
গ্রান্ট ক্যাডওয়েল-এর কবিতা
অনুবাদ- তৃণা চক্রবর্তী
গ্রান্ট ক্যাডওয়েল এর জন্ম ১৯৪৭ সাল। অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রখ্যাত কবি। ১৯৭০-এর দশকে কিছু সময় ইউরোপে কাটানোর পর থেকে বরাবরের মতোই অস্ট্রেলিয়ায়। বর্তমানে তিনি মেলবোর্ন ইউনিভারসিটির পোয়েট্রি অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিভাগের অধ্যাপক। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ান পোয়েট্রি সেন্টারের ন্যাশনাল পোয়েট্রি জার্নাল, “ব্লু ডগ”-এর সম্পাদক। লিখেছেন কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস। হাইকু-র ইতিহাস নিয়েও তাঁর কাজ উল্লেখযোগ্য। তাঁর কবিতা অনুদিত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়। এক আশ্চর্য সংবেদনশীলতা ও একইসঙ্গে নিরুত্তাপ দূরত্ব তার কবিতাগুলিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তার সঙ্গে রয়েছে নানা ধরণের এক্সপেরিমেন্টেশন, বারবার ছক ভেঙে ফেলা ও বিপদসীমার কাছাকাছি গিয়ে ফের নিজেকে পুনরাবিষ্কার করা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাব্যগ্রন্থ, “ড্রিমিং অফ রবার্ট ডি নিরো”, “রিফ্লেক্সন অফ টেম্পোরারি সেল্ফ” “লাভ অ্যান্ড ডিঅ্যারেঞ্জমেন্ট” (উপন্যাস) ইত্যাদি বারবার পড়ার দাবী রাখে। আপাত সহজ কবিতাগুলির আড়ালে থাকে নিবিড় দর্শন ও উপলব্ধির এক স্বতন্ত্র জগত। অনুবাদ ও ভূমিকা - তৃণা চক্রবর্তী
যেহেতু মেয়েটি
যেহেতু কেউ তার সঙ্গে কথা বলত না
মেয়েটি নিজের সঙ্গে কথা বলত
সে নিজের সঙ্গে কথা বলত
যেহেতু কেউ তার সঙ্গে কথা বলত না
যেহেতু সে একাই থাকত
যেহেতু তার আর কোনও পরিবার ছিল না
যেহেতু সে খুব বেশি রুজ ব্যবহার করত
যেহেতু তার ব্যবহৃত সুগন্ধি ছিল খুব তীব্র
যেহেতু সে বিড়ালদের সঙ্গে তার সন্তানের মতো কথা বলত
যেহেতু তাদের খাওয়ানোর জন্য সে সিঁড়িতে রেখে দিত যকৃৎ ও বৃক্ক
যেহেতু সে সবসময় জিজ্ঞেস করত, তুমি কি আমার টমটম কে দেখেছ?
যেহেতু সে বলত, কে যেন তার সব কিছু চুরি করে নিয়েছে
যেহেতু সে বিশ্বাস করত, সব কিছুই নাকি টি.ভি-তে শোনা
যেহেতু প্রতিবেশীরা বলত, সে ক্রমাগত অসহ্য হয়ে উঠছে
যেহেতু সে নিজের সঙ্গে কথা বলত
কেউ তার সঙ্গে কথা বলত না
কেউ তার সঙ্গে কথা বলত না
যেহেতু মেয়েটি নিজের সঙ্গে কথা বলত
আজ
একটা প্রজাপতি
ফুটপাথে মরে পড়ে আছে
আমি ওকে তুলে নিই
আর একটা ঘন ঝোপের ওপর রেখে দিই
ওকে এখন অনেক বেশি প্রানবন্ত দেখাচ্ছে।
তুমি দেখলে
তুমি দেখলে, তোমার বেশ ভালো লাগছে
তোমার এটা এত ভালো লাগল
যে তুমি চাইলে এই ভালো লাগা সারাজীবন থাকুক
আর, এটা চলে গেল
তুমি দেখলে, তোমার খুব খারাপ লাগছে
তোমার এটা এত খারাপ লাগল
যে তুমি চাইলে এই খারাপ লাগা চলে যাক
আর, এটা থেকে গেল
হলুদ রঙের ওয়াকম্যান
বাসটায় গিজগিজে ভিড়
সামনের দিক থেকে কে যেন চেঁচিয়ে বলল
আমাকে একটা সীট ছেড়ে দেবেন প্লীজ?
আমার একটাই পা আছে শুধু
অনেক ঠেলাঠেলি করে শেষ অবধি
ছেলেটি তার সীট পেল
কমবয়সী একটা ছেলে
কতই বা- বছর কুড়ি
সারা বাস থমথমে, নিশ্চুপ
শুধুমাত্র ওই মেয়েটি ছাড়া
ওই যে, ম্যাডোনার সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে
কানে হলুদ রঙের জোরালো ওয়াকম্যান
আমেরিকা
যদিও জোয়ার আসবে খুব অল্পই
তবু জেনো, তুমি সাঁতরাতে পারবে ঠিকই
ডাক্তার কি লজেন্স বানায়?
ওয়েটার কি চিকিৎসা করে?
রিসেপ্শনিস্ট কি ডিক্টেশন দেয় ?
চেয়ারম্যান কি পৌঁছে দেয় চিঠি?
ড্যানিকে ডাক্তার ইনজেকশন দিয়েছিল
ড্যানি সুস্থ হতে চেয়েছিল বলে
ও কিছু খবর পড়ল কাগজে
তারপর টি. ভি দেখল
সমস্ত দোকান ঘুরে দেখে
শেষে ও বেড়াতে গেল
ওরা আমাদেরকে একটা ছবি পাঠিয়েছে
আমরা যাতে ওদের চিনতে পারি, যখন দেখা হবে
যদি তোমার টাকার প্রয়োজন হয়
তুমি ব্যাঙ্কে যাবে
যদি তোমার শরীর খারাপ লাগে
তুমি ডাক্তার ডাকবে
যদি তুমি ঠিকঠাক টেবিল পেতে চাও
তোমাকে আগে থেকে বুকিং করতে হবে
যদি তুমি কলেজে যাও
তুমি কিছু ভালো শিক্ষা পাবে
আমি কলেজ শেষ করলাম
তারপর একটা অফিসে কাটিয়ে দিলাম দুবছর
ওদেরকে দেখে মনে হয় ওদের অনেক টাকা
এবার সময় হয়েছে নতুন গাড়ি কেনার
এবার বিয়েটা সেরে ফেলা ভালো
একদম ঠিক, তুমি ওষুধের দোকানেই ওষুধ পাবে একমাত্র
যদি আমার অনেক টাকা থাকত
আমি একটা আসত দ্বীপ কিনে ফেলতাম
তোমাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হলে
তুমি আবার একটা চাকরি খুঁজবে
যদি ওরা ডিস্কো থেক-এ যায়
ওরা নাচবে
যদি ওর পোশাক পরিষ্কার না থাকে
ও অন্য আর একটা পোশাক পরবে
যদি ওষুধ খেতে ওর ভালো না লাগে
ও কিছুতেই খাবে না
যদি আমাকে কিছু টাকা দাও
আমি তোমার জন্য উপহার কিনতে পারি
এখন নয়, কিন্তু অল্প বয়সে মেয়েটি খুব সুন্দরী ছিল
এখন নয়, কিন্তু একসময় ছেলেটির অনেক টাকা ছিল
যখন ও অভিনয় করত
ও ঠিক ওইরকম গাড়ি পছন্দ করত
যেটা সকলের আগে দৌড়য়
যেহেতু তিন’টে বেজে গেছে
ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যাবে
যেহেতু ও সব টাকা খরচ করে ফেলেছে
ও আর ঘড়ি কিনতে পারবে না
অ্যান, সু এর তুলনায় কম ঝকঝকে
সু, অ্যান এর তুলনায় অনেক স্মার্ট
জিন, সু এর থেকে আরও ঝকঝকে
জিন, সব চাইতে সুন্দর মেয়ে
আমি বৃহস্পতিবার থিয়েটারে যাব
সু, আমার সঙ্গে যাবে
থিয়েটার শেষ হয়ে গেলে আমরা নাইট ক্লাবে যাব না
নাইট ক্লাবগুলোয় ভীষণ ভিড়
আমি একটা মাংসের ডিশ নেব
ও লবস্টার খাবে
থিয়েটার শেষ হয়ে গেলে আমাদের তেষ্টা পাবে খুব
তাই আমি বিয়ার কিনে আনব
আমি সু এর হোটেলে যাব ওর সঙ্গে
তখন ভীষণ রাত হয়ে যাবে
ওর বাবা মা ঘুমিয়ে পড়বে অনেকক্ষণ
ওরা আমাদের ওপর আর রাগ করতে পারবে না
কম্পিউটারগুলো নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে রাত্রিবেলা।
এই কবিতার লাইনগুলো ‘সিরকা -১৯৬০’ নামক একটি আমেরিকান ইংলিশ বই থেকে তুলে পরপর সাজিয়েছেন লেখক।
খুব ভালো লাগল, বিশেষত প্রথম দুটি কবিতা
প্রথম কবিতাটা ভীষণ ভালো লাগলো।