বেবী সাউয়ের গল্প
দোসর
সারাদিনের ব্যস্ততা বলতে শুধু এটুকুই। ব্যস্ততা কিংবা কর্মহীনতা যাই বলা হোক না কেন, সত্যবতীর এই একটাই কাজ ভালো লাগে। ভালো হোক কিংবা মন্দ। বেপরোয়া হয়ে উঠতে উঠতে সে নিজেকে মেলাতে বসে এবং দীর্ঘ একটা দৃষ্টি নিয়ে গিরগিটি-টির দিকে তাকিয়ে থাকে এবং একবারে যতটা নিশ্বাস নেওয়া যায়, যতটা অক্সিজেন বাতাস থেকে শোষণ করে নিতে পারা যায় সেরকমই এক গভীর মগ্নতায় সে নিজের চুলের গন্ধ নেয়। দীর্ঘ লম্বা চুল। না-আঁচড়ানো, রুক্ষ এবং না কালো না খয়েরি রঙ। গন্ধ নেওয়ার সময় সে তার ছেড়ে আসা বুনো কুলের ঝোপ এবং অসংখ্য ঝুরিময় বটগাছটির কথা ভাবে। আর শিউরে ওঠে। যদিও এখানে শরীরের শিহরণের মতো কাঙ্ক্ষিত দ্রব্য কিংবা বস্তু নেই কিংবা নিছক খেলার বয়েসও সে বহু কাল আগে পার করে এসেছে তাই সে গন্ধ নিতে নিতে পিচ্ছিল পথটির কথা ভাবলো… এবং মনে মনে বেশ খুশি হয়ে উঠলো।
আর তখনই হঠাৎ টিং টিং করে বাসি পাউরুটি বিক্রেতা রাস্তা জাগাতে জাগাতে চলে গেল! গুপ্ত ঘাতকের মতো সত্যবতী তার চুলের মুঠি আরও শক্ত করলো, আরও জিঘাংসাপূর্ণ করলো তার চোখের দৃষ্টি এবং গিরগিটিটির দিকে একটা তীক্ষ্ণ, তীব্র চিৎকার ছুঁড়ে দিল। আর সম্ভবত এই চিৎকারটি ছিল বহু পুরনো এবং প্রচলিত। তাই কোনও হেলদোল দেখালো না এই বন্য প্রাণীটিও। নির্লিপ্ত চেয়ে থাকা ছাড়া।
সত্যবতী ধীরে ধীরে পেট খামচে বসে পড়লো। কিংবা হয়তো অত্যধিক চিৎকার তার শেষ প্রাণশক্তিটিকে দুর্বল করার ফলে দাঁড়িয়ে থাকা আর সম্ভব হচ্ছিল না। সে খানিকক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক নদীর কথা ভাবতে আরম্ভ করলো এবং তার চোখ অনেক অনেকদিন বাদে সামান্য ভেজা ভেজা উপলব্ধ হলো।
হঠাৎ সে চমকে উঠলো এবং দেখলো একটা বাদামী রঙের আরশোলা তার দিকে এগিয়ে আসছে। আরশোলাটির শুঁড় দেখে তার মনে হচ্ছিল তাদের ছেড়ে আসা বাড়ির পুরনো রেডিও অ্যান্টেনা। যেন সমস্ত পৃথিবীর কাছে সত্যবতীর অবস্থান জানানোর জন্য ছুটে আসছে। আর একটু পরেই সমস্ত পৃথিবী জেনে যাবে “হ্যালো… হ্যা…লো…টেস্টিং… এক ৩২ বছর যুবতী মেয়ে শুধুমাত্র লম্বা চুলের গন্ধ নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ তিনটি বছর…”
গিরগিটিটি এখনো সবটা গিলে ফেলতে পারেনি…আরশোলার মেরুন ডানার কিছুটা এখনো দেখা যাচ্ছে। সত্যবতী হাতের কাছে কিছু একটা পাওয়ার আকাঙ্খা করলো। এবং সঙ্গে সঙ্গে দেবতা রামের ব্রহ্মাস্ত্রের মতো হাতে উঠে এলো এক আধ-পোড়া কাঠের অংশ। সে যথাশক্তি প্রয়োগ করলো এবং সাফল্য এলো…
সে ধীরে ধীরে আগুনের কাছে গেল। এবং একটা পোড়া গন্ধ তাকে বুভুক্ষু করে তুললো… বহুদিন পর সে খিদে অনুভব করলো…জল পান করলো…
এবং পরেরদিন, তার পরেরদিন, অনেক অনেকগুলো পরেরদিনের পরে সে দেখলো একটা গিরগিটি তার দিকে তাকিয়ে আছে… নির্লিপ্ত, নিরাসক্ত. …
বেশ ভালো লাগল। আকর্ষণীয়!
With respect to this short story, I particularly express my thanks to the writer. After a long period I have gone through such experimental writing into which the concept of abstraction is certainly imposed in a prosody. As per my personal views, only great writer Manik Bandopadhyay was tried to write some short stories with abstraction and he was successful too.
Mrs Baby Shaw is certainly successful too. Much love and many many greetings to this talented writer.
গল্পটা অনেক কথা বলে, তার চেয়েও বেশি বলে না। সেই শূন্য স্থান পূরণ করলে আরো কয়েকটি গল্প হয়ে যাবে।
খুবই ব্যঞ্জনাময়!
খুব ভালো লাগলো।