নশ্বর অলীক যাতায়াত: মহাভারতারণ্যে প্রবেশের একটি ব্যক্তিগত প্রয়াস
প্রথম পর্ব
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
" মহাভারতারণ্যে সতর্ক গমনের, আমার, আরেক পথপ্রদর্শক প্রেমেন্দ্র মিত্র – “মহাভারতে নেই”, “ভারতযুদ্ধে ঘনাদা”, “কুরুক্ষেত্রে ভজা ওরফে বৃহদ্ধজ’- এই গল্পত্রয়... তবে ওই সকলই মহাভারতারণ্যে কিছুদূর অগ্রসর হওয়া এবং প্রত্যাবর্তন। নয় পথবিস্মৃত হওয়া। - জীবনের প্রায় মধ্যাহ্নে সহসা দুঃসাহসে আবারই সাধ জাগলো ওই মহারণ্যে পুনঃপ্রবেশের, দুঃসাহস জাগলো পথ বিস্মৃত হওয়ার। আরম্ভ হলো পুনর্যাত্রা - কালী সিংগি থেকে রাজশেখর বসু, হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ থেকে বঙ্কিমের কৃষ্ণচরিত্র হয়ে বুদ্ধদেব বসু, ইরাবতী কার্ভে থেকে নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী এবং অবশ্যই পিটার ব্রুক্ ... এমন কি প্রকাশ ঝা’র তথাকথিত “বাজারি ছবি” ‘রাজনীতি’ – প্রত্যেকজনেরই হাতধরে এবং এক সময় দান্তেহেন বিয়াত্রিচেহীনতায় অনুভব হলো পথ হারিয়েছে... পথ হারিয়েছে। তবু প্রতীক্ষা যদিবা ধ্বনিত হয় – কোনো কপালকুন্ডলার কন্ঠে – “পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ” অথবা এই সূচীভেদ্যতার আবহে পরদৃশ্যমান হয় কোনো বিয়াত্রিচে ...সুতরাং বহাল হইল এই মানচিত্রহীন, কম্পাসহীন গমন – পথে নয়, পথান্তরে। সংশয়ে। মর্মগত তর্কে,বিতর্কে, আলোচনায়, কল্পনায়।"
প্রবেশিকা
এ, হয় সকলেরই জ্ঞাত, যে, দান্তের ডিভাইন্ কমেডি’র আরম্ভটি এইভাবেঃ
MIDWAY upon the journey of our life
I found myself within a forest dark,
For the straightforward pathway had been lost.
দান্তের যাত্রা, অতঃপর ,লোকান্তরে। এ’ও সর্বজনজ্ঞাত। জীবন মধ্যাহ্নে আমিও অকস্মাৎই আপনাকে আবিষ্কার করি – যদিবা অন্ধকারে নাহয় – তবে অরণ্যের সূচীভেদ্যতায়। আমিও হই দিশাহারা। দিশাহারা এতাবৎ। আমি দেখি আমার দশদিকে অরণ্য। দেখি বিশাল বিশাল বৃক্ষ। দেখি সংখ্যাতীত কঙ্কাল। দেখি এক শমীবৃক্ষশাখে, পত্রালী অন্তরালে সযত্নে রক্ষিত তীর,ধনুক। বহুবিধ অস্ত্রাদি।
জীবনের আরম্ভেই ওই অরণ্যে আমার প্রবেশ। ওই পর্বে আমার বিয়াত্রিচে আমার “দিদিভাই”। আমার পিতার পিসীমা। আমার প্রপিতামহীসমা। তাঁরই কথকতায় আমার মর্মে মূর্ত্তিগুলি – কৌরবের,পান্ডবের,ভীষ্মের,দ্রোণের,কর্ণের,কৃষ্ণের – প্রথমবার অঙ্কিত। অতঃপর বহুবারই ওই অরণ্যের নানাবৃক্ষতলে – কালী সিংগি থেকে রাজশেখর বসু, হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ থেকে বঙ্কিমের কৃষ্ণচরিত্র হয়ে বুদ্ধদেব বসু, ইরাবতী কার্ভে থেকে নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী এবং অবশ্যই পিটার ব্রুক্ … এমন কি প্রকাশ ঝা’র তথাকথিত “বাজারি ছবি” ‘রাজনীতি’ – প্রত্যেকজনেরই হাতধরে – আমার চিত্রার্পিতপ্রায় দাঁড়ানো। বিশ্রাম। বিতর্ক। কৌরবের,পান্ডবের,ভীষ্মের,দ্রোণের,কর্ণের,কৃষ্ণের মর্মাঙ্কিত ছবিগুলির বারংবার নির্মাণ। নিজ মর্মে। – ওই বারংবার নির্মাণ ঘটনায় “কর্ণকুন্তী সংবাদ”, “গান্ধারীর আবেদন” এবং “বিদায় অভিশাপ” – আরেক অবিস্মরণীয় অনুঘটক।
মহাভারতারণ্যে সতর্ক গমনের, আমার, আরেক পথপ্রদর্শক প্রেমেন্দ্র মিত্র – “মহাভারতে নেই”, “ভারতযুদ্ধে ঘনাদা”, “কুরুক্ষেত্রে ভজা ওরফে বৃহদ্ধজ’- এই গল্পত্রয়…
তবে ওই সকলই মহাভারতারণ্যে কিছুদূর অগ্রসর হওয়া এবং প্রত্যাবর্তন। নয় পথবিস্মৃত হওয়া। – জীবনের প্রায় মধ্যাহ্নে সহসা দুঃসাহসে আবারই সাধ জাগলো ওই মহারণ্যে পুনঃপ্রবেশের, দুঃসাহস জাগলো পথ বিস্মৃত হওয়ার। আরম্ভ হলো পুনর্যাত্রা – কালী সিংগি থেকে রাজশেখর বসু, হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ থেকে বঙ্কিমের কৃষ্ণচরিত্র হয়ে বুদ্ধদেব বসু, ইরাবতী কার্ভে থেকে নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী এবং অবশ্যই পিটার ব্রুক্ … এমন কি প্রকাশ ঝা’র তথাকথিত “বাজারি ছবি” ‘রাজনীতি’ – প্রত্যেকজনেরই হাতধরে এবং এক সময় দান্তেহেন বিয়াত্রিচেহীনতায় অনুভব হলো পথ হারিয়েছে…
পথ হারিয়েছে। তবু প্রতীক্ষা যদিবা ধ্বনিত হয় – কোনো কপালকুন্ডলার কন্ঠে – “পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ” অথবা এই সূচীভেদ্যতার আবহে পরদৃশ্যমান হয় কোনো বিয়াত্রিচে …সুতরাং বহাল হইল এই মানচিত্রহীন, কম্পাসহীন গমন – পথে নয়, পথান্তরে। সংশয়ে। মর্মগত তর্কে,বিতর্কে, আলোচনায়, কল্পনায়।
এইবারের এই মহাভারতারণ্য অভিযানে, এতাবৎ নানান স্থানাঙ্কে যে সমস্ত তর্কে,বিতর্কে মর্ম উদ্দীপিত তারই একটি খতিয়ান রক্ষণহেতু আমার এই বাক্যপ্রচেষ্টা।
আমি নিশ্চিত যে বহু নিবিড়পাঠকজনের, বহু প্রকৃত বিদ্বজ্জনের মর্ম একই রকমের তর্কে,বিতর্কে উদ্দীপ্ত হয়েছে বহুবার। হবে বহুবার। সুতরাং আমার মহাভারত বিষয়ে সামান্য পাঠের গন্ডিতে যে সকল ভাবনার সন্ধান আমি পেয়েছি তাদেরকে বাদ দিয়ে, কেবলমাত্র সেই সমস্ত ভাবনাগুলি, যাদেরকে আমি আমার পাঠপরিধিতে পাইনি তাদেরকেই শুধু দিতে চাইছি অক্ষর-রূপ।
অর্জুনপর্বঃ “বহুদূর বহা গেল সাধের প্রতিমা”
১।
হালের খবর গুরুতর হলেও একদা শিক্ষিত,অশিক্ষিত,কুশিক্ষিত –সিংহ ভাগ বাঙ্গালীই নিম্নোধৃত পংক্তিটির সঙ্গে – ছিল পরিচিতঃ
“ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুয়ুৎসবঃ। মামকাঃ পাণ্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয়” ॥
“গীতা”র এই নাটকীয় আরম্ভটি মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অন্তর্গত পঞ্চবিংশতিতম অধ্যায়। কাশীরাম দাসের জবানীতে এর পরবর্তী অংশ হয় এইঃ
সঞ্জয় বলেন, রাজা শুন সাবধানে।
ধনু ঊর্দ্ধে নিয়া পার্থ কহে নারায়ণে।।
দুই দল মধ্যে রথ রাখ নারায়ণ।
যতেক বিপক্ষগণে করি নিরীক্ষণ।।
কার সনে যুঝিব, মারিব কারে বাণ।
ক্ষণেক রাখহ রথ পুরুষ-প্রধান।।
এত শুনি রথ স্থির কৈলা নারায়ণ।
যতেক বিপক্ষ পার্থ করে নিরীক্ষণ।।
পিতৃতুল্য পিতামহ ভীষ্ম মহাবীর।
মন্মথ জিনিয়া মূর্ত্তি সুন্দর শরীর।।
*
একে একে কুরুগণে কৈল নিরীক্ষণ।।
জ্ঞাতি বন্ধু বান্ধব মাতুল গুরুজন।
একে আরোধিক রূপ সবেতে সমান।।
যুঝিবারে আইল গুরু জ্ঞাতি বন্ধুগণ।
কোন্ শক্তি এ সবারে করিব নিধন।।
যদি কদাচিৎ আমি মারব সবারে।
মোর সম নিদারুণ নাহিক সংসারে।।
মোর সম পাপী তবে নাহি অতিশয়।
এতেক ভাবিয়া কৃষ্ণে কহে ধনঞ্জয়।।
অবধানে জগন্নাথ শুন নিবেদন।
যুঝিবারে আইল আমার বন্ধুগণ।।
কারে অস্ত্র মারিব যুঝিবে কোন্ বীর।
শোকেতে আকুল হৈল আমার শরীর।।
অঙ্গ মোর হৈল শ্লথ বল নাই তনু।
শরীর লোমাঞ্চ হৈল কাঁপে বক্ষ জানু।।
জ্ঞাতি বন্ধু বধিব রাজ্যের অভিলাষে।
যুদ্ধে কার্য্য নাহি, পুনঃ যাব বনবাসে।।
এত বলি অধোমুখে বসিলা অর্জ্জুন।
হাত হৈতে খসিল গাণ্ডীব শর তূণ।।
বেদব্যাসে হয় এইঃ
সঞ্জয় উবাচ।
এবমুক্তো হৃষীকেশো গুডাকেশেন ভারত। সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে স্থাপয়িৎবা রথোত্তমম্ ॥
ভীষ্মদ্রোণপ্রমুখতঃ সর্বেষাং চ মহীক্ষিতাম্ । উবাচ পার্থ পশ্যৈতান্সমবেতান্কুরূনিতি ॥
তত্রাপশ্যৎস্থিতান্পার্থঃ পিতৄনথ পিতামহান্। আচার্যান্মাতুলান্ভ্রাতৄন্পুত্রান্পৌত্রান্সখীংস্তথা ॥
শ্বশুরান্সুহৃদশ্চৈব সেনয়োরুভয়োরপি । তান্সমীক্ষ্য স কৌন্তেয়ঃ সর্বান্বন্ধূনবস্থিতান্ ॥
কৃপয়া পরয়াঽবিষ্টো বিষীদন্নিদমব্রবীৎ ।
অর্জুন উবাচ।
দৃষ্ট্বেমং স্বজনং কৃষ্ণ যুয়ুৎসুং সমুপস্থিতম্ ॥
সীদন্তি মম গাত্রাণি মুখং চ পরিশুষ্যতি। বেপথুশ্চ শরীরে মে রোমহর্ষশ্চ জায়তে॥
গাণ্ডীবং স্রংসতে হস্তাত্ৎবক্বৈব পরিদহ্যতে।
ন চ শক্নোম্যবস্থাতুং ভ্রমতীব চ মে মনঃ ॥
নিমিত্তানি চ পশ্যামি বিপরীতানি কেশব।
ন চ শ্রেয়োঽনুপশ্যামি হৎবা স্বজনমাহবে ॥
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ ।
কিং নো রাজ্যেন গোবিন্দ কিং ভোগৈর্জীবিতেন বা ॥
অর্থাৎ অর্জুনের সেই প্রখ্যাত বিষাদযোগ। যা কবি যুগান্তর চক্রবর্তীর মর্মে, বিংশ শতকে এইভাবে প্রতিফলিতঃ
চিরসখা, বহুদূর বহা গেল সাধের প্রতিমা।
চতুর্দিকে স্মৃতিরেখা, চালচিত্রে বিস্মৃত পুরাণ।
অচ্ছোদতমসাকূলে নিরঞ্জন হবে যে প্রয়াণ
কোথা স্তোত্রমালা, কোথা শোকরাগ! এ-চিরপূর্ণিমা
এ-চির প্রকাশ, যারে অমরতা দানে তেজোময়
নশ্বর নশ্বর রেখা চতুর্দিকে সমুত্থ, প্রখর,
একি নয় প্রত্যক্ষের আক্রমণ, নয় রূপান্তর
তোমার রূপের, তুমি এ বিরহে কোথা জগন্ময়।
তোমার নিয়ত বাঁশি বেজে যায়, কিন্তু সে-নিঃস্বর
ক্ষমাহীনতারে ভুলে থাকা জানি আরো ক্ষমাহীন।
কোথা তব শূন্যতার শাদা ক্রোধ, পরিণামহীন
কেন নাম, কোথা নামহীন কবি, প্রেরণা, অক্ষর।
তোমার শৃঙ্খল ওই পড়ে আছে, ওই অভিজ্ঞতা
আজো নাম ধরে ডাকে। মাথা তোলে দিব্য অক্ষমতা।
অর্জুন-যখন এইমতো বিষাদগ্রস্থ – তখনি তাঁর সঙ্গে –অন্ততঃ আমার বেশী সখ্য স্থাপিত। মনে আসেন রিল্কেঃ
Who, if I cried out, would hear me among the Angelic
Orders? And even if one were to suddenly
take me to its heart, I would vanish into its
stronger existence.
জীবনানন্দঃ “আমরা দন্ডিত হয়ে জীবনের শোভা দেখে যাই
মহাপুরুষের বাণী চারিদিকে কিলবিল করে…”
…
“ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ ।
কিং নো রাজ্যেন গোবিন্দ কিং ভোগৈর্জীবিতেন বা ॥“
“অঙ্গ মোর হৈল শ্লথ বল নাই তনু।
শরীর লোমাঞ্চ হৈল কাঁপে বক্ষ জানু।।
জ্ঞাতি বন্ধু বধিব রাজ্যের অভিলাষে।
যুদ্ধে কার্য্য নাহি, পুনঃ যাব বনবাসে।।“
-এই সকলই যুগান্তর চক্রবর্তীর অক্ষরে “দিব্য অক্ষমতা”
অতঃপর শ্রীকৃষ্ণের বানী, বিশ্বরূপ – সমূহের দ্বারা দন্ডিত অর্জুন।
“Angelic Orders” এর “stronger existence” এর দ্বারা পিষ্ট হওয়ার ভয়ে ভীতও কি?
অর্জুনের “অভিজ্ঞতা”ই তাকে দিয়ে উচ্চারণ করিয়ে নিয়েছেঃ “ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ…”
এই পর্বে অর্জুন, আমার চিন্তায়, existentialist ও বটে। এখানে এসে মনে আসে Steven Earnshaw’র
Existentialism: A Guide for the Perplexed: “What sets it (existentialism) from most other philosophies is that it begins with the “individual” rather than the “Universal” and so doesn’t aim at to arrive at general truths”. – অর্জুনের মর্মস্থানের কোনোখানে তার জন্মগত ক্ষত্রিয়ত্ব, ঐ বিষাদমুহুর্তেও ছিল জাগরূক। ফলতঃ তার “ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ…” উচ্চারণের আবহে ক্রিয়াশীল অপরাধবোধও। অপরাধবোধ –কেননা জন্মগত ক্ষত্রিয়ত্ব তাকে শিক্ষা দিয়েছে এই যুদ্ধ তার করনীয়। এই যে শিক্ষা তা’ই ওই সময়ের, ওই শ্রেণীর “Universal Truth” । তার প্রতিপক্ষে অর্জুন সেই মুহুর্তে ভাবিত এবং আক্রান্ত তার একান্ত নিজস্ব “সত্য”টির সমুখে। এই “individual Truth”এর প্রতি আনুগত্যহেতুই অর্জুন সেই মুহুর্তে আমার চিন্তায়, existentialist। Universal এবং individual Truth এর দ্বন্দ্বেই অর্জুন বিষাদগ্রস্থ। অর্জুন আক্রান্ত অপরাধবোধে।
আমার চিন্তায়- অর্জুনের মর্মে ক্ষত্রিয়ত্বজনিত ওই অপরাধবোধটুকু ক্রিয়াশীল না থাকলে কেবলমাত্র কৃষ্ণের নানান যোগ ইত্যাদি বিষয়ে গাহিত শিবগানে অর্জুনের পক্ষে পুনরায় “যোদ্ধা” হয়ে উঠবার সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়তো নগণ্য। ধূর্ত কৃষ্ণ ওই দূর্বলতা বিষয়ে বিদিত ছিল বলেই তার গীতা নামের বাগাড়ম্বর (গীতার কাব্য ও কাব্যগুণের বা তার অন্তর্গত দার্শনিকতার বিচার এই মুহুর্তে আমার অবধানের বিষয় নয়)। বাগাড়ম্বরই – কেননা গীতায় যে সমস্ত দর্শন হয় আলোচিত সেই সমস্তই সনাতন ভারতীয় দর্শন কিন্তু সমূহ দর্শনালোচনান্তে কৃষ্ণ মূলতঃ সেই সমস্ত দর্শনের সারকে “interpret” করে “haulocast” এর সপক্ষে।
২।
গীতাবাগাড়ম্বর অন্তিমে, ভীষ্মপর্বের দ্বিচত্বারিংশত্তম অধ্যায়ের অষ্টাদশ পর্বের অন্তিমে যখন “অর্জুন কহিলেন ‘হে কৃষ্ণ! তোমার অনুগ্রহে মোহান্ধকার নিরাকৃত হওয়াতে আমি স্মৃতিলাভ করিয়াছি…” ইত্যাদি বলেকয়ে আবার যুদ্ধে যাবে তার ঠিক আগের মুহুর্তে অর্জুনের মর্মকথা, যুগান্তর চক্রবর্তী’র অক্ষরে এইরূপঃ
উত্তর তোমার সব জানা আছে, দিয়েছ উত্তর।
কিন্তু জিজ্ঞাসাই যার জীবন, অব্যক্ত হতে যারে
অব্যক্তে পৌঁছাতে ফের ব্যক্ত হতে হয় বারে বারে
সেই জানে কুরুক্ষেত্র,—তাই প্রশ্ন, তাই, অতঃপর…
বিপন্নতা আমারই তো, পরাজয়, সেও তো আমার,
জানি তুমি রাখো নাই আমার ধ্বংসের কোনো সীমা।
চতুর্দিক জুড়ে দেখি জল মাটি পাতাল নীলিমা
এবং তোমার মুখ,—তাই প্রশ্ন, তাই, অশ্রুধার…
অগ্রসর হতে হবে আরো দূর, কিন্তু কত দূর?
শিল্পের আক্রোশ থেকে চৈতন্যের দূরত্ব যতটা?
ব্যবহৃত হতে হবে, তবু যার শেষ বিরুদ্ধতা
ভাঙে সব অভিজ্ঞান, গর্ভের বিশাল অন্তঃপুর
দীর্ণ করে। শুরু হল নশ্বর অলীক যাতায়াত।
তাই প্রশ্ন অরুন্তুদ, ধর্মহীন, তাই, রক্তপাত…
কার রক্তপাত? কৌরবের? দ্রোণের? ভীষ্মর? না’কি অর্জুনের মর্মরক্তপাতের ইঙ্গিত যুগান্তরের কবিতায়? যে অর্জুন অস্তিত্ববাদী, যে অর্জুন বিষাদমগ্ন সেই অর্জুনের মর্মে গীতাগপ্পো শ্রবণান্তেও প্রশ্ন থাকা সম্ভব। দ্বিধা থাকা সম্ভব। ব্ল্যাক্বোর্ডের সম্মুখে খাড়ান দেওয়া যে বালক সহজ অঙ্কটি ভুল করলো তার প্রতি করুণাহাস্যটি ছুঁড়ে দিয়ে সপ্তমশ্রেনীর আঁকমাত্রধুরন্ধর যে “ভিলেজ স্কুল মাস্টার” তার প্রতি ওই বালকের অনুচ্চারিত ব্যঙ্গ, বিদ্বেষ ও আপন অসহায়তার ভাষারূপ অবশ্যইঃ
“উত্তর তোমার সব জানা আছে, দিয়েছ উত্তর“
কিন্তু যে সকল প্রশ্ন
“How many roads must a man walk down
Before you call him a man?
How many seas must a white dove sail
Before she sleeps in the sand?” – হেন, যাদের “উত্তর” – “my friend, is blowin’ in the wind
The answer is blowin’ in the wind…” তাদের “উত্তর” পাওয়া যাওয়ার পরেও ওই অ-সুবোধ ছাত্রটির মনে হয়, মনে হতে বাধ্য হয়ঃ
“জিজ্ঞাসাই যার জীবন, অব্যক্ত হতে যারে
অব্যক্তে পৌঁছাতে ফের ব্যক্ত হতে হয় বারে বারে
সেই জানে কুরুক্ষেত্র,—তাই প্রশ্ন, তাই, অতঃপর…
বিপন্নতা আমারই তো, পরাজয়, সেও তো আমার” …
অর্জুনের এই বোধ যদি সত্য হয় তাহলে গীতাগপ্পো শ্রবণান্তে সে যখন ভালোমানুষ মুখ করে বলেঃ “হে কৃষ্ণ! তোমার অনুগ্রহে মোহান্ধকার নিরাকৃত হওয়াতে আমি স্মৃতিলাভ করিয়াছি, আমার সকল সন্দেহই দূর হইয়াছে, এক্ষণে তুমি যাহা কহিলে, আমি অবশ্যই তাহার অনুষ্ঠান করিব”। ( কালীপ্রসন্ন সিংহ) – তৎক্ষণাৎ হয় আমার সন্দেহের উদ্রেক। আমি এইরূপ চিন্তনে বাধ্য হই, যে, এইবার অর্জুন মূলতঃ যা টের পেলো তা হলো যুদ্ধে নিন নিযুক্তিভিন্ন আর গত্যন্তর নেই কেননা উত্তর যার “সব” জানা আছে তাকে তর্কে যাবেনা পরাস্ত করা। অতএব পেটে যা’ই থাক মুখে অন্ততঃ “জী হুজুর” বলাই শ্রেয়…
কিন্তু অর্জুনের ওই অস্তিত্ববাদী, জনদরদী, যুদ্ধবিরোধী ভাবমূর্তিটি – যদিবা হয় তা তাৎক্ষণিকও – তার প্রতি আমি হই সন্দিহান – পরবর্তীতে – মহাভারতারণ্যে আরো কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পরে – “শান্তি পর্ব”তে এসে …
৩।
“শান্তিপর্বাভিমুখে যাত্রার পূর্বে বলে নিতে চাই পিটার ব্রুকের মহাভারত বিষয়ে অনতিবিস্তারে কিছু ভাবনাকথা। অনতিবিস্তারে –কেননা পিটার ব্রুকের মহাভারতচিন্তার ছায়া আমার মর্মে এতোই গভীর ও বিস্তৃত যে তাকে অক্ষরে প্রকাশ করতে গেলে আমাকে প্রণয়ন করতে হবে একটি থানইঁটাকৃতি গ্রন্থের। এই মুহুর্তে এ’ই বলি,যে, এই ঘটনাও বহুদিন রাষ্ট্রপ্রায়, যে, পিটার ব্রুকের মহাভারতের অভিনেতারা নানান দেশের – যেমন ভীষ্ম চরিত্রে পশ্চিম আফ্রিকার Mandinka উপজাতির অভিনেতা Sotigui Kouyat, দ্রৌপদী চরিত্রে ভারতীয় মল্লিকা সরাভাই ইত্যাদি।
কৃষ্ণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রিটিশ অভিনেতা Bruce Myers। Bruce Myers অভিনয় শুধু নয় তাঁর মুখাবয়বের প্রতিটি রেখাতেও ওই নাটকে তিনি পাক্কা এক ডিপ্লোম্যাট। হ্যাঁ, আমার মর্মে এই সকলি ইঙ্গিত পরিচালক পিটার ব্রুকের নিজস্ব মহাভারত ব্যাখ্যার। কৃষ্ণ তাঁর চোখে একজন ধুরন্ধর ডিপ্লোম্যাট মাত্র তা’ই Bruce Myers এর “ম্যানারিজম” তাঁর কাছে হয়ে ওঠে প্রয়োজনীয়। এতদ্ভিন্ন Bruce Myers ইংরেজ এবং ইংরেজ হয় সেই একমাত্র জাতি যার মানচিত্রে, একদা, সূর্যাস্ত হতোনা। এই বিস্তারিত ভূখন্ডকে নিজ করতলগত করেছিল ইংরেজ কেবলি “ডিপ্লোমেসি”তে নয় । তাদের বিশ্বজয়ের আবডালে রয়েছে ঘোষিত অঘোষিত, জ্ঞাত অজ্ঞাত বহু “haulocast”, “divide and rule”, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র,গুপ্তহত্যা থেকে আরম্ভ করে যতোদূর অন্ধকার যায় কল্পনা করা তারো চেয়ে গভীরতর পাপের কাহিনী। Bruce Myers সেই পাপেরো প্রতীক। সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক। যে পাপগুলি করিয়েছে কৃষ্ণ তার ডিপ্লোমেসি’র দ্বারা, যে সাম্রাজ্যবাদ – কৌরবকূল ধ্বংসের মূল্যে স্থাপন করেছে কৃষ্ণ।
অর্জুন চরিত্রের অভিনেতা Vittorio Mezzogiorno ইতালীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইতালীর ভূমিকা এবং ইতালী-ইংরেজ পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে অর্জুনের ভূমিকায় একজন ইতালীয় অভিনেতার উপস্থাপনা অবশ্যই, আমার মর্মে, রাখে কোনো ইঙ্গিত…
পিটার ব্রুকের এই “interpretation” , মহাভারতের, মহাভারতীয় চরিত্রাবলীর, আমার মর্মে হয় অতিশয় গ্রহণীয় ও আদরনীয়। কৃষ্ণ যে গীতাগপ্পে ঢাকা, ডিপ্লোমেসিতে পারদর্শী একজন সাম্রাজ্যবাদী এবং তার প্রভাব যে কতোদূর নিবিড় প্রসারী তার আঁচ নিতে এইবার আমরা যাত্রা করবো শান্তিপর্বাভিমুখে।
৪।
শান্তিপর্ব। সপ্তম অধ্যায়। – এই পর্বে খুলেযাচ্ছে নানান রহস্যের জট। কিন্তু তাতে কেবলি প্রকটিত হচ্ছে যুদ্ধকালীন কুকাজগুলির ব্যাপ্তি। যুধিষ্ঠির জ্ঞাত হচ্ছে কর্ণের জন্ম বিষয়ে। তাতে প্রমাণিত হচ্ছে এই যুদ্ধের আরেক অসারতা। জানা যাচ্ছে কর্ণের জীবনের মারাত্মক অভিশাপগুলি। যেনবা কোনান ডয়েলীয় গোয়েন্দা কাহিনীর শেষ চ্যাপ্টার – সকলেই হল্ ঘরে। কেউ দাঁড়িয়ে। কেউ বসে। আর হোম্স্ সাহেব বলে চলেছেন। শুনতে শুনতে হঠাৎই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো –
শুনতে শুনতে হঠাৎই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো কে? না, নাটকের পূর্বাহ্নে যাকে ধরেছিল বিষাদযোগে বা বিষাদরোগে – সেই অর্জুন নয়। ফুঁপিয়ে উঠলো “দ্যা গ্রেট গেম্ব্লার”। দেবানন্দ। যুধিষ্ঠির। দ্বৈপায়ন ব্যাসকৃত হেডিংঃ “যুধিষ্ঠিরস্য পরিশোচনম্”। কালীপ্রসন্নর হেডিংঃ “সমস্তকুলধ্বংসে যুধিষ্ঠিরের বিষাদ”।
“হায় এ কী হইল, এই সকল আমরা কী করিলাম, হায় হায়, আমি আর একদন্ড এই রাজসুখ চাইনা…”
ন হি কৃৎস্নতমো ধর্মঃ শক্যঃ প্রাপ্তুমিতি শ্রুতিঃ। পরিগ্রহবতা তন্মে প্রত্যক্ষমরিসূদন॥
ময়া নিসৃষ্টং পাপং হি পরিগ্রহমভীপ্সতা। জন্মক্ষয়নিমিত্তং চ প্রাপ্তুং শক্যমিতি শ্রুতিঃ॥
স পরিগ্রহমুৎসৃজ্য কৃৎস্নং রাজ্যং সুখানি চ। গমিষ্যামি বিনির্মুক্তো বিশোকো নির্মমঃ ক্বচিৎ।
প্রশাসধ্বমিমামুর্বী ক্ষেমাং নিহতকণ্টকাম্। ন মমার্থোঽস্তি রাজ্যেন ভোগৈর্বা কুরুনন্দন॥
এতাবদুক্ৎবা বচনং কুরুরাজো যুধিষ্ঠিরঃ। উপারমত্ততঃ পার্থঃ কনীয়ান্প্রত্যভাষত॥ ॥
ইত্যাদি ইত্যাদি, এট্সেট্রা এট্সেট্রা, ভেগেরা গেভেরা -ইতি শ্রীমন্মহাভারতে শান্তিপর্বণি রাজধর্মপর্বণি সপ্তমোঽধ্যায়ঃ॥
মোদ্দা হয় এই কথা’ই যে এইবার বেদটেদের নির্দেশটির্দেশ মেনে – ভিক্ষাটিক্ষা করে, বনেফনে গিয়ে কোনোভাবে পাপটাপগুলি ধুয়েটুয়ে পুনর্জন্ম এড়িয়ে যাওয়ার প্ল্যান্ যুধিষ্ঠিরের। “এক্ষণে আমরা শত্রু বিনাশ করিয়া ক্রোধশূন্য হইয়াছি বটে, কিন্তু দুর্নিবার শোক আমাকে একান্ত ব্যাকুল করিতেছে। পাপকর্মের অনুষ্ঠান করিলে তাহার প্রচার মাঙ্গলিক কার্যের অনুষ্ঠান,অনুতাপ,দান,তপস্যা,শান্তি,তীর্থগমন,শ্রুতিস্মৃতি পাঠ ও জপদ্বারা উহা বিনষ্ট হইয়া থাকে। লোকে ত্যাগশীল হইলে পাপানুষ্ঠানে বিরত হয়। বেদে নির্দিষ্ট আছে যে, ত্যাগশীল ব্যক্তিকে জন্মমৃত্যুজনিত যন্ত্রণা সহ্য করিতে হয়না। … অতএব আমি সমস্ত রাজ্যসপম্পদ্ পরিত্যাগপূর্বক শোকদুঃখবিবর্জিত হইয়া অরণ্যে গমন করিব। আমার রাজ্য বা উপভোগ্য দ্রব্যে কিছুমাত্র অভিলাষ নাই”। (কালীপ্রসন্ন সিংহ)
ন মমার্থোঽস্তি রাজ্যেন ভোগৈর্বা কুরুনন্দন॥ – বলছে যুধিষ্ঠির। যুদ্ধের শেষে।
“ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ । – বলেছিল অর্জুন। যুদ্ধের পূর্বাহ্নে।
কিন্তু সেই অর্জুন, এইবার, যুধিষ্ঠিরের বিষাদযোগ উপনীত হলে, কি বলছে?
বৈশম্পায়ন উবাচ।
অথার্জুন উবাচেদমধিক্ষিপ্ত ইবাক্ষমী। অভিনীততরং বাক্যং দৃঢবাদপরাক্রমঃ॥
দর্শয়ন্নৈন্দ্রিরাত্মানমুগ্রমুগ্রপরাক্রমঃ। স্ময়মানো মহাতেজাঃ সৃক্কিণী পরিসংলিহন্॥
অর্জুন উবাচ।
অহো দুঃখমহো কৃচ্ছ্রমহো বৈক্লব্যমুত্তমম্। যৎকৃৎবাঽমানুষং কর্ম ত্যজেথাঃ শ্রিয়মুত্তমাম্॥
শত্রূন্হৎবা মহীং লব্ধ্বা স্বধর্মেণোপপাদিতাম্। হতামিত্রঃ কথং স ৎবং ত্যজেথা বুদ্ধিলাঘবাৎ॥
ক্লীবস্য হি কুতো রাজ্যং দীর্ঘসূত্রস্য বা পুনঃ। কিমর্থং চ মহীপালানবধীঃ ক্রোধমূর্চ্ছিতঃ॥
যো হ্যাজিজীবিষেদ্ভৈক্ষং কর্মণা নৈব কস্য চিৎ। সমারম্ভান্বুভূষেত হতস্বস্তিরকিঞ্চনঃ। সর্বলোকেষু বিখ্যাতো ন পুত্রপশুসংহিতঃ॥
কাপালীং নৃপ পাপিষ্ঠাং বৃত্তিমাসাদ্য জীবতঃ। সংত্যজ্য রাজ্যমৃদ্ধং তে লোকোঽয়ং কিং বদিষ্যতি॥
তখন দৃঢ়পরাক্রম অর্জ্জুন ধর্মরাজের বাক্যশ্রবণে ক্রুদ্ধ হইয়া সৃক্কণী লেহন করিয়া গর্বিতভাবে কহিলেন “মহারাজ! অলৌকিক কার্য্য সম্পাদন করিয়া ক্লীবের ন্যায় রাজশ্রী পরিত্যাগ করিতে বাসনা করা নিতান্ত আক্ষেপের বিষয়। শত্রুসংহারপূর্বক ধর্মানুসারে পৃথিবীর অধীশ্বর হইয়া সমুদয় পরিত্যাগ করা নিতান্ত নির্বোধের কার্য, সন্দেহ নাই। “…ইহলোকে দরিদ্রতা অপেক্ষা গুরুতর দোষ আর কিছুই নাই। …” (কালীপ্রসন্ন সিংহ) ইত্যাদি ইত্যাদি, এট্সেট্রা এট্সেট্রা, ভেগেরা গেভেরা…
অতঃপর ভীম থেকে দ্রৌপদী হয়ে নকুল,সহদেব – সক্কলের মুখেই এক রা’। এখন রাজা হয়েছো, বাওয়া, আর ছাড়াছাড়ি নেই। অনেক হয়েছে। এবারে বাপু কিঞ্চিৎ মৌজমস্তি করা যাক্।
ওক্কে। ভীম থেকে দ্রৌপদী ,নকুল,সহদেবদের নিয়ে ঝামেলা নেই। এরা প্রত্যেকেই, কুন্তীসহ, যুদ্ধটাই চেয়েছিল। কিন্তু অর্জুন? যে অর্জুন বিষাদযোগে আক্রান্ত হয়েছিল যুদ্ধের প্রাক্কালে – ভীষ্ম বা দ্রোণকে কিভাবে সে হত্যা করবে, কেনই করবে এই সব নিয়ে হয়েছিল যুদ্ধবিমুখ সে’ই আজ কি অবলীলায় বলছে “শত্রূন্হৎবা” বলছে “শত্রুসংহারপূর্বক” – সে ভীষ্ম, দ্রোণ থেকে শতভ্রাতা,তাদের সন্ততি – সকলকেই মেনে নিচ্ছে “শত্রু” বলে … কেন? কিভাবে? এ’কি যুদ্ধকালীন ঐ সকল “আত্মিয়”,”গুরুজন”দের সহিংস কীর্তিকলাপ দেখার পরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে? – হয় এই সত্যই যে দ্রোণ ও দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা অবশ্যই প্রদর্শন করেছে যথেষ্ট হিংসা, হিংস্রতা কিন্তু ভীষ্ম তা করেনি। বরং যুদ্ধকালেও চেষ্টা নিয়েছে যথাসম্ভব কম লোকক্ষয়ের, যুদ্ধ থামানোর…
যাইহোক্
প্রশ্ন একঃ অর্জুনের এই পরিবর্তন কি এ’কি যুদ্ধকালীন ঐ সকল “আত্মীয়”,”গুরুজন”দের সহিংস কীর্তিকলাপ দেখার পরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে?
প্রশ্ন দুইঃ না’কি অর্জুনের মনে হয়েছে, এই, যে, শালা সব কুকাজগুলি করিয়ে নিয়ে, পাপটাপ ইত্যাদি, এখন সাধুত্বের ভড়ং দেখানো কেন বাওয়া?
না’কি কৃষ্ণের গীতাগপ্পে তার মগজ এমনই ধোলাইকৃত হয়েছে, যে, সে’ও, যুদ্ধকালেই, ক্রমে, পরিণত হয়েছে কৃষ্ণহেন এক “haulocast”পন্থী pervert এ?
না’কি “প্রক্ষেপনবাদী”দের কথা’ই সত্য, যে, গীতা অংশটি আদপে মহাভারতে ছিলইনা, পরে কেউ বা কারা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে বা ধান্দায় দিয়েছে জুড়ে?
জানিনা। ভাবি। যতো ভাবি ততোই হারিয়ে যায় পথ। হারিয়ে যায় মহাভারতারণ্যের গহনে। সূচীভেদ্যতায় …
অসাধারণ প্রশ্নের বিচ্ছুরণ। পরের কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম
অসাধারণ প্রশ্নের বিচ্ছুরণ। পরের কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম
I am sure this post has touched all the internet visitors, its really really pleasant
paragraph on building up new webpage.