বেবী সাউ-এর কবিতা
আগুন
১.
শ্মশানের কাঠ নিভিয়ে
পুকুরের স্নান সেরে
পুবের পাহাড়ে রেখে আসি শিকার ও সাহস
শ্যাওলার জালে জড়িয়ে আমাদের স্মৃতিচিহ্নগুলি
এখনো পর্যন্ত ধুলো নেই
বালি নেই
চলে যাওয়াটিও বাউলের গান…
সে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ছেঁড়া জুতো ,
লোহার বাতি…
2.
চারপাশ নীলাভ আকাশ
ছেড়ে যাওয়া বিছানাটি নিভাঁজ, টানটান
ফিরবে না জেনে প্রতিটি ঠিকানা মিথ্যে মনে হয়
ফিরবে না জেনে এই মায়া, এই ছায়া কী নির্লিপ্ত, অসহায়
অসহ্য চিৎকার শেষে ঘরে ফিরে দেখি
স্মৃতির ডায়েরি খুলে
মৃদু মৃদু হাসছ তুমি…
৩.
তোমার এত কী ঘুম!
সুখনিদ্রা ছেড়ে জেগে দেখো, শূন্য চারপাশ
ঝরঝরে, হালকা
ঘুমের ওষুধ বৃথা
ঘুমের প্রতিটি ভান মিথ্যা ছিল এতদিন!
এতটা আকুল সেও গাছ ভেঙে, ছাদের কার্নিশ ভেঙে
শরীর খোঁজো
সে শরীর জীর্ণ, ছাইভস্মসার…
জীবিকা
প্রত্যেক মনের একটি সীমান্ত আছে
তার উত্তরদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে কাঁটাতার
পশ্চিমে বিস্তৃত জানলার রেলিঙে ঝুলে থাকে মুখ
তোমার বাকচাতুর্য তাহাকে প্রত্যহ আশ্বাস দেয়, জর্জরিত করে
ক্ষমা একটা বিশ্বাস জেনে, তুমিও নিপুণ,
নিজেকে হত্যা করো সাবধানে…
সময়
একটা অতিকায় আগুনের ভেতর নিজেকে সমর্পণ করে দিচ্ছ
ওঁ স্বাহা…
ওঁ স্বাহা…
জন্মজাত পরিচয়, চিহ্ন নথিপত্রের মতো
খুঁদপিণ্ডের আশা ছেড়ে ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে উঠছে
এরকম আগুনের স্বপ্ন বহুবার তোমাকে বিহ্বল ও আশান্বিত করে
ধীরে ধীরে ফিনিক্স হয়ে ওঠে এ সমাজ, রাষ্ট্র, কাঁটাতার
বিবাহ
যেন ভাস্কর্য। দ্যুতি বিজড়িত। নিজেকে মেলাই দেবীজ্ঞানে
প্রেম কী অসার! অযথা আদরে জেগেছিল ধ্বনি মোহময়ী
এসব ক্ষতের ঋণ বহুকাল চির অনুদিত
বহুকাল এক মিছা বাণী
সিঁদুর পরানো চোখ স্নেহ লোভী
একান্নপীঠ-গল্প বলাটা এখুনি জরুরি?
উপসংহার
গোপনীয় ক্ষতদের আত্মহত্যা করাতে এনেছি…
তোমার শরীর বেয়ে অনুগামী রোদ নেমে যায়
রোদের বাগানে খেলা করে গভীর বাঘের ছায়া
তার আঁকিবুঁকি চোখ, রোদেলা শরীর
পাখিটির ঘুম কেড়ে নেয়…
পশমের ক্ষুধা ভেঙে,
তৃষ্ণার প্রদেশ ভেঙে নত হয়ে থাকে সামান্য জীবন
ঝুনঝুনি বেজে ওঠে দিগন্তে আবার
কতকাল অনাহারী, অভুক্ত প্রহরে এসে ঠকঠক করে কাঁপি
শিকার তো নিদ্রামগ্ন ; শিকারীটি জেগে থাকে শুধু
ইস্তেহার
একা এক নিঃসঙ্গতার মাঝে কিছু দানা ছড়িয়ে দাও রোজ
বিকেলের পোড় খাওয়া রোদ চা খেতে খেতে সেই গল্প শোনে
শোনে, একটা বাসস্থান গড়ে তুলতে হলে সংগ্রহে চাই কিছু মৃত গাছ, ডালপালা এবং কিছু বন্যপ্রাণীর হাড় এবং মাংস
সংগ্রহে রাখা চাই পুব ও পশ্চিম কোণের মানচিত্র
একটা বিরাট সূর্যে রোজ অস্ত যাওয়ার মতো অবসর
তোমার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে, মুখে এসে জমা হয় হাজার বছরের লালা, থুতু, কফ…
এসব লোভনীয় প্রস্তাব তোমাকে কেউ কখনও দিতে পারে নি
ভেবেই, রোমাঞ্চ জাগে…
আরও নিঃসঙ্গতার দিকে হেঁটে যাও তুমি…
অর্ধনারীশ্বর
বিচ্ছেদেরও মস্ত বড়ো রূপকথা আছে
গল্প শুরু এবং শেষের পংক্তিতে একাকী বসে আছো তুমি
তোমার দেহের অলিগলি পার হয়ে বোনা হচ্ছে শস্যদানা
একেকটি কবুতর ভাঙা ডানা নিয়ে
ক্ষতময় ঠোঁট নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে
দেহের ভেতর জল জমে, মাটি জমে
শুধু রোদ নেই বলে
কিছুতেই অঙ্কুরোদ্গম হচ্ছে না
ভীষণ ভালো লাগলো। অপূর্ব।
ধন্যবাদ কল্পর্ষিদা
ভালো লাগলো।
ভালোবাসা নিও
Bah
দিদি, ভালোবাসা নিও
খুব ভালো লাগল
ধন্যবাদ আপনাকে
কবিতাগুলো চমৎকার। খুবই ভালো লাগলো। দারুণ।
সম্পাদক যখন ভালো বলেন, ভরসা পাই 😜
চমৎকার সব লেখা
ভালোবাসা নিও
ভাল লাগল, বেবী।।।
পার্থদা, তোমার কথার রোদ, আমার কবিতাকে ভেজায়
অসাধারণ লাগল। বিশেষত উপসংহার, ইস্তেহার এবং অর্ধনারীশ্বর। ❤️❤️❤️
ভালোবাসা নিও
অসাধারণ কবিতাগুচ্ছ।
ভালোবাসা
খুব ভালো লেখা,সবকটিই ।
প্রাপ্তি আমার
আবহমান এর এ সংকলনে কবি বেবী সাউ এর কবিতা-পাঠ আমাদের এক নতুন পাঠকৃতির কাছে নিয়ে যায়। নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মৌলিক কবি কে অনায়স চেনা যায় । আজকের এ দহনকালে কবিতা যখন নির্বাসিতপ্রায়… তখন একান্তই মৌলিক অনুভব ও সৃজনশীলতা বিস্তৃত বেবীর কবিতা আমাদের মুগ্ধ ও আশাবাদী করে … এজন্যই যে, ভাষাবিভাজিত আজকের বাংলা কবিতার আসন্ন দূর্দিনে কবিতাকে বাঁচাতে পারবেন একমাত্র কবিই । বেবীর কবিতা এমন আলোর উজ্জ্বল উত্তরাধিকার।
আবহমান এর এ সংকলনে কবি বেবী সাউ এর কবিতা-পাঠ আমাদের এক নতুন পাঠকৃতির কাছে নিয়ে যায়। নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মৌলিক কবি কে অনায়াস চেনা যায় । আজকের এ দহনকালে কবিতা যখন নির্বাসিতপ্রায়… তখন একান্তই মৌলিক অনুভব ও সৃজনশীলতা বিস্তৃত বেবীর কবিতা আমাদের মুগ্ধ ও আশাবাদী করে … এজন্যই যে, ভাষাবিভাজিত আজকের বাংলা কবিতার আসন্ন দূর্দিনে কবিতাকে বাঁচাতে পারবেন একমাত্র কবিই । বেবীর কবিতা এমন আলোর উজ্জ্বল উত্তরাধিকার।
এতো জানি না। আশীর্বাদ করুনযেন লিখে যেতে পারি
খুব ভালো লাগা বেবী! অপূর্ব!
গভীর অনুভূতি সঞ্জাত কবিতা। পাঠকের বোধ আর অবচেতন এর সীমানায় অনায়াস বিচরণ। রেশ থেকে গেল। 🙏
স্বকীয় উচ্চারণ।খুব ভালো লাগল।
ভালো লাগলো, বেবী।
আন্তরিক ধন্যবাদ দাদা
বেবী সাউ-র কবিতা অনেকদিন ধরেই পড়ছি। বেবীর কবিতার নিপুন ভাস্কর্য খোদাই করা আত্মনির্মাণ।