বিদ্রোহ। ও তোমার সস্তার বিদ্রোহিনী নয়।’ শিশিরকুমারের বয়ানে বাকি কথা শুনা যাক –

আমি তখন বললুম, তাকে একবার মধুসূদনের ঘরে যেতে হবে তো। শুনে কবি খুব খেপে গেলেন। বললেন, তা তো যাবে। যাবে কি থাকবার জন্য। যাবে ফিরে আসার জন্য।
আমি বললুম, ঐ মধুসূদনের ঘরে তার পায়ে পড়ে গড় হয়ে প্রণাম করবে কুমু। দৃশ্য শেষ হবে। কথাটায় আরো উগ্র হয়ে কবি বললেন, কখ্‌খনো নয়, তা হবে না। হতে পারে না। আমি বললুম, তাই যদি হয় তবে সমগ্র দর্শকসমাজ খুশি হবে। আমি দক্ষিণাটা ভালো পাব।’ (গ্রন্থপরিচয়, যোগাযোগ [নাটক], রবীন্দ্র রচনাবলী ১৮শ খণ্ড)

এমন যুক্তির সামনে ঠাকুর হাল ছাড়িয়া দেন। বলেন – ‘যা খুশি করো গে। তোমার যোগাযোগ লোকে কদিন মনে রাখবে? আমার যোগাযোগ বরাবর থাকবে।’ তবে, কুমুকে ‘হিঁদু’ বানাইবার শৈশিরিক আবদার আমলে না-লইলেও, ঠাকুর কিন্তু নাট্যরূপের (১৯৩৬) পরিণতিকে উপন্যাস হইতে বেশ খানিকটা ঢালিয়া সাজান। হয়তো বা নাট্যাচার্যের ‘দর্শকসমাজ’-এর কথা মাথায় রাখিয়াই এহেন রদবদল। সেখানে আচমকা দেখা যায়, নাটকের শেষ দৃশ্যে মধুসূদন যেন কী এক মন্তরে রাবীন্দ্রিক ভালোমানুষ হইয়া নিজের রূঢ় রুক্ষ আচরণের পুরানো ভুলগুলি টের পাইয়াছে! ফলে, কুমুকে আর আত্মসম্মান জলাঞ্জলি দিয়া পতিগৃহে ফিরিতে হয় না। সাপও মরে, লাঠিও অক্ষত থাকে। মধুসূদনের চারিত্রিক বিন্যাসের দিক দিয়া ইহাকে একটি শৈল্পিক গোঁজামিলই বলা যায়। তবে লক্ষ করিবার যে, কুমু-চরিত্রের ঋজুতার স্তরপরম্পরাটি কিন্তু নাটকেও আলগা হয় নাই। তাই, কুমুর ‘জীবনের নাড়ীতে’ আসিয়া-লাগা ‘বিদ্রোহ’-এর সমর্থনে ঠাকুর রচনা করিয়া ফেলিলেন দুইটি আশ্চর্য ‘মুক্তিকামী’ গান।

৩.
যে-গান দুইটির কথা বলিতেছি, গীতবিতান-এর বিচিত্র-পর্যায়ে (গান নং ৬২ ও ৬১) সংকলিত হইলেও সেই দুইটি তেমন বহুশ্রুত নয়। উপন্যাসে গান দুইটি ছিল না। যে-রাতে মধুসূদনের পরুষ কণ্ঠে কুমুর নির্বাসন ঘোষিত হইল, এক অচঞ্চল আত্মপ্রত্যয়ের সাথে কুমুদিনী সেই প্রস্তাব, বলা যায় লুফিয়া লইল। আসলে তো সে দাদার কাছে যাইবার জন্য পা বাড়াইয়াই ছিল। এইরকম এক পরিস্থিতিতে গান দুইটির আয়োজন। গান দুইটি শুনিবার জন্য একটি বালিকা চরিত্রকে ডাকাইয়া আনিয়াছে কুমু –

কুমুদিনী । আজ রাত্তির থেকেই আমার শুভ নির্বাসন মঞ্জুর হয়েছে। কাল যাব দাদার ওখানে। ঠাকুরপো, রাগ কোরো না।
নবীন । বউরানী, ফিরে আসতে দেরি কোরো না এই কথাটা সব মন দিয়ে বলতে পারলে বেঁচে যেতুম— কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল না। যাদের কাছে তোমার যথার্থ সম্মান সেইখানেই থাকো গিয়ে। অভাগা নবীনকে যদি কোনো কারণে কোনো কালে দরকার হয় স্মরণ কোরো।

কুমুদিনী । তোমাদের ভাগ্নী ওই ফুট্‌কিকে ডেকে আনো তো ভাই।
নবীন । কেন, তাকে কিসের দরকার?
কুমুদিনী । সীতার অগ্নিপ্রবেশে সেই তো সীতা সেজেছিল। আবার শুনব তার মুখে তার পালার শেষ কথা ক’টি।
[নবীনের প্রস্থান
মোতির মা । ইতিহাসটা খুলে বলো দিদি।
কুমুদিনী । সেই একই কথা। হরিণী পিছু হটছিল, ব্যাধ তার গলায় ফাঁসটা ধরে জোরে দিয়েছিল টান। ফাঁস গেল ছিঁড়ে। ব্যাধ অহংকার করে বললে, ভালোই হল; হরিণ নম্র হয়ে বললে, ভালোই হয়েছে।
মোতির মা । এইখানেই কি শেষ হবে বোন? অদৃষ্টের মৃগয়া যে এখনো চলবে।
কুমুদিনী । তা জানি, ওই ব্যাধের হাতে ধনুক আছে, বল্লম আছে, খাঁড়া আছে, আর হরিণীর আছে কেবল তার শেষ পরিত্রাণ মরণ।
ফুট্‌কিকে লইয়া নবীনের প্রবেশ
কুমুদিনী । ফুট্‌কি!
ফুট্‌কি । কী রানীমা!
কুমুদিনী । আগুন থেকে বেরিয়ে এসে সীতা কী বললেন গান গেয়ে বল্।
ফুট্‌কির গান
ফুরালো পরীক্ষার এই পালা,
পার হয়েছি আমি অগ্নিদহনজ্বালা।।
মা গো মা, মা গো মা,
এবার তুমিই জাগো মা,
তোমার কোলে উজাড় করে দেব অপমানের ডালা।।
তোমার শ্যামল আঁচলখানি
আমার অঙ্গে দাও মা, টানি,
আমার বুকের থেকে লও খসিয়ে নিঠুর কাঁটার মালা।
মা গো মা।।
কুমুদিনী । তার পরে যখন রাম বললেন, এসো আমার সিংহাসনে এসো, বোসো আমার বামে—
ফুট্‌কির গান
ফিরে আমায় মিছে ডাক’, স্বামী।
সময় হল, বিদায় লব আমি।।
অপমানে যার সাজায় চিতা
সে যে বাহির হয়ে এল অগ্নিজিতা,
রাজাসনের কঠিন অসম্মানে
ধরা দিবে না সে যে মুক্তিকামী।।
আমায় মাটি নেবে আঁচল পেতে
বিশ্বজনের চোখের আড়ালেতে,
তুমি থাকো সোনার সীতার অনুগামী।
ফিরে ফিরে আমায় মিছে ডাক’ [স্বামী]।।
(৩য় অঙ্ক ৩য় দৃশ্য, যোগাযোগ [নাটক])

গান দুইটি শুনিয়া বা পড়িয়া ঠাহর হয়, উপন্যাস রচনার সাত বছরের ফারাকে, নারীর ব্যক্তিস্বরূপের প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ঠাকুরের দৃষ্টভঙ্গি যেন এখন আরও দ্বিধাহীন ও প্রখর। যেন জীবনের এই পরিণত বয়সে তাঁহার অ-পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ আরও আপোশহীন পরিসরে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। মুক্তিকামী কুমুর যে-মন এখানে সীতার সাথে একাত্মতা অনুভব করে, তাহার ভিতর কোনও অনুগ্রহকাতরতা তো নাইই, বরং এক কঠোর প্রত্যাখ্যানের সংকল্প তাহার শব্দ যোজনায় – ‘পার হয়েছি আমি অগ্নিদহনজ্বালা’ বা ‘রাজাসনের কঠিন অসম্মানে/ ধরা দিবে না সে যে মুক্তিকামী’। আবার গান দুইটির কথক যেহেতু স্বয়ং সীতা, কুমুর পাশাপাশি আমরা মুক্তিকামী সীতার অগ্নিস্পৃষ্ট হৃদয়কেও নিরাবরণ ভাবে ঝলকিয়া উঠিতে দেখি। আমাদের কানে বাজিয়া উঠে, ধূর্জটিপ্রসাদকে লিখা ঠাকুরের সেই চিঠিতে উল্লেখ করা ‘রামভদ্রের প্রতি প্রবল গঞ্জনা’-র ধ্বনিময় বিস্ফার।

৪.
আমরা জানি, জীবনের প্রায় প্রান্তপ্রহরে পঁহুছিয়া রবীন্দ্রনাথ তাঁহার দুই হাজারের মতো গান হইতে ১৫০০টি বাছিয়া লইয়া দুইটি খণ্ডে গীতবিতান সংকলন করেন (ভাদ্র ১৩৪৫)। অর্থাৎ, সজ্ঞানেই তিনি বেশ কিছু গান বাতিল করেন। অসংকলিত নাট্যগীতির সংখ্যাও কিছু কম নয় (দ্র. গীতবিতান ৩য় খণ্ডে সংযোজিত ১৩২টি গান)। এই কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার পরেও ফুট্‌কির গাওয়া উপরের গান দুইটি যে আজ আমরা কবির নিজস্ব পছন্দ মোতাবেক বিচিত্র-পর্যায়ে দেখিতে পাইতেছি, তাহাতে বুঝা যায়, কবি নিশ্চয়ই তাহাদের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করিয়াছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁহার যেসব নাট্যগান নাটকের কাঠামো হইতে বাহির করিয়া অন্যান্য গানের সহিত গীতবিতান-এ সামিল করিয়াছেন, পাঠক হিসাবে তাহাদের মোকাবেলা করিতে আমাদের কিছু ধন্দের মুখে পড়িতে হয়। রচিতের (= নাটকের পাত্রপাত্রীর) ও রচয়িতার (=স্বয়ং ঠাকুরের) বয়ান এসব গানে হামেশাই একে অন্যকে টক্কর দেয়।৩ যোগাযোগ-এর ফুট্‌কির গানের দৃশ্যে তো আবার নাটকের ভিতরে নাটক। সেখানে, এক নাটকের চরিত্র কুমু অপর এক নাট্যের (সীতার অগ্নিপ্রবেশ পালা) কুশীলব ফুট্‌কির গাওয়া গান শুনিতেছে। সে-গানের বাণীর ভিতর দিয়া কুমু যেন নিজেরই প্রত্যয়দীপ্ত আত্মঘোষণা শুনিতে পাইতেছে। নাটকের দর্শকের সামনেও সীতার জবানিতে ভাসিয়া আসিতেছে কুমুরই বয়ান। কিন্তু যখন আমরা নিছক রবিগান হিসাবে গান দুইটি শুনিতেছি, বা ছাপার হরফে গীতবিতান-এর পাতায় তাহাদের পড়িতেছি৪, তখন আর আমাদের সামনে কোনও কুমু নাই, ফুট্‌কি নাই। আছে, এক নারীর সংক্ষুব্ধ হৃদয়ের বেদনা ও অগ্নি, গানের ভিতর দিয়া যাহা ফিনিক দিয়া উঠিতেছে পুরুষতান্ত্রিক অবিচারের বিরুদ্ধে। আর, সেই নারী স্বয়ং মহাকাব্যের সীতা। এবং গভীর বিস্ময়ের সাথে আমাদের ঠাহর করিতে হয়, এই গান দুইটির সেই সীতা কী তীব্র ভাষায় নিজের প্রতি রামের বিরূপ আচরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করিতেছেন। বুঝিতে অসুবিধা হয় না, এই ‘প্রবল গঞ্জনা’ ও প্রত্যাখ্যান আসলেই খোদ রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব বয়ান। সীতার কণ্ঠে এই যে ঋজু প্রত্যাখ্যানের স্বর – ‘ফিরে আমায় মিছে ডাক’, স্বামী।/ সময় হল, বিদায় লব আমি।।/ …/ তুমি থাকো সোনার সীতার অনুগামী।/ ফিরে ফিরে আমায় মিছে ডাক’।।’ – ইহা যেন একেবারেই এক নারীবাদী মনের আপন অনুসৃজন।
নারীবাদী শব্দটির ব্যবহার করা গেল নিছক শৌখিনতা বশে নয়। শিশিরকুমারের জোরদার তাগাদায় যোগাযোগ-এর নাট্যরূপটি চূড়ান্ত করিবার৫ সামান্য কিছুকাল আগেই ঠাকুরের ডাক পড়িয়াছিল কলিকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিলবঙ্গ মহিলা কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধনে। সেই উপলক্ষে তিনি নারী-শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন (২ অক্টোবর ১৯৩৬) এবং মহিলা কর্মীদের ওই মজলিশে তাহা পাঠও করেন (১২ অক্টোবর ১৯৩৬)। এই ছুতায় সেই রচনাটির কয়েকটি বাক্য আমরা পড়িয়া লইতে পারি –

আমার মনে হয়, পৃথীবিতে নূতন যুগ এসেছে। অতি দীর্ঘকাল মানবসভ্যতার ব্যবস্থাভার ছিল পুরুষের হাতে। … এই সভ্যতা হয়েছিল এক-ঝোঁকা। … কল্পান্তের ভূমিকায় নূতন সভ্যতা গড়বার কাজে মেয়েরা এসে দাঁড়িয়েছে – প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের উপর থেকেই যে কেবল ঘোমটা খসল তা নয় – যে ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসেছে। … এখন অন্ধসংস্কারের-কারখানায়-গড়া পুতুলগুলো নিয়ে খেলা করা আর তাদের সাজবে না। (নারী, কালান্তর, ১৩৪৪)

এই প্রবন্ধটির পাশাপাশি মিলাইয়া শুনিলে বা পড়িলে, ফুট্‌কির গাওয়া গানের সীতাকেও কি আমাদের মনে হয় না সেই কল্পান্তের নারী, ‘মনের ঘোমটা’ খসিয়া গিয়াছে বলিয়াই ‘অন্ধসংস্কারের-কারখানায়-গড়া পুতুল’ লইয়া খেলা করিতে যিনি আর রাজি নন? চিরদুখিনী সতীনারীর এক চরম দৃষ্টান্ত হিসাবে পটচিত্রে বন্দিনী না-থাকিয়া যিনি আজ স্বেচ্ছায় ‘মুক্তিকামী’ হইতে চান।

একাধিক পাঠবস্তুকে এইভাবে পাশাপাশি মিলাইয়া পড়িলে হামেশাই নানা লিখনের ভাবতরঙ্গের এইরকম নানা মিল-অমিলের সাথে আমাদের মোলাকাত হয়। বিশেষত রচনাগুলি যদি সমসাময়িক হয়, তাহাদের ভিতর আমরা সেই বিশেষ সময়ের আপন সিলমোহরও কিছু খুঁজিতে চাই। অবশ্য সমসাময়িক না-হইলেও তুলনামূলক পাঠের কোনও হরকত নাই। যেমন যোগাযোগ নাটকের এই গান দুইটি, আর কালান্তর গ্রন্থের নারী শিরোনামের নিবন্ধটি যদি আলাদা আলাদা সময়ও রচিত হইত, ইহাদের পুরুষতন্ত্র-বিরোধী স্বরের ঐক্যটি কিছু বরবাদ হইয়া যাইত না। আমরা অবশ্য সীতার জবানের গান এবং মহিলা সম্মেলনে পঠিত গদ্য, সব কয়টিকেই বং ১৩৪৩ সালের রচনা বলিয়া গণ্য করিতেছি।
প্রিয় পাঠিকা প্রিয় পাঠক, খুব সঙ্গতভাবেই আপনারা এই সওয়াল তুলিতে পারেন যে, উপরে-বলা লিখাগুলির সন-তারিখ লইয়া এত প্যাচাল কিসের। জবাবে কবুল করি, গান দুইটির রচনাকাল লইয়া কিছু ধোঁয়াশা রহিয়া গিয়াছে। এই অস্পষ্টতার উৎস গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী – রবীন্দ্রজীবনের এবং রবীন্দ্রসংগীতের আদি ঐতিহাসিক শ্রদ্ধেয় প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় স্বয়ং যে-সূচীর নির্মাতা। তিনি তাঁহার গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন, এই দুইটি গানই ঠাকুর ভাদ্র ১৩৩৬ সালে তপতী নাটকের জন্য রচনা করেন। কিন্তু কোনওটিই সে-নাটকের অভিনয়কালে গীত হয় নাই। বহি আকারে প্রকাশের সময়ও মুদ্রিত নাটকে উহাদের সামিল করা হয় নাই। প্রভাতকুমারের বদৌলতে এই রচনাকাল এবং এইসব তথ্যসূত্রই রবীন্দ্ররচনাবলীর বিভিন্ন সংস্করণ এবং অন্যান্য বহুপ্রচলিত কোষগ্রন্থসমূহে ঠাঁই পাইয়াছে। তবু, গান দুইটি যে যোগাযোগ নাটক উপলক্ষেই রচিত, তাহা লইয়া আমাদের হারগিজ কোনও ধন্দ নাই। এতটা নিঃসংশয় হওয়ার কারণগুলি পেশ করি।
শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবনে তপতী নাটকের চারটি পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে – পাণ্ডুলিপি নং ১৪৭(ক), ১৪৭(খ), ১৪৭(গ) ও পাণ্ডুলিপি নং ৪৪৩। ইহাদের মধ্যে প্রথম তিনটি রবীন্দ্রনাথের স্বহস্তে লিখিত, চতুর্থটি ছাপা কপির উপর কবির আপন হাতের সম্পাদনা। এই পাণ্ডুলিপিগুলির কোথাও না কোথাও তপতী নাটকের অন্যান্য গানগুলি লিখিত রহিলেও৬, কোনওটিতেই কিন্তু ‘ফুরালো পরীক্ষার এই পালা’ ও ‘ফিরে আমায় মিছে ডাক’, এই গান দুইটি নাই।
অন্যদিকে ওই রবীন্দ্রভবনেই যোগাযোগ নাটকের অভিনয়ের একটি কপি (পৌষ ১৩৪৩) আছে, যাহা্তে ঠাকুর নিজের হাতে কাটাকুটি ও অদলবদল করিয়াছেন। এটি হইল পাণ্ডুলিপি নং ২৮৩(ক)। এই পাণ্ডুলিপির ৭৫ ও ৭৬ পৃষ্ঠায় কিছু কাটাকুটি সমেত কবির হাতের লিখায় এই গান দুইটি দৃশ্যমান।৭ কাটাকুটিগুলি আরও প্রমাণ করে, গান দুইটি ওই পাণ্ডুলিপির বুকেই রচিত। অর্থাৎ, এইবার আমরা চোখ বুজিয়া বলিতে পারি যে, যোগাযোগ নাটকের জন্যই বং ১৩৪৩ সালে এই গান দুইটি রচিত হয়।
কিন্তু এই সব সন-তারিখের প্রমাণপত্র পেশ করা এই রচনার উদ্দেশ্য না! কথার চক্করে কথা উঠিল বলিয়াই কথা। ঘুরিয়া ফিরিয়া আমাদের আবার চোখ ফিরাইতে হয় ফুট্‌কির গাওয়া গান দুইটির দিকে। সে-গানের বাণীর প্রবক্তার বয়ানে যে এতটা আত্মসম্ভ্রম, গৌরবহীন দাম্পত্যকে প্রত্যাখ্যান করিবার এতখানি দীপ্তি, তাহা সামগ্রিকভাবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কল্পান্তের নারীর বিদ্রোহের আভায় উজ্জ্বল ঠিকই। তবু, সমগ্র পুরুষতন্ত্রের প্রতিভু হিসাবে গান দুইটিতে তো মামলার একজন প্রত্যক্ষ প্রতিপক্ষ আছেন। গানের বাদী যখন সীতা, বিবাদী যে স্বয়ং রামচন্দ্র, সেকথা বুঝিতে আইনজ্ঞ হইতে লাগে না। কাজেই ব্যক্তিতার অভিষেক এ-গানের সীতাকে যেমন মহিমান্বিত করিতেছে, সমানুপাতে রামের লোকোত্তর ভাবমূর্তির গৌরবকেও তো তাহা অবনমিত ও অবমানিত করিতেছে। ‘লোকভয়’ কি এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথকে আটকাইল না?
রামায়ণ লইয়া জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঠাকুর হরেক রকম কথা লিখিয়াছেন। সাহিত্য ইতিহাস নৃতত্ত্ব সমাজতত্ত্ব – বিভিন্ন পটভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি হইতে তাহার বিচার বিবেচনা করিয়াছেন। সেসব এক স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয়।৮ তবে মোটের উপর তিনি রামায়ণকে এক মহৎ সাহিত্যকর্ম হিসাবেই গণ্য করিয়াছেন, যাহার উপজীব্য হইল বর্ণাঢ্য মানবিক উপাখ্যান। আমাদের মনে পড়িতে পারে, দীনেশচন্দ্র সেনের রামায়ণী কথা-র ভূমিকা (৫ পৌষ ১৩১০) লিখিতে গিয়া তিনি মন্তব্য করিয়াছেন – ‘কবি বাল্মীকির কাছে রাম অবতার ছিলেন না, তিনি মানুষই ছিলেন – পণ্ডিতেরা ইহার প্রমাণ করিবেন। এই ভূমিকায় পাণ্ডিত্যের অবকাশ নাই; এখানে এইটুকু সংক্ষেপে বলিতেছি যে, কবি যদি রামায়ণে নরচরিত্র বর্ণনা না করিয়া দেবচরিত্র বর্ণনা করিতেন তবে তাহাতে রামায়ণের গৌরব হ্রাস হইত, সুতরাং তাহা কাব্যাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হইত। মানুষ বলিয়াই রামচরিত্র মহিমান্বিত’ (রামায়ণ, প্রাচীন সাহিত্য)। সেই মানুষ-রামের পুরুষতান্ত্রিক অতিরেকের বিরুদ্ধে ফুট্‌কির গানের সীতাও তাই এক দ্বিধাহীন মুক্তিকামী নারী। দাম্পত্যের ছন্দোবন্ধনে ‘বাক্‌ এবং অবাক্‌-এর একান্ত মিলন’ ঘটিল না বলিয়াই তিনি যেন অতঃপর খুঁজিয়া পাইলেন একলা-চলার ‘চারিত্রশক্তি’। বলা যায়, খুঁজিয়া পাইলেন এক নতুন গদ্যকবিতায় পথিকতার পরিসর।

আষাঢ় ১৪২৮

কৃতজ্ঞতা

শোভন কুমার রুজ, রবীন্দ্র ভবন, শান্তিনিকেতন
বিচিত্র : বৈদ্যুতিন রবীন্দ্র-রচনাসম্ভার, স্কুল অব কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

পাদটীকা

১ অবশ্য যুদ্ধকাণ্ডের শেষদিকে যখন সীতার চারিত্রিক অবিকলতায় অনাস্থা জানাইয়া রাম তাঁহাকে লক্ষ্মণ ভরত শত্রুঘ্ন সুগ্রীব বা বিভীষণ প্রমুখ যেকোনও কাহারও কাছে চলিয়া যাইতে বলিলেন, তখন বেদনাহত সীতার প্রতিক্রিয়া অনেক মানবীপ্রতিম – ‘… নীচ ব্যক্তি নীচ স্ত্রীলোককে যেমন বলে তুমি আমাকে সেইরূপ বলছ কেন? … পরাধীন বিবশ অবস্থায় রাবণ আমার গাত্রস্পর্শ করেছিল, এই দোষ আমার ইচ্ছাকৃত নয়। … জনকের নামে আমার পরিচয়, বসুধাতল থেকে আমার উৎপত্তি, এসব তুমি গ্রাহ্য করলে না; তুমি চরিত্রজ্ঞ, কিন্তু আমার মহৎ চরিত্রের সম্মান করলে না। বাল্যকালে তুমি আমার পাণিগ্রহণ করেছিলে, তাও মানলে না, আমার ভক্তি চরিত্র সবই পশ্চাতে ফেলে দিলে।
সীতা সরোদনে লক্ষ্মণকে বললেন, তুমি আমার চিতা প্রস্তুত কর, স্বামী অপ্রীত হয়ে সর্বসমক্ষে আমায় ত্যাগ করেছেন; আমি অগ্নিপ্রবেশে প্রাণ বিসর্জন দেব।’ (সীতার অগ্নিপরীক্ষা, যুদ্ধকাণ্ড, বাল্মীকি রামায়ণ, সারানুবাদ রাজশেখর বসু)

২ গঞ্জনা অবশ্য শুনিতে পাই সীতার পিতা-মাতা রাজর্ষি জনক ও দেবী বসুন্ধরার জবানে। রাজর্ষি জনকের ক্রোধের অভিব্যক্তি সেখানে এই রকম – ‘আঃ কী আস্পর্দ্ধা! আমার সন্তানের আবার অগ্নিশুদ্ধি, এমন কোন্‌ অগ্নি আছে যে তাহাকে আবার শোধন করিতে পারে? দুঃখ এই যে, নীচ লোকের নিন্দাবাদে রঘুপতিকেও এমন অভিভূত করিয়া ফেলিল?’ (৪র্থ অঙ্ক, উত্তররামচরিত, অনু. বিমলা দাসগুপ্তা)
দেবী বসুন্ধরার কটূক্তির ভাষা আরও তীব্র। এ-নাটকের এক দৃশ্যে, বাল্মীকির ব্যবস্থাপনায় অপ্সরারা ভাগীরথী তীরের আশ্রমে রামায়ণের অভিনয় করিতেছেন। নাটকের ভিতরে অভিনীত সেই নাট্যের চরিত্র হিসাবে সীতা-জননীর কণ্ঠে শুনা যায় এহেন ঝাঁঝালো বাচন –
পৃথ্বী । … বাল্যকালে মহাসমারোহে বিধিমত যে পাণিগ্রহণ করা হইয়াছিল, একবার কি সে কথা স্মরণ করিলেন? বা অগ্নিপরীক্ষায় যে চরিত্রের জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ পাওয়া গিয়াছিল, তাহাই গ্রাহ্য করিলেন? না, আমার মর্য্যাদা, না জনকের সম্মানরক্ষায় বা স্বামীসহ বনগমনে আমাদের পুত্রীর নিঃস্বার্থ প্রেমের কষ্ট সাধনায়, অথবা একাকিনী ইহাকে ঘোর অরণ্যে ত্যাগ কালে ইহার শারীরিক অবস্থার প্রতি কিছুতেই কি ভ্রূক্ষেপ করিলেন?
সীতা । তাইত আর্য্যপুত্রকে আমার কথা স্মরণ করান হইতেছে?
পৃথ্বী । আঃ কে তোমার আর্য্যপুত্র? (৭ম অঙ্ক, ঐ, ঐ)
অর্থাৎ, রামচন্দ্রকে আর সীতার বিবাহিত স্বামী (স্বামীকেই স্ত্রী আর্য্যপুত্র সম্বোধন করিতেন) বলিয়াই গণ্য করিতে চান না জননী বসুন্ধরা!

৩ রবীন্দ্রনাথের নাটকের গানের প্রবক্তা-সত্তার এই বহুস্তরীয় ও জটিলতাময় স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টায় বর্তমান লেখকের আরও বিস্তারিত একটি আলোচনা – রচিত আর রচয়িতার বয়ান : রবীন্দ্রনাটকের গানের একটি পাঠপ্রয়াস। দ্র. অবাক আলোর লিপি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, নতুন দিল্লি, ২০১৯

৪গীতিবিতান-এ অবশ্য গান দুইটির শরীর-সংস্থানে সামান্য অদল বদল ঘটিয়াছে। ফলে বিচিত্র পর্যায়ে তাহাদের চূড়ান্ত পাঠ এইরকম–

৬১
ফিরে ফিরে আমায় মিছে ডাকো স্বামী –
সময় হল বিদায় লব আমি।।
অপমানে যার সাজায় চিতা
সে যে বাহির হয়ে এল অগ্নিজিতা।
রাজাসনের কঠিন অসম্মানে
ধরা দিবে না সে যে মুক্তিকামী।।
আমায় মাটি নেবে আঁচল পেতে
বিশ্বজনের চোখের আড়ালেতে,
তুমি থাকো সোনার সীতার অনুগামী।।

৬২
ফুরালো ফুরালো এবার পরীক্ষার এই পালা –
পার হয়েছি আমি অগ্নিদহনজ্বালা।।
মা গো মা, মা গো মা, এবার তুমি জাগো মা –
তোমার কোলে উজাড় করে দেব অপমানের ডালা।।
তোমার শ্যামল আঁচলখানি আমার অঙ্গে দাও, মা, আনি –
আমার বুকের থেকে লও খসিয়ে নিঠুর কাঁটার মালা।।

৫প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে ২২ মাঘ ১৩৪৩ শান্তিনিকেতন হইতে লিখা একটি চিঠিতে ঠাকুর জানাইতেছেন – ‘শিশির ভাদুড়ি যোগাযোগের নাট্যীকরণ সম্বন্ধে ধন্না দিয়ে পড়েছিলেন। খানিকটা অংশ পূর্ব্বেই করে দিয়েছিলুম। বাকি অনেকখানিই তিন চারদিনের মধ্যেই লিখে দেবার জন্যে তাঁর আবেদন। দুঃসাধ্য কাজ করতে হয়েছে, এমন একটানা পরিশ্রম আর কখনো করিনি।’ (কল্যাণীয়েষু প্রশান্ত, রবীন্দ্রনাথ-প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ পত্রবিনিময়, প্রশান্তকুমার পাল (সম্পা.)

৬ বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে তপতী নাটকের গানের অবস্থান

মু দ্রি ত না ট কে পা ণ্ডু লি পি নং
দৃশ্য পাত্র/পাত্রী গান ১৪৭(ক) ১৪৭(খ) ১৪৭(গ)
১ দেবদত্ত, অন্যান্য সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ পৃ. ১২৬ x x
১ বিপাশা মন যে বলে চিনি চিনি পৃ. ৩৩ পৃ. ১৮ পৃ. ১৬
২ বিপাশা আলোক-চোরা লুকিয়ে এল ওই পৃ. ৫৪ পৃ. ৩৫ পৃ. ২৬
২ বিপাশা জাগো হে রুদ্র, জাগো পৃ. ৫৫ পৃ. ৩৬ পৃ. ২৬
২ বিপাশা বকুলগন্ধে বন্যা এল পৃ. ৬৫ x পৃ. ৩১
২ বিপাশা প্রলয়নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে পৃ. ৬৮ x পৃ. ৩২
৩ বিপাশা দিনের পরে দিন যে গেল পৃ. ৮৭ x পৃ. ৪০
৩ বিপাশা তোমার আসন শূন্য আজি পৃ. ৯১ x পৃ. ৪১
৪ বিপাশা জাগ’ জাগ’ আলসশয়নবিলগ্ন পৃ. ১০৯ x পৃ. ৫৩
৪ সুমিত্রা শুভ্র নব শঙ্খ তব গগন ভরি বাজে পৃ. ১২২ x পৃ. ৫৯

৮ রামায়ণ লইয়া রবীন্দ্রনাথের জীবনব্যাপী নানান রচনায় ছড়াইয়া-থাকা লিখনগুলির প্রেক্ষিতে বর্তমান লেখকের একটি আলোচনা-প্রয়াস – ইতিহাসের উত্তরকাণ্ড : রামকথার একটি রাবীন্দ্রিক পাঠ। দ্র. পিলসুজ ২৮, ফাল্গুন ১৪২৮

পাঠপঞ্জি

চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র, দোলপূর্ণিমা ১৩৬১, বঙ্কিম রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ২৫ বৈশাখ ১৩৬৮, রবীন্দ্র রচনাবলী, ত্রয়োদশ খণ্ড, প্রবন্ধ, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, আষাঢ় ১৩৯৪, রবীন্দ্র-রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, গান, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ফাল্গুন ১৩৯১, রবীন্দ্র-রচনাবলী, ষষ্ঠ খণ্ড, নাটক, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, আষাঢ় ১৩৯৩, রবীন্দ্র-রচনাবলী, অষ্টম খণ্ড, উপন্যাস, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ফাল্গুন ১৩৯৫, রবীন্দ্র-রচনাবলী, দশম খণ্ড, প্রবন্ধ, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ফাল্গুন ১৪০৭, রবীন্দ্র-রচনাবলী, অষ্টাদশ খণ্ড, কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, কার্তিক ১৪১২, গীতবিতান, কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ
ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ২৬-০৯-২০১৬, বিচিত্রা : বৈদ্যুতিন রবীন্দ্র-রচনাসম্ভার, কলকাতা, স্কুল অব কালচারাল টেক্সটস অ্যান্ড রেকর্ডস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, দ্র.
http://bichitra.jdvu.ac.in/manuscript/manuscript_viewer_bn.php?manid=373&mname=RBVBMS_283%28i%29
দাসগুপ্তা, বিমলা (অনু.), ১৩২৮, উত্তররামচরিত, ভবভূতি, কলিকাতা, দি মডার্ণ পাবলিশিং হাউস
পাল, প্রশান্তকুমার (সম্পা.), ২০০৫, কল্যাণীয়েষু প্রশান্ত, রবীন্দ্রনাথ-প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ পত্রবিনিময়, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি
বসু, রাজশেখর, ১৩৯০, বাল্মীকি রামায়ণ সারানুবাদ, কলকাতা, এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাঃ লিঃ
মুখোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার, পৌষ ১৪১০, গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী, কলকাতা, টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট

[পিলসুজ ২৭ , আশ্বিন ১৪২৮ প্রকাশিত নিবন্ধের কিছুটা সম্পাদিত রূপ]

গৌতম চৌধুরী ।। gc16332@gmail.com

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)