অরহ্যান ভেলি কানিক-এর কবিতা অনুবাদ – শর্বরী চৌধুরী
অরহ্যান ভেলি কানিক (১৪.৪.১৯১৪-১৪.১১.১৯৫০) একজন তুর্কী কবি। কানিক চেয়েছিলেন তুর্কী কবিতার পুরনো ঐতিহ্যবাহী রূপকে ভেঙে কবিতায় লোকায়ত ভাষা ব্যবহার করতে। কবিতা ছাড়াও তিনি প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন ও অনুবাদ করেছেন। কবিতায় অলঙ্কার শাস্ত্রের যেসব উপাদান, যথা-রূপক, উপমা, অতিশয়োক্তি, এসবকে তিনি অপ্রোয়জনীয় মনে করতেন। তিনি অতীতের সাহিত্যের যা কিছু ধরন তাকে বর্জন করতে চেয়েছিলেন, এতে করে তাঁর কবিতায় নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছিল। খুব সাধারণ শব্দ ব্যবহার করে তিনি কাব্যভাষা কে কথ্যভাষার কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন। ১৯৪১ সালে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয় গ্যারিপ নামে একটি গ্রন্থে। এই গ্রন্থটি কে তুর্কী কবিতার এক উজ্জ্বল নিশান বলে গণ্য করা হয়। প্রথম দিকে কানিকের কবিতার নতুন আঙ্গিকের জন্য অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। যদিও প্রথমে তাঁর ঐতিহ্য লঙ্ঘনকারী কাজ যুগপৎ আনন্দ ও হতাশা এনেছিল পাঠক মনে, পরবর্তী কালে তাঁর কবিতা অবিমিশ্র প্রশংসা লাভ করে। তুর্কী কবি ওটকে রিফাট বলেছেন-অরহ্যানের জন্য তুর্কী কবিতা ইউরোপিয়ান কবিতার সমকক্ষ হতে পেরেছে,ওকে ধন্যবাদ। একটি পরিবর্তন যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম আনতে পারেনা,তা ও অল্প কিছুকালের মধ্যেই সম্ভব করেছে।
এই সুন্দর দিনগুলি
এই সুন্দর দিনগুলিই আমার ধ্বংস ডেকে আনে।
এইরকম একটি দিনেই আমি ছেড়ে দিই
জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের কাজ।
এরকম দিনে আমি ধূমপান করতে শুরু করি
এরকম একটি দিনেই আমি প্রেমে পড়ি।
এরকম দিনে আমি ভুলে যাই
পাঁউরুটি আর নুন আনতে।
এরকম এক দিনেই ফিরে আসে
আমার নানাবিধ অসুখ।
এই সুন্দর দিনগুলোই আমার ধ্বংসের কারণ।
অন্দরমহল
জানালাই হলো সবথেকে ভালো
অন্তত এখান দিয়ে পাখিদের দেখা যায়,
চতুর্দিকে দেওয়াল দেখার বদলে।
পোকামাকড়
কিছু ভেবো না
শুধু কামনা করো
দেখো, পোকামাকড়েরাও তা-ই করে থাকে।
পূর্বতন স্ত্রী
তুমি কি জানো তুমি কেন
আমার স্বপ্নে আসো রাতের পর রাত ?
কেন আমি প্রলুব্ধ হই পাপ করতে
নিষ্পাপ চাদরের ওপর !
তুমি কি জানো কেন
আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি ?
তুমি এক অন্যরকমের নারী-তুমি জানো সেটি?
আমার শ্রেষ্ঠ কবিতা
কোনো প্রেমে থাকাকালীন আমার
কবিতা লেখার অভ্যাস নেই।
কিন্তু আমি আমার সত্যিকার শ্রেষ্ঠ কবিতাটি
লিখলাম, যখন আমি বুঝলান
সে-ই ছিল আমার শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা।
তাই, এই কবিতাটি তাকেই প্রথম শোনাবো।