
অজিত দাশ-এর এক গুচ্ছ কবিতা
দাঁড়ি ও সেমিকোলন
তোমার নাম ছিটকে পড়ে কতদূর
চলে যাচ্ছে পাখির ডাক পেছনে ফেলে
জানি, শীতের ছায়া রঙ বদলায়
পুনর্জন্মের সময় আসে নিঃশর্ত বোঝাপড়ার
প্রচ্ছদ পেরিয়ে।
আপাত স্থির একটা রক্তমাংসের ডিভাইসে
প্রতিশব্দহীন উচ্চারণে সাজিয়ে লিখতে থাকি
তোমার ফেলে যাওয়া দাঁড়ি ও সেমিকোলন।
মুখোমুখি
অনভ্যস্থ মগজে পথ বাঁচিয়ে
তোমার পাশে এসে বসি
ভাবি, প্রেম না হোক
মুখোমুখি পায়ের ছাপেও
বসতে পারে কতগুলো অক্ষর
এই যে কীবোর্ডে লিখছি
এলোমেলো। শব্দের খেয়াল,
ভুল বানানের অনিচ্ছা যত
তোমার স্পর্শ পাবে কি?
গাঙচর
কেমন থমকে থাকি তোমার হাতঘড়ির
পাশে এসে। গাঙচর দাঁড়িয়ে
খুঁজতে থাকি ভুল পথে হারিয়ে ফেলা এক সাবেকী
নদীর ঝুনঝুনি,
খানিকটা ভাঙ্গাশ্লেট।
কয়েকটা কাঠগোলার ফাঁক দিয়ে
রিক্সায় হুড তুলে তুমি চলে গেছ ঠিকই
আমি এখনো শেকল টেনে ধরি
সেইসব চলমান করাতের দাঁতের শব্দে
প্রখর গানগুলো চেলি কাঠের মতন
ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাজে বুকের শিবিরে।
বিজ্ঞাপন
অসময়ের শোক থেকে বাঁচতে
নিজের চরিত্রে অভিনয়ের বিজ্ঞাপন
ছাপি কাগজে।
বাবা এখনো জীবিত
তার অনুপস্থিতে প্রক্সি-শট দিতে গিয়ে
আমি দুই হাতে চেপে রাখি
অক্লান্ত প্রতীক্ষা
একদিন শিঙ্গা বাজিয়ে
মদ খেতে বসে দেখি- আমার কোনো
ব্যক্তিগত চিত্রনাট্য নেই,
খুচরো পয়সার অভাবে বিজ্ঞাপনের কাগজ
হাতে ঢুকে পড়ি কয়েকটি পার্শ্বচরিত্রে
সেই থেকে প্রতি চুমুকে বেজে উঠে
বুকের ডোরবেল।
প্রস্তুতি
মাঝে মাঝে নিজেই নিজের না-হওয়ার
জন্য একটা প্রস্তুতি নিতে থাকি
কে ডাকবে, কে ডাকবে না…
কার জন্য অপেক্ষা করবো,
কার সঙ্গে কিভাবে কথা বলবো?
এইসব ভাবতে ভাবতেই আমার
অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় আর
নিজেই নিজের হওয়ার জন্য
কোনো প্রস্তুতি নিতে পারি না!
অজিত দাশ মূলত কবি ও অনুবাদক। জন্ম ১৯৮৯ কুমিল্লা, বাংলাদেশ। বর্তমানে থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুর। পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রকাশিত অনুবাদ গ্রন্থঃ ওশোর গল্প (বেহুলাবাংলা, ২০১৮) ও প্রজ্ঞাবীজ (মাওলাব্রাদার্স, ২০১৯)।